ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আপনি কি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও ড্রাগন ফলের অপকারিতা, ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা, ড্রাগনফল খাওয়ার নিয়ম, চুল ও চোখ ভালো রাখতে ড্রাগন ফল, রক্তশূন্যতা দূর করতে ড্রাগন ফল অথবা ড্রাগন ফলের সকল গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ড্রাগন ফল খেলে কি উপকার পাওয়া যায়
এছাড়াও এখানে আমরা আলোচনা করব ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা, রূপচর্চায় ড্রাগন ফল, হাড় ও হার্ট সুস্থ রাখতে ও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ড্রাগন ফলের ভূমিকা এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব যা সকলের জন্য জানা খুবই প্রয়োজন।

ভূমিকা

অনেকেই জানেনা ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা। ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। এই জনপ্রিয় ফলটির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ড্রাগন ফলে রয়েছে ফাইবার,ম্যাগনেসিয়াম,খনিজ,মিনারেল,প্রোটিন,কার্বোহাইড্রেট ও বিভিন্ন ধরনের অ‍্যান্টি-অক্সিডেন্ট। একটি ড্রাগন ফলে থাকে প্রায় ১৩৬ গ্রাম ক্যালরি এবং এতে ফ্যাট নেই বললেই চলে।
ড্রাগন হজম শক্তি বৃদ্ধি করে,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এটি ত্বক,চুল ও চোখের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। গর্ভবতী নারীর জন্য,ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ও রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর জন্য ড্রাগন ফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী। উপকারিতার পাশাপাশি ড্রাগন ফলে রয়েছে অপকারিতাও। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ড্রাগন ফল : আমাদের দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত একটি করে ড্রাগনফল খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। কারণ এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম এবং ভিটামিন ও খনিজ থাকায় রক্তে সুগারকে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখে যা ইনসুলিন উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। চর্বি না থাকায় রোগী নিশ্চিন্তে ড্রাগনফল খেতে পারবে।
  • হার্ট ভালো রাখতে ড্রাগন ফল : হার্ট ভালো রাখার জন্য ড্রাগন ফল অনেক কার্যকরী একটি ফল। ড্রাগন ফলের বীজে রয়েছে ওমেগা ৩ ও ৯ এসিড, যার কারণে এই ফল হার্টকে রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখে। ড্রাগন ফল খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেজন্য যারা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
  • হাড়ের সমস্যা সমাধানে ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলে ক্যালসিয়াম থাকায় ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে এবং হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমাতে ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন।
  • রক্তশূন্যতা দূর করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ড্রাগন ফল : রক্তশূন্যতা দূর করতে একটি কার্যকরী ফল হলো ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি ও ক‍্যারেটিনেড থাকায় এটি খেলে দেহে ইমিউন সিস্টেম বেড়ে যায় এবং রক্তকণিকাগুলোকে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। 
  • আমরা জানি যার যত ইমিউনিটি বেশি তার ততো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, সুতরাং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ আয়রন আছে। আর আমরা জানি আয়রন শরীরে লোহিত কণিকা উৎপন্ন করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে : খাবার হজম করে ড্রাগন ফল। এটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এই ফলে ফাইবার থাকায় পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়া ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় ও ভালো থাকে, এজন্য কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • ত্বক সুন্দর করতে ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি ও অ‍্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ত্বক উজ্জ্বল করে এবং প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনে। বেসন, ড্রাগনফল এবং গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। ৩০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এভাবে ব‍্যবহার করুন তাহলে রোদে পোড়া কালো দাগ দূর হবে, ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল হবে এবং ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে। 
  • চুলের জন‍্য উপকারী : ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ‍্যমে চুলকে সুস্থ রাখা যায় এবং চুল পড়া বন্ধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত দুধের সাথে ড্রাগন ফল খেলে চুলের সমস্যা সমাধান হয় এবং সৌন্দর্য বাড়ায়।
  • গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা : গর্ভবতী মহিলাদের জন‍্য ড্রাগন ফল অতি প্রয়োজনীয় খাবার। গর্ভধারণ-কালে মহিলাদের আয়রন, ওমেগা ৩ এসিড, ভিটামিন বি ১ অধিক পরিমাণ প্রয়োজন হয় যা ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাই ডাক্তাররা তাদেরকে ফাইবার সমৃদ্ধ ফল খেতে বলেন। আর আমরা জানি ড্রাগনফল একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। 
  • এছাড়াও এই ফল সঠিক মাত্রায় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং প্রয়োজনীয় উপাদান জোগান দেয়। গর্ভধারণ-কালে বেশিরভাগ মহিলাদের রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে রক্তশূন্যতাও দূর হয়। ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা-ও রয়েছে তাই এটি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে খাওয়াবেন।
  • চোখ ভালো রাখতে ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলে বিটা-ক‍্যারোটিন রয়েছে যা চোখে ছানি পড়া ও বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে। গাজরের মধ‍্যে যে পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায় ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমেও সেই পরিমাণ ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
  • শিশুদের সুস্থ রাখতে ড্রাগনফল : শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও কোষের গঠনে ড্রাগন ফল খুবই কার্যকর। আন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, আয়রন, খনিজ, ফাইবার, মিনারেল, প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ড্রাগনফল শিশুদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। হার্ট সুস্থ রাখে এবং হাড় গঠনে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে ড্রাগন ফল : ড্রাগন ফলে কোনো ফ‍্যাট নেই বললেই চলে। তাই ওজন কমানোর জন‍্য এটি একটি আদর্শ খাবার। এই ফল রক্তে শর্করা ও চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে সেজন্য ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কম ক‍্যালরি ও আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব‍্যায়ামের পাশাপাশি ড্রাগন ফল খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা

