জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্বক ও চুলের যত্নে জাবুটিকাবা ফল

মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আমরা অনেকেই জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা, জাবুটিকাবা ফলের ক্ষতিকর দিক, ত্বকের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব‍্যবহার, চুলের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব‍্যবহার, জাবুটিকাবা ফল খাওয়ার নিয়ম, জাবুটিকাবা ফলের চাষ সম্পর্কে জানতে চাই।
জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা
কিন্তু জাবুটিকাবা একটি বিদেশি ফল হওয়ার কারণে এর সম্পর্কে অনেকেই জানে না। ব্রাজিলের এই জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা অনেক। তো চলুন এখন জাবুটিকাবা ফল সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

জাবুটিকাবা দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের একটি ফল বহনকারী গাছ। শুধু ব্রাজিলই নয়, জাবুটিকাবা আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে এবং বলিভিয়াতেও স্থানীয়ভাবে চাষ হয়। এই ফল কাঁচা খাওয়া যেতে পারে বা জেলি এবং পানীয় তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঙ্গুরের সাথে এই ফল তুলনা করা হয়।
তাজা ফল কাটার তিন থেকে চার দিন পরে গাঁজন শুরু হয়। তাই এগুলো দ্বারা প্রায়শই জ্যাম-জেলি, শক্তিশালী ওয়াইন এবং লিকার তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এই ফল হাঁপানি, ডায়রিয়া এবং টনসিলের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের জন্য চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আমাদের দেশেও জাবুটিকাবা ফল চাষ করা হচ্ছে।

জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা

জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এই ফলের অন‍্যতম কিছু উপকারিতা তুলে ধরব। জাবুটিকাবা হেমোপটিসিস, হাঁপানি, ডায়রিয়া এবং আমাশয়ের চিকিৎসার জন‍্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও টনসিলের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের জন্য এটি খুব ভালো কাজ করে।

জাবুটিকাবা ফলের মধ্যে এমন যৌগ রয়েছে যার মধ্যে ক্র‍্যানবেরি, আঙ্গুর ইত্যাদির চেয়ে বেশি অ‍্যান্টি-এজিং, অ‍্যান্টি-ইনফ্লেমেটরে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে। জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা গুলো হল -
  • জাবুটিকাবা ফল শ্বাসনালী খুলে দেয়, যা হাঁপানির জন্য ভালো। ডায়রিয়ার জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। এটি টনসিলাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিরাময় করে।
  • জাবুটিকাবা ফল প্রদাহ বিরোধী কাজ করে, এবং এই ফল দুর্দান্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পূর্ণ।
  • জাবুটিকাবা ফল ক্র‍্যানবেরির মতো অনুরূপ স্বাস্থ্য উপকারিতা সহ একটি বার্ধক্য বিরোধী ফল।
  • জাবুটিকাবা ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস বেশি থাকে।
  • এতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ খুব বেশি থাকে এবং এতে কিছু ভিটামিন বি থাকে। এই ফলে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে।
  • ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাবুটিকাবা ফলের কার্যকারিতা নিয়ে নতুন গবেষণা করা হচ্ছে, কারণ এতে অনেকগুলি অ‍্যান্টি-ক্যান্সার যৌগ রয়েছে।
  • এটি চর্মরোগ দূর করে, এমনকি চুল পড়া ও রোধ করে। ত্বকের যত্নেও এটি অনেক উপকার করে।
  • জাবুটিকাবা ফল একটি দুর্দান্ত ডিটক্সিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • জাবুটিকাবা ফল ফেনোলিক যৌগ সমৃদ্ধ, যার মধ্যে অ্যান্থোসায়ানিন রয়েছে। এই ফলের অ্যান্থোসায়ানিন হল একমাত্র ফ্যাটি অ্যাসিড যা স্বাস্থ্য উপকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • জাবুটিকাবা ফল জ‍্যাম-জেলি এবং চিজকেক তৈরিতে ব‍্যবহৃত হয়।
  • জাবুটিকাবা ফলে থাকা ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধের জন্য এই ফল খুব ভালো কাজ করে।
  • এই ফল অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। জাবুটিকাবা ফাইবার সরবরাহ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। হজমে সহায়তা করে, পেটে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। এই ফলে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। সুতরাং বুঝা গেল জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা অনেক বেশি।

