অণুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা - মানব কল্যাণে অণুজীবের ভূমিকা

ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনসম্মানিত পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করব অণুজীব সম্পর্কে। এখানে আমরা অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাস, অণুজীব বিজ্ঞান এর স্বর্ণযুগ, অণুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত তুলে ধরব।
অণুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়া আলোচনা করব অণুজীবের বৈশিষ্ট্য, অণুজীব জীববিজ্ঞান কাকে বলে, অণুজীব কত প্রকার ও কি কি, মানব কল্যাণে অণুজীবের ভূমিকা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিতে অণুজীবের ভূমিকা।

ভূমিকা

অণুজীব কি? অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব যাদের খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না এবং যাদের দেখতে হলে শক্তিশালী যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, সে সকল ক্ষুদ্র জীব কে অণুজীব বলা হয়ে থাকে। আক্ষরিক অর্থে মাইক্রো শব্দের অর্থ ছোট বা ক্ষুদ্র যা সাধারণত খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না। আর অর্গানিজম শব্দের অর্থ জীব।
সুতরাং উপরোক্ত দুটি শব্দ একত্রিত-ভাবে মাইক্রো-অর্গানিজম (Microorganism) শব্দের সৃষ্টি করেছে যার আভিধানিক অর্থ ছোট বা ক্ষুদ্র জীব। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যার অর্থ দাঁড়ায় অণুজীব। যেমন - ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যাকটিনোমাইসিটিস প্রভৃতি। ফরাসি সামরিক বাহিনীর Se Dillot নামক একজন শল্য চিকিৎসক ১৮৭৮ সালে আণুবীক্ষণিক জীবদের Microbes (জীবাণু) নামে অভিহিত করেন। 

তিনি জীবাণু বলতে বুঝাতে চেয়েছিলেন যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। দেখতে হলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর পরবর্তীতে জীবাণুকে অণুজীব হিসাবে প্রকাশ করেন। প্রকৃতপক্ষে জীবাণু এবং অণুজীব শব্দ দুটি একই অর্থ বহন করে। অণুজীবের অপকারিতা অর্থাৎ ক্ষতিকর দিক যেমন রয়েছে, তেমনই এর উপকারিতাও রয়েছে।

অণুজীব বিজ্ঞান কাকে বলে

জীববিজ্ঞানের যে শাখায় অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীবদের আবাসভূমি, শারীরিক কার্যাবলী, গঠন, বিস্তার ও আবিষ্কার এবং অন্যান্য জীব ও পরিবেশের সাথে তাদের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, পর্যালোচনা ও মানব কল্যাণে তাদের নিয়ে বহুমুখী গবেষণা করা হয় তাকে অণুজীব বিজ্ঞান বলে।

অণুজীব বিজ্ঞান আজ আর শুধু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি অণুজীব নিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে অণুজীববিজ্ঞান স্বীয় বৈশিষ্ট্যে বিজ্ঞানের একটি উন্নত, আধুনিক ও অতি অগ্রসর মান শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

অণুজীব কত প্রকার ও কি কি

সর্বপ্রথম বিজ্ঞানীগণ মনে করেন যারা এককোষী জীব এবং কোষগুলো আদি প্রকৃতির তারাই অণুজীব। আদি প্রকৃতির কোষ বলতে যে সমস্ত জীবের কোষগুলো নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয় অর্থাৎ কোষের নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিওলাস প্রভৃতি নেই তাদেরকে বুঝায়।

পরবর্তীতে বিজ্ঞানীগণ সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব বা জীবের ন‍্যায় কার্যকলাপে সক্ষম এদেরকেও অণুজীব হিসেবে অভিহিত করেছেন। একটি সম্পূর্ণ কোষ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেনি বা জীবের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য সম্বলিত অকোষীয় জীব-কণা বা জৈব রাসায়নিক বস্তু তাদেরকেও অণুজীবের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন - ভাইরাস, ভাইরয়েডস, প্রিয়ন প্রভৃতি।

