কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক ও উপকারিতা

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক আজকে আমরা আপনাকে কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক, কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে এবং কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো।
কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক এবং উপরোক্ত সকল টপিক সহ আমরা আরও জানাবো কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া উচিত, কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা এবং কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২০২৪ সম্পর্কে।

ভূমিকা

আমরা কমবেশি অনেকেই কোয়েল পাখি সম্পর্কে জানি। কোয়েল পাখির ডিমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই ডিম অনেক ছোট হয়ে থাকে। মুরগির ডিমের চেয়ে কোয়েলের ডিমে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে। কোয়েলের ডিমের ওজন মাত্র ১০-১২ গ্রাম হয়। তবে আমরা কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অনেকেই জানিনা।

চলুন শুরুতে আমরা জেনে নেই কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে।

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

কোয়েল পাখির ডিম খেলে অনেক উপকার লাভ হয়। কোয়েল পাখির ডিম আকারে অনেক ছোট হলেও এটি মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। কোয়েলের ডিম খেলে কি হয় তা নিচে উল্লেখ করা হল:

শ্বাস যন্ত্রের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে: হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিস এর চিকিৎসায় কোয়েল পাখির ডিম ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। গবেষণায় দেখা গেছে যে কোয়েল পাখির ডিম অ‍্যালার্জিক রাইনাইটিস এর লক্ষণ গুলি কমাতে কার্যকর।

এলার্জির চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে: কোয়েল পাখির ডিম হাঁপানি, এলার্জি এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টের সমস্যায় সাহায্য করে বলে জানা গেছে। এটি প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি গুলোর একটি ভালো উৎস, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে। চীনে ইঁদুরের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোয়েল পাখির ডিম এলার্জির লক্ষণগুলো প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে: কোয়েল পাখির ডিম ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করতে পারে। ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে কোয়েলের ডিম রক্তে গ্লুকোজ এবং ক্রিয়েটিনিনের এর মাত্রা কমায়। এটি কিডনির কার্যকারিতার উপর ইতিবাচক প্রভাবও দেখিয়েছে। নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেলে ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি কমে।

রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়: কোয়েল পাখির ডিম আয়রন এর একটি ভালো উৎস। আয়রনের ঘাটতি রক্তস্বল্পতার কারণ হতে পারে। অতএব রক্তস্বল্পতা দূর করতে কোয়েল পাখির ডিম একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে।
এছাড়া কোয়েল পাখির ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনে জড়িত। এটি রক্তনালীগুলো খুলতে এবং শিথিল করতে সাহায্য করে।

শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে: কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্ষতিকর টক্সিন এর সাথে লড়াই করে এবং আপনার শরীর থেকে তা অপসারণ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, কোয়েল পাখির ডিম যকৃতের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

পেট ব্যথা দূর করতে পারে: কোয়েল পাখির ডিম গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসার জন্য একটি ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই ডিম পেটের ব্যথা, আলসারের মতো পেটের রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে পারে: কোয়েল পাখির ডিম ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ। ভিটামিন-এ আপনার চোখকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে পারে এবং ছানি ও গ্লুকোমা কমাতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে: কোয়েল পাখির ডিমে প্রায় ৬০% প্রয়োজনীয় চর্বি থাকে। উচ্চ ঘনত্বের ভালো কোলেস্টেরল (HDL) থাকে। এই স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমায়।

অতিরিক্ত খারাপ কোলেস্টেরল ধমনি আটকে দিতে পারে। সুতরাং কোয়েল পাখির ডিম হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিম ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: আমরা আগেই বলেছি কোয়েল পাখির ডিমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে এবং বার্ধক্য জনিত লক্ষণ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। কোয়েল পাখির ডিমে লাইসিন নামক একটি অ্যামাইনো এসিড থাকে। লাইসিন কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বক সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য।
এছাড়া কোয়েল পাখির ডিম খেলে চুলের গুণগত মান উন্নত হয়, কিডনির রোগ এবং মূত্রাশয়ে পাথর গঠন প্রতিরোধ করে। হাড়, দাঁত এবং নখ মজবুত করতে পারে এবং বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে। সম্মানিত পাঠক আপনি জানতে পারলেন কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা।

