ভারত বাংলাদেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফলের তালিকা - বিদেশি ফলের নাম

মাশরুম চাষ পদ্ধতি জানুনসম্মানিত পাঠক আপনারা কি বিদেশি ফলের নাম বা ভারত ও বাংলাদেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফলের তালিকা জানতে চান। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসতে চলেছে।
বাংলাদেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফলের তালিকা
আমাদের দেশে চাষযোগ্য ৮০টি বিদেশি ফলের নাম সম্পর্কে আজকে তুলে ধরব। এইসব বিদেশি ফলের নামের তালিকা জেনে আপনিও এর মধ্যে যে কোন ফলের চাষ শুরু করতে পারেন।

ভূমিকা

ভারত এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং মাটি খুবই ভালো হওয়ার কারণে বিভিন্ন ভিনদেশী ফল আমরা সহজেই চাষ করতে সক্ষম।
আমাদের দেশের বিভিন্ন কৃষকরা এইসব বিদেশি ফল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন। এর ফলে আমাদের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ফল আমদানি করতে হচ্ছে না। নিজেরাই উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে দেশ ও এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফলের তালিকা

লংগান ফল : এই ফলটি অনেকটা লিচুর মতো দেখতে। এই বিদেশি ফলের বেশ কদর রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আমাদের দেশে এই ফল আঁশফল বা কাঠলিচু নামে পরিচিত। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে এই ফল প্রচুর পরিমাণ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়।

লংগান ফলের দাম অনেক বেশি, তাই এই ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন আমাদের দেশের কৃষকরা। বীজ থেকে বা কলম করে এই ফলের গাছ রোপণ করা যায় এবং প্রচুর পরিমাণ ফলন পাওয়া যায়। লংগান গাছের পরিচর্যার ঘাটতি হলেও প্রতিবছর ফুল এবং ফল পাওয়া যায়। ছাদ বাগানেও এটি চাষ করা যায়।

পিচ ফল : এটি চীন দেশের ফল। পিচ ফলের গাছ ছাদে বা মাটিতে লাগাতে পারেন। পিচ ফল অনেকটা আপেলের মতো দেখতে এবং খেতে খুবই মিষ্টি। এই বিদেশী ফলের গাছটি মাঝারি আকার হয়ে থাকে। এই পিচ ফলের অনেক উপকারিতা ও চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়াতে পিচ ফল চাষ করা সম্ভব।

ডুরিয়ান ফল : ডুরিয়ান মালয়েশিয়ান একটি ফল। দেখতে অনেকটা কাঁঠালের মতো। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশ চাষ হচ্ছে ডুরিয়ান ফল। এটির বীজ থেকে বংশবিস্তার হয়। ডুরিয়ান ফলের দাম যেহেতু অনেক বেশি তাই এই ফল চাষ করলে সহজেই লাভবান হওয়া যাবে।

ডুরিয়ান ফলের চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ এবং বাজারে এর চাহিদাও লক্ষ্য করা যায়। আমাদের দেশে ডুরিয়ান ফল নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে।

রাম্বুটান ফল : এটি মালয়েশিয়ার একটি জনপ্রিয় ফল। বাহিরের দিকটা ফুলের মত দেখতে। খোসা ছাড়ালে ভেতরে লিচুর মত দেখতে। এই বিদেশি ফলটি লিচুর চেয়েও বেশি সুস্বাদু খেতে। এই গাছের বেশি পরিচর্যার দরকার হয় না। শীতকালের ৩ মাস ব্যতীত বাকি ৯ মাসই রাম্বুটান ফল গাছ থেকে পাওয়া যায়। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলনও বৃদ্ধি পায়।

আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাম্বুটান খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফলের প্রচুর দাম হওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব হবে। আম ও কাঁঠালের মতো রাম্বুটান গাছ একবার লাগালে ফলন হতেই থাকে।

প‍্যাশন ফল : প‍্যাশন ফলের উৎপত্তি স্থল হলো ব্রাজিলে। এই স্বল্প পরিচিত বিদেশি ফল বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে এই ফলকে ট্যাং ফল নামে চেনে। ১৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফলের ভালো ফলন হয়। বীজ ও শাখা কলম দিয়ে প‍্যাশন ফলের বিস্তার ঘটানো হয়। মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত হল চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