অপরদিকে কিছু কিছু জীব যাদের জীব কোষ আদি প্রকৃতির নয় কিন্তু একটি প্রকৃত কোষই স্বতন্ত্রভাবে জীবন ধারণ করতে পারে এবং প্রকৃতিতে মানব কল্যাণে বিশেষ অবদান রাখতে পারে তারাও অণুজীবের অন্তর্ভুক্ত। যেমন - ঈস্টকোষ।

এমনভাবে কিছু নিম্ন শ্রেণির ছত্রাক যারা বহুকোষী হওয়া সত্বেও অণুজীব বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত এবং মানব কল্যাণে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। যেমন পেনিসিলিয়াম। উপরোক্ত আলোচনা হতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে বর্তমানে অণুজীব বিজ্ঞানের বিস্তার আধুনিক বিজ্ঞানের বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে। অণুজীব বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন অণুজীবের প্রকার নিচে উল্লেখ করা হল -
  • প্রিয়ন
  • ভিরয়েড
  • ভিরিয়ন
  • ভাইরাস
  • রিকেটশিয়া
  • মাইকোপ্লাজমা
  • অ‍্যাকটিনোমাইসিটিস
  • ব‍্যাকটেরিয়া
  • সায়ানো ব্যাকটেরিয়া (নীলাভ সবুজ শৈবাল)
  • মাইকোরাইজা
  • এককোষী ও নিম্ন শ্রেণির ছত্রাক
  • ম‍্যালেরিয়া প‍্যারাসাইট প্রভৃতি।
এছাড়াও রয়েছে অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রোটোজোয়াও নেমাটোড-এর অন্তর্ভুক্ত জীব সম্প্রদায়।

অণুজীবের বৈশিষ্ট্য

অণুজীবের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হল -

গঠন : এরা আণুবীক্ষণিক। এরা অকোষীয় বা কোষীয় গঠন-সম্পন্ন হতে পারে। কোষীয় অণুজীব আদি কোষী বা প্রকৃত কোষী হতে পারে।

বৃদ্ধি : এদের আয়ু সীমিত বলে এদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ে। কোন কোন ব‍্যাকটেরিয়া দ্বিবিভাজনের মাধ্যমে ২০ মিনিট সময়ের মধ্যে ২টি ব‍্যাকটেরিয়া হয়। অপরদিকে ভাইরাস জীবিত পোষক কোষের ভিতর ছাড়া সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে না।

পুষ্টি : অণুজীব সমূহ পরভোজী হতে পারে আবার স্বভোজী হতে পারে। পরভোজী ব্যাকটেরিয়া পরজীবী, মৃতজীবী বা মিথোজীবী হতে পারে। স্বভোজী ব‍্যাকটেরিয়া আবার আলোক-স্বভোজী বা রসায়ন-স্বভোজি হতে পারে। বহু অণুজীব আবার উৎসের প্রকৃতি পরিবর্তন করতে পারে।

চলন ও অভিযোজন : কতক অণুজীব বাহকের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারে না (যেমন ভাইরাস)। অপরদিকে কতক অণুজীব চলন ক্ষমতা সম্পন্ন (যেমন ফ্লাজেলাযুক্ত ব্যাকটেরিয়া)। এদের অভিযোজন ক্ষমতা অধিক হওয়ার কারণে সর্বত্র বিস্তৃতি দেখা যায়।

প্রতিরোধিতা : এদের বহু অ্যান্টিবায়োটিকে কোন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে না। অন্যদিকে কিছু জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল। ভাইরাস এর অ্যান্টিবায়োটিকের কোন সংবেদনশীলতা নেই।

সঞ্চারণ : এদের সঞ্চারণ প্রক্রিয়ায় বেশ বৈচিত্র্য দেখা যায়। বাতাস, পানি, ধুলাবালি, স্পর্শ, যান্ত্রিক, কীটপতঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে চলন ক্ষমতাহীন অণুজীব স্থানান্তরিত হয়ে নতুন পরিবেশে যায়।

অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাস

আজ থেকে মাত্র কয়েকশত বছর পূর্ব হতে বিজ্ঞান গবেষণায় অণুজীব সম্বন্ধে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং গবেষণা শুরু হলেও প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে মিশরের পিরামিডে তৎকালীন রাজা বাদশাহের মৃতদেহ মমি হিসেবে সংরক্ষিত করা হতো। তখন এরূপ ধারণা পোষণ করা হতো যে, ওই মৃতদেহ গুলো হয়তো পুনরায় জীবিত হয়ে উঠবে। যদিও এ ধারণা ছিল পুরোপুরি কল্পনা-প্রসূত।
গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণায় জানা গেছে মমিকৃত সব দেহে ও মুখমণ্ডলে গুটিবসন্তের দাগ রয়েছে যা ভাইরাস কর্তৃক সৃষ্ট রোগ লক্ষণেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আবার গবেষণায় জানা গেছে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বের মমিকৃত সবদেহে ব্যাকটেরিয়া নামক অণুজীবের DNA এর উপস্থিতি। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে উক্ত ডিএনএ ছিল যক্ষ্মা রোগের জীবাণু Mycobacterium tuberculosis-এর।

খ্রিস্টপূর্ব 75 অব্দে বিজ্ঞানী লুক্রিয়াস এবং ভ‍্যারো প্রকৃতিতে অত্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুজীবের কথা বলেন। মধ্যযুগে ৯৮০ থেকে ১০৩৪ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা বলেছেন, ছোঁয়াচে রোগের কারণ হল এমন সব ক্ষুদ্র অণুজীব যাদের খালি চোখে দেখা যায় না এবং এরা প্রধানত বাতাস ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।

১২০০ খ্রিস্টাব্দে রজার বেকন প্রকৃতিতে অণুজীবের কথা বললেও তা প্রমাণ করতে পারেননি। ১৫৯০-১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে হল‍্যান্ডবাসী দুই ভাই জেনস্ জেনসন ও জাকারিয়া জেনসন সর্বপ্রথম জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব পর্যবেক্ষণের দ্বার উন্মোচিত হয়।

তারপর সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন বিজ্ঞানী কর্তৃক আবিষ্কৃত অতি গুরুত্ববহ বিষয়াবলী অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাস রূপে পরিগণিত হয়।

অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্মরণীয় কয়েকজন বিজ্ঞানীর নাম হল-
  • রবার্ট হুক
  • এন্টোনি ভন লিউয়েন হুক
  • এডওয়ার্ড জেনার
  • লুই পাস্তুর
  • রবার্ট কক্
  • রোনাল্ড রস
  • আলেকজান্ডার ফ্লেমিং

অণুজীব বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ

হল‍্যান্ডের কাঁচ ব‍্যবসায়ী ও হাতুড়ে বিজ্ঞানী এন্টনি ভন লিউয়েন হুক কর্তৃক ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে Animalcules পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে অণুজীব বিজ্ঞানের গবেষণা শুরু হলেও ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত তেমন প্রসার লাভ করেনি।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর এর অণুজীবের ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়া আবিষ্কার হতে শুরু করে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এর্লিক কর্তৃক Syphiles রোগের জীবাণু এবং বিজ্ঞানী কার্লোস এর আমেরিকান ট্রাইপেনোসোমিয়েসি রোগের জীবাণু Trypanosoma cruzi নামক ফ্লাজেলাযুক্ত প্রোটোজোয়া আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত প্রায় ষাট বছরের এই গবেষণা কালকেই অণুজীব বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ বলা হয়।
এই স্বর্ণযুগের স্থপতি মূলত ফ্রান্সের বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ও জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কক্ নামক অণুজীব বিজ্ঞানীদ্বয়। এই দুই বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রম ও গবেষণার ফলে অণুজীব বিজ্ঞান আজ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, অণুজীব বিজ্ঞানের অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ও বিস্ময়কর উদ্ভাবন গুলো ১৮৫৭ থেকে ১৯১০ সনের মধ্যে অণুজীব বিজ্ঞানীদের নিরলস চেষ্টার ফল, যা অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাই উক্ত সময়কালকে অণুজীব বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ তথা Golden Age of Microbiology হিসেবে অভিহিত করা হয়।

