ডেঙ্গু রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ - ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

তুলসী পাতার চা এর উপকারিতাসম্মানিত পাঠক, আপনি কি ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়, ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় ও ভালো করার উপায় অথবা ডেঙ্গু রোগ বা জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন‍্য।
ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা
এখানে আমরা ডেঙ্গু রোগের কারণ, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা ও কি খাওয়া যাবেনা এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করেছি।

ভূমিকা

ডেঙ্গু একটি স্প্যানিশ শব্দ। এর অর্থ হাড়ভাঙ্গা জ্বর। ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এই মশা খালি চোখে দেখে চিনতে পারা যায়। মশার দেহে সাদাকালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। যখন কোন অঞ্চলে ডেঙ্গু প্রবেশ করে তখন একের পর এক বাড়িতে এই জ্বর প্রবেশ করতে থাকে। 

আমাদের দেশে প্রতি বছর বহু মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। গ্রাম শহর সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক, ডেঙ্গু রোগের কারণ হলো পরিবেশের অপরিচ্ছন্নতা।

ডেঙ্গু রোগের কারণ

এডিস নামক মশার কামড়ে ডেঙ্গু ভাইরাস দেহে প্রবেশ করে। এটিই মূলত ডেঙ্গু রোগের কারণ। সাধারণত স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে এটি ছড়ায় এবং পরবর্তীতে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ভোরবেলা ও মাঝরাতে এর প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও যেকোনো সময় এডিস মশা কামড়ানোর সম্ভাবনা থাকে, এক কামড়েই সংক্রমণ হতে পারে। এই মশা জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে এবং এদের জীবন চক্রের পুরো সময়টাতেই এরা ডেঙ্গুর বাহক হতে পারে। 
এই মশা কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায় এবং ওই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যখন কোন জীবাণু-বিহীন মশা কামড়ায় তখন সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশাতে রূপান্তরিত হয়। এভাবেই ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে। চার রকম ডেঙ্গু ভাইরাস ডেন-এক, ডেন-দুই, ডেন-তিন ও ডেন-চার এর মধ্যে সবচেয়ে সাংঘাতিক হলো ডেন-দুই এবং ডেন-চার ভাইরাস, কারণ এই ভাইরাসের আক্রমণে দেহ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ : ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহের তাপমাত্রা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ প্রচণ্ড জ্বর আসে এবং দেহের সর্বত্র তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। ডেঙ্গুর আক্রমণে রোগীর রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আক্রান্তের দেহের চামড়া ফেটে যায় বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণ ঘটতে থাকে। রোগী ক্ষুধা অনুভব করেনা, বমি বমি ভাব আসে, বমির সাথে রক্তপাত হয়। 
দাঁতে ও চোখে ভীষণ পরিমাণে ব্যথা হয়, নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। চামড়ায় ছোট ছোট অনেক ফুসকুড়ি গজিয়ে ওঠে। সব সিনড্রোম হয়ে গেলে দেহের কোন অঙ্গে ঠিক মত রক্ত পৌঁছাতে পারেনা তখন অর্গান ফেল করে, বিজ্ঞানের ভাষায় একে মান্টি অর্গান ফেইলর বলা হয়। 

কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রান্তের লিভারেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। এমতাবস্থায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে সপ্তাহ-খানেকের মধ্যে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তবে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে সচেতনতার সঙ্গে সময় মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং রোগীকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তোলা যায়।

ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়

ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবে এমন কোন নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি। ডেঙ্গু জ্বর দুই ধরনের হয়। যথা--
  • ক্লাসিক‍্যাল ডেঙ্গু জ্বর 
  • হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।
হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের চারটি ধাপ আছে। তাহলো গ্রেড-এক, গ্রেড-দুই, গ্রেড-তিন, গ্রেড-চার। ক্লাসিক‍্যাল ও গ্রেড-এক হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বাড়িতেই চিকিৎসা নেওয়া যায়। বেশিরভাগ সময় এ ধরনের রোগী পাঁচ থেকে দশ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায় না, তাই সাধারণ জ্বর হলেও তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ডেঙ্গু রোগের সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনো ঔষধ নেই তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে প্যারাসিটামল, তরল খাদ্য এবং প্রচুর পরিমাণ পানীয় জল বিশেষ করে স‍্যালাইন,ডাবের পানি, ফলের জুস বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এছাড়া রোগীকে মশারী টাঙিয়ে তার ভেতরে সবসময় রাখতে হবে এবং রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করতে হবে।

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে প্রধান কাজ হলো মশার জন্ম আটকানো, এজন্য মশার ডিম পাড়ার স্থানগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার উপায় খোঁজাও আবশ্যিক। টব, ডাবের খোসা, ফুলদানি, পরিত্যক্ত টায়ার, নির্মাণাধীন চৌবাচ্চা ইত্যাদি স্থানে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। 

মশা না কামড়ানোর জন্য ক্রিম ব্যবহার করতে হবে, রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টাঙানো আবশ্যক। মশার কয়েল ও ম্যাট এর ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সবসময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে। এ ছিল ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা এর মধ্যে স্বাভাবিক নিয়মে সকল ধরণের নরম খাদ‍্য রাখতে বলেন ডাক্তাররা। এর সাথে পানিশূন‍্যতা দূর করার জন‍্য বয়স ও আবহওয়া অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ লিটার পানি পান করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ফলের জুস,ডাবের পানি এবং স‍্যালাইন খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকায় ক‍্যালরি ও পুষ্টিকর খাবার রাখাতে হবে। যেমন মুগ ডাল, খেজুর, কিসমিস, দই, পনির ইত্যাদি। 

এছাড়াও প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকায় চিয়া সিড, মাছ, মাংস, ডিম, গরু-খাসির মাংস, দুধ,স্পাইরুলিনা ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব‍্যক্তির শরীরে প্লাটিলেট এবং হিমোগ্লোবিন কমতে থাকে। এজন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণ আয়রন দরকার হয়।

আলু,পালং শাক, গরুর কলিজা, জলপাই, ডিমের কুসুম, শিমের বিচি ইত্যাদি থেকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরে প্লাটিলেট হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে। তাই ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা আসব খাবার রাখতে হবে।

ডেঙ্গু হলে কি খাওয়া যাবে না

ডেঙ্গু হলে কোনো ধরণের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। ডেঙ্গু রোগীর খাবারে বেশি তেল ও মসলা দেওয়া যাবে না যাতে পাকস্থলীর কোনো সমস্যা না হয়। বিভিন্ন ধরণের পানীয়, দুধ চা, কফি ইত্যাদি শরীরে পানিশূন‍্যতা বৃদ্ধি করে। তাই এগুলো রোগীর বর্জন করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের সাথে ডায়রিয়া এবং বমি হলে ডাল, শাকসবজি এবং দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করতে হবে।

ডেঙ্গু রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ - ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা - লেখকের মন্তব্য

জন সচেতনতা ও যথাযথ পরিচ্ছন্নতার অভাবে দিন দিন অন্যান্য মশার মতো এডিস মশার সংখ‍্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর পৃথিবীতে মশার কামড়ে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। গত ৩০ বছরে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার পৃথিবীতে ৩০ গুন বেড়েছে এবং তা প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এজন্য আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বাড়াতে হবে ও ডেঙ্গুর প্রভাব গুলি দেখাতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জ্বর কমে যাওয়ার পরেই মূলত ক্রিটিক্যাল ফেইজ শুরু হয়। তাই জ্বর কমলেই ডেঙ্গু রোগ ভালো হয়ে গেল এমন কিছু মনে করবেন না এবং সব সময় ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা, ডেঙ্গু হলে কি খাওয়া যাবে না, ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করণীয়, ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয়, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, ডেঙ্গু রোগের কারণ জানতে পারলাম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url