শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায়

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ ও কারণ জানুনসম্মানিত পাঠক, আপনি যদি নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম, শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ, নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায়, নিউমোনিয়া রোগ সনাক্তকরণ, নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার, নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ জানাতে চান তাহলে ঠিক জায়গায় এসেছেন।
শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায়, এর লক্ষণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার, খুঁটিনাটি সকল বিষয় আলোচনা করব।

ভূমিকা

বিখ্যাত বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব‍্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী ফ্লাঙ্কেল ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে নিউমোনিয়া রোগের জীবাণু ডিপ্লোকক্কাস নিউমোনিয়া (Diplococcus pneumoniae) পৃথকভাবে আবিষ্কার করেন। মূলত এটি একটি শ্বাসনালী ও ফুসফুসের রোগ।
সকল বয়সের মানুষের মধ্যেই এ রোগ দেখা যায়। তবে ডায়াবেটিক আছে এমন লোকদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায় তবে মদ্যপায়ী ধূমপায়ীদের মধ্যেও এ রোগের প্রকোপ দেখা যায়। বাংলাদেশে শীতকালে শিশুদের মধ‍্যে এ রোগের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় এবং শিশু মৃত্যু হারও লক্ষণীয় মাত্রায় পৌঁছে যায়।

নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম

নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus pneumoniae)। পূর্বে এ ব‍্যাকটেরিয়াটিকে ডিপ্লোকক্কাস নিউমোনিয়া (Diplococcus pneumoniae) হিসাবে অভিহিত করা হতো। এ ব্যাকটেরিয়া দেখতে ডিম্বাকার এদের আকার ০.৬ থেকে ১.০ মিলি-মাইক্রন পর্যন্ত হয়। এ ব‍্যাকটেরিয়া সাধারণত মানুষের শ্বাসযন্ত্রের ঊর্ধ্বাংশে কমন-সেল জীবাণু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং শ্বাস-যন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে।
মানুষের প্রায় ৬০-৮০% শ্বাস-রোগের কারণ হিসেবে এ ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়। ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ ব‍্যাকটেরিয়া ভালো জন্মে। ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ ব‍্যাকটেরিয়ার কোষের মৃত্যু ঘটে।

শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ

নিম্নলিখিত কারণসমূহ বড়দের ও শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ।
  • স্ট্রেপটোকক্কাস বা ডিপ্লোকক্কাস ব‍্যাকটেরিয়া ফুসফুসের অ‍্যালভিওলাই এর ফাঁকা স্থানে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অলভিওলাই রক্ত ও তরল পদার্থে পূর্ণ হওয়ায় অ‍্যালভিওলাই ফুলে যায় এবং রোগীর বুকে ব‍্যথা অনুভব হয়।
  • রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়, গায়ে প্রচণ্ড জ্বর আসে (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।
  • প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সর্দি কাশি থাকে।
  • কাশির সাথে লাল বর্ণের কফ বেরিয়ে আসে।
  • ফুসফুসের সমস্ত লোব সংক্রমিত হলে লোবার নিউমোনিয়া সৃষ্টি হয় এবং ফুসফুসের উভয় পার্শ্ব সংক্রমিত হলে তাকে দ্বৈত নিউমোনিয়া বলা হয়। ব্রাঙ্কিয়াল সংক্রমিত হলে তাকে ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া বলে।
  • ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া হলে রোগীর শরীরে কাঁপুনি, শ্বাস-কষ্ট এবং বুকে ও পেটে প্রচণ্ড ব‍্যথা হয়।
  • রোগীর বমি হতে থাকে পিপাসা পায়। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগী শিশু হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায়

নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম স্ট্রেপটোকক্কাস। নিউমোনিয়া রোগ ছোঁয়াচে নয়। তবুও নিম্নলিখিত কারণে নিউমোনিয়া রোগ ছড়ায়।
  • সাধারণত রোগীর কফ, থুথু, লালা, হাঁচি, কাশি, ময়লা প্রভৃতির মাধ্যমে নিউমোনিয়া রোগ ছড়ায়।
  • বাতাসে রোগের জীবাণু সরাসরি প্রশ্বাসের সাথে নাসিকা পথে প্রবেশের ফলে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে।
  • দূষিত দুধ, খাদ্য ও পানীয় প্রভৃতির সাহায্যে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে।

