পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি - মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি

গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যাপ্রিয় পাঠক, আপনি যদি পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি, ঘরে পুতুল থাকলে কি নামাজ হয় এবং মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি, ঘরে ছবি রাখা কি হারাম, এসব সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করে থাকেন তাহলে এই কন্টেন্ট-টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি
এখানে আরও আলোচনা করা হবে- ছবি তোলা কি হারাম, ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ, মোবাইলে ছবি তোলা কি জায়েজ, কবরের ছবি তোলা কি জায়েজ ইত্যাদি সম্পর্কে।

ভূমিকা

ইসলাম হলো সুন্দর, সূক্ষ্ম ও পূর্ণাঙ্গ বা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম অনর্থক কোনো কাজকে সমর্থন করে না। সে আলোকে ইসলাম কোন প্রাণীর ছবি অংকন, মূর্তি ও ভাস্কর্য তৈরিকে নিষিদ্ধ করেছে।

নবী কারীম (স) প্রাণীর ছবি অংকন-কারী ও চিত্রশিল্পীদের ওপর লানত (অভিশাপ) করেছেন এবং জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। অনেকেই জানেন না ছবি তোলা কি হারাম বা ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ।

ছবি তোলা কি হারাম

অনেকের প্রশ্ন ছবি তোলা কি হারাম। নিষিদ্ধ ছবি তোলা শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি গর্হিত বস্তু এবং হারাম। নিষিদ্ধ ছবি নির্মাণকারীরা রাসূলুল্লাহ (স) এর পবিত্র জবানে অভিশপ্ত। কেননা নিষিদ্ধ ছবি চরিত্র ধ্বংস করে এবং অশ্লীল ও গর্হিত কাজের দিকে আকৃষ্ট করে। অথচ আল্লাহ তাআলা গর্হিত কাজ বর্জন করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। 

কেয়ামত দিবসে সকল নিষিদ্ধ ছবিতে রূহ দান করে এগুলোকে জীবিত করার জন্য ছবি নির্মাতাদের পাকড়াও করা হবে এবং এজন্যে শাস্তি দেয়া হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কেয়ামত দিবসে এ সকল ছবি তৈরিকারীদের আজাব দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে যে, তোমরা যেসব বানিয়েছ তা জীবিত করো। 
আব্বাস (র) বলেন- কেউ কোন আকৃতি তৈরি করলে তাতে সে ব‍্যক্তি রূহ না দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন। আর সে কখনও তাতে রুহ দিতে পারবে না। রাসূল (স) আরও বলেছেন- ছবি তৈরি কারীর জন্য দোজখ ওয়াজিব। প্রতিটি ছবির বিপরীতে তার জন্য আত্মা তৈরি করে দোজখের আজাব দেওয়া হবে। আশা করি ছবি তোলা কি হারাম নাকি জায়েজ তা বুঝতে পেরেছেন।

ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ

ঘরে পুতুল রাখা জায়েজ নেই। পরিবারের বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে পুতুল দেওয়া যাবে না। পুতুল ও ভাস্কর্যের বা মূর্তির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এগুলো যে তৈরি করে তাকেই রাসুল অভিশপ্ত বলেছেন। এগুলো বানানোই যদি জায়েজ না হয় তাহলে ঘরে পুতুল রাখা কিভাবে জায়েজ হবে। আমরা একটি হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি আম্মাজান আয়েশা (রা) ছোটবেলায় পুতুল নিয়ে খেলা করত। 
কিন্তু সেই পুতুল বর্তমান পুতুলের সঙ্গে অতুলনীয়। সেই পুতুলের মানুষের মতো বা কোন প্রাণীর মতো আকৃতি ছিল না অর্থাৎ চোখ, কান, নাক, মুখ, অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ স্পষ্ট ছিল না। সেগুলো পুতুল ছেঁড়া কাপড়ের তৈরি ছিল। কিন্তু বর্তমান যুগের পুতুল হুবহু কোন প্রাণী বা মানুষের মতো। এগুলো নিয়ে খেলা করা বা ঘরে রাখা হারাম অথবা জায়েজ নেই। সুতরাং ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ তা আমরা বুঝতে পারলাম।

ঘরে পুতুল থাকলে কি নামাজ হয়

ঘরে পুতুল থাকলে কি নামাজ হয় এটা আমরা অনেকেই জানিনা। প্রথমত ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ, এটার উত্তর আমারা জানি। ঘরে পুতুল রাখা জায়েজ নেই তা আমরা উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারি। হাদিস শরীফে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন ওই ঘরে রহমত দানকারী ফেরেশতা ঢোকে না, যে ঘরে বা স্থানে কুকুর আছে, আর কোন প্রাণীর ছবি আছে। (মুত্তাফিকুন আলাইহি) 

অন্য কোন স্থানে বা কোন আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গেলে এবং সেখানে যদি কোন পুতুল বা ছবি থাকে সেটি সরিয়ে ফেলে বা ঢেকে রেখে নামাজ আদায় করতে হবে। নয়তো নামাজ মাকরূহ বলে গণ্য হবে।