অণুজীবের উপকারিতা

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অণুজীবের উপকারিতা : অণুজীব বিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে মানুষের রোগ দমনের বিভিন্ন পথ খুঁজে পাওয়া সক্ষম হয়েছে। চিকিৎসা অণুজীব বিজ্ঞানে (Medical Microbiology) রোগ উৎপাদনের জন্য কোন অণুজীব দায়ী, অণুজীব কিভাবে কাজ করে, অণুজীবের জীবন বৃত্তান্ত, কোন সময় জীবাণুকে আক্রমণ করলে সহজে দমন করা যায় এসব নিয়ে গবেষণা চলে।

রোগের কারণ নির্ণয় করে অণুজীবের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রোগ নিরাময় সম্ভব, রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধী বা কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল তা সনাক্ত করে অল্প সময়ে অল্প খরচে রোগ নিরাময় সম্ভব।

অণুজীব বিজ্ঞানীরা অণুজীবকে ব্যবহার করে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীবকে সহজেই দমন করতে সক্ষম হয়েছে। জলাতঙ্ক, বসন্ত এরকম আরও অনেক রোগের টিকা ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। অনেক ভাইরাস আছে যারা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

বিভিন্ন ধরনের অণুজীব থেকে টিকা, ভ্যাকসিন, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক জীবাণুর মিউট‍্যান্ট প্রজাতি তৈরি হয়েছে যা থেকে অধিক পরিমাণে ঔষধ তৈরি হয়ে থাকে।

ভ‍্যাকসিন তৈরিতে অণুজীবের উপকারিতা : বিজ্ঞানীরা রোগ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন প্রকার ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ভ্যাকসিন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। যেমন -

ব্যাকটেরিয়া থেকে প্রাপ্ত ভ্যাকসিন :
  • কলেরা রোগের জন্য কলেরা ভ্যাকসিন - vibrio cholerae থেকে।
  • ডিপথেরিয়া রোগের জন্য ডিপথেরিয়া ভ্যাকসিন - Corynebacterium diptheriae থেকে।
  • ধনুষ্টংকার রোগের জন্য ধনুষ্টংকার ভ্যাকসিন - Clostridium tetani থেকে।
  • যক্ষ্মা রোগের জন্য বি.সি.জি. ভ্যাকসিন - Mycobacterium tuberculosis থেকে।
  • টাইফয়েড রোগের ভ্যাকসিন Salmonella typhi ও paratyphi থেকে।
ভাইরাস থেকে প্রাপ্ত ভ্যাকসিন :
  • Small pox এর ভ‍্যাকসিন - Vaccinia virus থেকে।
  • পোলিও রোগের ভ্যাকসিন - Hepatitis virus থেকে।
  • ভাইরাসজনিত জন্ডিস রোগের ভ্যাকসিন - Hepatitis virus থেকে।
খাদ্যে অণুজীব বিজ্ঞান : সাধারণত অণুজীবের ক্রিয়ার ফলে খাদ্য দ্রব্য নষ্ট হয়। খাদ্যদ্রব্য নষ্টের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য বস্তুর উপর জন্মানোর জন্য এদের একটি উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন হয়। অণুজীব নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা, আদ্রতা, আলো ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে।

