নামাজ আদায় না করার শাস্তি - নামাজ পড়ার ফজিলত

জামায়াতে নামাজ ছেড়ে দিলে কি হয়প্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো নামাজ আদায় না করার শাস্তি, নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি, নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি, নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি, নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন।
নামাজ আদায় না করলে কি কি শাস্তি দেওয়া হবে
এছাড়াও এখানে আমরা নামাজের অর্থ কি, নামাজের সংজ্ঞা এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব যা সকলের জন্য জানা আবশ্যক।

ভূমিকা

ঈমানের পর নামাজ ইসলামের প্রধান স্তম্ভ এবং শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ নামাজ আল্লাহ সাথে বান্দার কথোপকথন ও তার নৈকট্য লাভের অনন্য মাধ্যম। সমাজ সংস্কার এবং দেশ ও জাতি গঠনেও নামাজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। 
ইসলামের নামাজ পড়ার সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করলেই নামাজ বিশুদ্ধভাবে আদায় হবে। এসবের মধ্যে নামাজে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুদ্ধ ও সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার যেমন অনেক ফজিলত রয়েছে তেমনি নামাজ না পড়ার ভয়াবহ শাস্তিও রয়েছে। নিম্নে এসব বিষয়ে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।

নামাজের অর্থ ও সংজ্ঞা কি

নামাজ ফারসি শব্দ, এর আরবি হলো সালাত। নামাজ বা সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া, প্রার্থনা, সান্নিধ্য, সম্পর্ক ইত্যাদি। 
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় নামাজ বলা হয়- রুকু সেজদাসহ আহকাম ও আরকান সংবলিত এক বিশেষ ইবাদতকে।

নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি

নামাজের ফরজ মোট ১৩ টি। নিম্নে উল্লেখিত নামাজের ফরজ সমূহের মধ্যে কোন একটি ফরজ ছুটে গেলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। নামাজ আরম্ভ করার পূর্বে ৭টি ফরজ আদায় করতে হয়, এগুলোকে নামাজের বা সালাতের আহকাম বলা হয়। নামাজের আহকামগুলো হলো-
  • নিয়ত করা- নামাজ আদায়কারীকে পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট নামাজের কথা মনে মনে স্থির করতে হবে। এটিই হলো নামাজ বা সালাতের নিয়ত।
  • শরীর পাক- ওযু কিংবা গোসলের প্রয়োজন হলে তা সমাধা করে শরীর পবিত্র করা। অর্থাৎ নামাজের জন্য ওযু করা আবশ্যক এবং শরীরের অপবিত্র হলে গোসল করাও ফরজ।
  • কাপড় পাক- যে কাপড় পরিধান করে নামাজ বা সালাত আদায় করবে, তা পবিত্র হওয়া।
  • নামাজের জায়গা পাক- যে স্থানে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে তা পবিত্র হওয়া।
  • সতর ঢাকা- সতরের পরিমাণ হলো, পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত এবং মহিলাদের জন্য হাত, পা, মুখ ব্যতীত সমস্ত শরীর। অনেকের মতে মহিলাদের পা ঢেকে রাখাও জরুরী।
  • কিবলামুখী হওয়া- কাবা ঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাত আদায় করা।
  • নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া- ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অর্থাৎ শরীয়ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা।
নামাজ আরম্ভ করার ছয়টি ফরজ কাজ আছে, এগুলোকে আরবি ভাষায় আরকান বলে। নামাজের আরকান গুলো হলো-
  • তাকবীরে তাহরীমা বলা- সালাতের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলে সালাত বা নামাজ শুরু করা।
  • কিয়াম করা- সক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
  • কেরাত পড়া- ফরজ নামাজের প্রথম দু রাকাতে এবং অন্যান্য নামাজের সকল রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে পবিত্র কুরআনের যে কোনো সূরা অথবা বড় এক আয়াত কিংবা ছোট তিন আয়াত পাঠ করা।
  • রুকু করা- সেজদায় যাওয়ার পূর্বে সামনে কোমর পর্যন্ত ঝুঁকে পড়ে রুকু করতে হয়।
  • সেজদা করা- নাক ও কপাল দ্বারা জমিনের ওপর সেজদা করা।
  • তাশাহহুদ পরিমাণ বসা- শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা পর্যন্ত বসা।