মোবাইলে ছবি তোলা কি জায়েজ

ফটোগ্রাফি, কাগজের ছবি যা পরিপূর্ণ অশ্লীল নয় এবং প্রয়োজনে করা হয়, যেমন- পাসপোর্ট ও হজ্জের কর্মকাণ্ডে অথবা বিদেশের সাথে লেনদেনে বর্তমান প্রচলিত আইন অনুযায়ী আলেমগণ বিশেষ প্রয়োজনে জায়েজ মনে করেন। 

অনর্থক মোবাইলে ছবি তোলা অপছন্দনীয় এবং নিন্দনীয় কাজ। অনেকে নাজায়েজও বলেছেন। আবার অনেক আলেমগণ ইমেজ কে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে জায়েজ বলেছেন। তবে মুমিন মুত্তাকীদের উচিত হলো প্রয়োজন ছাড়া অনর্থক ছবি না তোলা।

ঘরে ছবি রাখা কি হারাম

ঘরে ছবি রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় অপরাধ এবং হারাম কাজ। তবে ঐ সকল বস্তুর ছবি যে বস্তুর মধ্যে রূহ থাকে না এগুলোর ছবি ওলামাদের দৃষ্টিতে অবৈধ নয়। এগুলো ছবি চাইলে যে কোন স্থানে রাখা যাবে। অপরদিকে ঘরে যে কোন প্রাণীর বা মানুষের ছবি রাখা হারাম কাজ। কেননা এতে শিরকের মতো কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। যেমনটি ঘটেছিল নূহ আলাইহিস সালাম এর পরবর্তী প্রজন্মদের সাথে।

মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি

পূর্বের আলোচনা থেকে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন ঘরের মৃত ব্যক্তির বা যে কোন প্রাণীর ছবি রাখা যাবে না। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি জায়েজ নয়। বর্ণিত আছে নূহ (আ) এর ইন্তেকালের পর তার পরবর্তী প্রজন্মদের নিকট শয়তান এসে বলল তাদেরকে যে, তোমরা তোমাদের রাসূল এর শরণার্থী হও এবং তার মতো আকৃতি করে ভাস্কর্য তৈরি করো, তা দেখে তোমরা ইবাদত কর। 

নুহ (আ) এর উম্মতগণ সেটাই করল। অতঃপর তাদের পরবর্তী প্রজন্মদের কাছে শয়তান এসে বলল এই ভাস্কর্যের তোমরা ইবাদত করো। তখন থেকে মূর্তিপূজা শুরু হয়েছিল। এভাবে মৃত ব্যক্তির ছবি বা ভাস্কর্য এর মোহাব্বতে অনেকেই শিরকের মতো পাপে জড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে না। এমনিতেও কোন প্রাণীর ছবি রাখাও হারাম। সুতরাং আমরা সহজেই বুঝতে পারি মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি না।

কবরের ছবি তোলা কি জায়েজ

অনর্থক ছবি তোলা ইসলাম সমর্থন করে না। এটি জায়েজ নয়। তবে আমরা জানি গাছ ছাড়া যে বস্তু গুলোর জীবন নেই সেগুলোর ছবি তোলা বা অঙ্কন করা জায়েজ আছে। 

বিশেষ কারণে বা প্রয়োজনে কবরের ছবি তুলে রাখা জায়েজ রয়েছে। তবে অনর্থক কবরের ছবি তোলা বা অংকন করা আলিমগণ অপছন্দ করেছেন। তাই আমাদের উচিত অনর্থক বা অপ্রয়োজনীয় ছবি তোলা থেকে বিরত থাকা।

পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি

ইতোপূর্বে জেনেছি ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ নাকি হারাম। এখন জানব পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি না। মানব জীবনে নামাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ভাই এটি সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। নামাজের ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক পোশাক নির্ধারণ করতে হবে। এতে কোন প্রাণীর ছবি থাকা যাবে না। এ অবস্থায় মসজিদে গেলে বা নামাজ পড়লে গুনাহগার হতে হবে। আলেমদের মতে ছবি-যুক্ত পোশাক পড়া নিষেধ। 

প্রাণীর ছবি অংকন করা কবিরা গুনাহ। পোশাকে ফ্যানের ছবি থাকলে নামাজ হবে কিন্তু পরিপূর্ণভাবে নামাজের ফজিলত পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র নামাজের ক্ষেত্রেই প্রাণীর ছবি যুক্ত পোশাক পড়া যাবে না তা নয়। বরং পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে তা সব সময়ই পড়া হারাম বা নিষিদ্ধ।

পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি - মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি - লেখকের মন্তব্য

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ কথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, ছবি তোলা ইসলামে হারাম। বিশেষ করে কোন প্রাণীর ছবি তোলা কিংবা অংকন করা। তবে বর্তমানে বিশেষ প্রয়োজনে যেমন পাসপোর্ট ও এ-জাতীয় কাজে ছবি তোলা যেতে পারে। 

আজকে জানলাম- ছবি তোলা কি হারাম, ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজ, ঘরে পুতুল থাকলে কি নামাজ হয়, মোবাইলে ছবি তোলা কি জায়েজ, ঘরে ছবি রাখা কি হারাম, মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি, কবরের ছবি তোলা কি জায়েজ, পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি এসব সম্পর্কে। অন্যরাও যেন জানতে পারে তাই এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url