লুকলুকি ফল : এটি আমাদের দেশে লুকলুকি বা টিপা ফল নামেও পরিচিত। অল্প উর্বর জমিতে এই ফসল ভালো হয়ে থাকে। লুকলুকি ফল চাষে অতিরিক্ত সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। লুকলুকি ফল বাজারে কম পাওয়া গেলেও এর চাহিদা রয়েছে।

অ্যাভোকাডো ফল : বিশ্ববাজারে অ‍্যাভোকাডোর চাহিদা প্রচুর পরিমাণ বাড়ছে। ভারত ও বাংলাদেশ কৃষক পর্যায়ে এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বাজারে অ‍্যাভোকাডো ফল উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। চারা সংগ্রহ করে বা বীজ থেকে চারা উৎপন্ন করে অ‍্যাভোকাডো চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব।

কিউই ফল : নিউজিল্যান্ডের জাতীয় ফল এটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিউই ফল প্রচুর পরিমাণ চাষ হয়। কিউই ফলকে পুষ্টির কারখানা বলা হয়ে থাকে।

ব্রেড ফল : বিখ্যাত এই ফলের ফলন হচ্ছে এখন বাংলাদেশ ও ভারতেও। সারা বিশ্বে ধান, গমের বিকল্প হিসাবেও এই ব্রেড বা রুটি ফল ব্যবহার হয়। দেখতে কাঁঠালের মতো এবং এই গাছের পাতা পেঁপে পাতার মতো। এটি চাষ করে বিশ্ব দরবারে সাড়া ফেলতে পারেন।

ম্যাঙ্গোস্টিন ফল : আমাদের দেশে ম্যাঙ্গোস্টিন চাষ করা সম্ভব। বিদেশ থেকে চারা সংগ্রহ করে বা বিদেশি গাছ থেকে কলম করে চাষ করলে ফলন তাড়াতাড়ি এবং বেশি পাওয়া যায়।

আলু বোখারা ফল : মসলা জাতীয় এই আলু বোখারা ফল উচ্চ-পুষ্টিমান, ভেষজ গুণ সম্পন্ন। এটি অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভজনক। তাই এই ফলটির চাষে আগ্রহী অনেক কৃষকরা।

ড্রাগন ফল : ইতোমধ্যে আমরা সবাই এই ফলের সাথে পরিচিত। কেননা ড্রাগন ফল বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এই ফলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ছাদের টবেও এই ড্রাগন ফলের গাছ লাগানো যায়। ড্রাগন ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারেন আমাদের দেশে।

সাম্মাম ফল : পুষ্টিগুণে ভরপুর ভিনদেশী এই ফল চাষ হচ্ছে বাংলাদেশেও। সাম্মাম ফল চাষের মাধ্যমে বেশ কিছু চাষি লাভের মুখ দেখছেন। ভবিষ্যতে এই উচ্চমূল্যের ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষে সফল হলে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন আনবে।

ননী ফল : এই ঔষধি গুণসম্পন্ন ফলটি খেলে ১৫০ টি উপকার পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়। ননী ফলের দাম অনেক। ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুব ভালোভাবে এই ননী ফল চাষ করা যায়।

পার্সিমন ফল : ফলটি খেতে দারুণ। এটি হলো জাপান দেশের জাতীয় ফল পার্সিমন। বিদেশি এই ফলের দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। পার্সিমন ফলের চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব।

মিরাকল বেরি : এটি ম্যাজিক ফল নামেও পরিচিত। খেতে খুব মিষ্টি, মিরাকল বেরি খাওয়ার পর টক জাতীয় কোন খাবার খেলে সেই খাবারটিও খেতে মিষ্টি লাগে। এজন্য এই বিদেশি ফলটি খুবই জনপ্রিয়। তাই এটির চাষ করতে পারেন।

স্ট্রবেরি পেয়ারা : ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের এই জনপ্রিয় ফলটি এখন আমাদের দেশে ও চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন নার্সারিতে এই স্ট্রবেরি পেয়ারা গাছের চারা পেতে পারেন। এই ফলটি দেখতে খুবই সুন্দর, চাষ পদ্ধতিও সহজ, টবেও স্ট্রবেরি পেয়ারা চাষ করতে পারেন।

