ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম - বৃষ্টির জন্য দোয়া

কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়সম্মানিত পাঠক বন্ধু, আজকে আমরা আপনার সাথে শেয়ার করব ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম বা বা বৃষ্টির নামাজ পড়ার নিয়ম, ইসতিসকার নামাজের নিয়ত সম্পর্কে।
ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম
এছাড়া ইসতিসকার নামাজ বা বৃষ্টির জন‍্য নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করব এবং বৃষ্টির জন্য দোয়া সম্পর্কেও বলবো।

ভূমিকা

আল্লাহকে উপেক্ষা করে মানুষের চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। বিপদ-আপদে মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে। অনাবৃষ্টি দেখা দিলে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে হবে। এটাই ঈমানের দাবি। আর সকল কাজ রাসূলের দেখানো পদ্ধতি অনুসারে পালন করতে হবে।

বৃষ্টি প্রয়োজন হলে রাসূল যে নিয়মে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন সে নিয়মেই আমাদের আদায় করতে হবে। তাই অনাবৃষ্টি দেখা দিলে ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। চলুন শুরুতেই জেনে নেই ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম ও ইসতিসকার নামাজের নিয়ত সম্পর্কে।

ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম

অনাবৃষ্টির কারণে ক্ষেত খামার বিপদের সম্মুখীন হলে এলাকার সমস্ত লোক একযোগে মাঠে গিয়ে আল্লাহ পাকের নিকট বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় জামায়াতের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করাকে ইসতিসকার নামাজ বলা হয়। ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম হল:

এলাকার সকল প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান দলবদ্ধভাবে পায়ে হেঁটে খোলা ময়দানে গিয়ে খাঁটি মনে তওবা করে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। কোন দেনা-পাওনা থাকলে পরিশোধ করে দিবে অথবা ক্ষমা নিয়ে নিতে হবে।
অতঃপর একজন বুজুর্গ আলেম ব্যক্তিকে ইমাম নির্বাচন করে সকলে তার পিছনে দুই রাকাত সালাতুল ইসতিসকা মাকরূহ বা নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যতীত অন্য ওয়াক্তে আদায় করবে। এই নামাজে আজান ও ইকামতের দরকার হয় না, তবে ইমাম সাহেব সুরা কিরাত শব্দ করে পড়বেন।

নামাজ শেষে ইমাম সাহেব কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে এবং মুক্তাদীরা বসে মাথার উপর হাত উঠিয়ে আল্লাহ তা'আলার দরবারে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের জন্য কান্নাকাটি করে প্রার্থনা করবে। বৃষ্টি বর্ষিত না হওয়া পর্যন্ত তিন দিন যাবত এইভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। ইনশাআল্লাহ বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এই তিনদিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। ইসতিসকার নামাজের জন্য গোসল করা মোস্তাহাব।

ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের অভিমত দলিল সহ

01. সাহেবাইনের অভিমত: ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র) এর মতে, ইমাম মুসল্লিদের নিয়ে উন্মুক্ত মাঠে জামায়াতের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে। ইমাম নামাজে উচ্চস্বরে কেরাত পাঠ করবে। নামাজ শেষে ইমাম কিবলামুখী হয়ে খুতবা দিবেন।

ইমাম নিজের চাদর উল্টিয়ে গায়ে দিবে, তবে মুক্তাদিগণ চাদর উল্টাবে না। অতঃপর সকলে মিলে কান্নাকাটি করে আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি প্রার্থনা করবে।

দলিল: আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা) বলেন, মহানবী (স) মুসল্লিদের নিয়ে ইসতিসকার দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছেন।

02. আবু হানিফা (র) এর অভিমত: ইমাম আবু হানিফা (র) এর মতে, ইসতিসকার নামাজ জামায়াতে পড়া সুন্নাত নয়। একা একা পড়লেও জায়েজ হবে। কারণ ইসতিসকা মানে রহমত বর্ষণের দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা।

দলিল: হযরত আনাস (রা) বলেন, মানুষ অনাবৃষ্টির কারণে অভাবী হয়ে গেলে মহানবী (স) একাই তাদের জন্য হাত তুলে দোয়া প্রার্থনা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, প্রার্থনার সময় হাত উল্টিয়ে প্রার্থনা করতেন।

03. ইবনে হাজারের অভিমত: আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (র) বলেন, ইসতিসকার নামাজ তিন পদ্ধতিতে আদায় করা যায়। যথা-
  • একা একা বা সকলে মিলে আল্লাহর দরবারে শুধু প্রার্থনা করা।
  • শুধু নামাজ আদায়ের পর প্রার্থনা করা।
  • সালাত আদায় করে খুতবা প্রদানের পর আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা।
উল্লেখ্য, ইসতিসকার নামাজে কোন বিধর্মী যেন উপস্থিত না হয়। কেননা এটি নিষেধ রয়েছে। সম্মানিত পাঠক আশাকরি আপনি ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালভাবেই জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

