চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা ও রমজান মাসের ফজিলত

যেসব কারণে রোজা না রাখা জায়েজসম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা, রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব, রমজান মাসের ফজিলত, রোজাদারের মর্যাদা, রোজা কাকে বলে, ইত্যাদি বিষয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পাচ্ছেন না তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। রমজানের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 
চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা
আমরা আরও আলোচনা করব, রোজা কখন ফরজ হয় এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ‍্য তুলে ধরব যা ইনশা-আল্লাহ সকলেরই কাজে আসবে।

ভূমিকা

মাহে রমজান কোরআন নাজিলের মাস, রহমত ও বরকতের অফুরন্ত জোয়ার তরঙ্গের মাস, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসেই ইমানদারদের উপর ফরজ করা হয় রোজার মত একটি অনন্য ইবাদতকে।

এ অনুপম ইবাদতের হক আদায় করেই মহানবী (সা.) তাঁর সাথীদের নিয়ে পাল্টে দিয়েছিলেন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের চেহারা, আঁধারে জ্বালিয়েছিলেন দিনের আলো। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজার উপকারিতা-ও রয়েছে।

রোজা কাকে বলে

রোজা রাখতে হলে রোজা কাকে বলে অর্থাৎ রোজার সংজ্ঞা জানা জরুরি। গোটা কোরআন এবং হাদিস শরীফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনুসন্ধান করতে করতে হয়রান হলেও রোজা বলে কোন শব্দ কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ ইমানদারদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। তাহলে এর কারণ কি বলুন তো। কারণ হলো কোরআন হাদিস তো বিশুদ্ধ আরবি ভাষায়। রোজা শব্দটি আদৌ কোন আরবি শব্দই নয়। বরং এটি একটি ফারসি শব্দ। 
যে বিষয়টি আমাদের কাছে রোজা বলে পরিচিত সেটিকে কোরআন হাদিসে সিয়াম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল কুরআনে সিয়াম শব্দের ফারসি পরিভাষাই হলো রোজা এবং আরবি সাওমুন শব্দের বহুবচন হল সিয়াম। সিয়াম শব্দের যে অর্থ, রোজা শব্দেরও সেই একই অর্থ।

রোজা বা সিয়াম মানে হল বিরত থাকা বা পরিহার করা। সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্বামী স্ত্রী মেলামেশা থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। এটাই রোজার দৈহিক দিক। আর রোজার আত্মিক দিক হলো- মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করা। কেননা মহানবী (সা.) বলেন, রোজা রাখার পরেও যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ছাড়তে পারেনি ওর শুধু খানাপিনা বাদ দেয়াতে আল্লাহর কোনই যায় আসে না। 

তাহলে রোজার পূর্ণ সংজ্ঞা দাঁড়ালো এরকম যে, সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রীর সাথে গোপন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিহার করা এবং ভালো কাজের অভ্যাস গড়ে তোলার অনুশীলনীর নামই হলো রোজা। আল্লাহ পাক মুসলমানদের জন্য যে পাঁচটি ফরজ নির্ধারণ করে দিয়েছেন তার মধ্যে রোজাও একটি অন্যতম ফরজ।

রোজা কখন ফরজ হয়

আমরা অনেকেই রোজা কখন ফরজ হয় তা জানিনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাদানি জীবনে হিজরি দ্বিতীয় সনে রমজান মাসের শুরুতেই সূরা আল বাকারার ১৮৩ নং আয়াতের মাধ্যমে এ রোজাকে ফরজ করা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর রমজানের রোজাকে ফরজ হিসাবে লিখে দেয়া হয়েছে যেমন দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী ইমানদারদের উপরে এজন্য যে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। 
রোজা প্রকৃত ঈমানের দলিল স্বরূপ। অর্থাৎ, কেউ আদৌ ইমানদার কি-না তা পরিমাপ করার আসমানি মাপ-যন্ত্রের নামই হলো রোজা। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারাই এ মাস পাবে তারাই যেন রোজা রাখে। (আল-বাকারা ১৮৫ নং আয়াত)

তবে রোগী ও মুসাফির রমজান মাসে রোজা রাখতে অপারগ হলে তারা পরবর্তী রমজান আসার আগেই বছরের অন্যান্য মাসে নিষিদ্ধ দিন অর্থাৎ যেসব দিনে রোজা রাখা নিষেধ (দুই ঈদের দিন এবং কুরবানি ঈদের পরের তিন দিন, এই মোট ৫ দিন রোজা রাখা হারাম) সেসব দিন কয়টি ব্যতীত সুবিধা মত সময়ে এক নাগাড়ে কিংবা ভাগ ভাগ করে এ রোজা (কাজা) আদায় করতে পারবে। এটা পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দেয়া সুযোগ সুবিধা ও অনুগ্রহ।