করোসল ফল : ক্যান্সার প্রতিরোধী করোসল ফল ও করোসল গাছের পাতা অনেক উপকারী। এই ফলটি আমাদের দেশের সব জায়গাতে পাওয়া যায় না। তাই এই চাষযোগ্য ফলটি ব্যাপকভাবে চাষ করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে আমাদের দেশের চাষিরা।

ভেরিগেটেড মাল্টা : আকর্ষণীয় এই ভিনদেশী মাল্টা চাষ করতে পারেন আপনার বাগানে। এক বছরেই এই মাল্টা গাছে ধরে। ভেরিগেটেড মাল্টা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে।

মিশরীয় ডুমুর : ডুমুর বা ত্বীন ফলের ভূমিকা সবাই জানে। এই মিশরীয় ডুমুর ছাদ বাগানেও রোপণ করতে পারেন এবং বাজারজাতের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবেন।

নাশপাতি : নাশপাতি ফল পাহাড়ি অঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মাতে বা চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। ফলটি আপেলের চেয়েও মিষ্টি এবং বাজারে দাম অনেক বেশি। অনেকেই ছাদ বাগানে বারোমাসি নাশপাতি চাষ করে থাকেন।

এসব বিদেশি ফল ছাড়াও আরও অনেক বিদেশি ফল রয়েছে যা ভারতে ও বাংলাদেশে চাষযোগ্য। বিদেশি ফলের নামের তালিকা নিচে দেওয়া হল।

বিদেশি ফলের নাম

এখানে ৭০টির বেশি বিদেশি ফলের নামের তালিকা উল্লেখ করা হল যা ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়াতে চাষযোগ্য।
  • কাটিমন আম, ফিগ ফল, মিরাকেল বেরি, কিউজাই আম
  • এগফ্রুট, থাই কদবেল, ব‍্যানেনা আঁখ
  • মাল-বেরি ফল, ম‍্যানিলা চেরি, করোসল
  • রবা মেলন, আলু বোখারা, সুইট লেমন
  • রক মেলন, ফিলিপাইনের কালো আঁখ, স্ট্রবেরি পেয়ারা
  • মিশরীয় ডুমুর, ডেকোপন কমলা, ভিয়েতনামি মাল্টা
  • সাদা জাম, লাল কাঁঠাল, সিডলেস কাঁঠাল
  • লাল আঙ্গুর, কাসবা তরমুজ, এরকন বাদাম
  • কোকো ফল, পিলি বাদাম, ক‍্যাপার্স
  • বয়সেন-বেরি, ম‍্যাকডামিয়া বাদাম, ননী ফল
  • সুরিনাম চেরি, ক্লাউড বেরি, কিওয়ানো
  • এলডার বেরি, বার-বেরি, অ‍্যাঞ্জেলেনো বরই
  • স্ট‍্যানলে বরই, ফিজালিস ফল, বুদ্ধের হাতের ফল
  • বিলম্বি ফল, মিষ্টি করমজা, ফলসা
  • আখরোট, কুমকোয়াট, ক্র‍্যান-বেরি
  • কোকম ফল, নোড় ফল, লাল জামরুল
  • লাল কলা, বিং চেরি, সবুজ আপেল
  • ড‍্যামসন বরই, রাস্প-বেরি, ব্লাক-বেরি
  • এপ্রিকট, চেরি, ফুটি ফল
  • স্ট্রবেরি, নাশপাতি, ব্লু-বেরি
  • ডুরিয়ান ফল, রাম্বুটান, প‍্যাশন ফল
  • লুকলুকি ফল, ব্রেড ফল, থাই সাম্মাম
  • লংগান ফল, পীচ ফল, অ‍্যাভোকাডো
  • কিউই ফল, পার্সিমন ফল, ম‍্যাঙ্গোস্টিন

ভারত বাংলাদেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফলের তালিকা - বিদেশি ফলের নাম - লেখকের মন্তব্য

আমাদের দেশে বিদেশি ফলের চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু এসব ফলের প্রচুর দাম হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ চাহিদা মেটাতে পারেনা। নিজ দেশেই এসব ফল চাষ করার মাধ্যমে ফলের দাম এবং চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাই আপনার পছন্দমত যে কোন বিদেশি ফল বাছাই করে চাষ করতে পারেন। এতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জানলাম বিদেশি ফলের নাম এবং ভারত-বাংলাদেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফলের তালিকা সম্পর্কে। আমাদের তরুণ কৃষকদেরকে উৎসাহ দিতে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url