খাদ্যকে তাদের প্রতিকূল পরিবেশে রেখে সংরক্ষণ করা হয়। সুতরাং খ‍াদ‍্য সংরক্ষণে অণুজীব বিজ্ঞানের জ্ঞান বিশেষ অবদানে রেখেছে। অণুজীব বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অণুজীবকে খাদ্য তৈরিতে এবং দুগ্ধ শিল্পে অণুজীবকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ধরনের মোল্ড জাতীয় অণুজীব যথা : Mucor, Rhizopus, Botrytis, Aspergillus ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উপাদান তৈরি হয়ে থাকে যা Oriental food যেমন - Saya souce, Miso তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকার Agaricus মাশরুম হিসেবে খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অণুজীব কর্তৃক দুধ থেকে খাদ্য উৎপাদনের তালিকা :
  • পনির তৈরি হয় - Streptococcus, Lactobacillus অণুজীব থেকে।
  • টক ননী তৈরি হয় Streptococcus, Leuconostoc অণুজীব থেকে।
  • মাখন তৈরি করা হয় Streptococcus lactis এবং কিছু সুগন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে।
কৃষিতে অণুজীবের উপকারিতা : কৃষির উন্নতিতে বা ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে অণুজীববিজ্ঞানের বিশেষ অবদান রয়েছে। কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অণুজীব নিয়ে অণুজীব বিজ্ঞানের যে শাখাটি অবিরত কাজ করে চলেছে সেটা হল কৃষি অণুজীব বিজ্ঞান বা এগ্রিকালচারাল মাইক্রোবায়োলজি।

অনেক অণুজীব রয়েছে, যারা বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেনকে মাটিতে সংবন্ধন করে উদ্ভিদের ব্যবহার উপযোগী করে দেয়। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন অনেক গুণে বেড়ে যায়। নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী অণুজীব হল বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও নীলাভ সবুজ শৈবাল।

কিছু অণুজীব রয়েছে যারা ফসলী উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টি করে। এসব অণুজীব এর উৎস, বিস্তার ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে সহজেই এসব রোগ থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করা যায়। বর্তমানে অণুজীব আবাদের মাধ্যমে অল্প খরচে অণুজীব সার তৈরি করা হচ্ছে যা জমির উর্বরতা ও গুণাগুণ বৃদ্ধি করে। অণুজীবের কার্যকারিতায় বর্জ্য পদার্থ সমূহ দ্রুত পচনের ফলে সারে পরিণত হয়।

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিকারী অণুজীবের তালিকা :
  • ইউরিয়াকে হাইড্রোলাইস করে যার জন্য B. Pasteuri- Mycrococcus ureae এবং Sarcina ureae অণুজীব দায়ী।
  • নীলাভ সবুজ শৈবাল : এটি মাটিতে জৈব পদার্থ সরবরাহ করে। সাধারণত এরা মাটির উপরিভাগে থাকে। যেমন - Anabaena, Nostoc, Gloeotrichea, plectonema প্রভৃতি N2 Fixation করতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ছত্রাক সেলুলোজ ব্যবহার করে মাটিকে উর্বর করে।
শিল্পক্ষেত্রে অণুজীবের উপকারিতা : অণুজীব ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ভিত্তিক এনজাইম, হরমোন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, সাইট্রিক এসিড, বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যালকোহল ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে।

পৃথিবীতে ব্যবহৃত সকল অ‍্যান্টিবায়োটিকের অর্ধেকের বেশি অণুজীব থেকে তৈরি হয়ে থাকে। যেমন - Penicillum notatum থেকে গুরুত্বপূর্ণ পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হয়ে থাকে।

Acetobactor নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে ভিনেগার এবং Lactobacillus থেকে ল্যাকটিক অ‍্যাসিড তৈরি করা হয়ে থাকে। Aspergillus niger থেকে বাণিজ্যিকভাবে সাইট্রিক অ‍্যাসিড তৈরি করা হয়। ইস্ট ব্যবহার করে কেক, রুটি, অ্যালকোহল ইত্যাদি উৎপাদন সম্ভব।

