ডুগডুগি বেলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম - ডুগডুগি বেল কি কাজে লাগে

সুপার ফুড সজনে পাতার উপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আপনারা কি জানেন ক‍্যালাবাশ ফল বা  বেল বৈষ্ণব অথবা ডুগডুগি বেলের উপকারিতা, ক‍্যালাবাশ বা ডুগডুগি বেল কি কাজে লাগে, ডুগডুগি বা বৈষ্ণব বেল কি খাওয়া যায়, ডুগডুগি বেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
ডুগডুগি বা বৈষ্ণব বেল এর উপকারিতা
আপনারা কি জানেন ক‍্যালাবাশ ফল বা বৈষ্ণব বেল ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিতে ভরপুর। ক‍্যালাবাশ ফল বা ডুগডুগি বেল সম্পর্কে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

ভূমিকা

আমাদের দেশে এমনকি ভারতেও ডুগডুগি গাছ বা ক‍্যালাবাশ ট্রি খুবই বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ। ক‍্যালাবাশ গাছ ফিলিপাইনে প্রচুর পরিমাণ দেখা যায়। দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকাতে ব্যাপকভাবে এটি চাষ করা হয়। এটি প্রধানত একটি শোভাময় উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ফলটি দেখতে সবুজ এবং আকারে তরমুজের ন‍্যায় হয়ে থাকে।

ডুগডুগি ফল অনেকটা বেলের মতো দেখতে। তাই আমাদের দেশে এটি বেল নামে পরিচিত। এই বেলের ওজন ১০ কেজি পর্যন্ত বা তারও বেশি হয়ে থাকে। তাই এই বেলকে দশসেরি বেল নামে চেনে অনেকে। আবার এই ফলকে অনেকে পাহাড়ি বেল বলে।

ডুগডুগি বেল কি কাজে লাগে

ক‍্যালাবাশ বা ডুগডুগি গাছ ফিলিপাইনের মিন্দানাও, লুজোন এবং ভিসায়াসের কিছু অংশে প্রচুর পরিমাণ এই গাছটি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের দেশে এই গাছটি খুব একটা দেখা যায় না। তাই এই গাছটি বা ফলটি কি কাজে লাগে তা আমরা অনেকেই জানিনা। ডুগডুগি ফল বা বৈষ্ণব বেল এর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। মানুষ এখন তাদের স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রায় এটি ব্যবহার করছে।
ক‍্যালাবাশ বা ডুগডুগি বেলে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে। এই ফলকে মিরাকল ফ্রুট বা অলৌকিক ফল বলে থাকেন কিছু পুরানো লোকেরা। এই ফল পেকে গেলে বাহিরের চামড়া বা খোলটি পানি রাখার পাত্র বা খাবার রাখার জন্য পাত্র হিসেবে ব্যবহার হয়।

অনেকে এই ফল ও বিভিন্ন ধরনের রং করে বাজারে খেলনা হিসেবে বা মাটির ব্যাংক হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের বাউলেরা এই ফল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে থাকে। তাই এ ফল বা বেলকে ডুগডুগি ফল বা বেল বলে থাকেন অনেক।

ডুগডুগি বেলের উপকারিতা

পিনয় এমডি-র (Pinoy MD) একটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে এর উপকারিতা সম্পর্কে। ক‍্যালাবাশ ফল অর্থাৎ, বৈষ্ণব বা ডুগডুগি বেলের উপকারিতা হল -
  • কাশি এবং হাঁপানির সমস্যা দূর করে : বিশেষজ্ঞদের মতে, ক‍্যালাবাশ ফলের মজ্জা হাঁপানি এবং গ্যাসের মত শ্বাসকষ্টের সমস্যা মোকাবেলায় অত্যন্ত কার্যকরী।
  • ইমিউন সিস্টেমের জন্য : ডুগডুগি বা বৈষ্ণব বেল ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।
  • পেট ব্যথা দূর করে : ডুগডুগি বেল আমাশয় এবং পেটের ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হয়।
  • বার্ধক্য রোধ করে : যদি আপনার সৌন্দর্য ধরে রাখতে চান এবং ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের পণ্যগুলোকে ব্যবহার করে প্রচুর অর্থ খরচ না করতে চান তাহলে ডুগডুগি ফল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা এতে রয়েছে অ‍্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন‍্য ভালো : গবেষণা অনুসারে, এই ফলটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে পারে। কারণ এতে ফাইটো-কেমিক্যাল রয়েছে। যা শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • বাতের ব্যথা দূর করে : কিছু ফিলিপিনো বয়স্করা এই ফলটি ব্যবহার এবং সেবন করতে পছন্দ করেন। কারণ এটি বাত থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
  • মাথা ব্যথা দূর করে : এই ফলটিতে শিথিল প্রভাব রয়েছে এবং মাথা ব্যথা উপশমে কার্যকর বলে ধরা হয়।
  • দাঁতের ব্যথা দূর হয় : ডুগডুগি বেল দাঁতের ব্যথাও দূর করতে পারে।
  • চুলের যত্নে ব্যবহার হয় : ক‍্যালাবাশ বা ডুগডুগি ফলের তেল চুল এবং মাথার ত্বককে পুষ্টি ও সুরক্ষা দিতে পারে।
  • হার্ট ভালো রাখে : ডুগডুগি ফলের জুস হার্টের অসুখ ঘরোয়া ভাবে প্রতিকার করে।
  • এছাড়া কুর্দিস্তান অঞ্চলে এই ফল বা বেল ঐতিহ্যগতভাবে একটি অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ডুগডুগি বা বৈষ্ণব বেল কি খাওয়া যায়