নিউমোনিয়া রোগ সনাক্তকরণ

নিম্নোলিখিত মাধ্যমে নিউমোনিয়া রোগ সনাক্তকরণ করা যায়।
  • রোগীর বুকে এক্স-রে করে এক্স-রে ফিল্মে ব্রঙ্কিওল ও অ‍্যালভিউলিতে ক্ষতচিহ্ন দেখে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
  • রোগীর দেহ থেকে নমুনা যেমন- থুথু, পুঁজযুক্ত কফ প্রভৃতি পরীক্ষাগারে সরাসরি গ্রাম রঞ্জন করে অথবা কালচার মিডিয়াতে নমুনা ইনুকুলেট করে ব্যাকটেরিয়ার কলোনি পরীক্ষা করে এ রোগ সনাক্ত করা যায়।
  • রোগীর নমুনাসমূহের সরাসরি জৈব রাসায়নিক পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগের জীবাণুর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের ফলে এ রোগ সনাক্ত করা সম্ভব।

নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার

  • পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক বিশেষ করে পেনিসিলিন জি, সেফাটক্সিম সেফাক্সোন ও ফ্লক্সাসিন প্রভৃতি দ্বারা নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার বা চিকিৎসা করা হয়।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবনের মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ‍্যেই ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • যে সমস্ত রোগী পেনিসিলিনের প্রতি সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই যথাযথভাবে এন্টিবায়োগ্রামের মাধ্যমে উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক নির্বাচন করে প্রয়োগ করাই শ্রেয়।
  • কমলা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে এবং নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সর্দি কাশি দূর করে।
  • নিউমোনিয়া হলে অনেক রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আদা মসলাটি অনেক ভালো কাজ করে। এটি ব‍্যথা কমায় ও শ্বাসনালী পরিষ্কার করে এবং শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
  • মধু ঔষধি গুণ সম্পন্ন একটি খাবার যা ঠাণ্ডা জাতীয় অসুখ অর্থাৎ সর্দি-কাশি ও গলা ব‍্যথা দূর করে। এছাড়া মধু রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধে খুবই ভালো কাজ করে। তাই যারা নিউমোনিয়া সহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তারাও নিয়মিত মধু খেতে পারেন। এভাবে নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার করা যেতে পারে।

নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ

  • রোগ সৃষ্টির কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করা।
  • রোগের জীবাণু বহনকারী সুস্থ বাহক ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ ও তার চিকিৎসা প্রদান।
  • রোগীর দেহে রোগ লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে যত শীঘ্র সম্ভব নির্ণয়-করণ ও কার্যকরী চিকিৎসা প্রদান।
  • শিশুদের সবসময় খুব ঠাণ্ডা ও আর্দ্র পরিবেশ থেকে দূরে রাখা।
  • বরফ, ঠাণ্ডা বা ফ্রিজের কোন খাবার সরাসরি শিশুদের পরিবেশন থেকে বিরত থাকা।
  • প্রত‍্যেককে তাদের নির্দিষ্ট ধরন মোতাবেক নির্দিষ্ট প্রকৃতির টিকা যথাসময়ে প্রদান করা।
  • বর্তমানে পলিভ‍্যালেন্ট নিউমোনিয়া ভ‍্যাকসিন ব‍াণিজ‍্যিকভাবে সহজলভ্য বিধায় প্রয়োজন অনুযায়ী শিশু বা বয়স্কদের প্রদানযোগ‍্য।
  • মদ‍্যপান ও ধূমপান পরিহার করতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়সমূহ মেনে চললে নিউমোনিয়া রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায় - লেখকের মন্তব্য

নিউমোনিয়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ হলেও ছত্রাক ঘটিত ও ভাইরাস ঘটিত কারণে বা অন‍্যান‍্য কারণেও এই রোগ হতে পারে। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ায় শিশুদের খুব ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে।

শিশুকে ঠাণ্ডা ও ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম ও বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং শিশু ও বয়স্কদের কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সময় মতো টিকা গ্রহণ করতে হবে। 
আজকে আমরা শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ, নিউমোনিয়া রোগ সনাক্তকরণ, নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার, নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার, নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায়, এবং নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর নাম জানলাম। অন্যকে সতর্ক করতে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url