ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা

কম্পিউটারের উপকারিতা ও অপকারিতাপ্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা রয়েছে, তেমনই ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা ও রয়েছে।
ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা
আমরা দৈনন্দিন জীবনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে শিক্ষার্থীদেরও মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। এতে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর উপকার হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসচেতন হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর মোবাইল ফোনের খারাপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এজন্য শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা দিন দিন বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং মোবাইলের উপর নির্ভরশীল হচ্ছে। মোবাইল ফোন এমন একটি ডিভাইস যাতে পড়াশোনা ছাড়াও আরও বেশ কিছু আকর্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। যেমন গেমস খেলা, মোবাইল ফোনে কার্টুন বা মুভি দেখা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিনোদন উপভোগ করা ইত্যাদি।

এর ফলে পড়াশোনার চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা এসব আকর্ষণীয় বিষয়ের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে এবং পড়াশোনার ক্ষতি করছে, নিজের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। চলুন ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা অপরিসীম। যুগের পরিবর্তনের কারণে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্র এবং ছাত্রী মোবাইল ফোন ছাড়া চলতে পারে না। তারা সব সময় মোবাইলের উপকারী দিক ব্যবহার করে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা গুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

সহজে যোগাযোগ করা: ছাত্র জীবনে আমরা অনেকেই বড় বড় স্কুল, কলেজ এবং ভার্সিটিতে পড়ার জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস করি। এ সময় আমাদের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা থাকে না, কিন্তু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনেক সহজেই যে কোন সময় আমাদের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।
এছাড়া বর্তমানে শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সকল খবর আমাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলে সহজেই মেসেজ করে আমাদের বন্ধুদের মাধ্যমে তা জানতে পারি।

সকল তথ্যের উৎস: ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল ফোনে মাত্র কয়েকটি ট্যাপ করেই কিছুক্ষণের মধ্যেই যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে ফেলতে পারে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে টেলিভিশন দেখা যায়, সেখানে দেশ-বিদেশের খবর সহজেই পাওয়া যায়।

আপনি দূরে কোথাও পড়াশোনা করবেন ভাবছেন, কিন্তু থাকার কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না, তাহলে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বাসা ভাড়া বা হোস্টেল ভাড়া সহজেই নিয়ে নিতে পারবেন। আপনি আপনার বইয়ে থাকা যে কোন টপিক সম্পর্কে আপনি বুঝতে পারছেন না, তাহলে সেই টপিক সম্পর্কে গুগলে বা ইউটিউবে এ সার্চ দিলেই আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন খুব সহজেই।

স্মার্ট ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে পড়াশোনা এখন আরও অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আগে পড়াশোনার জন্য আমাদের দূরদূরান্তে গিয়ে প্রাইভেট পড়তে হতো বা ক্লাস করতে হতো, কিন্তু মোবাইল ফোন আসার পর আমরা ঘরে বসেই সহজে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স সহ নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাইভেট পড়তে পারি বা ক্লাস করতে পারি।

বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপস এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বই পড়া যায়। সুতরাং ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা অনেক বেশি।

বিনোদনের উপায়: মোবাইল ফোন আকারে অনেক ছোট এবং লোকেরা এটি যে কোন জায়গায় বহন করতে পারে। আকারে ছোট হলেও এটি একটি বড় বিনোদনের উৎস। বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল ফোনকে একমাত্র বিনোদনের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করতে করতে যখন একঘেয়েমি অনুভব করে তখন মোবাইল ফোনের সাহায্যে তারা বিনোদন উপভোগের মাধ্যমে একঘেয়েমি কাটাতে পারে। যে কোন সময় ইন্টারনেট যুক্ত করে শিক্ষার্থীরা যে কোন মুভি, গেম, ফানি ভিডিও, বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক বিনোদন উপভোগ করতে পারে।

মোবাইল ফোন পড়াশোনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে: আপনি যদি আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস কোন কারণে মিস করে থাকেন, তাহলে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। কেননা মোবাইল ফোন ব‍্যবহার করে আপনি যে কোন বিষয়ের উপর ক্লাস করে আপনার পড়াশোনায় আপনি এগিয়ে যেতে পারেন। মোবাইলের মাধ্যমে আপনি আপনার যে কোন অ‍্যাসাইনমেন্ট সম্পূর্ণ করতে পারবেন।

