ইউক‍্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন

মাশরুম চাষ পদ্ধতি জানুনসম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা ইউক‍্যালিপটাস গাছের উপকারিতা, ইউক‍্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন, ইউক‍্যালিপটাস গাছের অপকারিতা, ইউক‍্যালিপটাস গাছের বৈশিষ্ট্য, ইউক‍্যালিপটাস তেলের উপকারিতা, ইউক‍্যালিপটাস তেল কোথায় পাওয়া যায়, ইউক‍্যালিপটাস তেলের দাম ইত্যাদি সম্পর্কে জানব।
ইউক‍্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন
ইউক‍্যালিপটাস গাছ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব, তাই শেষ অবধি পড়ুন।

ভূমিকা

পৃথিবীতে সর্বত্রই ইউক্যালিপটাস গাছ দেখা যায়। বাংলাদেশে এই গাছকে নীলগিরি গাছ বলা হয়ে থাকে। এই অস্ট্রেলিয়ান গাছটি আকারে বেশ লম্বা হয়। ইউক‍্যালিপটাস গাছের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকই বেশি।

এজন্য ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই গাছ পরিবেশের নানান ক্ষতি সাধনা করে থাকে। তবুও বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণ এই গাছ রোপণ করা হয়।

ইউক্যালিপটাস গাছের বৈশিষ্ট্য

ইউক্যালিপটাস গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই গাছের প্রায় ৭০০ প্রজাতি রয়েছে। বৃহত্তম প্রজাতিগুলোর গাছ প্রায় ৩০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
তুষার মণ্ডলীয় অঞ্চলের গাছ টিকে থাকতে পারে না। পৃথিবীর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল জুড়ে ছায়া বৃক্ষ হিসেবে বা বনায়নে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। ইউক্যালিপটাস গাছের পাতা সরু এবং লম্বা হয়। এই গাছের পাতা এবং ডালপালা সহজে পচেনা।

ইউক‍্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন

ইউক্যালিপটা গাছ প্রকৃতির জন্য হুমকি স্বরূপ। ইউক‍্যালিপটাস গাছের অপকারিতা থাকার কারণে এই গাছকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেসব কারণে ইউক‍্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ :
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছ যে মাটিতে রোপণ করা হয় সে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এই গাছ প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ লিটারের মতো পানি শুষে নেই, ফলে মাটি অত্যন্ত শুষ্ক হয়।
  • এই গাছের পাতা এবং ডালপালা গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেক সময় লেগে যায়, ফলে আবর্জনার সৃষ্টি হয় এবং মাটির ও পরিবেশের ক্ষতি করে।
  • কিছু প্রজাতির ইউক্যালিপটাস গাছের কাঠ খুব বেশি মজবুত হয় না।
  • এই গাছ প্রকৃতির অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত‍্যাগ করে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং তাপমাত্রা অধিকারে বৃদ্ধি পায়।
  • এই গাছ প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে থাকে। এমনকি মাটির অনেক গভীর থেকেও পানি শুষে নাই, তাই মাটির অনেক ক্ষতি হয় এবং আশেপাশের গাছ সঠিক পরিমাণ পানি গ্রহণ করতে পারে না।
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছে সাধারণত কোন পাখি বাসা বাধেনা, উপযোগী না হওয়ার কারণে। এই গাছে খুব সহজেই আগুন ধরতে পারে।
উপরোক্ত অপকারিতা গুলোর কারণে বাংলাদেশের ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ইউক‍্যালিপটাস গাছের উপকারিতা

