জামায়াতে নামাজ আদায় না করার শাস্তি - মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান

নামাজ আদায়ের ফজিলতসম্মানিত পাঠক, আপনি কি জামায়াতে নামাজ পড়ার নিয়ম, মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান, পুরুষদের জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার বিধান, জামায়াতে নামাজ আদায় না করার শাস্তি, কি কি কারণে জামায়াত ছাড়া জায়েজ, জামায়াতে সাথে নামাজ পড়ার বিধান এইসব বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
জামায়াতে নামাজ আদায় না করলে কি হয়
এখানে আমরা জামায়াতে নামাজ পড়ার বিষয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক তুলে ধরব যা আশা করি সকলেরই উপকারে আসবে

ভূমিকা

ইসলাম ঐক্য ও সৌভ্রাত্রের অন‍্যতম আদর্শ। আর মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হচ্ছে, জামায়াতের মাধ্যমে নামাজ আদায় করা। তাই ইসলামে জামায়াতের গুরুত্ব অত্যধিক। জামায়াতে নামাজ পড়ার বেশ কিছু নিয়ম কানুন ও বিধান রয়েছে।

জামায়াতে সাথে নামাজ পড়ার বিধান

জামায়াতের সাথে নামাজ পড়ার বিধান সম্পর্কে ইমামদের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
  • ইমাম আজম আবু হানিফা ও ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ এর মতে, জামায়াতে নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
  • ইমাম শাফেয়ী, কারখী ও তাহাবী (র) এর মতে, জামায়াতে নামাজ পড়া ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের নিকটে অবস্থানকারীর জন্য মসজিদ ছাড়া অন্যত্র নামাজ আদায় হবে না।
  • আহলে যাওয়াহেরের মতে, জামায়াতে নামাজ আদায় করা ওয়াজিব এবং নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। অর্থাৎ যে আযান শোনার পর ওজর ব্যতীত জামায়াতে অনুপস্থিত থাকে, তার একাকী আদায়কৃত ঐ নামাজ কবুল হবে না।
  • ইমাম আহমদ, ইবনে খোযায়মা, ইবনুল মুনযির, আতা প্রমুখ ইমামের মতে, জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করা ফরজে আইন।
তবে কিছু কিছু কারণ আছে যার কারণে জামায়াত ছাড়া জায়েজ। কি কি কারণে জামায়াত ছাড়া জায়েজ তা আমরা একটু পরে জানব।

জামায়াতে নামাজ আদায় না করার শাস্তি

জামায়াতে নামাজ আদায় না করার শাস্তি : কোন ওজর ছাড়া জামায়াতে নামাজ আদায় না করলে গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, স্মরণ করো, সে চরম সংকটময় দিনের কথা, সেদিন তাদের সিজদা করার জন্য আহ্বান করা হবে অথচ তারা (তা করতে) সক্ষম হবে না। হীন-গ্রস্ত হয়ে তারা তাদের দৃষ্টি অবনত করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদের আহ্বান করা হয়েছিল সিজদা করতে। (আল-ক্বলাম:৪২-৪৩) 
অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন তাদেরকে এ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। অপমান ও লজ্জা তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। দুনিয়াতে তাদেরকে সিজদার (নামাজের) জন্য আহ্বান করা হতো, কিন্তু তখন তারা এ কাজে সাড়া দেয়নি। ইব্রাহিম আত্-তাইমী (র) বলেছেন, আয়াতে বর্ণিত আহ্বানের অর্থ হলো-আজান ও ইকামত দ্বারা ফরজ নামাজের জন্য ডাকা। 

কা'ব আহ্বার (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ, এ আয়াতটি কেবল তাদের উপলক্ষ‍্য করে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা জামায়াতে উপস্থিত হয় না। যারা ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে শামিল হয় না, তাদের জন্য এর চেয়ে কঠিন ভয়ের কথা আর কি হতে পারে।

আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, নবী কারীম (সা) বলেছেন, আমার ইচ্ছা করে কিছু যুবক একত্রিত করে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই এবং ওইসব লোকদের নিকট যাই যারা মসজিদে জামায়াতে উপস্থিত হয় না, আর তাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেই। (মুসলিম, আবু-দাউদ) ঘরে অপ্রাপ্ত-বয়স্ক শিশু এবং আসবাবপত্র থাকা সত্ত্বেও ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান দ্বিধাহীনভাবে প্রমাণ করে যে, জামায়াতের সাথে নামাজ পড়া একটি অতীব জরুরী কাজ।

ইমাম আবু দাউদ রহিমাহুল্লাহ অন্ধ সাহাবী আমর ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি একবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মদিনায় সাপ বিচ্ছু ও নানা প্রকার হিংস্র জন্তুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এছাড়া আমি চোখে দেখতে পাই না (অন্ধ) এবং বাড়িও দূরে। এবং যে আমাকে মসজিদে নিয়ে আসবে তাকে আমার পছন্দ হয় না। 

এমতাবস্থায় আমি আমার ঘরে নামাজ পড়তে পারব কি? তিনি বললেন তুমি কি আজান শুনতে পাও? অন্ধ সাহাবী বললেন হ্যাঁ, শুনতে পাই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাকে জামায়াতে আসতে হবে। তোমার জন্য কোন প্রকার বিশেষ বিবেচনার অবকাশ নেই। (পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত রশি ঝুলিয়ে নিয়েছিলেন এবং রশি ধরে ধরে জামায়াতে হাজির হতেন)। (আবু দাউদ)

এ লোকটি অন্ধ, মসজিদের যাতায়াতে অসুবিধা এবং মসজিদে নিয়ে যাওয়ার মত কোন লোক না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল তাকে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দেননি। সুতরাং যে লোক চোখে দেখতে পায় এবং সুস্থ সবল তার জন্য জামায়াত তরক করা কি করে সমীচীন হতে পারে। 