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

নামাজের ওয়াজিব মোট ১৪ টি। এই ১৪ টি নামাজের ওয়াজিবের মধ্যে একটি বাদ দিলে নামাজ আদায় হবে না। নামাজের ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা দেওয়া আবশ্যক হয়ে যায়। নিম্নে নামাজের ওয়াজিব কি কি তা দেওয়া হলো-
  • নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। যেমন হাদিসে এসেছে, সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ আদায় হয় না।
  • সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো।
  • ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতে সূরা মিলানো, তৃতীয় রাখার থেকে শুধু সুরা ফাতেহা পড়া। (ফরজ ব্যতীত বাকি সব নামাজের প্রতি রাকাতেই সূরা মিলাতে হবে)
  • রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
  • দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে বসা।
  • প্রথম বৈঠক করা।
  • উভয় বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করা।
  • বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পাঠ করা।
  • ইমামের জন্য যোহর ও আসর নামাজে কিরাত আসতে পড়া এবং ফজর, মাগরিব, ঈশা, জুমা, দুই ঈদ, তারাবীর ও রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত জোরে পড়া। এছাড়া সুন্নত ও দিনের বেলায় নফল নামাজে কিরাত আসতে পড়া।
  • আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ বলে নামাজ শেষ করা। ইমাম শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ এর মতে, সালাম দ্বারা নামাজ শেষ করা ফরজ।
  • মুক্তাদীদের ইমামের অনুসরণ করা।
  • ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা।
  • ধীরস্থির ভাবে রোকন গুলো আদায় করা।
  • ধারাবাহিকতার দিকে খেয়াল রাখা।

নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি

নামাজ বা সালাত সুন্নত অনুযায়ী আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি তা দেওয়া হলো- নামাজে দাঁড়ানোর সুন্নতঃ
  • হাতের আঙ্গুল স্বাভাবিকভাবে কিবলামুখী করে কান পর্যন্ত উঠানো। মহিলাদের কাঁধ বরাবর হাত উঠানো।
  • নাভির নিচে হাত বাঁধা, মহিলাদের সিনার উপর হাত রাখা।
  • ছানা পড়া।
  • আউজুবিল্লাহ সম্পূর্ণ পড়া।
  • বিসমিল্লাহ সম্পূর্ণ পড়া।
  • সূরা ফাতিহার শেষে আমিন বলা।
  • দাঁড়ানো অবস্থায় এবং রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানে নজর রাখা।
নামাজে রুকুর সুন্নতঃ
  • আল্লাহু আকবার বলে রুকু করা।
  • হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে হাঁটু আঁকড়ে ধরা। মহিলাদের আঙ্গুলগুলো মিলিত অবস্থায় হাঁটুর উপর রেখে দেয়া।
  • তিনবার, পাঁচবার কিংবা সাতবার (বিজোড় সংখ‍্যা) সুবহা-না রব্বীয়া আযীম পড়া।
  • দুই পায়ের পাতার মাঝখানে নজর রাখা।
  • সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলে রুকু থেকে ওঠা।
  • রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রব্বানা লাকাল্ হামদ্ বলা ( অতঃপর হামদান কাসীরন্ তয়‍্যিবান মোবা-রকান ফীহি পড়া মোস্তাহাব)।
নামাজের সিজদার সুন্নতঃ
  • আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাওয়া।
  • কান বরাবর দুই হাত রাখা।
  • হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিত অবস্থায় রাখা।
  • নাকের দিকে নজর রাখা।
  • তিনবার, পাঁচবার কিংবা সাতবার (বিজোড় সংখ্যা) সুবহা-না রব্বিয়াল আ'লা পড়া।
  • আল্লাহু আকবার বলে সিজদা থেকে ওঠা।
নামাজে বসার সুন্নতঃ
  • ডান পা খাড়া রাখা।
  • বাম পায়ের উপর বসা। মহিলাদের উভয় পা ডানদিকে বের করে বসা।
  • পায়ের আঙ্গুল গুলো কিবলার দিকে ফিরিয়ে রাখা।
  • হাতের আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে হাঁটুর উপর রাখা।
  • কোলের দিকে নজর রাখা।
  • দরুদ শরীফ পড়া।
  • দু'আয়ে মাছুরা পড়া।