ইউক‍্যালিপটাস গাছের পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই গাছটি ঔষধি গুণের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ইউক‍্যালিপটাস গাছের উপকারিতা গুলো নিচে তুলে ধরা হল :
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছে পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি বড় উৎস। এই গাছের পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন। কাঁচা পাতা বিষাক্ত হতে পারে। অবশ্যই শুকনো পাতা নির্বাচন করতে হবে। তবে শিশুদের না খাওয়াই উচিত, এটি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছের তেল শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের নাক বন্ধ হওয়া, কাশি এবং ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছ থেকে পোকামাকড় প্রতিরোধক এবং কীটনাশক তৈরি করা হয়। লেবু এবং ইউক্যালিপটাস তেল মশা ও মাছি তাড়াতে কার্যকর।
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ফার্নিচার এবং ভালো নৌকা তৈরি করা যায়। কোন কোন প্রজাতির গাছ অনেক টেকসই হয়।
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছ থেকে নিঃসৃত তেল দ্বারা সুগন্ধি সাবান এবং ঔষধ প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা যায়।
  • ইউক্যালিপটাস ফুল থেকে মধু তৈরি হয় এবং এটি প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এই মধুতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ যা রোগ প্রতিরোধ করে।
  • ইউক‍্যালিপটাস গাছ অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম তৈরি করতে কাজে লাগে এবং আপনার যদি আমাশয় হয়ে থাকে এই গাছের শিকড় তুলে গরম পানিতে সেদ্ধ করুন, এরপর ছাগলের দুধ দিয়ে শিকড়টি খেয়ে ফেলুন। এর ফলে আমাশয় রোগ ভালো হয়।
  • হঠাৎ কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম পাচ্ছেন না? তাহলে দ্রুত ইউক্যালিপটাস পাতা বেটে নিয়ে আহত অংশে ভালোভাবে লাগান, এতে ক্ষত দ্রুত সেরে যায়।

ইউক‍্যালিপটাস তেলের উপকারিতা

ইউক‍্যালিপটাস গাছের ফুল থেকে তেল উৎপাদন করা হয়। ইউক‍্যালিপটাস তেলের উপকারিতা গুলো হল :
  • ঠাণ্ডার সমস্যা দূর করে : সকল ধরনের ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে পারে। যেমন সর্দি, কাশি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • উকুন দূর করে : অনেক পুরুষ এবং মহিলাদের মাথায় উকুন দেখা যায়, যা মাথার রক্ত পর্যন্ত শুষে নেই এবং চুলেরও ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় আপনার ব্যবহৃত তেলের সাথে ইউক‍্যালিপটাস তেল মিশে নিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। এতে উকুন দূর হবে।
  • চুল ঘন এবং মজবুত করে : আপনার ব্যবহৃত তেলের সাথে ইউক্যালিপটাস তেল একত্রে চুলে দিলে চুল ঘন এবং মজবুত হয়।
  • ছত্রাকের সংক্রমণে বাধা দেয় : ইউক্যালিপটাস পাতার তেল ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
  • ব্রণের সমস্যা দূর করে : ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে ইউক্যালিপটাস গাছের তেল।

সতর্কতা

ইউক্যালিপটাস এর তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন: অ‍্যালার্জি বা চুলকানি হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া এবং ফুসকুড়ি হতে পারে। শিশুদের ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।

ইউক্যালিপটাস তেল কোথায় পাওয়া যায়

সাধারণত ইউক্যালিপটাস গাছের ফুলের বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে যেহেতু ইউক্যালিপটাস গাছ চাষ করা একদম নিষিদ্ধ। তাই আপনি যদি বাংলাদেশের বাসিন্দা না হয়ে থাকেন তাহলে এই গাছ চাষ করে তেল উৎপাদন করতে পারেন।

এছাড়া বিভিন্ন দোকানে ইউক্যালিপটাস তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও অনলাইনের মাধ্যমে ইউক্যালিপটাস তেল সংগ্রহ করতে পারেন।

ইউক‍্যালিপটাস তেলের দাম

ইউক্যালিপটাস তেলের উপকারিতা অনেক। ১০ মিলিগ্রাম ইউক্যালিপটাস তেল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় পেয়ে যেতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা : ইউক‍্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন

ইউক্যালিপটাস গাছ যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পরিবেশের অপকার বা ক্ষতি করে এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই অধিক হারে এই গাছ রোপণ বন্ধ করা উচিত। ইউক্যালিপটাস গাছ আমাদের যেসব উপকারে আসে, সেসব উপকার পেতে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। 

আমাদের পরিবেশকে উন্নত করতে হলে এই রাক্ষুসে ইউক্যালিপটাস গাছ অধিক হারে রোপণ করতে দেখলে নিধন করা উচিত। ইউক্যালিপটাস গাছের অপকারিতা সম্পর্কে এবং ইউক্যালিপটা গাছ নিষিদ্ধ কেন সে সম্পর্কে সকলকে সোশ্যাল মিডিয়া বা বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

সম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের শেয়ার করলাম ইউক্যালিপটাস গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা, ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন এবং ইউক্যালিপটাস তেলের উপকারিতা সহ আরও নানান বিষয়ে।

আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে আজকের এই আর্টিকেলটি সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন, যাতে ইউক্যালিপটাস গাছের অপকারিতা এবং ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ কেন সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে পারে। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url