চিনিকল থেকে উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত চিটাগুড় থেকে অণুজীবের কার্যকারিতায় অ্যালকোহল তৈরি হয়ে থাকে। বর্তমানে অণুজীব আবাদ করে বাণিজ্যিক ভিত্তিক ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে। এসবই অণুজীব বিজ্ঞানের অবদান।

অণুজীব থেকে প্রাপ্ত বাণিজ্যিক পদার্থের তালিকা :
  • সাইট্রিক অ‍্যাসিড
  • গ্লুকোনিক অ‍্যাসিড
  • পেকটিনেজ
  • জিবারেলিক অ‍্যাসিড
  • ল‍্যাকটিক অ‍্যাসিড
  • বেকারীর দ্রব‍্য (রুটি)
  • অ‍্যালকোহল
  • রিবোফ্লাভিন
  • অণুজীব জাত প্রোটিন
  • ভিনেগার
  • এসিটোন
অণুজীব দ্বারা উৎপন্ন বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের নাম :
  • পেনিসিলিন
  • স্ট্রেপটোমাইসিন
  • টেট‍্রাসাইক্লিন
  • পলিমিক্সিন
  • নিউমাইসিন ইত্যাদি।
খনিজ দ্রব্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অণুজীবের উপকারিতা : তেল, গ‍্যাস, কয়লা ইত্যাদি খনিজ পদার্থ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বর্তমানে অণুজীবের উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে গবেষকদের। অণুজীবের প্রকৃতি, সংখ্যা ইত্যাদি নির্ণয় করে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব। যেমন - Methanobacterium এর সংখ্যা নির্দিষ্ট সীমার বেশি হলে সেখানে তেল ও গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

চামড়া শিল্পে অণুজীবের উপকারিতা : গবেষণার মাধ্যমে অণুজীব বিজ্ঞানীরা জেনেছেন যে, কাঁচা চামড়া পাকা করতে, চর্বি জাতীয় পদার্থের পচন ঘটাতে এবং চামড়া থেকে লোম ছাড়াতে ব্যাকটেরিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তন্তুজাত উদ্ভিদ পচনে অণুজীবের উপকারিতা : তন্তুজাত উদ্ভিদ যেমন - পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যাকটেরিয়া বিশেষ অবদান রেখেছে। ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ার ফলেই পাট গাছ বা তন্তু জাতীয় অন্যান্য উদ্ভিদের পচন ঘটে। ফলে উদ্ভিদ থেকে আঁশ সহজেই পৃথক হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন যে, ১০০০ আঁটি পাটে ১ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করলে পাট পচনে সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে পাট পচন ত্বরান্বিত হয়।

মানব কল্যাণে অণুজীবের ভূমিকা

মানব কল্যাণে অণুজীবের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশের সর্বত্রই তাদের ব্যাপক উপস্থিতি। বায়ুমণ্ডল, মাটি, পানি, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ, খাদ্যদ্রব্য, মৃত কাঠ, কাপড়-চোপড়, চামড়া, জুতা, অপটিক্যাল যন্ত্রপাতি, জ‍্যামজেলি, আচার, মানুষের ন‍্যায় চামড়া, অন্তরীক্ষ সর্বত্রই তাদের বিচরণ ক্ষেত্র।

পানিশূন্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের বরফ অঞ্চলেও অণুজীবের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে অণুজীব পাওয়া যায় না। সারা পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অণুজীবের সাথে ওতপ্রোতভাবে ভাবে জড়িত।