ত্বকের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব‍্যবহার

জাবুটিকাবা ফলের অ‍্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য এবং ভিটামিন সি উপাদান ত্বককে ভালো রাখে। বলিরেখার মতো অকাল বার্ধক‍্য রোধ করে। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং শক্তি বাড়ায়।

জাবুটিকাবা ফল ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য একটি শক্তিশালী মিত্র। এটি UV রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং তারুণ্যতা ধরে রাখে। সুতরাং ত্বকের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব্যবহার করতে পারেন। এই ফল বেটে নিয়ে মুখে নিয়মিত লাগাতে পারেন।

চুলের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব‍্যবহার

জাবুটিকাবা এর পুষ্টি উপাদান চুলের বৃদ্ধির জন্য পরোক্ষভাবে সুবিধা প্রদান করে। এর প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য মাথার ত্বকের প্রদাহকে প্রশমিত করতে পারে। চুলের ফলিকল গুলোর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে।
জাবুটিকাবা ফলে থাকা জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মত খনিজ গুলো চুলের টিস্যুর বৃদ্ধি করে। আর এটি ফলিকলের চারপাশে তেল গ্রন্থি গুলোর সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই চুলের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

জাবুটিকাবা ফলের ক্ষতিকর দিক

জাবুটিকাবা ফলের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা রয়েছে। জাবুটিকাবা ফল মাঝারি পরিমাণে গ্রহণ করলে সকলের জন্য এটি নিরাপদ। কিন্তু এই ফলের নির্যাস অত্যধিক গ্রহণের কারণে শরীরে ট‍্যানিন তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণ করলে কার্সিনোজেন তৈরি করে, আর এর থেকে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। জাবুটিকাবা ফল প্রচুর পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

জাবুটিকাবা ফলের চাষ

ব্রাজিলিয়ান আঙ্গুর নামে পরিচিত এই জাবুটিকাবা ফল বর্তমানে বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। জাবুটিকাবা ফলের চাষ করতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। জাবুটিকাবা ফলের বীজ থেকে অথবা জাবুটিকাবা গাছে কলম করেও চাষ করা যায় সহজেই।
ব্রাজিলে এই গাছ ৪৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে বা অন্যান্য দেশেও গড়ে মাত্র ১৫ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। জাবুটিকাবা গাছ খুবই ধীরগতিতে বর্ধনশীল হয় বা বাড়তে থাকে। এই গাছে প্রথম ফল আসতে ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এই গাছের ফল পুরো কাণ্ড জুড়ে ধরে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের হার্টিকালচার সেন্টারে জাবুটিকাবা গাছের চারা পেতে পারেন।

জাবুটিকাবা ফল খাওয়ার নিয়ম

জাবুটিকাবা ফল বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। এটি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জ্যাম, জেলি বানিয়ে খাওয়া যায়। এই ফল থেকে রস বের করে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।

তবে সাধারণ ভাবে  জাবুটিকাবা ফল খাওয়ার নিয়ম হল- জাবুটিকাবা ফল আঙ্গুর ফলের মতো প্রথমে ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে নিয়ে সরাসরি এর খোসা সহ খাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত মিষ্টি এবং সুস্বাদু। এই ফল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ বর্ণের হয়। পাকলে গাঢ় বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। পাকা অবস্থায় খাওয়াই উত্তম।

জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্বক ও চুলের যত্নে জাবুটিকাবা ফল - লেখকের মন্তব্য

জাবুটিকাবা একটি অনন্য ফল যা অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বার্ধক্য বিরোধী। এই ফলের গাঢ় বেগুনি ত্বকে পাওয়া শক্তিশালী অ্যান্থোসায়ানিন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। সুতরাং সুস্থ থাকতে নিয়মিত জাবুটিকাবা ফল খেতে পারেন। কিন্তু অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকলে এই ফল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা, ত্বকের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব্যবহার, চুলের যত্নে জাবুটিকাবা ফলের ব্যবহার, জাবুটিকাবা ফলের ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা, জাবুটিকাবা ফল খাওয়ার নিয়ম এবং জাবুটিকাবা ফলের চাষ সম্পর্কে। সকলকে জানাতে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url