হজ কখন থেকে শুরু হয় - মহিলাদের হজের নিয়ম

কি কারণে রোজা না রাখা জায়েজ জানুনসম্মানিত পাঠক বর্তমানে হজের মাস চলে এসেছে তাই অনেকেই হজ কখন থেকে শুরু হয়, হজ করতে কত দিন লাগে, মহিলাদের হজের নিয়ম এবং কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় সে সম্পর্কে জানতে চান।
হজ কখন থেকে শুরু হয়
আজকে আমরা হজ কখন থেকে শুরু হয় এবং উপরোক্ত সকল বিষয় সমূহ সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব যা সকল হজযাত্রীদের জন্য উপকারে আসবে।

ভূমিকা

বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন রচনাকারী হজ একটি মৌলিক ইবাদত। আধ্যাত্মিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পন্ন উন্নয়নে হজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মুসলিম জাতির অন্যতম মহাসম্মেলন।
হজের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস রয়েছে। তাই যেকোনো সময় কেউ হজ আদায় করলে তার হজ কবুল হবে না। চলুন শুরুতেই আপনাদের জানিয়ে দেই হজ কখন থেকে শুরু হয় এবং এর সাথে আপনি জানতে পারবেন হজ করতে কত দিন লাগে।

হজ কখন থেকে শুরু হয়

হজ এমন একটি ইবাদত যা শর্তসাপেক্ষে আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। এই হজের কিছু নির্দিষ্ট সময় এবং তারিখ রয়েছে। যা জানার মাধ্যমে আমরা হজ সম্পন্ন করতে পারি। যদি হজ কখন থেকে শুরু হয় তা আমরা না জানি তাহলে আমরা হজ আদায় করতে পারব না। কেননা যেকোনো সময় হজ করা যায় না।

হজের জন্য আল্লাহ তা'আলা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট পাঁচ দিনে নির্দিষ্ট পাঁচ জায়গায় নির্দিষ্ট নয়টি কাজ সম্পন্ন করার নামই হজ। তো চলুন হজের সময়সূচী অর্থাৎ হজ কখন থেকে শুরু হয় এবং শেষ হয় তা ধাপে ধাপে বিস্তারিত জেনে নেই।
হজ্জে ইফরাদ-কারী ৮ জিলহজের পূর্বেই ইহরাম বাঁধবে অতঃপর মক্কায় পৌঁছেই তাওয়াফে কুদুম আদায় করে নিবে। এ সময় ইচ্ছা করলে সায়ী করা যাবে। যদি এখন সায়ী করে, তবে ১০ জিলহজ ফরজ তাওয়াফের সাথে আর সায়ী করতে হবে না।

হজ্জে কিরান-কারী হজের মাস সমূহের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজের ৮ তারিখের পূর্ব পর্যন্ত) মধ্যে ইহরাম বেঁধে ওমরা শেষ করে হালাল না হয়ে (মাথা না মুণ্ডিয়ে) হজের জন্য অপেক্ষা করবে।

হজ্জে তামাত্তুকারী হজের মাস সমূহের মধ্যে ওমরা সম্পন্ন করে মাথা মুণ্ডিয়ে হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর ৮ জিলহজের পূর্বে হজের ইহরাম বাঁধবে। তামাত্তু ও কিরান কারীদের তাওয়াফে কুদুম করতে হবে না। কারণ ওমরার তাওয়াফের দ্বারা তাদের তাওয়াফে কুদুম আদায় হয়ে গিয়েছে। তাদেরকে ১০ জিলহজ ফরজ তাওয়াফের সাথে হজ্জের সায়ী করতে হবে।

প্রথম দিন ৮ জিলহজ তারিখে করণীয়:

মক্কা থেকে মিনায় গিয়ে যোহর থেকে ঈশা পর্যন্ত নামাজ পড়ে মিনায় রাত্রি যাপন করা।

দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ তারিখে করণীয়:

  • মিনায় ফজরের নামাজ পড়ে আরাফায় জোহরের নামাজ পড়তে হবে এবং আরাফায় অবস্থান করতে হবে।
  • আসর নামাজ আরাফায় পড়তে হবে। (যদি মসজিদে নামিরার জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ে তবে জোহর এবং আসর একত্রে আদায় করা যাবে)
  • মাগরিবের সময় মাগরিবের নামাজ না আদায় করে মুজদালিফার দিকে যাত্রা করতে হবে।
  • মাগরিব এবং ঈশার নামাজ ঈশার ওয়াক্তে এক সাথে মুজদালিফায় আদায় করা (ওয়াজিব)।
  • মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করতে হবে।

তৃতীয় দিন ১০ জিলহজ তারিখে করণীয়:

  • মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে মিনার দিকে রওয়ানা করা।
  • মিনায় প্রথমে বড় শয়তানকে কংকর মারা অতঃপর কুরবানি করে মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা।
  • ফরজ তাওয়াফের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন।
  • রাত্রি মিনায় যাপন করা।

চতুর্থ দিন ১১ জিলহজ তারিখে করণীয়:

  • দ্বি-প্রহরের পর মিনায় কংকর মারা। প্রথমে ছোট শয়তান তারপর মধ্যমা তারপর বড় শয়তানকে কংকর মারা।
  • মিনায় রাত্রি যাপন করা।

পঞ্চম দিন ১২ জিলহজ তারিখে করণীয়:

  • দ্বিপ্রহরের পর মিনায় কংকর মারা, ছোট থেকে বড় পর্যায়ক্রমে।
  • মক্কা থেকে ফিরে আসার পূর্বে যে কোন সময় বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে।
এ ছিল হজের পূর্ণ সময়সূচী এবং এ থেকে বোঝা গেল যে হজের সময় জিলহজ মাসের ৮ তারিখ বা তার পূর্বে থেকেই শুরু হয়।

হজ করতে কত দিন লাগে

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি হজ করতে কতদিন লাগে। জিলহজের ৮ তারিখ থেকে জিলহজের ১২ তারিখ পর্যন্ত হজের সময়। সে হিসাবে গণনা করলে হজ করতে ৫ দিন লাগে।

কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়

হজ আদায় করা ফরজ। কিন্তু সকলের জন্য হজ ফরজ নয়। মক্কায় পৌঁছতে পারবে এমন ব্যক্তিদের উপর আল্লাহ হজ ফরজ করে দিয়েছেন। অনেকেই জানেন না কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয় অর্থাৎ মক্কায় গিয়ে পৌঁছানো যায়। আমরা আপনাকে জানাবো ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়।
বাংলাদেশের মানুষের ক্ষেত্রে বর্তমানে অন্যান্য বা সাংসারিক খরচ বাবদ কারো কাছে যদি ৫,৯০,৮০০ টাকা থাকে তাহলে হজ ফরজ হবে। কেননা এই টাকায় বাংলাদেশে হজ প‍্যাকেজ পাওয়া যাচ্ছে।

আর ভারতের মানুষদের ক্ষেত্রে রাজ্য ভেদে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়। কেননা রাজ্য ভেদে এই টাকার মধ্যেই ভারত থেকে হজ প‍্যাকেজ পাওয়া যায়।

শুধু এই পরিমাণ টাকা থাকলেই হবে না, হজ ফরজ হওয়ার জন্য আরও বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যাদের উপর হজ পালন ফরজ:
  • মুসলিম হতে হবে। সুতরাং অমুসলিমদের উপর হজ ফরজ নয়।
  • স্বাধীন হতে হবে, সুতরাং গোলামদের উপর হজ ফরজ নয়।
  • বালেগ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে, সুতরাং বাচ্চাদের উপর হজ ফরজ নয়।
  • জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। উন্মাদ বা পাগলের জন্য হজ ফরজ নয়।
  • শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া। অসুস্থ ও পঙ্গু ব্যক্তির উপর হজ ফরজ নয়।
  • পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত হজে রওয়ানা থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা থাকা।
  • হজ্জের পথ নিরাপদ থাকতে হবে।
  • দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হতে হবে।
  • মহিলাদের সঙ্গে মাহরাম থাকা।
মহিলাদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ শর্ত হচ্ছে, হজের সফরে স্বামী বা অন্য কোন মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা। কেননা মহিলাদের কোন মাহরাম পুরুষ ছাড়া হজ করতে রাসূলুল্লাহ (স) নিষেধ করেছেন। চলুন জেনে নেই মহিলাদের হজের নিয়ম সম্পর্কে।