অণুজীব বলতে অনেকেই বুঝেন যে, এরা মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরনের শুধুই রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছু কিছু অণুজীবের মাধ্যমে মানুষের রোগ দমনের বিভিন্ন পথ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। অণুজীব থেকে টিকা, ভ্যাকসিন, হরমোন ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে, যা মানব কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অণুজীব বিজ্ঞানের গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করা সম্ভব। বিভিন্ন প্রকার জৈবিক বস্তুর রিসাইক্লিনে অণুজীব ব্যবহৃত হয়। যেখানে ইউট্রিফিকেশন ঘটে সেখানকার দূষণ মাত্রা অণুজীব দ্বারা পরিমাপ করা যায়। আমাদের দেশের শিল্প কারখানা ও শহরের বর্জ‍্য কোনরকম পরিশোধন ছাড়াই পানিতে ফেলা হচ্ছে। ফলে পানি দূষণ হচ্ছে।

এক্ষেত্রে মানব কল্যাণে অণুজীবকে কাজে লাগিয়ে পানিকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব। নদীতে লঞ্চ, জাহাজ, স্টিমার ইত্যাদি চলার ফলে পানির উপরে তেলের একটি স্তর পড়ার সম্ভাবনা থাকে, এক্ষেত্রে তেল খাদক ব্যাকটেরিয়া এর সংখ্যা অধিক হারে বাড়িয়ে এ দূষণ রোধ করা সম্ভব। এছাড়াও আরও অনেক ক্ষেত্রে মানব কল্যাণে অণুজীবের ভূমিকা রয়েছে।

অণুজীবের অপকারিতা

অনেক ক্ষেত্রেই অণুজীবের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সহজেই লক্ষ্য করা যায়। পানি ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীব দ্বারা বিভিন্নভাবে দূষিত হয়। এই দূষিত পানি ব্যবহার করার কারণে ক্ষতিকর অণুজীব মানুষের বা পশুপাখির শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করে।

আবার অনেক অণুজীব রয়েছে যারা বায়ুর মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে মহামারী সৃষ্টি করে। বায়ুবাহিত রোগের মধ্যে হাম, বসন্ত, সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি প্রধান।

অনেক সময় অনুযায়ী উদ্ভিদের উপর আক্রমণ করে ফসল নষ্ট করে, তাই পরবর্তীতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। অণুজীবের দ্বারা যেসব রোগ সৃষ্টি হয় সে সব রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ, পশু পাখি এবং উদ্ভিদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিতে অণুজীবের ভূমিকা

স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিতে অণুজীবের ভূমিকা রয়েছে। মানুষ এবং পশু পাখির রোগ সৃষ্টির কারণেই হচ্ছে অণুজীব। আমরা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ক্ষতিকর ছত্রাক এর নাম শুনলেই ভয় পাই। কারণ স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিতে এদের অবদান রয়েছে।

আমাদের দেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কলেরা, টাইফয়েড, এইডস, যক্ষ্মা, ডেঙ্গুসহ আরও অনেক রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এসবের জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে অণুজীব।

স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিতে অণুজীব ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। অণুজীব দ্বারা স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অণুজীবে আক্রান্ত হয়ে কোন রোগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে।

উপসংহার: অণুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা - মানব কল্যাণে অণুজীবের ভূমিকা

অণুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। অণুজীবের কারণে মানুষের যেমন বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে তেমনি অণুজীবের দ্বারা বিভিন্ন উপকারও হয়ে থাকে।

অণুজীবের হাত থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং অণুজীবকে কাজে লাগাতে অণুজীববিজ্ঞান সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান ও গবেষণার প্রসার ঘটাতে হবে। কেননা একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমাদের সার্বিক কল্যাণে অণুজীববিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম।

সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জানতে পারলাম অণুজীবের উপকারিতা, অণুজীবের অপকারিতা, অণুজীব বিজ্ঞান কাকে বলে, অণুজীব কত প্রকার ও কি কি, অণুজীবের বৈশিষ্ট্য, অণুজীব বিজ্ঞানের ইতিহাস, অণুজীব বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ, মানব কল্যাণে অণুজীবের ভূমিকা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে অণুজীবের ভূমিকা সম্পর্কে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url