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অন্যান্য উপকারিতা: ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। বর্তমানে আধুনিক মোবাইলে উন্নত মানের বৈজ্ঞানিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায়। যার মাধ্যমে সহজে ছাত্র-ছাত্রীরা কঠিন কঠিন গাণিতিক বিষয় সহজেই সমাধান করতে পারে।
আপনি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছেন বা প্রাইভেট পড়ছেন কিন্তু আপনার কাছে খাতা বা কলম কিছুই নেই, সেক্ষেত্রে আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আপনার স্যারের শেখানো বিষয়গুলো রেকর্ড করে বা ছবি তুলে রাখতে পারেন। এছাড়া রাতে যখন লোডশেডিং হয় তখন আপনি আপনার ফোনের টর্চ লাইট ব্যবহার করে আপনার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন।

এ ছিল ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা গুলো। এবার চলুন জেনে আসি ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা সম্পর্কে।

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকই বেশি। কেননা সমাজে যত শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মোবাইলের কারণে খারাপ কাজে ঝুঁকে পড়ছে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা গুলো নিচে তুলে ধরা হল:

পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যায়: ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল ফোনে থাকা বিভিন্ন অ‍্যাপস্, গেমস এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে পড়াশুনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তারা সবসময় পাবজি, ফ্রি ফায়ার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে ডুবে থাকে। এসবের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় মন দিতে পারে না। এর ফলে পড়াশোনা থেকে তারা দূরে সরে যায়।
মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার ক্ষমতা হ্রাস হতে থাকে। এটি শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উদ্বেগ: খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু মস্তিষ্কের ক্ষতিই হয় না, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগও সৃষ্টি করে। ক্রমাগত ফোন ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীরা দুর্বল হয়ে পড়ে, মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনে ভোগে, যা আরও উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার দিকে নিয়ে যায়।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হয় না: ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়ে থাকে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল বা বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং ইত্যাদিতে সময় অপচয় করে। এই কারণে পড়াশোনার সময় পায় না এবং মন বসে না, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে না।

এর ফলে মানসিক ভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভেঙে পড়ে এবং আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নেয়। (যদিও পড়াশোনা-ই শুধু একজন মানুষকে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দিতে পারেনা)

দুর্ঘটনা: অনেক শিক্ষার্থীদের দেখা যায় তারা মোবাইল ফোনে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রাস্তা পার হচ্ছে বা রেললাইন এর উপর দিয়ে হাঁটছে। আবার অনেককে দেখা যায় মোবাইল ফোন টিপতে টিপতে রাস্তায় হাঁটছে বা ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাচ্ছে। এরকম অসচেতন ভাবে হাঁটা চলার কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে।

খরচ: স্মার্টফোনের দাম অনেক বেশি। এটির ব‍্যবহার নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযুক্ত করতে হলে নিয়মিত ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে হয় আর অন্যের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে হলে মোবাইল ফোনে টাকা তুলতে হয়, যা নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয়। 

স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়: মোবাইল ফোন গুলো রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ নির্গত করে। মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন যে সংকেত নির্গত করে তাকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বা EMF বলে। আমরা যখন আমাদের কানের কাছে মোবাইল ফোন রাখি অথবা মাথার কাছে মোবাইল ফোন রাখি তখন রেডিও-ওয়েভ গুলো সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কে চলে যায়।

এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর একটি বিশাল ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। WHO এর মতে, মোবাইল ফোন ব্যবহার ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। শিক্ষার্থী বা বাচ্চাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি, কারণ তাদের শরীর এখনও বিকশিত হচ্ছে। আপনি বা আপনার সন্তান যখন ঘুমায় তখন মাথার কাছে মোবাইল ফোন রাখা উচিত নয়।

সতর্কতা: ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা

অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিলে তারা বেশিরভাগ সময় সঠিক কাজে এটি ব্যবহার করে না। তাই অল্প বয়সে মোবাইল ফোন ব্যবহার এর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
অল্প বয়সী শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের প্রতি সহজেই আসক্ত হয়ে পড়ে, এমনকি অনেক পরিবারে দেখা যায় যে, খাবার খাওয়ার সময়ও অল্প বয়সী ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। ছাত্র-ছাত্রীরা এরকম মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লে অবশ্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে এটি তাদের ভবিষ্যতের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

লেখকের মন্তব্য: ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা

ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইল ফোন দেওয়ার আগে অবশ্যই এর অপকারিতা গুলো সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে ও সতর্ক করতে হবে।

যেহেতু ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের অপকারিতা রয়েছে তাই শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন দেওয়ার পরে অবশ্যই তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন যে, তারা মোবাইল ফোন সঠিকভাবে ব্যবহার করছে কিনা। তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে যে, আপনি আপনার সন্তানকে ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে তাদের স্মার্টফোন না দিয়ে ছোট বাটন ফোন ব্যবহার করতে দিন।

প্রিয় পাঠক, আপনি ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলেন এবং আশা করি সচেতন হয়েছেন। আপনার কাছের মানুষদের ছাত্র জীবনে মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জানাতে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url