মহিলাদের হজের নিয়ম

মহিলাদের হজ্জের নিয়ম অনেকেই জানেন না। পুরুষ এবং মহিলাদের হজের নিয়ম এর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। মহিলাদের হজের নিয়ম নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা হল:
  • মাহরাম পুরুষ না থাকলে মহিলাদের হজ ফরজ নয়। (যাদের সাথে বিবাহ হারাম অর্থাৎ, দেখা দেওয়া জায়েজ। তারা হল- স্বামী, সন্তান, পিতা, দাদা, নানা, মামা, চাচা, আপন ভাই, শ্বশুর, ভাগিনা, ভাতিজা, জামাতা এবং নাতি। বাকি সবাইকে দেখা দেওয়া এবং কথা বলা হারাম এবং তাদের সাথে হজ করাও হারাম) এভাবেই যদি মৃত্যু হয়ে যায় তবে বদলি হজ করার ওসিয়ত করে যাবে।
  • মহিলারা সেলাই করা কাপড় দ্বারা ইহরাম বাঁধবে। কাপড় রঙিন হলেও অসুবিধা নেই। অলংকারও ব্যবহার করতে পারবে এবং পুরো পা ঢেকে রাখে এমন জুতা পরতে পারবে। কিন্তু নিজেকে আকর্ষণীয় করে সুসজ্জিত করা নিষেধ।
  • পুরুষদের ন্যায় মাথা খোলা রাখবে না। কিন্তু মুখমণ্ডল কাপড় দ্বারা ঢাকবে না। বরং এমন অবস্থা করে নিবে যাতে মুখমণ্ডল আবৃত হয়ে যায় এবং চেহারার সাথে কাপড়ের স্পর্শ না হয়। যেমন ক্যাপ ব্যবহার করে এর সামনে কাপড় ঝুলিয়ে দিবে।
  • উচ্চস্বরে তলবিয়া পড়বে না।
  • আস্তে আস্তে তাওয়াফ করবে, দ্রুতগতিতে চলাচল করবে না।
  • সায়ী করার সময় পুরুষদের ন্যায় দৌড়াবে না। স্বাভাবিক গতিতে চলবে।
  • মাথা মুণ্ডাবে না। বরং আঙ্গুলের এক কর থেকে একটু বেশি পরিমাণ চুল কেটে দিবে।
  • মহিলাদের শারীরিক অসুস্থ অবস্থায় হজের নিয়ম কানুনের বিষয়গুলো একজন বিজ্ঞ আলেম হতে জেনে নিবেন।

উপসংহার: হজ কখন থেকে শুরু হয় - মহিলাদের হজের নিয়ম

যাদের হজ করার সামর্থ্য এবং ইচ্ছা রয়েছে তাদের অবশ্যই হজ কখন থেকে শুরু হয় তা অবশ্যই জানতে হবে। আর সময় মতো হজ পালন করতে হবে। বর্তমানে অনেক মহিলা রয়েছে যারা মাহরাম ছাড়াই হজে গমন করে থাকেন।

হজ এজেন্সি সমূহের মাধ্যমে অপরিচিত একজনকে ভুয়া মাহরাম বানিয়ে ভিসা নেওয়া হয়। এটা অনেক বড় গর্হিত কাজ। এমন হজের কোন সওয়াব তো হবেই না বরং উল্টো শক্ত গুনাহগার হতে হবে। সুতরাং মহিলাদের হজের নিয়ম অবশ্যই মেনে হজ আদায় করতে হবে।

সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা আপনাকে জানালাম হজ কখন থেকে শুরু হয় এবং হজ করতে কত দিন লাগে, কত টাকা থাকলে হজ ফরজ হয়, মহিলাদের হজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। হজ সম্পর্কে এই আর্টিকেলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url