রমজান মাসের ফজিলত

মুত্তাকী হতে হলে রমজান মাসের ফজিলত জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও শান্তির জন্য মহা-গ্রন্থ আল কোরআন এই পবিত্র মাসেই নাজিল হয়েছে। রমজান এমন একটি মাস যে মাসে আল কোরআন নাজিল হয়েছে যা মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক। (আল ফুরকান)

রমজান মাসের ফজিলত, গুরুত্ব ও বিশেষত্ব এখানেই। এটা কোরআন নাজিলের মাস। প্রশ্ন হতে পারে, যে মাসে আল কোরআন নাজিল হলো সেই একই মাসে রোজা ফরজ করা হলো কেন? এর কারণ হলো, কোরআন ভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে কোরআনের ছাঁচে গড়ে ওঠা মানুষের প্রয়োজন। কিন্তু কেউ এমনি এমনি কোরআনের ছাঁচে গড়ে ওঠতে পারে না বরং কোরআন যিনি নাজিল করেছেন তিনি মানুষকে কোরআনের ছাঁচে গড়ে ওঠার জন্য কতিপয় নিয়ম পদ্ধতি অপরিহার্য করে দিয়েছেন। 

আর রোজা হলো এই নিয়ম পদ্ধতি গুলোর মধ্যে অন্যতম। এ মাসে শুধু সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল কুরআনই নাযিল হয়নি বরং প্রায় সবগুলি আসমানি কিতাব এ পবিত্র মাসেই নাযিল হয়েছে। রাসূলে কারিম (সা.) বলেন- হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর সহীফা সমূহ রমজান মাসের পহেলা রাতে নাজিল হয়েছে। 

তাওরাত এ রমজানেরই ৬ তারিখে দিবাগত রাতের অবতীর্ণ হয়েছে, ইঞ্জিল এ মাসেরই ১৩ তারিখে এবং আল কোরআন এ মাসেরই ২৪ তারিখে নাজিল হয়েছে। বিশ্বনবী (সা.) এর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিহাদ গুলি এ মাসেই সংগঠিত হয়েছে এবং সেগুলোর সবটিতেই তিনি বিজয় লাভও করেছেন।

এ মাসেরই ১৭ তারিখে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ফয়সালা হয়েছিল হক ও বাতিলের। এ মাসেরই ১০ তারিখে সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় অভিযান।

এ মক্কা বিজয়েরই মোক্ষম মুহূর্তে আল্লাহর নবী পেয়ালা ভর্তি পানি হাতে নিয়ে তার সাহাবা সৈনিকদের মাথার উপর উঁচিয়ে ধরেন। অতঃপর সেই পানি পান করে ফরজ রোজা ভঙ্গ করেন এবং ঘোষণা করে দেন যে সবাইকে রোজা ভাঙতে হবে। যারা ভাঙবে না, তারাই হবে গুনাহগার। প্রায় অনুরূপ ঘটনাই ঘটেছিল বদরের যুদ্ধেও। এই দুই ঐতিহাসিক জিহাদই ছিল ইসলাম, ইসলামী আইন ও ইসলামী রাষ্ট্রকে টিকে রাখার ও সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে। 

গুরুত্বপূর্ণ এই দুই জিহাদে আল্লাহর নবী এবং তাঁর সাহাবীগণের ফরজ রোজা ভাঙ্গার ঘটনা সুস্পষ্ট রূপে এটাই প্রমাণ করে যে, ইসলাম, ইসলামী আইন এবং ইসলামী রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য জিহাদ করা এত বড় গুরুত্বপূর্ণ ফরজ যে, এর জন্য রোজার মত মৌলিক ফরজকেও ভাঙতে হয়।

এ মাসে কবরের আজাব বন্ধ থাকে, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় আর জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রতিদিন অসংখ্য ইমানদারকে জাহান্নাম থেকে খালাস করে জান্নাতে দাখিল করা হয়। এটা এমন একটা মাস যে মাসে রোজাকে ফরজ করা হয়েছে এবং এই ফরজ রোজার সওয়াবের মাত্রা এত বেশি যে তা ফেরেশতারা লিখে সারতে পারে না বরং আল্লাহ-পাক নিজ হাতে তার বদলা দিবেন।

এ মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। যা ইমানদার রোজাদারের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের অফুরন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ মাসে এমন একটি রাত আছে যার নাম লাইলাতুল কদর মহা-সম্মানিত রাত, তকদির ও ভাগ্য হাছিলের রাত। এই একটি রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

