দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা - দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয়

ধূমপান ছাড়ার উপায় জানুনসম্মানিত পাঠক আসসালামু আলাইকুম। দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয়, দাড়ি না রাখলে কি গুনাহ হবে, এসব বিষয় আমাদের অনেকেরই অজানা। দাড়ি সম্পর্কে আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
এসব বিষয় ছাড়াও আমরা এখানে আলোচনা করব, দাড়ি রাখার বিধান, গোঁফ রাখার বিধান ও দাড়ি রাখার ফজিলত সম্পর্কে এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব যা আমাদের সকলের জন্য জানা আবশ্যক।

ভূমিকা

দাড়ি পুরুষের বৈশিষ্ট্য। পুরো কোরআন শরীফ জুড়ে দাড়ির কথা এক জায়গাতেই লেখা রয়েছে। সেটা হলো সূরা ত্বহা-তে। মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের হাত থেকে বনি ইসরাইলকে নিয়ে সমুদ্র পার হওয়ার পরে তাদেরকে রেখে তুর পাহাড়ে আল্লাহর হুকুমে গিয়েছিলেন আর এই ফাঁকে বনি ইসরাইল শিরিক করা শুরু করেছিল। 

তিনি তাওরাত নিয়ে তার কওমের নিকট আসার পর দেখেন যে তার কওমের লোকেরা বাছুর পূজা শুরু করেছে। মুসা আলাইহিস সালাম ছিলেন অনেক গয়রত ওয়ালা মানুষ তার কওমের এসব আচরণ দেখে তিনি রাগে তাওরাত ছুড়ে ফেললেন এবং এসে হারুন আলাইহিস সালাম যিনি তার কওমের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তার দাড়ি এবং চুল চেপে ধরলেন। 

এখন হারুন আলাইহিস সালাম তাকে বললেন হে আমার ভাই আমার দাড়ি ও চুল চেপে ধরো না। সূরা ত্বহার ৯৪ নং আয়াতের মাধ্যমে বুঝা গেল যে দাড়ির কথা হাদিসের পাশাপাশি কোরআনেও রয়েছে। তো চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেই দাড়ি রাখার বিধান ও নিয়ম এবং দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয়।

দাড়ি রাখার বিধান

আমাদের সমাজে দাড়ি রাখার বিধান নিয়ে খুব একটা মতপার্থক্য নেই। চার মাজহাবের মতেই দাড়ি রাখা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ তিনি বলেন, বিভিন্ন হাদিস ও ইজমা অনুযায়ী দাড়ি রাখা আবশ্যক এবং সেভ করা হারাম। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করো। (বুখারী) 
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন- ইসলামের অন্যতম চাহিদা হচ্ছে, গোঁফ ছোট করা এবং দাড়ি লম্বা করা। কেননা অগ্নি পূজারীরা গোঁফ বড় রাখে এবং দাড়ি কর্তন করে। সুতরাং তোমরা তাদের বিরোধিতা করে গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা কর। 

খুব অল্প কিছু আলেমগণের মতে দাড়ি এক মুষ্টির ভেতর কাটা জায়েজ। তাদের মতে ৪০ গজ দূর হতে দাড়ি বোঝা গেলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এ মতটি দুর্বল। উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, দাড়ি রাখার বিধান হলো ওয়াজিব বা আবশ্যক।

গোঁফ রাখার বিধান

গোঁফ রাখার বিধান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে অভিমত রয়েছে। যেমন আবু হানিফা ও শাফেয়ী (র) এর মতে গোঁফ কাটার চেয়ে মুণ্ডানো উত্তম। তাদের বর্ণনায় খাটো করার সর্বনিম্ন সীমা হলো মুণ্ডানো। কাজী আয়ায রহিমাহুল্লাহ বলেন, গোঁফ মুণ্ডানো এবং ছাঁটা উভয়টি বৈধ। তবে তা ব্যক্তির ইচ্ছা মাত্র। 