অনেকেই বলে থাকেন ডুগডুগি বেল শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যই ব্যবহার হয়ে থাকে। আবার অনেকে এটি আসবাবপত্র অথবা বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে এটি খাওয়া যায় কিনা। উত্তর হল হ্যাঁ। এই বেলটি বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়।
আর এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপকারী উপাদান সমূহ। এই ফল আমাদের শরীরের বিভিন্ন জরুরি কাজে লাগে যা আমরা পূর্বে জেনেছি।

ডুগডুগি বেল খাওয়ার নিয়ম

ডুগডুগি বেল বিভিন্ন রন্ধন সম্পর্কীয় প্রস্তুতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এটি ভাজা, তরকারি বা স‍্যুপে যোগ করা যেতে পারে। ফলের হালকা গন্ধ এবং দৃঢ় টেক্সচার এটিকে একটি বহুমুখী উপাদান করে তোলে।

ক‍্যালাবাশ ফলের জনপ্রিয় রেসিপি হল - আদা এবং রসুন দিয়ে এটি ভাজা ভাজা করা। আবার নারিকেল দুধ এবং মসলাসহ তরকারিতে, শাকসবজিতে এবং ঝোলসহ স‍্যুপে ব্যবহার করে খেতে অনেকেই পছন্দ করেন।

ডুগডুগি বেল বা ক‍্যালাবাশ ফল গাছ থেকে পাড়ার পর এটি ভেঙে ভেতরের সাদা অংশগুলো তুলে নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর একটি বাটিতে বা অন্য কোথাও এই ফলের সাদা অংশগুলো নিয়ে সামান্য পরিমাণ পানি দিতে হবে। তারপর এটি গুনে অল্প তাপে অনেকক্ষণ জাল দিতে হবে। এরপর দেখা যাবে এটি আস্তে আস্তে কালো রঙের বর্ণ ধারণ করছে।
একেবারে কালো হয়ে গেলে এটি চুলা থেকে নামিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে শুধু এর পানিটা রেখে বাকি সব ফেলে দিতে হবে। এই কালো পানি থেকে তেলও তৈরি করা যায়। ফিলিপিনে এটি জনপ্রিয় একটি শরবত যা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

লেখক এর মন্তব্য : ডুগডুগি বেলের উপকারিতা - ডুগডুগি বেল কি কাজে লাগে

পৃথিবীতে বিরল একটি ফল হল ক‍্যালাবাশ ফল। এটি আমরা দশসেরি বেল নামেও চিনি। ডুগডুগি বা বৈষ্ণব বেল এর উপকারিতা রয়েছে অনেক। কিন্তু অনেকের মতেই এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। অনেকের মতে কাঁচা ডুগডুগি বেলে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে। তাই অনেক মানুষ এটি খান না। এজন্য একজন অভিজ্ঞ গবেষকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক তথ্য জেনে এটি খেতে পারেন।

আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এবং নানা উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করে ফিলিপিনের বিখ্যাত এই ফল বা বেল সম্পর্কে আপনাদেরকে জানালাম। সম্মানিত পাঠক আমরা জেনেছি ক‍্যালাবাশ বা ডুগডুগি বেল কি কাজে লাগে, বৈষ্ণব বা ডুগডুগি বেলের উপকারিতা, ডুগডুগি বেল খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্কে। আপনার উপকার হয়ে থাকলে অন্যের উপকারের জন্য এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url