এ মাস রুজি বৃদ্ধির মাস, গোটা বছরের জন্য বান্দার জন্য রুজি রোজগার বণ্টনের মাস। রমজান এমন একটি মাস যে মাসে কেউ কোন রোজাদারকে ইফতার করালে তার বিনিময়ে সে তিনটি পুরস্কার লাভ করে।
  • রোজাদার ব্যক্তির রোজার সমপরিমাণ সওয়াব ইফতার দাতার নামে লিখা হবে। কিন্তু তাতে রোজাদারের সওয়াবে কিছুই কমতি হবে না।
  • অতীত জীবনের গুনাহসমূহ মাফ করা হবে।
  • তাকে দোযখ থেকে নাজাত দেয়া হবে।
মাহে রমজান এমনই এক মহা বরকত-পূর্ণ মাস যে, এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে অন্য মাসের ফরজের সমতুল‍্য সওয়াব পাওয়া যায় এবং একটি ফরজ আদায় করলে ৭০ টি ফরজের সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। রমজানের শেষ দিকে দান সদকার প্লাবন বয়ে যায়। তাতে ধনী গরীব সবাই পেট পুরে খেয়ে যাত্রা করে এদের মাঠে। রাসূল (সা.) এ মাসে খুলে দেয়া হয় আকাশের রহমতের দরজা গুলো। 

তিনি আরও বলেন, এ মাসে আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, বেহেশতের দরজা উন্মুক্ত করা হয়, দোযখের দরজা বন্ধ করা হয়। এ মাসে বান্দা যত সৎকাজ করে তা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ কে পুড়ে ছাই করে দেয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখে আল্লাহ তাআলা তার ও দোযখের মাঝখানে আসমান ও জমিনের ফারাকের সমান প্রশস্ত পরিখা বানিয়ে দেন। (তিরমিযী)। 

রমজান মাসে এমন একটা রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যাক্তি এই রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হবে সে তো সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হয়ে যাবে। আর এর কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয় শুধু ওই ব্যক্তিই যে সবকিছু হতে বঞ্চিত হয়ে গেছে। (ইবনে মাজাহ)

এ মাসে রহমতের ফেরেশতা ইমানদারদেরকে ডেকে ডেকে ঘোষণা করে- হে কল্যাণের আশা পোষণকারী ব্যক্তি (রোজার দিকে) এগিয়ে এসো এবং অকল্যাণ কামনাকারী ব্যক্তি রোজা করা থেকে বিরত হও-পিছিয়ে যাও। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা হবে। 

জনৈক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল কোন রোজাদার কে ইফতার করানোর মতো কোনো সংগতি যদি আমাদের না থাকে। তার জবাবে মহানবী (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে এক ঢোক দুধ, এক টুকরা খেজুর অথবা কিছু সুমিষ্ট পানি পান করাবে মহান আল্লাহ পাক তাকেও অনুরূপ সওয়াব দান করবেন। 

আর যে ব্যক্তি কিনা কোন রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাবে মহান আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন তৃপ্তি সহকারে পানি পান করাবেন যে, জান্নাতে না ঢোকা পর্যন্ত তার আর কোন পিপাসা লাগবে না। এ মাসে দুষ্টু জিন শয়তানদেরকে শিকল-বন্দী করা হয়। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন রমজান মাসের ফজিলত ও এর গুরুত্ব।

রোজাদারের মর্যাদা

রোজাদারের মর্যাদা এতই বেশি যে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন- তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও ফেরত দেয়া হয় না।
  • রোজাদার।
  • ন্যায়পরায়ণ শাসক।
  • মজলুম বা অত্যাচারিত ব্যক্তি।
এদের দোয়া আকাশের মেঘমালা ভেদ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে গিয়ে পৌঁছে। এদের জন্য আসমানের দরজা সমূহ সব সময় খুলে রাখা হয়। এবং আল্লাহ তাআলা বলেন- হে আমার বান্দা, আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। হয়তো তোমার কল্যাণ বিবেচনা করে তাতে কিছুটা দেরি হতে পারে। (আহমদ, তিরমিযী)

রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে অতি পছন্দনীয়। ইফতারের সময় বান্দা ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকে না, বান্দা যা দোয়া করে সেটাই আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। তাহলে আপনি নিজেই ধারণা করুন একজন রোজাদারের মর্যাদা কতটা।

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক, রোজার ফজিলত যেমন অফুরন্ত রোজাদারের মর্যাদাও তেমনি সীমাহীন। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন- বনি আদমের প্রত্যেকটি আমল তার নিজের জন্য কিন্তু রোজা ছাড়া।

কারণ, তা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিব। আর রোজা হলো ঢাল স্বরূপ। কাজেই তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে সে যেন বাজে কথা না বলে, চেঁচামেচি না করে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তাহলে তার বলা উচিত, আমি রোজাদার।

যাঁর হাতে মুহাম্মদ (সা) এর প্রাণ তাঁর কসম, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধি ময়। রোজাদারের দুটি আনন্দ যা সে লাভ করবে। একটি হলো, যখন সে ইফতার করে আর দ্বিতীয় আনন্দটি হলো যখন তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। মহানবী (সা) বলেছেন- জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যে এমন একটি দরজা আছে যার নাম রইয়ান। 