নামাজ পড়ার ফজিলত

নামাজ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অসৎ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। (সূরা আনকাবুত:৪৫) আরও ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে, (বিশেষভাবে) নামাজের প্রতি পূর্ণ নিয়মানুবর্তী হয়েছে এবং যাকাত আদায় করেছে তাদের রবের নিকট তাদের সওয়াব সংরক্ষিত আছে। তাদের কোন আশঙ্কা থাকবে না, তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা:২৭৭)
হযরত ওসমান ইবনে আফফান (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামাজ পড়া জরুরী মনে করবে (এবং যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

হযরত হানযালা উসাইদী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) এর ইরশাদ বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে এরূপ নিয়মানুবর্তিতার সাথে আদায় করে যে, ওযু ও সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়, রুকু সিজদা উত্তম রূপে আদায় করে এবং এইভাবে নামাজ আদায় করাকে নিজের উপর আল্লাহর হক মনে করবে, জাহান্নামের আগুন তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ)

যে ব্যক্তি ফরজ নামাজ সমূহের হেফাজত করবে অর্থাৎ যথা সময় ও সঠিকভাবে নামাজ পড়বে আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি ফজিলত দ্বারা সম্মানিত করবেন। তাহলো-
  • অভাব অনটন ও দারিদ্রতা থেকে তাকে মুক্ত রাখবেন।
  • তার কবরে আজাব হবে না।
  • তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে।
  • সে বিদ্যুতের মত (জাহান্নামের উপরের) পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।
  • বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, নামাজ দিনের খুঁটি এবং এর মধ্যে দশটি উপকারিতা আছে। তাহলো,
  • নামাজ চেহারার উজ্জ্বলতা।
  • অন্তরের আলো।
  • শারীরিক প্রশান্তি ও সুস্বাস্থ্যের কারণ।
  • করবের সঙ্গী।
  • আল্লাহর রহমত নাযিলের উসিলা।
  • আসমানের চাবি
  • নেক আমলের পাল্লা ভারী হওয়ার বস্তু।
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।
  • বেহেশতের মূল্য।
  • দোযখের প্রতিবন্ধক।
যে নামাজ কায়েম করল সেই দ্বীনকে কায়েম করল। যে নামাজ ত্যাগ করল সে নিজের দ্বীনকে ধ্বংস করল। (মুনাব্বিহাত) অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হযরত ওসমান গণী (রা) বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি নামাজের প্রতি যত্নবান হয় এবং সময় মতো তা আদায় করে, তাকে ৯টি ফজিলত দেয়া হয়। তাহলো-
  • আল্লাহ স্বয়ং তাকে ভালোবাসেন।
  • আল্লাহ তাকে সুস্থতা দান করেন।
  • ফেরেশতাগণ সর্বদা তার রক্ষণাবেক্ষণ করে।
  • তার ঘরে বরকত প্রদান করা হয়।
  • তার চেহারায় বুজুর্গদের নূর ফুটে ওঠে।
  • তার অন্তর নরম হয়।
  • পুলসিরাতের উপর দিয়ে সে বিজলীর ন্যায় দ্রুত গতিতে পার হবে।
  • সে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে।
  • জান্নাতে এমন ব্যক্তিদের সাথে থাকবে যাদের কোনরূপ ভয়-ভীতি ও দুশ্চিন্তা থাকবে না।
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন- নিশ্চয় ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে যারা নিজেদের নামাজে একাগ্র হয়। (সূরা মুমিনুন:১-২) যারা নিজেদের নামাজ সমূহের হেফাজত করে তাদের বেহেশতে সম্মানিত করা হবে। (সূরা মাআরিজ:৩৪-৩৫)

