চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা

সুপার ফুড সজনে পাতার উপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা, চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা, চালতার আচার কিভাবে বানায়, চালতা পাতার উপকারিতা, চালতা খাওয়ার নিয়ম বা চালতা কিভাবে খায়, চালতা ফুলের ছবি ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন। আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা
উপরোক্ত টপিক ছাড়াও চালতা ইংরেজি কি, কাঁচা চালতার উপকারিতা অর্থাৎ চালতা ফলের বিষয়ে সকল কিছুই আলোচনা করব।

সূচিপত্র: চালতার উপকারিতা ও অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা

.

ভূমিকা

চালতা আমাদের সকলেরই পরিচিত একটি ফল। অনেকেই জানেন না চালতা ইংরেজি কি। চালতা ইংরেজি হলো- Elephant apple। এটি বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশেই বেশি জন্মে। এই চালতা খেতে টক, তাই এটি আচার বা চাটনি বানিয়ে খাওয়া হয়।

চালতার উপকারিতা এবং চালতার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। গর্ভবতী মায়ের জন্য গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। তবে প্রথমে চালতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।

চালতার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তা আমরা পূর্বে জেনেছি। এছাড়াও সকলের জন্য চালতা ফল অনেক উপকারী। চালতা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে। এই ফলের ভিটামিন সি আপনার লিভার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

চালতা কিডনি ও লিভারের ভালো ঔষধ হিসেবে কাজ করে, কিডনির পাথরকে দূর করে এবং এদের ভেতর জমে থাকা দূষিত পদার্থ দূর করতে চালতার জুস খেতে পারেন। চালতা ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে খুবই ভালো কাজ করতে পারে।
সর্দি, কাশি, আমাশয়, গলা ব্যথা দূর করতে নিয়মিত চালতার রস পান করুন। চালতার রস হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে এটি পান করতে পারেন। এটি ক্যান্সার নিরাময় করে। চালতা মহিলাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল।

গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভধারণ-কালে বা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের মুখের রুচি এবং স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য এ সময় তারা টক জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন। তার মধ্যে চালতার আচার অন্যতম। গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায়। চালতায় রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে এবং শিশুর চোখের দৃষ্টি শক্তিও ভালো হয়।

কেননা চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, যা শিশু ও মায়ের চোখের জন্য উপকারী। গর্ভাবস্থায় খাবার হজম এর সমস্যা অনেকেরই দেখা দেয়। চালতায় প্রচুর পরিমাণ আঁশ পাওয়া যায়। চালতার নরম আঁশ চিবিয়ে খেলে হজমের সমস্যা দূর হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী। আর উচ্চ রক্তচাপ যে ফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলো চালতা।

এতে অনেক পটাশিয়াম ও কোলাজেন এবং ভিটামিন সি রয়েছে, যা গর্ভবতী মায়ের ত্বক ফাটা থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান, কেননা এটি শিশুর হাড় ও দাঁত গঠন করতে সাহায্য করে। তাই ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে চালতা ফল খাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। এছাড়া এতে আয়রন রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দূর করতে অনেক সাহায্য করে।

চালতায় রয়েছে অনন্য পুষ্টিগুণ যা গর্ভবতী মা এবং শিশুর হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ হয় চালতার মাধ্যমে। যেসব গর্ভবতী মহিলারা চালতা খান তাদের পেটে ব্যথা কম পরিমাণ অনুভব হয়। গর্ভাবস্থায় শরীরের ব্যথায় ভুগতে পারেন, চালতা খেলে শরীরের নানাবিধ ব্যথা দূর হয়ে যাবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা নিতান্তই কম নয়।

তবে সঠিক নিয়মে না খেলে উপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় চালতার আচার মোটেও খাওয়া যাবে না। চালতা এনে ভালোভাবে পরিষ্কার করে উপর থেকে খোসা ছাড়িয়ে এটির রস পান করতে পারেন বা কেটে কেটে খেতে পারেন। খালি পেটে চালতা খাওয়া ঠিক নয়, এতে গর্ভে থাকা শিশুর সমস্যা হতে পারে।

তাই খাবারের এক থেকে দুই ঘণ্টা পর চালতা খেতে পারেন এবং গর্ভাবস্থায় মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চালতার অপকারিতা থাকার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

চালতার অপকারিতা

চালতা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হওয়ার পরেও এর কিছু অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। চালতার অপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো-
  • গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে সমস্যা হতে পারে।
  • যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা চালতা খেলে এলার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে চালতা খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • চালতা বেশিরভাগ সময় আচার বানিয়ে খাওয়া হয়, আর এটিতে অনেক মসলা যুক্ত থাকে। তাই এটি খেলে অনেক সময় পেট খারাপ হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এরকম চালতার আচার খাওয়া মোটেও চলবে না।
  • অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে চালতা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চালতা পাতার উপকারিতা

চালতা ফলের পাশাপাশি চালতা পাতারও উপকারিতা রয়েছে। ঠাণ্ডা জনিত কারণে জ্বর বা সর্দি কাশি হলে কচি চালতা পাতা থেকে নির্যাস বের করে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে জ্বর এবং সর্দি কাশি দ্রুত ভালো হয়।

