ভূমিকম্পের সময় করণীয় - ভূমিকম্প কেন হয়

গান বাজনা সম্পর্কে ইসলাম কি বলেসম্মানিত পাঠক, ভূমিকম্প কাকে বলে, ভূমিকম্পের সময় করণীয়, ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায়, ভূমিকম্প মোকাবিলায় করণীয়, ভূমিকম্প কেন হয়, ভূমিকম্পের পরে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। তাই ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকম্পের সময় কি করতে হবে
এছাড়াও এখানে আমরা তুলে ধরব বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস, ভূমিকম্প প্রতিরোধে করণীয় ও বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি এবং আরও অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলবো।

ভূমিকা

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এদেশে প্রতি বছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বারবার সংঘটিত বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, খরা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন, ভূমিধ্বসের পাশাপাশি যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদেরকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সেটি হলো ভূমিকম্প। 

বিগত কয়েক বছর ধরে বারবার মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প এদেশে আঘাত হেনেছে। প্রশমনের উপযুক্ত পন্থা না থাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সকলের পরিণতি নিয়ে সম্প্রতি আমাদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ভূমিকম্পের ভয়াবহ বিপর্যয় এড়াতে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত না হলে এ দুর্যোগের বিরাট ঝুঁকি নিয়েই আমাদের বাস করতে হবে।

ভূমিকম্প কাকে বলে

ভূমিকম্প কাকে বলে : পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কিছু অংশ কখনো কখনো স্বল্প সময়ের জন্য হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে ওঠে, একেই বলে ভূমিকম্প। সাধারণত এরূপ কম্পন মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় আবার কখনো কিছু সময় পর পর সংঘটিত হয়। কম্পনের মাত্রা কখনো মৃদু আবার কখনো অত্যন্ত প্রবল হয়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তা কেন্দ্র নামে অভিহিত। 
ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূকম্পনের এই কেন্দ্র ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। আর কেন্দ্রের ঠিক উপরে ভূপৃষ্ঠস্থ বিন্দুকে উপকেন্দ্র বলে। উপকেন্দ্র কেন্দ্রের সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত বলে সেখানে কম্পনের বেগ সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়।

এটি এমন একটি শক্তি যা ভূপৃষ্ঠকে প্রবল ঝাঁকুনি দ্বারা আকস্মিক বা দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। ভূমিকম্প নিজে কোনো প্রাণহানি বা জখমের কারণ হয় না। তবে পরোক্ষভাবে পড়ন্ত ভারী বস্তু বা দেয়াল-ধসের মাধ্যমে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

ভূমিকম্প কেন হয়

আপনারা অনেকেই জানেন না ভূমিকম্প কেন হয়। সম্প্রতি আমাদের দেশে পুনঃপুন মৃদু মাঝারি ভূকম্পন এবং ইন্দোনেশিয়া, হাইতি প্রভৃতি দেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অবলোকনে এর কারণ সম্পর্কে সকলেরই কৌতুহল বাড়ছে।
ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধানে ভূতত্ত্ববিদগণ লক্ষ্য করেন, শিলাচ‍্যুত, তাপ বিকিরণ, পানি বাষ্পীভবন, ভূমিধস প্রভৃতি কারণে ভূত্বকের নিচে আন্দোলিত হয় এবং ভূকম্পন অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুযায়ী পৃথিবীর এক প্রান্তে অবস্থিত ভূকম্পন কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট তরঙ্গমালা অপর প্রান্ত পর্যন্ত পৌছাতে পারে। তবে কেন্দ্র থেকে তরঙ্গ গুলো যত দূরে অগ্রসর হবে এর তীব্রতা ততো হ্রাস পাবে। মৃদু কিংবা প্রবল ভূমিকম্প মাপার এককের নাম রিখটার স্কেল।