হযরত ওকবা ইবনে আমের জুহানী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ এমন ভাবে পড়ে যে, অন্তর নামাজের প্রতি মনোযোগী থাকে এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শান্ত থাকে। তবে নিশ্চয় তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (আবু দাউদ)

নামাজ আদায় না করার শাস্তি

নামাজ আদায় না করার শাস্তি : নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে তেমনি নামাজ না পড়ার ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ওদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা সালাত নষ্ট করলো ও কু-প্রবৃত্তির অনুসারী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি (গইয়ূন নামক দোযখের গুহা) প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে। (সূরা মারিয়াম:৫৯)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তারা 'নামাজ নষ্ট করলো' এর অর্থ সম্পূর্ণরূপে নামাজ পরিত্যাগ করা নয় বরং তার অর্থ একেবারে শেষ ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা। (দেরি করে নামাজ পড়ার শাস্তি যদি এরূপ হয় তবে একেবারে নামাজ আদায় না করলে কি কি শাস্তি দেওয়া হবে আর তা কতটা কঠিন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না) 

ইমামুত তবেঈন হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়‍্যাব (র) বলেন, 'তারা নামাজ নষ্ট করলো' এর অর্থ হচ্ছে, আসরের ওয়াক্ত অত‍্যাসন্ন হওয়ার সময় যোহর আদায় করা, মাগরিবের সাথে মিলিয়ে আসর পড়া, ঈশার সাথে সংযুক্ত করে মাগরিব আদায় করা। 

ঈশার নামাজ ফজর পর্যন্ত বিলম্ব করা এবং সূর্যোদয়ের সময় ফজর আদায় করা। সুতরাং এই অবস্থায় থাকাকালীন ইন্তেকাল করল অথচ তওবা করেনি, আল্লাহ তাআলা তার জন্য গাইয়ূন তৈরি করে রেখেছেন। আর এটা হচ্ছে জাহান্নামের একটি গর্ত যা অত্যন্ত সুগভীর এবং কদর্য। এত কুৎসিত ও ভয়ংকর যে, এই গর্ত থেকে অন্যান্য দোযখও আশ্রয় প্রার্থনা করে।

আল্লাহ অন্যত্র ইরশাদ করেন, দুর্ভোগ সেই নামাজীদের জন্য যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন ও গাফিল। (সূরা মাউন:৪-৫) হযরত সা'দ ইবনে ওয়াক্কাস (রা) বলেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সা) এর নিকট যারা নামাজ সম্পর্কে উদাসীন তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন- তা হচ্ছে শেষ ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা অর্থাৎ একেবারে প্রান্তিক সময়ে নামাজ আদায় করা। 

সূরা মুনাফিকুন এর ৯ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির থেকে উদাসীন না করে। আর যারা উদাসীন তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

মুফাসসিরীনে কেরাম বলেন, আলোচ্য আয়াতে 'আল্লাহর যিকির' দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বুঝানো হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তির যথাসময়ে নামাজ আদায় না করে বেচা-কেনা, উপার্জন, জীবিকা সংগ্রহ ও খেল-তামাশায় বিভোর থাকবে সে-ই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

আল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদের প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন- তোমাদের কিসে সাকারে (জাহান্নামের একটি স্তর) নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা মুসল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, আমরা অভাবগ্রস্তদের আহার্য দান করতাম না, আমরা আলোচনাকারীদের (অনর্থক কথাবার্তা) সাথে মশগুল থাকতাম, আমরা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করতাম, অতঃপর আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমন ঘটে। ফলে শাফায়াতকারীদের শাফায়াত তাদের কোন কাজে আসবে না। (সূরা মুদ্দাসসির:৪২-৪৮)

যদি কেউ বিনা কারণে জেনে শুনে নামাজ ছেড়ে দেয় তাহলে হযরত উমর (রা), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ইমাম ইব্রাহিম নাখঈ, ইমাম সুখতিয়ানী, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (র) প্রমূখের মতে সে কাফের বলে গণ্য হবে। 