হাশরের দিনে এ দরজা দিয়ে একমাত্র রোজাদারেরাই প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে ঢুকতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে- রোজাদারেরা কোথায়? তখন রোজাদারেরা দাঁড়িয়ে যাবে। ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। যখন রোজাদারেরা সবাই ঢুকে পড়বে তখন দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। অতঃপর আর কেউ ঐ দরজা দিয়ে ঢুকতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ-পাক তাকে এই এক রোজার কারণে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে সরে রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)

রোজাদার বান্দারা যখন শেষ রাতে সাহরি করে তখন ফেরেশতারা তাদের জীবনের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দোয়া শুরু করে এবং বান্দারা ইফতারি না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা এভাবে দোয়া করতেই থাকে। হাশরের ময়দানে দুটি জিনিস রোজাদার বান্দার জন্য জান্নাতের সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ-পাক তা কবুল করে নিবেন। তার একটি হলো রোজা এবং অপরটি হলো আল কোরআন।

হযরত আবু আমামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে এমন এক কাজের কথা বলে দিন যা দ্বারা আল্লাহ আমাকে কল্যাণ দান করবেন। জবাবে রাসূল বললেন, তোমার রোজা পালন করা কর্তব্য। কেননা রোজার কোন তুলনা নেই। (নাসাঈ)

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা

২০১৬ সালে জাপান দেশের গবেষক ইশিনোরি ওসিমি রোজা নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রমাণ করেন রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষের শরীরের অনেক উপকার হয়। যেমন-
  • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং সেরে ওঠে।
  • ক্যান্সারের কোষগুলো মরে যায়।
  • শরীরের কোষগুলো পরিষ্কার হয়।
  • পাকস্থলীর সমস্যা দূর হয়ে যায়।
  • অটোফেজি সিস্টেম চালু হওয়ার মাধ্যমে শরীর আপনা আপনিই সেরে ওঠে।
  • বয়সের ছাপ দূর হয়। তারুণ্যতা ধরে রাখা যায়।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকে তাই হার্টের জন্য রোজা খুবই উপকারী।
  • ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • অলসতা দূর করে এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কমায়।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
  • কিডনির পাথর দূরীভূত হয় এবং কিডনি ভালো থাকে।
  • মানসিক শক্তি ও স্মরণ শক্তি বাড়ে।
  • হাঁপানি রোগের জন্যেও এটি উপকারী।
  • শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ গুলো ধ্বংস হয়।
  • ইনফ্লুয়েঞ্জার মত রোগ সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিজ্ঞানের মতে রোজার আরও অনেক বিস্ময়কর উপকারিতা রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা জানলাম।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা - রমজান মাসের ফজিলত - আমাদের শেষ কথা

আমরা জেনেছি চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা। রোজা মানুষকে সোজা করে। রোজা হলো মানুষের পশুত্ব স্বভাব দূর করার মাধ্যম। রোজা আমাদেরকে সবর করতে শেখায়। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে- সাত শ্রেণির মানুষ বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর তার মধ্যে একটি অন্যতম শ্রেণি হলো সবর-কারী। রোজার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো তাকওয়া অর্জন করা অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করতে শেখা।

কেউ জমিন চাষ করলে বোঝা যায়, তিনি এ জমিনে ফসল ফলাবেন। কিন্তু এমন কোন আহাম্মক চাষি আছে কি? যে চিরদিন শুধু জমিনই চাষ করে, একবারও ফসল ফলায় না। এমন যদি কেউ থাকে তবে বুঝতে হবে জমি চাষ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার কোন ধারনাই নেই। এরূপ বেকুব চাষির তো চাষ করার কোন মূল্যই নেই বরং তার হাল-বলদ নষ্ট, তার আসলে সবই মাটি।

ঠিক তেমনি আল্লাহ পাক রোজা কে তার বান্দা বান্দির জন্য ফরজ করে দিয়েছেন এজন্য যে তারা রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করবে। কিন্তু কেউ রোজা রাখল অথচ তাকওয়া অর্জন করলো না তারও তো রোজার উদ্দেশ্য কিছুতেই পূরণ হলো না। কেননা রোজার ফসল হলো তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি। যে রোজা রাখল কিন্তু আল্লাহকে ভয় করতে শিখলো না, তার পরিণাম তো ওই চাষির মতই দাঁড়ালো। যে জমিন চাষ করলো অথচ ফসল ফলালো না। 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে রোজা পালন করার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করার তৌফিক দান করুন, আমীন। প্রিয় পাঠক, আমরা জেনেছি রোজা কাকে বলে, রোজা কখন ফরজ হয়, রমজান মাসের ফজিলত, রোজাদারের মর্যাদা, রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব, চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোজা রাখার উপকারিতা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url