ইসতিসকার নামাজের নিয়ত

ইসতিসকার নামাজ পড়তে হলে অবশ্যই ইসতিসকার নামাজের নিয়ত করতে হবে। কেননা নামাজের জন্য নিয়ত করা ফরজ। মনে মনে কল্পনা করলেই নিয়ত হয়ে যায়। ইসতিসকার নামাজের নিয়তে এভাবে বাংলায় নিয়ত করতে পারেন-

ইসতিসকার নামাজের নিয়ত: আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত ইসতিসকার নামাজ এই ইমামের পেছনে আদায় করছি বা এই ইমামের অনুসরণ করছি।
প্রিয় পাঠক আমরা ইসতিসকার নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানলাম এবং ইসতিসকার নামাজ আদায় পদ্ধতি সম্পর্কেও জেনেছি। কিন্তু এর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল খাস ভাবে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা। এখন বৃষ্টির জন্য দোয়া করা সম্পর্কে জেনে নিব।

বৃষ্টির জন্য দোয়া

দোয়া করা ইবাদত। এজন্য আমাদের বেশির থেকে বেশি দোয়া করা উচিত। দোয়াকে ইবাদতের মগজ বলা হয়। যখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমরা বিপদে পড়ি তখন আল্লাহর নিকট দোয়া ও প্রার্থনা করি। তেমনই অনাবৃষ্টি দেখা দিলে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হয়। স্বয়ং রাসূল (স) বৃষ্টি না হলে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছেন।

তাই আমাদেরও উচিত অনাবৃষ্টি হলে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা। দোয়া করার আগে খাস ভাবে তওবা করা এবং ইস্তেগফার পড়া বা ক্ষমা চাওয়া জরুরী। এরপর দরুদ শরীফ (দরুদে ইব্রাহিম যেটা নামাজে পড়া হয়) পাঠ করাও জরুরী। ইসতিসকার নামাজের পর যখন বৃষ্টির জন্য দোয়া করবেন তখন হাত উল্টিয়ে দোয়া করতে হবে। এভাবে বৃষ্টির জন‍্য আপনি দোয়া করতে পারেন-

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সবকিছু দেখেন এবং জানেন। তোমার কর্তৃত্বেই সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ হয়। হে আল্লাহ তুমি হয়তো আমাদের পাপের কারণে খুব নারাজ হয়েছ। তুমি আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর রহমত ও বরকত বর্ষিত করো। হে আল্লাহ তোমার দরবার ছাড়া আমাদের আর কোন দরবার নেই, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন মালিক নেই।

তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই, হে আল্লাহ তোমার কাছে ছাড়া চাওয়ার আর কোন জায়গা নেই আমাদের। তুমি আমাদের উপর রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করো। আমাদের ছোট বাচ্চাদের, পশুপাখিদের এবং যারা বাহিরে সারাদিন পরিশ্রম করে কাজ করে তাদের উপর রহম করো।

তারা তীব্র গরম এবং খরা হওয়ার কারণে অনেক কষ্ট পাচ্ছে। অনেক মানুষ হিট স্ট্রোক হয়ে মারা যাচ্ছে। হে মালিক তুমি আবহাওয়া শীতল করো। এভাবে কান্নাকাটি করে চোখের পানি ফেলে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হবে। ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের দোয়া কবুল করবেন।

ইসতিসকার নামাজ

বাংলাদেশ ভারত সহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র গরম আবহাওয়া এবং অনাবৃষ্টি দেখা দেওয়ার কারণে আলেমগণ ইসতিসকার নামাজ আদায় করছেন এবং বৃষ্টির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করছেন। এই নামাজ আদায় করা সুন্নাত। তবে জামায়াতের সাথে আদায় করা আবশ্যক নয়, চাইলে একা একা ইসতিসকার নামাজ আদায় করতে পারবেন।

এই নামাজের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং বৃষ্টির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করা। উত্তম হল খোলা মাঠে পায়ে হেঁটে সকল মুসলমান একত্রিত হওয়া এবং ইসতিসকার নামাজ পড়া।

লেখকের মন্তব্য: ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম - বৃষ্টির জন্য দোয়া

মানুষের সকল সমস্যার সমাধানকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলা। তিনিই পারেন আমাদেরকে সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে হেফাজত করতে। সুতরাং অভাব অনটনে, বিপদ মুসিবতে, রোগ ব্যাধিতে, খরা অনাবৃষ্টিতেও একমাত্র আল্লাহর দরবারে সকলকে চাইতে হবে। আর চাওয়ার পদ্ধতি হতে হবে রাসূলের মতো।

তাই আমাদের অনাবৃষ্টির সময় ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে আমল করতে হবে। প্রিয় পাঠক, আজকে আপনারা জানতে পেরেছেন ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম, ইসতিসকার নামাজের নিয়ত, বৃষ্টির জন্য দোয়া সম্পর্কে।

বর্তমানে আবহাওয়া অস্বাভাবিক গরম হওয়ার কারণে আমাদের সকলেরই অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাই বেশি বেশি ইস্তেগফার এবং ইসতিসকার নামাজ পড়তে হবে। ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। এজন্য ইসতিসকার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে সকলকে জানাতে এই কনটেন্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url