তারা তাদের অভিমতের সমর্থনে দুটি হাদিসের উল্লেখ করেছেন। হযরত বুরাইদা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, আমাদের (মুসলমান) ও তাদের (অমুসলিম) মধ্যকার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ তরক করল সে কুফরি করল। (ইবনে মাজাহ)

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) ইরশাদ করেন, ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামাজ পরিত্যাগ করা। (অর্থাৎ নামাজ তরককারী কাফেরদের পর্যায়ে পড়ে যায়) (আহমদ,মুসলিম) 

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে (অর্থাৎ পবিত্রতা, ওয়াক্ত, জামায়াত ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রেখে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে) কিয়ামতের দিন সেই নামাজ তার জন্য নূর, দলীল ও মুক্তির সনদ বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজ হেফাজত করল না তার জন্য কিয়ামতের দিন কোন নূর, দলীল ও মুক্তির সনদ হবে না। আর সে ব্যক্তি ফেরাউন, কারুন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের (এ ধরনের নিকৃষ্ট পাপীদের) সাথে থাকবে। (আহমদ, তাবারাণী)

যে ব্যক্তি নামাজে অলসতা করে তাকে ১৫ প্রকারের শাস্তি দেয়া হয়। তাহলো -
  • তার জীবিকায় কোন বরকত থাকে না।
  • চেহারা থেকে নেককারদের নূর দূর হয়ে যায়।
  • তার অন্যান্য ভালো কাজ সমূহের কোন প্রতিদান দেয়া হয় না।
  • তার কোন দোয়া কবুল করা হয় না।
  • অন্য কোন নেক বান্দা তার জন্য দোয়া করলেও কোন উপকার হয় না।
  • অপমানিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
  • ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
  • কঠিন পিপাসার্ত হয়ে মারা যায়।
  • কবর তার জন্য এত সংকীর্ণ হয়ে যায় যে, এক পাঁজরের হাড় অন্য পাজরে ঢুকে যায়।
  • কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
  • তার কবরে একটি সাপ নিযুক্ত করা হয় যার চক্ষুগুলো আগুনের এবং নখ গুলো লোহার হবে। হে বজ্রকণ্ঠে বলবে, আমার রব তোমার উপর নিযুক্ত করেছেন। আমি তোমাকে ফজর নামাজ নষ্ট করার কারণে যোহর পর্যন্ত দংশন করব, যোহর নষ্ট করার কারণে আসর পর্যন্ত, আসর নষ্ট করার কারণে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিব নষ্ট করার কারণে ঈশা পর্যন্ত, ঈশা নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত দংশন করব। এই সাপ একবার দংশন করলে মৃত ব্যক্তি ৭০ হাত মাটির নিচে ঢুকে যাবে। কিয়ামত পর্যন্ত এভাবে আজাব চলতে থাকবে।
  • হাশরের মাঠে তার হিসাব কঠিনভাবে নেয়া হবে।
  • আল্লাহ তাআলা তার উপর রাগান্বিত থাকবেন।
  • তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
  • তার মুখমণ্ডলে তিনটি লাইন লেখা থাকবে। হে আল্লাহর হক নষ্টকারী! হে আল্লাহর ক্রোধে পতিত ব্যক্তি! দুনিয়াতে তুমি আল্লাহর হক নষ্ট করেছ। আজ তুমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাও।
সুতরাং বুঝা গেল নামাজ আদায় না করলে কি কি শাস্তি দেওয়া হবে এবং শাস্তি কতটা ভয়াবহ।

লেখকের মন্তব্য : নামাজ আদায় না করার শাস্তি - নামাজ পড়ার ফজিলত

মূলত ইসলামী সমাজের মূল ভিত্তিই হচ্ছে নামাজ। এ নামাজই মানুষের মাঝে একতা আনয়ন করে। নামাজ ঈমানের বাহ্যিক প্রকাশ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কারো ঈমান পরীক্ষা করতে হলে তার নামাজ দেখ।

সম্মানিত পাঠক আপনি নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি, নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি, নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি, নামাজ পড়ার ফজিলত ও নামাজ আদায় না করার শাস্তি সম্পর্কে জেনেছেন। সওয়াবের নিয়তে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url