ড্রাগন ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। পাশাপাশি এর খোসারও উপকারিতা রয়েছে। বিভিন্ন ফল খাওয়ার পর সেগুলোর খোসা আমরা ফেলে দেই, খোসার উপকারিতা সম্পর্কে না জানার কারণে। ড্রাগন ফলের খোসা ত্বকে ব‍্যবহারের মাধ্যমে ত্বকের অনেক উপকার হয়। 

ড্রাগনফলের খোসায় এক চামচ লেবুর রস ও আধা চামচ চিনি মিশিয়ে মুখে ও ঘাড়ে বেশ কিছুক্ষণ ঘষাঘষি করুন। এতে ত্বক নমনীয় হয়, কালো দাগ দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ড্রাগন ফলের খোসা ভিটামিন সি, প্রোটিন ও বিটাক‍্যারোটিন সমৃদ্ধ। 

ড্রাগনফল খাওয়ার নিয়ম

একটি পাকা ড্রাগনফল পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। তারপর ফলটির মাথা ও পেছনের অংশ কেটে নিন, এরপর খোসা ছাড়িয়ে আমের মতো টুকরো টুকরো করে খেতে পারেন। ড্রাগন ফল জুস করে বা নানা রকম রেসিপি করেও খাওয়া যায়।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

উপকারিতার পাশাপাশি ড্রাগন ফলের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যা আছে তারা এই ফল খেলে তাদের অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। বিদেশি এই ড্রাগন ফল আমাদের দেশে বাণিজ্যিক ভাবে কিছু জায়গাতে চাষ হলেও দাম অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ কিনতে পারেনা।

এছাড়া কিছু অসৎ চাষিরা সামান্য লাভের আশায় টনিক নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান গাছে থাকা ছোট ড্রাগনফলে স্প্রে করে। যার কারণে এই ফলটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এটির ওজন এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। যা খেলে আমাদের শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। 
তাই বড় ড্রাগন ফল এড়িয়ে চলাই ভালো। এই ফলে ফাইবার থাকাতে এটি বেশি খেলে অনেক সময় ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম মেনে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত। আমরা জানলাম ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও ড্রাগন ফলের অপকারিতা।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খোসার উপকারিতা - লেখকের মন্তব্য

ক্যাকটাস জাতীয় এই ড্রাগনফল যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি এটি পুষ্টিকরও। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটি যোগ করা উচিত। উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা থাকায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রাগন ফল খাবেন।

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা ড্রাগন ফলের উপকারিতা, ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা, ড্রাগনফল খাওয়ার নিয়ম, ড্রাগন ফলের অপকারিতা জেনেছি। আমাদের এ আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধব দের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও উপকৃত হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url