মেহগনি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - মেহগনি বীজের উপকারিতা

হার্টের সমস্যার লক্ষণ জেনে নিনপ্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো মেহগনি বীজের উপকারিতা, মেহগনির বীজ খাওয়ার নিয়ম, মেহগনি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, মেহগনি বীজের অপকারিতা, মেহগনি গাছের উপকারিতা, মেহগনি গাছের অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান। তাই আজকে মেহগনি সম্পর্কে আলোচনা করব।
মেহগনি ফলের উপকারিতা
উপরোক্ত টপিকগুলো ছাড়াও এখানে মেহগনি গাছের বৈশিষ্ট্য, মেহগনি গাছের দাম কত, মেহগনি কাঠ কেমন এবং আরও মেহগনি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব যা আশা করি আপনাদের কাজে আসবে। তাই শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ করছি।

ভূমিকা

মেহগনি গাছ এবং ফল আমাদের কাছে অনেক পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই মেহগনি ফলের উপকারিতা, মেহগনি বীজের উপকারিতা এবং মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানিনা। মেহগনি গাছের উপকারিতার পাশাপাশি মেহগনি গাছের অপকারিতাও রয়েছে।

মেহগনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো সুইটেনিয়া মেহগনি (Swietenia mahagoni)। মেহগনি গাছ এর ইংলিশ - Mahogony tree। চলুন মেহগনি গাছের আরও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। শুরুতে আমরা জেনে নিব মেহগনি গাছের উপকারিতা।

মেহগনি গাছের উপকারিতা

মেহগনি গাছ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাষ করা হয়। এর কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলে এই গাছটি প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায়। মেহগনি গাছের উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই অনেকে ছায়া দানকারী গাছ হিসাবে এটি রোপণ করে থাকেন। মেহগনি গাছ চাষের মাধ্যমে নিজে লাভবান হওয়া যায়। মেহগনি গাছের কাঠ এর চাহিদা বাজারে অনেক।
মেহগনি গাছের কাঠ বিক্রি করে আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারি। মেহগনি গাছের পাতা আমরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। মেহগনি গাছের কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র যেমন চেয়ার, টেবিল, সোফা, খাট, আলমারি, দরজা, জানালা, কাঠের বাক্স ইত্যাদি তৈরি করা যায়। এই গাছের পাতা সাধারণত মার্চ মাসে ঝরে যায় এবং এরপর নতুন পাতা গজাতে শুরু করে।

মেহগনি গাছের দাম কত

মেহগনি গাছের কাঠের মাধ্যমে অনেক আসবাবপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। এই গাছের কাঠ দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করলে অনেক দিন পর্যন্ত টেকসই হয়। কেননা এই মেহগনি গাছের কাঠের আঁশ ও ঘনত্ব অনেক বেশি হয়ে থাকে।

মেহগনি গাছের কাঠ এর মান ভালো হওয়ার কারণে এর দামও অনেক বেশি। এই গাছের এক কিউবিক ফুট কাঠের দাম ১৫০০ টাকা। একটি পরিপূর্ণ মেহগনি গাছের দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার অথবা তারও বেশি হতে পারে।

মেহগনি কাঠ কেমন

মেহগনি কাঠ অনেক শক্ত হওয়ার কারণে এটি আমাদের কাছে বেশ ভালো। মেহগনির কাঠ ভালো হওয়ার কারণে এই কাঠের দামও অনেক বেশি। তবে মেহগনির কিছু প্রজাতির গাছের কাঠ রয়েছে সেগুলো নরম প্রকৃতির হয়ে থাকে।

ভালো মেহগনি কাঠ চেনার উপায় হলো- এই কাঠে তরঙ্গ আকারের প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। আর এই কাঠের আঁশ অনেক বেশি হয়ে থাকে। মেহগনি গাছের কাঠের বয়স কম হলে গোলাপি রঙের হয়। কিন্তু গাছের বয়স বেশি হলে এটি গাড় লালচে রঙের দেখা যায়।

মেহগনি গাছের বৈশিষ্ট্য

মেহগনি গাছ অনেক লম্বা হয়ে থাকে। মেহগনি গাছের পাতা লম্বা এবং সরু আকারের হয়। বসন্ত কালে সবগুলি পাতা ঝরে যায়। তার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে নতুন পাতা গজাতে থাকে। এটি আমাদের দেশীয় গাছ না হলেও এর কাঠ দামি হওয়ার কারণে আমাদের দেশেও এর ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে।