আমাশয় দূর করতে কাঁচা চালতা পাতার রস খুব ভালো কাজ করে। চালতা পাতার রস খেলে শিশুদের পেটের সমস্যা দূর হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। চালতা পাতার রস অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া যাবেনা। উপকার পেতে হলে হাফ থেকে এক চামচই যথেষ্ট।

চালতা ইংরেজি কি

পূর্বে বলা হয়েছে চালতা ইংরেজি কি। চালতার ইংরেজি অনেক সময় বিভিন্ন কাজে বা পরীক্ষায় দরকার হতে পারে। তাই চালতার ইংরেজি জেনে রাখা উচিত। চালতার ইংরেজি হলো এলিফ্যান্ট অ্যাপল (Elephant apple)। আশা করি চালতা ইংরেজি কি তা জানতে পেরেছেন। চালতা ইংরেজি কি এটি অনেক কাজে লাগতে পারে তাই জেনে রাখা ভালো।

চালতা ফুলের ছবি

চালতা ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। চালতা ফুলের ছবি অনেকেই দেখতে চান। তাই চালতা ফুলের ছবি নিচে দেওয়া হলো।
চালতা ফুলের ছবি

চালতা খাওয়ার নিয়ম

আমাদের কাছে চালতা আচার করে খেতে অনেক ভালো লাগে এবং এটি খুবই জনপ্রিয়। আবার অনেকে চাটনি বানিয়েও খেতে পছন্দ করেন। তবে অতিরিক্ত মসলা দিয়ে আচার বানিয়ে খেলে চালতার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক লক্ষ্য করা যায়।

এজন্য বাহিরের বা দোকানের চালতার আচার বর্জন করাই ভালো। চালতা কাঁচা অবস্থায় এটি সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। এছাড়া উপরের আবরণ বা খোসা ছাড়িয়ে চালতার রস বের করে খেলে উপকার সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। তবে অন্যান্য রোগ বালাই দ্বারা শরীর আক্রান্ত থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চালতা খাবেন।

চালতার আচার কিভাবে বানায়

চালতার আচার অনেক জনপ্রিয় হওয়ার কারণে অনেকেই জানতে চান চালতার আচার কিভাবে বানায়। প্রথমে চালতা নিয়ে ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর উপরের খোসা অর্থাৎ সবুজ অংশ ছিলে নিন। এরপর লম্বা ভাবে কুচি করে কেটে নিতে হবে। গরম পানিতে এক টেবিল চামচ হলুদ দিয়ে জাল দিন, এরপরে চালতা গুলো গরম পানিতে ছেড়ে দিন।

এবার ঢাকনা দিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে চালতা গুলো পানি থেকে তুলে নিন এবং চালতা থেকে পানি ঝরিয়ে নিন। এরপর পরিমাণ মতো জিরা মসলা, ধনিয়া, মৌরি, শুকনা মরিচ, তেজপাতা, কালো সরিষা চুলায় হালকা ভেজে নিন।
তারপর ব্লেন্ডার দিয়ে গুঁড়া করে নিন, অন্যদিকে চালতাগুলো ঠাণ্ডা হয়ে গেলে বা শুকিয়ে গেলে চালতা গুলো শিল বা শক্ত কোন বস্তু দিয়ে হালকা থেঁতলে দিন যাতে আঁশ গুলো বেরিয়ে আসে এবং খেতেও অনেক ভালো লাগে। তারপর চুলায় কড়াই বা প‍্যান বসিয়ে সেখানে পরিমাণ মতো সরিষার তেল, এলাচ, তেজপাতা, দারুচিনি, শুকনা মরিচ, রসুন বাটা, হলুদের গুঁড়া দিয়ে নাড়াচাড়া করুন।

কিছুক্ষণ পর পরিমাণ মতো ভিনেগার দিতে হবে, তারপর চালতা গুলো সেখানে ঢেলে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন। এরপর পরিমাণ-মতো গুঁড়া মরিচ চিনি বা গুড় দিতে হবে। তারপর শুরুতে ব্লেন্ডার করা গুঁড়া গুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকুন।

কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর পানি গুলো শুকিয়ে গেলে বুঝবেন আপনার চালতার আচার তৈরি। অনেকদিন ধরে চালতার আচার সংরক্ষণ করে রেখে খাওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

চালতা বিশেষ ঔষধি গুণসম্পন্ন ফল। বিশেষ করে এটি বর্ষা থেকে শীতকাল পর্যন্ত গাছে ধরে। বাংলাদেশের সব এলাকাতেই এই গাছ দেখা যায়। তবে চালতার উপকারিতা গুলো না জানার কারণে অনেকেই চালতা খায় না। তাই আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন অন্যের সাথে, যাতে সকলে চালতার উপকারিতা ও চালতার অপকারিতা গুলো জানতে পারে।

আজকে আমরা জানলাম গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা, চালতার উপকারিতা এবং চালতার অপকারিতা, চালতা পাতার উপকারিতা, চালতা ইংরেজি কি, চালতা ফুলের ছবি, চালতা খাওয়ার নিয়ম ও চালতা কিভাবে খায় এবং চালতার আচার কিভাবে বানায়। আরও অনেক তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url