পৃথিবীর সব অংশে কম বেশি ভূমিকম্প অনুভূতি হলেও ভঙ্গিল পর্বত ও ভূগঠন প্লেট সমূহের সীমান্ত অঞ্চলে এর তীব্রতা বেশি হয়। আমরা বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প কেন হয়।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস : বাংলাদেশের অতীত রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালে তৎকালীন বঙ্গদেশে প্রচণ্ড বিধ্বংসী ক্ষমতা-সম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।

এছাড়া ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০০ টি মাঝারি ও শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হেনেছে। তবে ভূমিকম্প সংক্রান্ত ডাটা থেকে এটা স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে যে, এদেশে ভূমিকম্পের পরিমাণ ও তীব্রতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদেশে বগুড়া, তানোর, ত্রিপুরা, সীতাকুণ্ড, টেকনাফ, হালুয়াঘাট, ধুবরি, চট্টগ্রাম, শাহীবাজার, রাঙামাটি এই মোট দশটি ভূচ‍্যুতি এলাকার জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

এছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, ইউরেশিয়া, বার্মা, টেকটোনিক প্লেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এই টেকটোনিক প্লেট হিমালয়ে বাধা প্রাপ্ত হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এবং শক্তি সঞ্চয় করছে। 

আর এ শক্তির প্রবলতার কারণে যখন টেকটোনিক প্লেট খুলে যাবে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা দেখা দিবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রস্তুতকৃত ম্যাপ অনুযায়ী এদেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৪১ শতাংশ মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৬ শতাংশ মৃদু ঝুঁকিপূর্ণ। জানুয়ারি ২০০৬ ও ডিসেম্বর ২০০৯ এর রেকর্ড অনুযায়ী দেখা গেছে, এ সময়ে ৪ রিখটার স্কেলের উপরের মাত্রার ১১১৭টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। 

২০১৫ থেকে ১৬ সালে রেকর্ড সংখ্যক ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকটিই ছিল ৫ থেকে ৬ মাত্রার। এতে হতাহতের ঘটনাও ছিল উদ্বেগজনক। তদুপরি এদেশের বেশিরভাগ শহরের দালান কোঠার প্রায় ৬৫% স্থাপনাই প্রকৌশল বর্জিত এবং কারিগরি দক্ষতা-বিহীনভাবে গড়ে ওঠা অত্যন্ত নিম্ন মানসম্পন্ন। 

আর আমাদের দেশের বেশিরভাগ এলাকার মাটি দোঁয়াশ, ফলে এখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকি অনেকটা বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভূমিকম্পের জন্য এগুলোকে মোটেও নিরাপদ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গোপসাগরে চারটি ভূমিকম্পের উৎস সক্রিয় থাকায় এ অঞ্চলগুলোতে সুনামি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক।

ভূমিকম্পের সময় করণীয়

ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে হলে ভূমিকম্পের সময় করণীয় কি তা আমাদের জানতে হবে। ভূমিকম্পের সময় করণীয় কাজ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
  • ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পারলে বা এমন কোন খবর পেলে সাথে সাথে ফাঁকা ও উন্মুক্ত স্থানে চলে যেতে হবে।
  • উঁচু বিল্ডিং এ থাকলে এবং বের হতে না পারলে, শক্ত কোন বীম বা সিঁড়ির নিচে অবস্থান করতে হবে।
  • মানসিক চাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • তাড়াহুড়া করে প্রবেশ/ প্রস্থান পথে ভিড় করবেন না এবং ভিড় ঠেলে যাবেন না। ভূমিকম্পের কারণে প্রাণ না গেলেও অনেক সময় ঠেলা-ঠেলির কারণে অনেক মানুষের প্রাণ চলে যায়।
  • বহুতল ভবনে একই স্থানে অনেক মানুষ জমা থাকা যাবে না এবং ভবন থেকে দ্রুত নেমে যাওয়ার সময় অপেক্ষাকৃত কম ঝাঁকুনি দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
  • আপনার উপস্থিতি ও অবস্থান উদ্ধারকারীদের সাথে সাথে জানাতে আপনার সেলফোনে অবশ্যই উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিস অথবা অন্যান্য উদ্ধারকারী দলের হেল্প লাইনের নাম্বার সংরক্ষণ করুন এবং দ্রুততার সাথে জানাতে চেষ্টা করুন।
  • স্নায়ুবিক দুর্বলতা বেশি হলে মাটিতে কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন।
  • এই সময়ে কোন প্রকার গুজব প্রচার করে জনমনে আরও বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবেন না।
  • এই সময়ে উঁচু বিল্ডিং থেকে লাফানোর মত ঝুঁকিতে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না।
  • সম্ভব হলে মাথার উপর শক্ত করে বালিশ অথবা অন্য কোন শক্ত বস্তু (কাঠের বোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কুণ্ডলী) ধরে রাখুন।
  • ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি রান্নাঘরে থেকে থাকেন তাহলে দ্রুত গ্যাস বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করুন।