মেহগনি গাছের অপকারিতা

মেহগনি গাছের পাতাগুলোর রস অনেক বিষাক্ত হয়ে থাকে। এই গাছের পাতা মাটিতে পড়ে মাটির সাথে মিশে গেলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। মেহগনি গাছের পাতা পানিতে পড়লে পানি দূষিত হয় এবং পানিতে থাকা মাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
তাই পুকুরের ধারে মেহগনি গাছ না লাগানোই ভালো। মেহগনি গাছ পশু পাখিদের নিউ ক্যাসেল রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এই গাছের বিষাক্ততার কারণে উপকারী এবং অপকারী পোকামাকড় গুলো মারা যায়। মেহগনি গাছে কাক ব্যতীত অন্য কোন পাখি বাসা বাঁধতে দেখা যায় না।

মেহগনি বীজের উপকারিতা

মেহগনি গাছ কাঠের জন্য আমাদের কাছে পরিচিত হলেও মেহগনি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। মেহগনি ফলের ভেতরে এর বীজ পাওয়া যায়। মেহগনি বীজের উপকারিতা গুলো হলো -
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : মেহগনি ফলের বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ পরিমাণ মেহগনি গাছের বীজের পাউডার খেলে রক্তের স্তর স্বাভাবিক থাকে এবং ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : মেহগনির বীজ ক্যান্সার প্রতিরোধে হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই মেহগনির বীজ প্রতিদিন খাওয়া উচিত।
  • ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে : মেহগনি গাছের ফলের বীজ ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়ের জন্য ৫ থেকে ১০ গ্রাম মেহগনি বীজ সংগ্রহ করে ১০০০ মিলি পানিতে দিয়ে গরম করুন। কিছুক্ষণ গরম করার পর ঠাণ্ডা হলে এটি পান করুন। এভাবে দিনে দুইবার পান করলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • ক্ষুধামন্দা দূর করে : নিয়মিত একটি করে মেহগনির বীজ খেলে ক্ষুধা মন্দা দূর হয়।
  • ঠাণ্ডা জনিত অসুখ ভালো করে : ঠাণ্ডা জনিত অসুখ যেমন জ্বর, সর্দি এবং কাশি ইত্যাদি সাড়াতে মেহগনি বীজের এক চামচ গুড়া এবং এর সাথে হাফ চামচ মধু এক কাপ হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে অনেক উপকার মিলবে এবং ঠাণ্ডা জনিত রোগ দূর হবে।
  • পোকামাকড় দমন করে : যেকোনো ধরনের পোকা দূর করার জন্য মেহগনি বীজের পাউডার এবং মেহগনি পাতার রস পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। এতে সহজেই পোকামাকড় দমন হয়।
  • উকুন দূর করে : মেহগনি বীজের তেল মাথায় ব্যবহার করলে উকুন সহজেই দূর হয়ে যায়। এছাড়া আরও অনেক মেহগনি বীজের উপকারিতা রয়েছে, মেহগনির বীজ অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করা হয়ে আসছে আফ্রিকান দেশ গুলোতে।
  • কোলেস্টেরল দূর করে : মেহগনির বীজ শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে।

মেহগনি বীজের অপকারিতা

মেহগনি বীজের কিছু অপকারী দিক রয়েছে। মেহগনি ফলের বীজ খেতে অত্যন্ত তেঁতো। তাই এটি বেশি খেলে অনেক সময় বমি হতে পারে। এর আরও একটি অপকারিতা হলো এর বীজ খেলে অনেক সময় মুখের রুচি হারিয়ে যায়।

উপকারিতা পেতে হলে মেহগনির বীজ পরিমাণ মতো খেতে হবে এবং মেহগনির বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। গর্ভবতী মা এবং বাচ্চারা এই বীজ খেলে তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

মেহগনির বীজ খাওয়ার নিয়ম

মেহগনি বীজের উপকারিতা আমরা সকলেই জেনেছি। কিন্তু সঠিক নিয়মে মেহগনির বীজ না খাওয়া হলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। মেহগনির বীজ খাওয়ার সবচেয়ে ভালো নিয়ম হলো - গাছ থেকে ফল পাড়ার পর এর দুটি বীজ সংগ্রহ করে পাউডার বানিয়ে অথবা থেঁতলে দিয়ে এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে ভালোভাবে মিশাতে হবে। এরপর পানি ২/৩ মিনিট জাল দিতে হবে।
পানি ঠাণ্ডা হবার পর এটি পান করতে পারেন। তবে হালকা গরম থাকা অবস্থায় এর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায় এবং খেতে তেতো লাগে না। এছাড়া মেহগনির বীজ সরাসরি না খাওয়াই ভালো। এই ফল বা বীজ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