ইমাম মালেক (র) এর মতে, গোঁফ মুণ্ডানো ভালো দেখায় না। গোঁফ পৌরুষের প্রতীক। কাজেই গোঁফ খাটো করাই উত্তম। অনেকে মনে করেন গোঁফের পানি খাওয়া হারাম। এটি একটি ভুল ধারণা, কেননা এরকম বর্ণনা কোন হাদিসে পাওয়া যায়নি।

দাড়ি রাখার নিয়ম

ইচ্ছা মতো দাড়ি রাখলে চলবে না। দাড়ি রাখার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। বুখারী শরীফে উল্লিখিত একটি হাদিসের অংশবিশেষ হলো, যারা মুখের দাড়ি কেটে ফেলে তাদের ওপর লানত বা অভিশাপ। অন্তত এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি এক মুষ্টির কম ছোট করা বা সেভ করা হারাম। এক মুষ্টির পরিমাণ হলো থুতনির নিচ থেকে এক মুষ্টি পর্যন্ত। 
অনেকে দাড়ি এক মুষ্টির কম রেখে মনে করেন যে, আমি তো দাড়ি রেখেছি। অথচ ইমাম আবু হানিফাসহ সকল ইমামের ফতোয়া অনুযায়ী দাড়ি একমুষ্টির কম রাখা এবং সম্পূর্ণ মুণ্ডানো (সেভ করা) উভয়ই হারাম।

দাড়ি না রাখলে কি গুনাহ হবে

যেহেতু হাদিস শরীফে রাসূল নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি লম্বা করো। সেহেতু তা পালন করা আমাদের জন‍্য আবশ্যক হয়ে যায় তাই দাড়ি না রাখা হারাম এবং কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। সমস্ত গুনাহ যখন করা হয় শুধু তখনই একটি গুনাহ লিপিবদ্ধ হয় অথচ দাড়ি কর্তনকারী বা দাড়ি শেভ-কারীর প্রতিটি মূহুর্ত গুনাহ লিপিবদ্ধ হতে থাকে। 

এমনকি এই ব্যক্তি যখন নামাজ পড়ে কিংবা হজ্জ আদায় করে তখনও গুনাহ ক্রমাগত লিপিবদ্ধ হতেই থাকে। এই ব্যক্তির আমলনামায় ঘুমন্ত অবস্থায়ও গুনাহর লিখা হতে থাকে। দাড়ি না রাখলে কি গুনাহ হবে নাকি সওয়াব হবে তা বুঝতে পারেছেন।

দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয়

দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো -
  • দাড়ি রাসূল (সা) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এবং মুসলমান হওয়ার একটি বাহ‍্যিক নিদর্শন। দাড়ি না রাখার দ্বারা ইসলামের নিদর্শন চলে যায়।
  • দাড়ি না রাখা অগ্নিপূজকদের সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং দাড়ি ছোট করা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সাথে সামঞ্জস্যশীল।
  • দাড়ি মুণ্ডানো মহিলাদের সদৃশ হওয়ার সমতুল্য। সরাসরি আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের সুন্নাতের বিরোধিতা।
  • দাড়ি কর্তিত বা শেভ করা ব্যক্তির কিরাত শহীহ হলেও তাদের আযান, ইকামত ও ইমামতি বৈধ নয়।
  • দাড়ি না রাখলে প্রতিটি সময়ই আমল নামায় গুনাহ লেখা হয়।
  • প্রত্যেক মানুষ যত গুনাহ করে তা মানুষের অগোচরে থাকে ফলে গুনাহের সাক্ষী থাকে না। কিন্তু দাড়ি সেভ করা বা ছোট করা একটি প্রকাশ্য গুনাহ, হাজারো মানুষ এই গুনাহের সাক্ষী থাকবে।
  • কবরে যাওয়ার সময় প্রকাশ্য কোন গুনাহ থাকবে না। শুধুমাত্র দাড়ি সেভ কিংবা কর্তনকারী গুনাহের প্রমাণ সাথে নিয়ে কবরে প্রবেশ করবে। তদ্রূপ হাশরের মাঠেও আল্লাহর সামনে গুনাহের প্রমাণ নিয়ে উপস্থিত হবে।
  • দাড়ি কাটলে ত্বকেরও অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। আমাদের ত্বকে চোখের সাথে সংযোগ করা অনেক রগ রয়েছে। দাড়িতে ব্লেড লাগালে এ রগ গুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং চোখের দৃষ্টি কমে যায়।
দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয় তা জানালাম। এখন জানব দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা।

দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের মুখে দাড়ি রয়েছে তাদের চেয়ে দাড়ি মুণ্ডানো লোকজনের মুখে জীবাণুর সংখ্যা বেশি রয়েছে। দাড়ি মুণ্ডালে সহজেই ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। অপরদিকে দেখা যায় যেসব লোকদের মুখে দাড়ি রয়েছে তাদের ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের হার তিন গুণ কম। 

লন্ডনের গবেষক অ‍্যাডাম রবার্ট বলেন, দাড়িতে মাইক্রোপ থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধতে পারে না এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। সেভ করার সময় কেমিক্যাল যুক্ত অনেক প্রোডাক্ট ত্বকে ব্যবহার করা হয় যার ফলে তাকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্কিন ক্যান্সার রোধে দাড়ি রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। দাড়ি রাখার কারণে অ্যালার্জির প্রকোপ কমে। 
দাড়ি রাখলে সময় ও অর্থ উভয়ই বেঁচে যায়। দাড়ি সূর্যের আলোতে থাকা ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে হেফাজত করে। ব্রণের ঝামেলা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় দাড়ি রাখলে। ইসলামের দৃষ্টিতে দাড়ি রাখারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। দাড়ি আমাদের রাসুলের একটি অন্যতম সুন্নাত। শুধু আমাদের রাসূলই নন, প্রত্যেক যুগের নবী ও রাসুলগণের দাড়ি ছিল। 

হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কেয়ামতের আগে যে আমার একটি সুন্নাত পালন করবে তাকে ১০০ জন শহীদের সওয়াব দেওয়া হবে। 

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, দশটি বিষয় দ্বীনি স্বভাবের অন্তর্গত- গোঁফ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের গিরা সমূহ ধৌত করা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা, গুপ্ত-স্থানের লোম কাটা ও পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দশমটি ভুলে গেছি। সম্ভবত তা কুলি করা হবে। (মুসলিম)

দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা - দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয় - লেখকের মন্তব্য

সম্মানিত পাঠক আপনিই বলুন বনের সিংহ নাকি সিংহীকে দেখতে ভালো লাগে, ময়ূর নাকি ময়ূরীকে দেখতে ভালো লাগে, মোরগ নাকি মুরগিকে দেখতে ভালো লাগে। কথাটির মানে নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন। দাড়ি রাখলে পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা দাড়ি রাখা মানুষদের ঘৃণার চোখে দেখে। মূলত তারা রাসূলের অন্যতম সুন্নাত কে ঘৃণা করে। 

দাড়ি না রাখলে গুনাহ হবে যা তওবার দ্বারা মাফ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কেউ রাসূলের সুন্নাতকে ঘৃণা করলে তার ঈমান থাকে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। দাড়ি না রাখলে যেমন অনেক ক্ষতি হয় তেমনই দাড়ি রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিক নিয়মে দাড়ি রাখার তৌফিক দান করুন। 

পাঠক আমরা জানলাম দাড়ি রাখার বিধান, গোঁফ রাখার বিধান, দাড়ি রাখার নিয়ম, দাড়ি না রাখলে কি গুনাহ হবে, দাড়ি কাটলে কি কি ক্ষতি হয় এবং দাড়ি রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে তারাও দাড়ি রাখার গুরুত্ব ও না রাখার ক্ষতি সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url