ভূমিকম্পের পরে করণীয়

ভূমিকম্পের পরে করণীয় হলো -
  • বৈদ্যুতিক, গ‍্যাস চালিত সব ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • যদি কোথাও আটকে পড়েন তাহলে আপনার মনোবল স্থির রাখুন এবং চেষ্টা করুন উদ্ধারকারীদের কাছে আওয়াজ পৌঁছানো।
  • আপনি বা আপনার শরীরের কোন অংশ চাপা পড়লে অতঃপর বের হয়ে আসতে না পারলে অপেক্ষা করুন। বের হওয়ার চেষ্টা করলে শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। এতে ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হয়ে যাওয়ার কারণে মারাও যেতে পারেন।
  • রেডিও থাকলে দুর্যোগ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য পাবার জন্য সেটি চালু রাখুন। টেলিফোন, মোবাইল চালু থাকলে প্রয়োজনীয় সাহায্য চাওয়ার জন্য এবং ক্ষয়ক্ষতি রিপোর্ট করার জন্য সেটি ব্যবহার করুন।
  • ধুলাবালি হাত থেকে বাঁচতে রুমাল বা পরনের অস্ত্র দিয়ে নাক ঢেকে ফেলুন।
  • দিয়াশলায় জালানো যাবে না। কেননা বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার পর গ্যাসের লাইনে লিক হয়ে থাকতে পারে।
  • ছোটখাটো আঘাতে সম্ভব হলে নিজের পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ক্ষতস্থান বেঁধে দিন।
  • জোরে জোরে চিৎকার করতে পারেন তবে খেয়াল রাখতে হবে মুখে যেন ধুলাবালি না যায়, কেননা ধুলাবালি গেলে শ্বাস নিতে সমস্যা হবে এবং ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
  • রাস্তাঘাটে ভিড় জমাবেন না, কেননা জরুরী সেবা দিতে উদ্ধার-কর্মীদের আসতে সমস্যা হতে পারে।

ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায়

ভূমিকম্পে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা অনুমান করা যায় মাত্র। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিকম্প সম্বন্ধে তেমন কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। ফলে মানুষ সতর্কতামূলক কোন পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে না। তাছাড়া ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে অথবা ভূমিকম্পের সময় এবং পরপরই কি করণীয় এ বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। 

দালানকোঠা, বহুতল ভবন নির্মাণের সময় ভূমিকম্প প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা গ্রহণেও রয়েছে প্রচণ্ড অনীহা। যার ফলে এদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ভবনগুলো বাসিন্দাদের প্রাণহানি ঘটিয়ে ধসে পড়বে বা দেয়াল চাপায় লোকজন আটকা পড়ে থাকবে। এজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়ম মেনে বড় বড় ভবন অট্টালিকা তৈরি করতে হবে। 

তা না হলে কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট-সহ ব্রিজ উৎপাটিত হবে এবং জীবজন্তু মারা পড়বে। আর ভূমিকম্প পরবর্তী দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ, বৈদ্যুতিক তারের বিচ্যুতি, গ্যাস পাইপের ফাটল প্রভৃতির মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে, যাতে মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব ঘটায়। 

