মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করে আয় করুন

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করে আমরা অনেকেই ইনকাম করতে চাই। কিন্তু পর্যাপ্ত ধারণা ও দক্ষতা না থাকায়, তা খুব একটা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। ইন্টারনেট ও মোবাইল সহজলভ্য হওয়ার কারণে ফ্রিল্যান্সিং করে ফাইবারে সহজেই টাকা ইনকাম করা এখন সম্ভব হচ্ছে।
মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ
ইন্টারনেট আমাদের জীবন সহজ করার পাশাপাশি অল্প সময়েই আমাদের জীবনে অনেক গুলো সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনও করে দিয়েছে একই সাথে। মোবাইল দিয়ে অনেক কাজ করা যায় লোকাল মার্কেট-প্লেস, তবে ফাইবারের মতো আন্তর্জাতিক মার্কেট-প্লেস কাজ করতে হলে আপনাকে দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই।

আজকের আর্টিকেলে আমরা কিভাবে মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করা যায়, কী কী কাজ করা যায়, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবো।

সূচিপত্র: মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করে আয় করুন

.

ফাইবার (Fiverr) কী?

ফাইবার হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেট-প্লেস, যেখানে ৭০০+ ক্যাটাগরির কাজ সারাবিশ্বের অসংখ্য মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়ীক বিভিন্ন কাজ অনলাইনের মাধ্যমে করিয়ে নেয় নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে।

যারা কাজ করে তাদের সেলার (Seller), আর যারা অন্যদের কাজ করে তাদের বায়ার (Buyer) বলা হয়। তারই ফলশ্রুতিতে মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করা যায়।
একজন দক্ষ ব্যক্তি অনলাইনে মোবাইল দিয়ে যেসব কাজ করতে পারে, তার অনেক কিছুই ফাইবারে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে করা যায়। ফাইবারে সেলারদের রেটিং থাকে এবং সে অনুযায়ী ধরে নেওয়া যায়, কোন সেলারের কাজের দক্ষতা কেমন।

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে একাউন্ট কীভাবে করা হয়?

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করার পূর্বে ফাইবারে একাউন্ট করে নেওয়া বাধ্যতামূলক। ফাইবারের লগ ইন অপশনে গিয়ে আপনি বায়ার নাকি সেলার তা নির্ধারণ করে, উপযুক্ত সব তথ্য, আপনার বিস্তারিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা তুলে ধরে ফাইবারে একাউন্ট করতে পারেন আপনার উদ্দেশ্য সফল করতে।

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করা যায় উল্লেখযোগ্য ভাবে। তন্মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ গুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো এখন।

ডাটা এন্ট্রি (Data Entry)

বর্তমানে ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে যেকোনো অনলাইন জবের রীতিমতো স্বর্গরাজ্য। স্বাভাবিক ভাবেই ফাইবারেও ডেটা এন্ট্রি জব করার আলাদা ক্যাটাগরি আছে। একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ডেটা এন্ট্রির কাজ সারাবিশ্বে করে। খুব বেশি দক্ষতা যে এক্ষেত্রে লাগে, তেমন না।

কিন্তু মোটামুটি ধারণা লাগে। সময়ের সাথে সাথে কাজ কর‍তে গিয়ে মানুষ দক্ষ হয়ে যায়। ডেটা এন্ট্রির প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে মিডল লেভেলের যেকোনো কাজ মোবাইল দিয়েই করা যায়। যেমন মাইক্রোসফট এক্সেল তন্মধ্যে অন্যতম।
খুব সহজেই মোবাইল দিয়ে ফাইবারে ডেটা এন্ট্রি করতে পারেন এবং কাজ করতে পারেন। মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করার প্রাথমিক স্তর হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি।

গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design)

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করার অনেক গুলো ক্যাটাগরিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ অন্যতম জনপ্রিয় একটি কাজ। গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের কত গুলো আলাদা আলাদা সেক্টর রয়েছে, যেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।

লোগো ডিজাইন (Logo Design)

মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনের সবচেয়ে সহজ কাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লোগো ডিজাইন করে ইনকাম করা। বিভিন্ন কোম্পানি, গ্রুপ, পেইজ বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের লোগো অনলাইনে ফাইভার থেকে করিয়ে নেওয়া যায় উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।

নিজের দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করলে বেশ ভালো করা যায় এক্ষেত্রে। আপনি গিগ তৈরি করতে পারেন লোগো ডিজাইনের।
বিভিন্ন সফটওয়্যার আছে যেমন ক্যানভা (Canva), Adobe এর বিভিন্ন সফটওয়্যার, ভিসমি (Visme) ইত্যাদির মতো অনেক গুলো সফটওয়্যার থেকে লোগো ডিজাইন করতে পারেন।

ছবি এডিট করে

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ সমূহ এর মধ্য ছবি এডিট করার কাজ করতে পারেন। আপনি যদি ভালো এডিটর হয়ে থাকেন, তবে ছবি এডিট করার কাজ সহজেই করতে পারবেন।
ফাইবারে ছবি এডিট করে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ক্যাটাগরির কাজ পাওয়া যায়। অ্যাডোবি ফটোশপ (Adobe Photoshop), Snapsheed (স্ন্যাপসিড) এর মতো বেশ কিছু এডিটর সফটওয়্যার আছে, যেগুলো ব্যবহার করে ছবি এডিট করে সহজেই ইনকাম করতে পারেন।

বুক কাভার (Cover) ডিজাইন করা

২০২৪ সালে মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ গুলোর মধ্য বুক কাভার ডিজাইন করা অন্যতম। বিশ্বে নিয়মিত অনেক বই বের হচ্ছে, যেগুলোর কাভার ডিজাইন করার প্রয়োজন হয়।