ইবনে আব্বাস রদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে জিজ্ঞাসা করা হলো- এক ব্যক্তি দিনে রোজা রাখে, রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে কিন্তু জামায়াতে নামাজ পড়ে না, তার কি অবস্থা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, যদি সে এই অবস্থায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযী) হাকিম রহিমাহুল্লাহ হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহ পাক অভিশাপ দিয়েছেন, তাহলো-
  • যে ব্যক্তি কোন গোত্রের নেতৃত্ব দেয় অথচ লোকেরা তাকে পছন্দ করে না।
  • ওই মহিলা যে তার স্বামীকে নাখোশ রেখে রাত কাটায়।
  • ওই লোক যে আযানের ডাক শুনে কিন্তু তাতে সাড়া দেয়না। অর্থাৎ জামায়াতে শরিক হয় না।

কি কি কারণে জামায়াত ছাড়া জায়েজ

কি কি কারণে জামায়াত ছাড়া জায়েজ তা হলো -
  • সতর ঢাকার মতো কাপড় না থাকলে জামায়াত ছাড়া জায়েজ।
  • প্রচণ্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে।
  • প্রচণ্ড শীতের কারণে প্রাণনাশ বা রোগবৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে।
  • শত্রুর কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকলে।
  • ঘোর অন্ধকারের কারণে পথ দেখা না গেলে।
  • প্রচণ্ড অসুস্থ বা অসুস্থ ব‍্যক্তির সেবাকারী (যদি অন্য কেউ না থাকে)।
  • মালপত্র হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে।
  • প্রচণ্ড পেশাব পায়খানার বেগ পেলে।
  • যাত্রাকালে গাড়ি বা কাফেলা ছেড়ে দেয়ার ভয় থাকলে জামায়াত ছেড়ে দেওয়া জায়েজ।

জামায়াতে নামাজ পড়ার নিয়ম

জামায়াতে নামাজ পড়ার সময় ইমামের অনুসরণ করার নিয়ত করতে হয়। ইমাম যোহর ও আসর নামাজে নিচু-স্বরে কেরাত পড়বে। এছাড়া বাকি সমস্ত নামাজে উচ্চস্বরে কেরাত পড়বে। মুক্তাদীগণ (যারা ইমামের অনুসরণ করে নামাজ পড়ে) প্রত্যেক রাকাতেই চুপচাপ শুধু শ্রবণ করবে, কিছু পড়বে না। ইমাম সাহেব সামিয়াল্লা-হু লিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে সোজা হলে মুক্তাদীরা রব্বানা লাকাল হামদ পড়বে।
এছাড়া বাকি সমস্ত রোকন আদায়ের সময় ইমামের সাথে সাথে মুক্তাদিকেও চুপিসারে তাকবীর বলতে হবে। মুক্তাদীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যেন ইমামের সামনে দাঁড়ানো না হয় এবং কোন রোকন ইমামের আগে আদায় না হয়ে যায়। ইমামের সাথে সাথে মুক্তাদী প্রতিটি তাকবীর বলবে। তবে মুক্তাদীর তাকবীর ইমামের তাকবীরের পরে হতে হবে, আগে নয়।

মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান

বর্তমানে মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান হলো মাকরূহ। মহিলাদের বাড়ির ভিতরে নামাজ পড়া উত্তম। ইসলামের প্রথম যুগে মহিলারা মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু পরবর্তী যুগে বিভিন্ন প্রকার ফিতনা ফাসাদ ব্যাপক হওয়ার কারণে খোলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবায়ে কেরাম একমত হয়ে মহিলাদের মসজিদে গমনের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। 

যেহেতু ঘরে নামাজ পড়া মহিলাদের জন্য সর্বাধিক নিরাপদ, তাই মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়াই অধিক যুক্তিযুক্ত। বরং মহিলাদের জন্য ঘরের যে কোন স্থানে নামাজ পড়া অপেক্ষা ঘরের একেবারে নিভৃতে নির্জন স্থানে নামাজ পড়ার অনেক বেশি সওয়াব রয়েছে। 

তবে যদি কোন স্থানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত-করণের দ্বারা মহিলাদের চলাচল সম্পূর্ণভাবে ফিতনা-মুক্ত ও নিরাপদ হয় আর তবে মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়া জায়েজ।

(মহিলারা যদি বাহিরে অথবা যানবাহনে আটকে যায় এবং নামাজের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে সেক্ষেত্রে নিরাপদ স্থানে নামাজ পড়ে নিতে হবে) যদিও বর্তমান ফিতনা-ফাসাদের যুগে মহিলাদের নিরাপত্তায় রাখা অনিশ্চিত। সুতরাং আশাকরি বুঝতে পেরেছেন মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান।

জামায়াতে নামাজ আদায় না করার শাস্তি - মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান - লেখকের মন্তব্য

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, পুরুষদের জন্য জামায়াতে নামাজ আদায় করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা রুকু কারীদের সাথে রুকু করো। তবে ওজর থাকলে জামায়াত ছাড়া জায়েজ আছে।

আর আমাদের বর্তমান সময়ে সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে আছে। যেসবের মূল কারণ হলো নারী সংক্রান্ত। এজন্য মহিলাদের জামায়াতে নামাজ না পড়ে ঘরে একা নামাজ পড়তে হবে। আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা জামায়াতে নামাজ আদায় না করার শাস্তি, মহিলাদের জামায়াতে নামাজ পড়ার বিধান, জামায়াতে নামাজ পড়ার নিয়ম, কি কি কারণে জামায়াত ছাড়া জায়েজ, জামায়াতে সাথে নামাজ পড়ার বিধান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url