মেহগনি ফলের উপকারিতা

মেহগনি ফলের মূল উপাদান হলো এর বিচি বা বীজ। মেহগনি ফলের উপরের অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ফল ভাঙ্গার পর বীজসহ পাখার মতো যেগুলো পাওয়া যায়, এগুলো বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ফলের একটি অন্যতম গুণ হচ্ছে এর ভেতর ফ্ল‍্যাভোনয়েড থাকে, যে ফ্ল‍্যাভোনয়েড মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

এর মধ্যে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আমাদের দেহের ফ্রি রেডিক্যালস ও টক্সিন থেকে আমাদেরকে বাঁচায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মেহগনি গাছের ফলের বিরাট অবদান রয়েছে। ফ্ল‍্যাভোনয়েড যে খাবারে থাকে সে খাবার খেলে আপনার হার্টের সমস্যা চলে যাবে।

সাথে আপনার জীবন হবে রোগমুক্ত। রিসার্চ করে দেখা গেছে এই ফলে এমন অনেক উপকারী ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে যা অন্য কোন ফলে দেখা যায় না। আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য, পুরুষের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মেহগনি ফলের জুড়ি মেলা ভার। উচ্চ রক্তচাপ রোগের জন্য এই ফলের বীজের দারুণ মাহাত্ম্য।
সঠিক নিয়মে এটি খেলে ডায়াবেটিস-সহ হাই প্রেশার এর সমস্যা কমে যাবে। যারা অতিরিক্ত টেনশন করেন তাদের জন্য ভালো অর্থাৎ হাইপার-টেনশন দূর করে এই ফল। আপনার কি বারবার ঠাণ্ডা লাগে, আপনার কি বারবার জ্বর হয়, আপনি যদি ভাবেন আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার কারণে এসব রোগ হচ্ছে, তাহলে ভুল ভাবছেন। আপনার শরীরে হতে পারে ইমিউনিটি শক্তি কম আছে।

হাফ চা চামচ মেহগনি বীজের গুড়া নিন, সেখানে একটু পরিমাণ দিতে হবে মধু। এর মধ্যে যদি অল্প একটু পরিমাণ হলুদ নিতে পারেন তাহলে আরও ভালো হয়। তবে হলুদ না দিলে সমস্যা নেই। এবার নিতে হবে হাফ কাপ পানি। পানি যদি গরম হয় তাহলে আরও ভালো হবে। এই মিশ্রণ যদি আপনি দিনে দুই থেকে তিনবার পান করে থাকেন তাহলে প্রচুর উপকার হবে।

জ্বর হওয়া ও ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা একদম গোঁড়া থেকে ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া এই মিশ্রণটি খেলে শরীর থেকে টক্সিন ক্লিয়ার হয়ে যাবে। শুধু জ্বর সর্দি নয়, টানা দুই থেকে তিন সপ্তাহ খেলে আপনার যে কোন লুকিয়ে থাকা রোগ ঠিক করে দিবে এই মিশ্রণটি।

আপনার যদি একজিমার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে একইভাবে এই ফলের বীজের গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে তার সাথে মধু দিয়ে খেতে পারেন। এটি খেলে চুলকানিও দূর হয়। অনিদ্রা দূর করে এবং এই ফলটি কৃমিনাশক হিসেবে খুবই ভালো কাজ করে।

আমাদের শেষ কথা : মেহগনি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা - মেহগনি বীজের উপকারিতা

বাচ্চারা এবং গর্ভবতী যারা তারা ফল বা বীজ ভুলেও খাবেন না। আপনার বয়স যদি ২০ থেকে বেশি এবং ৬০ থেকে কম হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খেতে পারেন। এই ফল খাওয়ার আগে দশবার ভাববেন, কেননা এটা খুবই পাওয়ার-ফুল একটি ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

বারবার বলে রাখি প্রত্যেক জিনিসেরই কিছু ভালো ও খারাপ গুণ থাকে। তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই সেই বিষয়ে যে কোনো ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলবেন।

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা মেহগনি গাছের উপকারিতা, মেহগনি গাছের দাম কত, মেহগনি কাঠ কেমন, মেহগনি গাছের অপকারিতা, মেহগনি বীজের উপকারিতা, মেহগনি বীজের অপকারিতা, মেহগনির বীজ খাওয়ার নিয়ম, মেহগনি ফলের উপকারিতা এবং আরও নানা বিষয়ে জেনেছি। এরকম আরও অনেক উপকারী বিভিন্ন বিষয়ে জানতে দি প্লেনারি আইটি ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url