শুধু বুক কাভার না, খাতা, ডায়েরি সহ এখনকার ডিজিটাল মিডিয়ার প্রিন্টিং এতটা এগিয়ে গেছে যে, টি-শার্ট, শো-পিজ এর মতো অসংখ্য জিনিসপত্রের ওপর ডিজিটাল প্রিন্ট ব্যবহার করে আর্ট করা যায়। এর সবকিছুই মোবাইলে করা যায়।
তাছাড়া ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারের মতো এখনকার অসংখ্য গ্রাফিক্সের কাজ মোবাইলে ডিজাইন করে বানানো হয়। এই সবকিছুই ফাইবারে সার্ভিস দিতে পারেন ও ইনকাম করতে পারেন।

আর্টিকেল রাইটিং (Article Writing)

মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করা যায় এমন কাজের মধ্যে আর্টিকেল রাইটিং আরেকটা জনপ্রিয় ক্যাটাগরি।যে কোনো ধরনের আর্টিকেল মোবাইল দিয়ে লেখা যায়। ফাইবারে আর্টিকেল রাইটিং এর কাজের কোনো অভাব নেই।

আপনার আর্টিকেল লেখার দক্ষতা থাকলে আপনি মোবাইল দিয়ে সহজেই সেই কাজ করতে পারেন ও ইনকাম করতে পারবেন।

ট্রান্সলেশন (Translation)

ট্রান্সলেশনের কাজ করারও সুযোগ আছে ফাইবারে। প্রতিনিয়ত ট্রান্সলেশনের কাজ করার জন্য অনেককেই ফাইবার হায়ার করে থাকে। ট্রান্সলেশনের জন্য আলাদা সফটওয়্যার থাকলেও হিউম্যান ট্র‍্যান্সলেশন আর মেশিন ট্রান্সলেশনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে।
তাই ট্রান্সলেটরের চাহিদাও ব্যাপক। মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করতে চাইলে সহজেই ট্রান্সলেটরের কাজ যে কেউ করতে পারে যদি তার সেই দক্ষতা থাকে।

সিভি (CV) লেখা

আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে অনেক কাজে সিভির প্রয়োজন অপরিহার্য। সেই সিভিও অনেকে ফাইভারে নিজের ডিটেইলস দিয়ে লিখিয়ে নেয়।

আপনি যদি সিভি লিখতে অভিজ্ঞ হোন, তবে মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ করতে পারবেন। সিভি লিখে আপনি সহজেই মোটামুটি ইনকাম করতে পারবেন।

ওয়েবসাইট ডিজাইন (Website Design)

আপনি যদি ওয়েবসাইট ডিজাইনার হয়ে থাকেন, তবে মোবাইল দিয়ে ওয়েবসাইট ডিজাইন করে ফাইবারে ইনকাম করতে পারবেন। ব্লগ ওয়েবসাইট গুলোর ডিজাইন মোবাইল থেকে করা যায়।

তবে এই কাজ করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই ভালো ওয়েবসাইট ডিজাইন জানতে হবে। তাহলে, মোবাইল দিয়ে ফাইবারে ওয়েবসাইট ডিজাইন করে ভালো ইনকাম করতে পারবেন।

ভিডিও এডিটিং (Video Editing)

বর্তমানে ফাইবারে ভিডিও এডিটরের অনেক চাহিদা আছে। ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক, ইউটিউব সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য ভিডিও এডিট করে আপলোড করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

যদি খুব হাই রেজুলেশন বা উচ্চমাত্রার এডিটিং প্রয়োজন না হয় তাহলে মোবাইল দিয়ে ফাইবারে ভিডিও এডিটিং করতে পারেন।
ক্যাপ-কাট (Capcut), ভিডিও মেকার (Video Maker) সহ এরকম আরও কিছু সফটওয়্যার আছে, যেগুলো দিয়ে সহজেই ভিডিও এডিট করা যায়।

মাইক্রোসফট অফিস (Microsoft Office)

মোবাইল দিয়ে ফাইবারের যেসব কাজ করা যায়, তার মধ্যে মাইক্রোসফট অফিস অন্যতম। আমাদের সবার ফোনেই মাইক্রোসফট অফিস আছে।

ফাইবারে অনেক বায়ার প্রেজেন্টেশন, পিডিএফ সহ আরও বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ করে দেয়। মাইক্রোসফট অফিস ব্যবহারের পারদর্শী হলে সহজেই মাইক্রোসফট অফিসের কাজ করে ইনকাম করতে পারবেন।

শেষকথা

আন্তর্জাতিক মার্কেটে প্লেস ফাইবারে অসংখ্য বাংলাদেশী প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে এবং সেই কাজের ফলে তারা দেশের জন্য রেমিট্যান্স নিয়ে এসে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

দেশ গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের এই বিরাট নাগরিকদের দক্ষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তবেই একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারবো। 

সম্মানিত পাঠক, আপনি জানতে পারলেন মোবাইল দিয়ে ফাইবারে কাজ সম্পর্কে। এই আর্টিকেল সম্পর্কিত যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

FAQ

১. ফাইবার দিয়ে কী কল করা যায়?

উত্তর: ফাইবার দিয়ে কল করা যায় ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে। এই কল কে ভিওয়াইপি বলে।

২. ফাইবারে কী কী কাজ করা যায়?

উত্তর: ফাইবার ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি, যা ৭০০+ ক্যাটাগরিতে বিশ্বজুড়ে কাজের সুবিধা প্রদান করছে।

৩. ফাইবারের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: ফাইবারের প্রতিষ্ঠাতা হলো মিচা কাউফম্যান। তিনি নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

৪. ফাইবার কত শতাংশ ভ্যাট কেটে নেয়?

উত্তর: ফাইবার মোট ইনকামের ২০% ভ্যাট আকারে কেটে নেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url