হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা - হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ

হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতাপ্রিয় পাঠক, আজকে হাঁসের ডিমের উপকারিতা, হাঁসের ডিমের অপকারিতা, হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ, হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে, গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা, হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম এবং হাঁসের ডিম কাঁচা খেলে কি হয় ইত্যাদি সম্পর্কে জানাব।
হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা
হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

আপনি যদি ডিম খেতে পছন্দ করেন তাহলে হাঁসের ডিম আপনার খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। হাঁসের ডিম পুষ্টিগুণে ভরপুর। হাঁসের ডিমের খোসা ফ্যাকাসে নীল, নীল সবুজ এবং কদাচিৎ সাদা সহ বিভিন্ন রঙের হতে পারে।

হাঁসের ডিম আপনি যেভাবেই রান্না করেন না কেন, এটিতে মুরগির ডিমের তুলনায় ৫০% বেশি ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে আরও রয়েছে ওমেগা-৩ ফ‍্যাটি অ‍্যাসিড। আগের ডিম উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এই ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল এর পাশাপাশি প্রচুর ফ‍্যাট ও কোলেস্টেরল থাকে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন বি১২ রয়েছে, যা রক্ত কণিকা, ডিএনএ সংশ্লেষণ এবং স্বাভাবিক স্নায়বিক ফাংশনের জন্য প্রয়োজনীয়। উপকারিতার পাশাপাশি হাঁসের ডিমের অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ

হাঁসের ডিমে ভিটামিন সি ব্যতীত সমস্ত ভিটামিন থাকে। এগুলোতে আয়রন, তামা এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় ট্রেস উপাদান রয়েছে। একটি হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ :
  • ক‍্যালরি - ১৩০
  • প্রোটিন - ৯ গ্রাম
  • চর্বি ১০ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট - ১ গ্রাম
  • ফাইবার - ০ গ্রাম
  • চিনি -১ গ্রাম
  • ফসফরাস - ১৪৪ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম - ১৪৬ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম - ১৮৬ মিলিগ্রাম
এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

হাঁসের ডিমের উপকারিতা

উচ্চ পুষ্টিগুণের কারণে হাঁসের ডিম সব বয়সের মানুষের কাছে জনপ্রিয় খাবার হয়ে উঠেছে। হাঁসের ডিমের উপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হল :

মাংসপেশি উন্নত করে : হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি প্রোটিন রয়েছে। আপনার চর্বিহীন বেশি তৈরি করতে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং ব্যায়ামের পর শক্তি পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে : জিংক, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়ামের ঘাটতি গুলো হতাশা এবং ক্লান্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজই হাঁসের ডিমে পাওয়া যায়। হাঁসের ডিম ভিটামিন ডি সরবরাহ করে। ভিটামিন ডি বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : ভিটামিন বি ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ৮টি বি-ভিটামিন রয়েছে, এইসব ভিটামিন ত্বকের বিভিন্ন কাজে লাগে এবং হাঁসের ডিমে এগুলো সবই রয়েছে। এগুলো ভিটামিনের উপকারিতা হল -
  • কোলাজেন বজায় রাখে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
  • ব্রণ, একজিমা এবং ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বকের মৃত কোষগুলো দূর করে এবং নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে।
অ‍্যালার্জি-জনিত সমস্যা হয় না : কিছু মানুষ আছে যাদের মুরগির ডিমে এলার্জি আছে। কিন্তু হাঁসের ডিম খেলে অ‍্যালার্জি-জনিত সমস্যা হয় না। কারণ হাঁসের ডিমের প্রোটিন মুরগির ডিমের থেকে কিছুটা আলাদা। তাই ডিমে যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য হাঁসের ডিম দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভূমিকা রাখে : হাঁসের ডিম শরীরে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।

ক্যান্সারের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে : হাঁসের ডিমের লাল কুসুম মানুষের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তারকে বাধা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাঁসের ডিমের লাল কুসুম থেকে নির্যাস বের করে ইঁদুরকে ৩৪ দিন দেওয়া হয়েছিল। গবেষণার ফলাফল দেখা যায় যে, ইঁদুরের ওপর ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং চলাচলে বাধা দেয় হাঁসের ডিমের নির্যাস।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : সুস্থ হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হল ক্যালসিয়াম। আর মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমে ক্যালসিয়াম বেশি পাওয়া যায়। তাই হাড়ের ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করতে হাঁসের ডিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : হাঁসের ডিমে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়। যার রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। হাঁসের ডিমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। হাঁসের ডিম গর্ভবতী মায়ের জন্য এবং বাচ্চার জন্য পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। হাঁসের ডিম গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ও শক্তি যোগায়। এই ডিমে পাওয়া কোলিন নবজাতকের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং বিকাশে সহায়তা করে।

গর্ভবতী মায়েদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। তাহলে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং শিশুর স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে।

