পার্সিমন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আপনি কি পার্সিমন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, পার্সিমন ফল খাওয়ার নিয়ম, পার্সিমন ফলের ছবি, পার্সিমন ফলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন।

উপরোক্ত টপিক গুলো ছাড়াও আমরা পার্সিমন ফলের পরিচিতি ও পার্সিমন ফলের পুষ্টিগুণ তুলে ধরব।

পার্সিমন একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। দেখতে টমেটোর মতো। পার্সিমনের বৈজ্ঞানিক নাম হল Diospyros kaki, এবং এটি Ebenaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পার্সিমন সাধারণত জাপান, চীন, কোরিয়া, ব্রাজিল, ইতালি এবং তুরস্কের মতো দেশে প্রচুর চাষ করা হয়। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় চীনে।

পার্সিমনের প্রায় ৪০০ এর বেশি প্রজাতি আছে, আপনি কি জানেন? পার্সিমন বিশ্বের পঞ্চম দ্রুত উন্নয়নশীল ফসল। পার্সিমন ফল স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশে এই ফলকে অনেকে গাব ফল নামে চিনে।

পার্সিমন ফলের মধ‍্যে ক‍্যারোটিনয়েড, টোকোফেরল, ফ্ল‍্যাভোনয়েড, ট‍্যানিন, ফেনোলিক এসিড, পলিফেনল এবং আরও অনেক কিছু উপকারী উপাদান রয়েছে। পার্সিমন ফলের নিম্নলিখিত পুষ্টিগুণ রয়েছে :

হার্টের জন‍্য পার্সিমন ফলের উপকারিতা : ২০০০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পার্সিমন ফলের বায়ো-অ‍্যাকটিভ প্রোঅ‍্যান্থোসায়ানিডিন্স রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি প্লেটলেট একত্রিত হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং এর ফলে থ্রম্বোসিসের ঘটনা কমাতে পারে। থ্রম্বোসিস ঘটে যখন রক্তের জমাট বেধে ধমনী বা শিরা ব্লক হয়।

পার্সিমন শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়াতে পারে যা রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে এবং রক্তনালীকে আরও শিথিল করতে সাহায্য করে। তাই পার্সিমন ফল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উপকারী হতে পারে। তবে আপনার যদি হৃদরোগের কোন লক্ষণ থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। শুধুমাত্র পার্সিমন ফলের উপর নির্ভর করবেন না।

কোলেস্টেরল কমাতে পার্সিমন ফলের উপকারিতা : পার্সিমন ফলের আঁশ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ২০০০ সালে ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, পার্সিমন ফল খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। তবে কোলেস্টেরলের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

ডায়াবেটিসের জন‍্য পার্সিমন ফলের উপকারিতা : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য পার্সিমন ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে। এটি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর গ্লুকোজের দ্রুত শোষণকে বাধা দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে। যাইহোক, ডায়াবেটিসের মাত্রা অস্বাভাবিক থাকলে আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ক্যান্সার নিরাময়ে পার্সিমন ফলের উপকারিতা : ২০১১ সালে গবেষণায় দেখা গেছে যে, পার্সিমন ফল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে। পার্সিমন ফলের ক্যারোটিনয়েড এবং ক্যাটেচিনের মতো বায়োঅ‍্যাকটিভ যৌগগুলি প্রোস্টেট, ওড়াল এবং ব্লাড ক্যান্সারের জন্য উপকারী হতে পারে। ক্যান্সার একটি বিপজ্জনক রোগ, তাই শুধু পার্সিমন ফলের উপর নির্ভর করলেই হবে না। আপনাকে অবশ্যই সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

ত্বকের জন‍্য পার্সিমনের উপকারিতা : পার্সিমন পাতার নির্যাস একজিমা (ত্বকের প্রদাহ) এবং ব্রণের মতো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য উপকারী। এটি রোদে পোড়ার হাত থেকে রক্ষা করে। কেননা এতে রয়েছে ফ্ল‍্যাভোনয়েড, ক‍্যাটেচিন, বিটা ক্যারোটিন, জৈব এসিড এবং ভিটামিন B1, B2, C এবং K এর মতো যৌগগুলি।

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করেন : ২০১৭ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পার্সিমনে উপস্থিত ট‍্যানিন গুলি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম প্রজাতির মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। যা ফুসফুসের সংক্রমণ হতে রক্ষা করে।

চোখের জন্য পার্সিমন ফলের উপকারিতা : এক গবেষণায় দেখা গেছে লুটেইন পার্সিমনের একটি বায়োঅ‍্যাকটিভ যৌগ। যা চোখের ম‍্যাকুলা অংশকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ম‍্যাকুলা হল চোখের রেটিনার পিছনে একটি হলুদ দাগ, যা কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তির জন্য দায়ী। এই ফলে রয়েছে ভিটামিন এ যা চোখের জন্য উপকারী। তবে আপনার দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করতে হবে।

পার্সিমন ফল কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে বলে জানা যায়নি। তবে অতিরিক্ত পার্সিমন ফল খাওয়ার কারণে নিম্নলিখিত পার্সিমন ফলের অপকারিতা গুলো লক্ষ্য করা যায় :

পার্সিমন ফল খাওয়ার পর আপনি যদি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

পার্সিমন ফল নিম্নলিখিত উপায়ে খাওয়া যেতে পারে :

পার্সিমন ফলের অপকারিতা রয়েছে, তাই অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুটি পার্সিমন ফল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আপনি যদি কোন ঔষধ নিয়মিত সেবন করে থাকেন, তাহলে পার্সিমন ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক এবং শিশুদের পার্সিমন ফল দেওয়ার আগে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।

বিদেশি এই পার্সিমন ফল বাংলাদেশে এবং ভারতে খুব কমই দেখা যায়। তাই এই ফল অনেকেই চেনেন না। তাই পার্সিমন ফল চেনার জন্য পার্সিমন ফলের ছবি নিচে দেওয়া হল।

পার্সিমন ফলের ছবি

পার্সিমন ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিতে ভরপুর। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ত্বকের গঠন সুন্দর করতে, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে, হজম ক্রিয়া ঠিক রাখতে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে, হার্ট এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপনি নিয়মিত পার্সিমন ফল খেতে পারেন। তবে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যদি আপনি কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম পার্সিমন ফলের পুষ্টিগুণ, পার্সিমন ফলের উপকারিতা, পার্সিমন ফলের অপকারিতা, পার্সিমন ফল খাওয়ার নিয়ম এবং পার্সিমন ফলের ছবি। আর্টিকেলটি নিচের দেওয়া লিঙ্ক এর মাধ্যমে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