কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

মহিলাদের জামায়াতে নামাজের বিধানপ্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আপনি হয়তো কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, ফজরের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, যোহরের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, আসরের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, মাগরিবের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, এশার ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, এই বিষয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেতে সম্পূর্ণ পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়
এছাড়াও এখানে বিতরের নামাজের ওয়াক্ত এবং পড়ার নিয়ম-সহ এমন কিছু তথ্য তুলে ধরব যা সকলের জন্য জানা আবশ্যক। তো চলুন শুরু করা যাক।

ভূমিকা

নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ও বহু ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। পাপকর্ম সমাজকে কলুষিত করে। আর মানুষকে পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে নামাজ। নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আদায় করা আবশ্যক। এমন কিছু কিছু সময় আছে যখন নামাজ পড়া হারাম ও মাকরূহ।

আবার কিছু কিছু কারণ আছে যার মাধ্যমে নামাজ ভেঙ্গে যায়। এজন্য নামাজের মত শ্রেষ্ঠ ইবাদতকে সঠিক সময়ে ও শুদ্ধভাবে আদায় করতে হবে, তা না হলে এর কোন ফজিলত পাওয়া যাবে না, বরং গুনাহগার হতে হবে।

কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করা ফরজ। যে কোনো সময় আদায় করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয় তা জানা আমাদের জন্য আবশ্যক। কোনো ফরজ নামাজের ওয়াক্ত চলে গেলে তা কাজা হয়ে যায়। সর্বদা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি লক্ষণীয় যে, ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত এতোটুকু সময় অবশ্যই রাখতে হবে, যেন একবার ভুল হলে পুনরায় যেন সেই ওয়াক্তের ভেতরেই নতুন ভাবে নামাজ পড়া যায়।
ওয়াক্তের বাহিরে নামাজ পড়লে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। তাই ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজের ওয়াক্ত বা সময় কখন শুরু এবং শেষ হয় তা আমাদের জানতে হবে। কেননা, আমাদের এমন অনেক জায়গাতে যেতে হয় যেখানে আজান শুনতে পাওয়া যায় না। কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয় তা নিম্নরূপ-

ফজরের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

সুবহে সাদিক থেকে শুরু হয় ফজরের নামাজের সময় বা ওয়াক্ত এবং সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ফজরের ওয়াক্ত থাকে। কিন্তু চারিদিক সাদা হওয়ার পরে ফজরের নামাজ আদায় করা উত্তম। ফজরের সালাত সর্ব মোট ৪ রাকাত। প্রথম ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তারপর ২ রাকাত ফরজ। সুন্নাত ও ফরজের মাঝে অথবা ফরজের পরে কোন ধরনের নফল পড়া নিষিদ্ধ।

যোহরের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

সূর্য মধ‍্যাকাশ থেকে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার সাথে সাথে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং প্রত্যেক জিনিসের মূল ছায়া তার দ্বিগুণ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াক্ত বাকি থাকে। তবে শীতকালে ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে এবং গরমকালে ওয়াক্তের শেষ দিকে যখন রৌদ্রতাপ ঠাণ্ডা হয়ে যায় তখন যোহর-এর নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। 

যোহরের নামাজ সর্বমোট ১০ রাকাত, প্রথম ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, অতঃপর ৪ রাকাত ফরজ, ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। এছাড়া যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়।

আসরের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

প্রত্যেক জিনিসের ছায়া দ্বিগুণ হয়ে গেলে যোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের আগ মুহূর্তে শেষ হয়। তবে সূর্য হলদে হয়ে যাওয়ার পর নামাজ পড়া মাকরূহ। অবশ্য যদি কোনো কারণ-বশত: ওই দিনের আসর নামাজ পড়া না হয়ে থাকে তবে সূর্য হলুদ হওয়ার পরও আদায় করে নিতে হবে। 

আসরের নামাজ মোট ৮ রাকাত। প্রথম চার রাকাত সুন্নাতে জায়েদা (ঐচ্ছিক সুন্নাত) অতঃপর ৪ রাকাত ফরজ। আসরের ফরজ নামাজ পড়ার পর অন্য কোন নফল নামাজ পড়া জায়েজ নেই।

মাগরিবের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

সূর্যাস্তের সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং পশ্চিম আকাশে লালিমা থাকা পর্যন্ত ওয়াক্ত বাকি থাকে। ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়ে নেয়া মুস্তাহাব। দেরি করা মাকরূহ। মাগরিবের নামাজ মোট ৫ রাকাত। ফরজ ৩ রাকাত এবং ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। মাগরিব এর ফরজের পূর্বে নফল পড়া জায়েজ নেই। তবে ফরজের পর যত ইচ্ছা নফল পড়া যাবে।

এশার ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়

সূর্যাস্তের পর আকাশের লালিমা দূর হলে এক ধরনের সাদা আভা দেখা দেয়। সেই শুভ্রতা দূর হয়ে যখন চারিদিক নিকষ কালো হয়ে যায় তখন এশার ওয়াক্ত শুরু হয়। সুবহে সাদিক পর্যন্ত এশার ওয়াক্ত বাকি থাকে। কিন্তু মুস্তাহাব হলো, রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই নামাজ পড়ে নেওয়া। রাতের দ্বি-প্রহরের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এশার নামাজ পড়া মাকরূহ।
এশার নামাজ সর্বমোট ১৩ রাকাত। প্রথম ৪ রাকাত সুন্নাতে জায়েদা, তারপর ৪ রাকাত ফরজ, ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। সবশেষে ৩ রাকাত বিতর। এছাড়া যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়।

বিতরের নামাজের ওয়াক্ত এবং পড়ার নিয়ম

বিতরের নামাজের ওয়াক্ত এবং পড়ার নিয়ম : বিতরের নামাজ পড়া ওয়াজিব। তা আদায় করা আবশ্যক। তিন রাকাত বিশিষ্ট এই নামাজ ছুটে গেলে কাজা আদায় করতে হবে। এশার নামাজের পর পরই বিতরের ওয়াক্ত হয় এবং সুবহে সাদিক পর্যন্ত বাকি থাকে। যদি শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ও নিশ্চয়তা থাকে তবে বিতরের নামাজ শেষ রাতে পড়া উত্তম। আর যদি ঘুম ভাঙ্গার নিশ্চয়তা না থাকে তবে এশার পরপরই পড়ে নিতে হবে।

বিতরের নামাজ তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পর কেরাত পড়া শেষে হাত উঠিয়ে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে পুনরায় হাত বেঁধে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হবে। বিতরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব। শুধু রমজান মাসে তারাবির পর বিতর জামায়াতের সাথে পড়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য সময় একা একাই পড়তে হয়।

কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয় - আমাদের শেষ কথা

নামাজ জান্নাতের চাবি। মহান আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কেননা নামাজ সকল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তাই আমাদের সঠিক ও বৈধ সময়ে নিয়ম অনুযায়ী আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

প্রিয় পাঠক, আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কোন নামাজের ওয়াক্ত কখন শুরু এবং শেষ হয়, বিতরের নামাজের ওয়াক্ত এবং পড়ার নিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পেরেছেন এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url