হাঁসের ডিমের অপকারিতা

হাঁসের ডিমের কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। হাঁসের ডিমের অপকারিতা গুলো নিম্নরূপ :

উচ্চ-কোলেস্টেরল : হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি কোলেস্টেরল থাকে। যা হার্টের রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। যেহেতু কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে তাই কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটুকু হার্টের রোগীরা বা যাদের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে ক্ষতি হতে পারে তারা খেতে পারেন।

অতিরিক্ত দাম : মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমের দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক মানুষই হাঁসের ডিম খেতে পারেন না এবং পুষ্টির চাহিদাও মেটাতে পারে না।

অ‍্যালার্জি : কারো কারো ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিশুদের জন্য হাঁসের ডিম অ‍্যালার্জির কারণ হতে পারে। হাঁসের ডিম খাওয়ার পর অ‍্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

বমি : অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়ার ফলে বমি হতে পারে। অনেক সময় ডায়রিয়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ব‍্যাকটেরিয়া : স‍্যালমোনেলা হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা মুরগি এবং হাঁসের ডিমের পাওয়া যেতে পারে। এর কারণে ডায়রিয়া এবং জ্বর হতে পারে। ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে ২০১০ সালে স‍্যালমোনেলার একটি বড় প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল যা হাঁসের ডিম খাওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। এজন্য হাঁসের ডিম খাবার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করবেন এবং ভালোভাবে সময় নিয়ে রান্না করা উচিত।

সতর্কতা

মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমের কুসুমে চর্বি এবং কোলেস্টেরল বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস বা কার্ডিওভাসকুলার, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সপ্তাহে তিনটির বেশি হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত নয়। তবে চাইলে প্রতিদিন ডিমের সাদা অংশটুকু খেতে পারেন। আবার নিয়মিত হাঁসের ডিমের কুসুম খেলে প্রেশার বেড়ে যেতে পারে।

হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে

হাঁসের ডিমে এলার্জি আছে। হবে অন্যান্য ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিম খেলে কম মানুষেরই এলার্জি জনিত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণত হাঁসের ডিমের সাদা অংশে এলার্জি থাকে, কুসুম খেলে এলার্জি-জনিত সমস্যা দেখা যায় না। তাই ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য না থাকলে সাদা অংশ বাদ দিয়ে শুধু কুসুম খেতে পারেন। হাঁসের ডিম খাওয়ার পর এলার্জি জনিত সমস্যার লক্ষণগুলো হল -
  • ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ঠাণ্ডা জনিত রোগ যেমন হাঁচি কাশি সর্দি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
  • ক্লান্তি-ভাব এবং বমিও হতে পারে।

হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতার দিক বিবেচনা করে সঠিক নিয়মে হাঁসের ডিম খেতে হবে। হাঁসের ডিম সিদ্ধ বা ভেজে খেতে পারেন অথবা তরকারিতে হাঁসের ডিম ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া নুডুলস, পাস্তা সহ বিভিন্ন নাস্তার সাথে ঘাসের ডিম যোগ করে খেতে পারেন।
হাঁসের ডিমে যেহেতু স‍্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, তাই এই ডিম ভালোভাবে সেদ্ধ করতে হবে। ৫ থেকে ৮ মিনিট সময় নিয়ে সেদ্ধ করা উচিত।

হাঁসের ডিম কাঁচা খেলে কি হয়

হাঁসের ডিম কাঁচা খেলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই কাঁচা অবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়া উচিত নয়। কাঁচা হাঁসের ডিমের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রান্না করলে মারা যায়। তাই হাঁসের ডিম কাঁচা না খেয়ে রান্না করে খাওয়া উচিত।
এছাড়া কাঁচা ডিমে অ‍্যাভিডিন নামক উপাদান পাওয়া যায়, এই উপাদান গ্রহণের ফলে শরীর ভিটামিন শোষণ করতে পারে না। তাই ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাঁসের ডিম কাঁচা খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা হল -
  • বমি বা বমি বমি ভাব।
  • পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে জ্বর আসতে পারে।

উপসংহার : হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

হাঁসের ডিম ছোট বড় সবার জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঁসের ডিম সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং বয়স জনিত রোগ বা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। সুস্থ জীবন পেতে নিয়মিত ১-২টি হাঁসের ডিম আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। আর যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা অবশ্যই হাঁসের ডিম খাওয়ার আগে সচেতন হবেন।

সম্মানিত পাঠক, হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা, হাঁসের ডিমের পুষ্টিগুণ, গর্ভাবস্থায় হাঁসের ডিম খাওয়ার উপকারিতা, হাঁসের ডিম কাঁচা খেলে কি হয় এবং হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে, হাসির ডিম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন।

উপরোক্ত দিক নির্দেশনা গুলো মেনে হাঁসের ডিম খেতে পারেন। এই আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url