কোয়েল পাখির ডিম খেলে উপরোক্ত উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়। কিন্তু কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। চলুন এখন কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নেই।

কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক

কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এই ডিম পরিমিত পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ। অতিরিক্ত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক গুলো নিচে তুলে ধরা হল:

নিম্ন রক্তচাপ: নিম্ন রক্ত-চাপ যাদের রয়েছে তাদের অতিরিক্ত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া মোটেও উচিত নয়, কেননা এটি রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপ কমাতে পারে।

অতিরিক্ত কোয়েল পাখির ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর: বয়স অনুযায়ী দিনে পাঁচ থেকে আটটির বেশি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উচিত নয়। কেননা এটি কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়াতে পারে। ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

কাঁচা কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া অনিরাপদ: কাঁচা কোয়েল পাখির ডিমে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তাই এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত। গর্ভবতী মহিলা এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে তাদের কাঁচা কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উচিত নয়।

কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জি থাকতে পারে: মুরগির ডিমে যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের কোয়েল পাখির ডিমেও এলার্জি হতে পারে।

কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে

দূষিত পরিবেশের কারণে অনেকের এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোয়েল পাখির ডিম এসব এলার্জির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কোয়েল পাখির ডিমে এলার্জি আছে বলে জানা যায়। বিশেষ করে যাদের হাঁসের এবং মুরগির ডিমে এলার্জি আছে তাদের কোয়েল পাখির ডিমেও এলার্জি আছে।

সতর্কতা: কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক

যেহেতু কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক রয়েছে, তাই আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া নিরাপদ হলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খেতে হবে। কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার পর কোন প্রকার এলার্জি জনিত লক্ষণ প্রকাশ হলে পরবর্তীতে কোয়েল পাখির ডিম এড়িয়ে চলুন।

কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম

কোয়েল পাখির ডিম সঠিক নিয়মে খেতে হবে। কোয়েল পাখি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যাবেনা। এমনকি ডিম পোঁচ করেও না খাওয়াই ভালো। কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার সবচেয়ে ভালো নিয়ম হল এটি সিদ্ধ করে খাওয়া।
কোয়েল পাখির ডিম বাজার থেকে এনে পাত্র ভর্তি পানিতে রাখুন, ডিম যদি পানির তলায় থেকে যায় তাহলে বুঝবেন এই ডিম ভালো। কিন্তু ডিম যদি পানির উপর ভেসে ওঠে তাহলে বুঝবেন এই ডিম অনেক পুরনো। এসব পুরনো ডিম এড়িয়ে চলাই ভালো।

কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া উচিত

আমরা অনেকেই জানিনা কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া উচিত। কোয়েল পাখির ডিম অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ করলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের পরিমাণ মতো কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন খাওয়া উচিত।

কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন পাঁচ থেকে আটটি খেতে পারেন। তবে বয়স অনুযায়ী সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু প্রায় সকলের জন্যই সর্বোচ্চ ৮টির বেশি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া উচিত নয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া যায়।

কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা

মুরগির ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিম বেশি পুষ্টিকর। তাই মুরগির ডিমের বিকল্প হিসেবে অবশ্যই কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া যেতে পারে। তবে কোয়েল পাখির ডিমে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকার কারণে অতিরিক্ত খাওয়া অনুচিত।

কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২০২৪

বাংলাদেশে ১ টি কোয়েল পাখির ডিমের পাইকারি দাম ৩ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৪ টাকা। ভারতে কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২ রুপি। এ ছিল কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২০২৪।

লেখকের মন্তব্য: কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক - কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

কোয়েল পাখির ডিম অনেক ছোট হওয়ায় আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে ফেলি যা মোটেও উচিত নয়। কোয়েল পাখির ডিমে অনেক চর্বি রয়েছে যা অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোয়েল পাখি ডিমের অনেক উপকারিতাও রয়েছে।

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাকে জানিয়েছি কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক, কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা, কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে, কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম, কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া উচিত, কোয়েল পাখির ডিম ও মুরগির ডিমের তুলনা এবং কোয়েল পাখির ডিমের দাম ২০২৪।

আশা করি আপনি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। ভালো লাগলে নিচের লিঙ্কের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url