তাছাড়া জীবন ধারণের অতিপ্রয়োজনীয় উপায়গুলো বিদ্যুৎ, গ‍্যাস, রাস্তা, সেতু, টেলিফোন, পানি, পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থার বিরাট ক্ষতি সাধন হয়। এমনিতেই বাংলাদেশ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত একটি দরিদ্র দেশ, তার ওপর সম্পদের স্বল্পতা, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির অবসান ঘটাতে পারলে ভূমিকম্পের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। তা না হলে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার সার্বিক পরিস্থিতিতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভূমিকম্প প্রতিরোধে করণীয়

পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা হ্রাস করা যায়। ভূমিকম্প এমন এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার পূর্বাভাস দেওয়ার মত কোন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। এ কারণে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিরোধের লক্ষ্যে সবাইকে আরও অধিক বিস্তৃত-মুখী পদ্ধতি গ্রহণ করা আবশ্যক। এ পদ্ধতি কাঠামোগত ও অ-কাঠামোগত দুই রকমই হতে পারে। 

কাঠামোগত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে, স্থাপনার দৃঢ়তা নিশ্চিত করার মত সঠিক নির্মাণ পদ্ধতি অনুসরণ ও ভূমিকম্প সংক্রান্ত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। অ-কাঠামোগত পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পূর্ব প্রস্তুতি শক্তিশালী-করণ। ভূমি-ব‍্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি আইন প্রয়োগ। 

ভূমিকম্প সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে কর্মশালা, সভা, বিশেষজ্ঞের মতামত, পোস্টার, পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যক্রম প্রভৃতি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাই সরকার, জনগণ, বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিওর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা অতি জরুরী।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় করণীয়

ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক দুর্যোগের মোকাবিলায় অর্থাৎ প্রশমন, পুনরুদ্ধার ও প্রস্তুতি সহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বড়ই নাজুক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭ থেকে ৮ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প ঢাকা শহরেই ৮৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি ও ৭২ হাজার ভবন ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। 

তাই ভূমিকম্প-জনিত বা দুর্যোগ-জনিত পরিস্থিতির সফল মোকাবিলার লক্ষ্যে এদেশে স্থানীয় ও জাতীয় ও উভয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি নীতি গৃহীত হয়েছে এবং ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ-বাবদ সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করেছে। এছাড়া হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। 

এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের প্রস্তুতির অপ্রতুলতার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাব, রাজউকের উদাসীনতা ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের জোরদার কর্মসূচির অপর্যাপ্ততা বহুলাংশে দায়ী।

লেখকের মন্তব্য : ভূমিকম্পের সময় করণীয় - ভূমিকম্প কেন হয়

জীবন ও সম্পদ বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। আর দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যেই বাংলাদেশের অবস্থান। তাই অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকার কারণে ব্যাপক জান মালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অথচ শক্তিশালী ভূমিকম্পের বিপর্যয় রোধে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। 

তাই কত প্রাণ, সম্পদ, লোকালয় ভূমিকম্পের কারণে চাপা পড়ে ইতিহাসে পরিণত হবে আমাদের নিকট তার কোন সদুত্তর নেই। কাজেই ভূমিকম্পের প্রতিকার কৌশল নির্ধারণে সরকার, জনগণ ও আন্তর্জাতিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ এর রোধ ও বিপর্যয় মোকাবিলায় ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। 

প্রিয় পাঠক আমরা ভূমিকম্প কাকে বলে, ভূমিকম্পের সময় করণীয়, ভূমিকম্প কেন হয়, ভূমিকম্প মোকাবিলায় করণীয়, ভূমিকম্প প্রতিরোধে করণীয়, ভূমিকম্প থেকে বাঁচার উপায়, ভূমিকম্পের পরে করণীয়, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি, বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস সম্পর্কে জানলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url