সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায় - হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ
ধূমপান করলে কি কি রোগ হয়প্রিয় পাঠক, আপনি কি সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায়, হার্ট ব্লক দূর করার ব্যায়াম, হার্ট ব্লক দূর করার উপায়, হার্ট ব্লক হলে করণীয়, হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। তাহলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
এছাড়া আমরা এখানে আরও আলোচনা করব হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ, হার্ট ব্লক হলে কি হয়, হার্ট ব্লক হলে কি খাওয়া উচিত এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব যা আশাকরি সকলেরই উপকারে আসবে।
ভূমিকা
বর্তমানে আমাদের সমাজে ছোট বড় সবারই হার্ট ব্লক ও হার্ট অ্যাটাক জনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর মূল কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা। হার্ট ব্লক হয়েছে বুঝতে পারলে সাবধানতা অবলম্বন করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। অনেকেই জানেন না সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায়, হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ, হার্ট ব্লক হলে করণীয়।
হার্ট ব্লক হলে কি কি খাওয়া উচিত এবং হার্ট ব্লক দূর করার ব্যায়ামও রয়েছে, এসব সম্পর্কে আমরা এখন জানব। অলস জীবন যাপনকারী ডায়াবেটিস রোগী এবং যারা ধূমপান করেন তাদের হার্ট ব্লক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্তমানে রবোটিক প্রযুক্তিতে হার্টে রিং বসানো হচ্ছে আমাদের দেশেই। গত একুশ-জানুয়ারি-২০২৪ জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে ২ জন হার্টের রোগীকে রোবটের দ্বারা রিং বসানো সফল হয়।
হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ
হার্ট ব্লক হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। অনেকের বংশগতভাবেও এটি হয়ে থাকে। মূলত হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ হলো, আমাদের শরীরে এক ধরনের রক্তনালীর নাম ধমনী। এই ধমনী রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে, এটির যখন বাধা প্রদান হয় বা রক্ত চলাচলের কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় অথবা বন্ধ হয়ে যায় তখনই হার্ট ব্লক হয়ে যায়, এটাই হলো হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ।
বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ। কেননা এটি আমাদের শরীরে খাদ্যের মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং ধমনীতে জমা হয়, আর রক্ত চলাচল ব্যাহত করে। অতঃপর আমাদের হার্ট ব্লক হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকের বয়স হয়ে গেলেও এই সমস্যা দেখা দেয়।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, যারা নিয়মিত তামাকের ধোঁয়া সেবন করে থাকে, যাদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি এবং যারা বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে তাদের হার্ট ব্লক হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ
হার্ট ব্লক হলে অনেক লক্ষণ দেখা দেয়। হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ নিম্নরূপ-
- বুকের দুই সাইডে অর্থাৎ ডান ও বাম দিকে ব্যথা অনুভব হয়।
- ঘাড়ের বাম দিকে অথবা মাঝখানে ব্যথা হয় এবং চোয়ালেও ব্যথা অনুভব হয়।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হয় না। তবে বুক ধড়ফড় করতে পারে।
- অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মাথা ঘোরে।
- শরীর অনেক ক্লান্ত থাকে এবং একটু কাজ করলেই বুকে ব্যথা করে।
- একটু পরিশ্রম করলেই দীর্ঘনিশ্বাস নিতে হয়।
- অনেক সময় হার্টের তীব্র ব্যথা হয়, একে এ্যানজাইনা বলা হয়।
- বুকে জ্বালা অনুভব হতে পারে।
- ভারি কোন কিছু বহন করলে কষ্ট লাগে।
- বুকের ব্যথা ধীরে ধীরে বাম হাতের দিকে যেতে পারে।
- উভয় বাহু এবং পিঠেও ব্যথা হয়।
- ঘুমানোর সময় ব্যাঘাত ঘটে।
- এসবই মূলত হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ। হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
হার্ট ব্লক হলে কি হয়
অনেকেই জানতে চান হার্ট ব্লক হলে কি হয়। সাধারণত হার্ট ব্লক হলে সবাই ঘাবড়িয়ে যায়। প্রথম অবস্থায় হার্ট ব্লক হলে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সঠিক চিকিৎসা নিলে এটি নির্মূল করা যায়।
তবে লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরও যদি গুরুত্ব না দিয়ে বসে থাকে অর্থাৎ চিকিৎসা না নেয়, তাহলে পরবর্তীতে এটি মারাত্মক কারণ হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষেরই দেখা যায় যে, হার্ট ব্লক হওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়।
হার্ট ব্লক হলে করণীয়
অনেকেই হার্ট ব্লক হলে ভয় পেয়ে থাকেন। এটি হলে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। তবে আপনাকে জানতে হবে হার্ট ব্লক হলে করণীয় কি। কেননা অন্যান্য রোগের মত এটিরও চিকিৎসা আছে। শুরুর দিকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষধ সেবনের মাধ্যমে হার্টের ব্লক দূর করা সম্ভব হয়।
হার্টের ব্লকের মাত্রা বেশি হলে এ্যানজিওগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিং লাগিয়ে এটি দূরীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্লকের সংখ্যা যদি বেশি হয় তাহলে রিং লাগানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অতঃপর অপারেশন করে ব্লক দূর করতে হবে। হার্ট ব্লক হলে ধূমপান বা সিগারেট একদমই খাওয়া যাবে না।
রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং মসলাদার ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায়।
সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায়
সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায় রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় কিছু নিয়ম কানুন পরিবর্তনের মাধ্যমে সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলা সম্ভব হয়। প্রথমত কোন রকম মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না কেননা এতে উচ্চ রক্তচাপ বাড়তে পারে। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে, চর্বি ও কোলেস্টেরল-যুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে। শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেলে তা কমানোর চেষ্টা করুন।
সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায় এর আরেকটি মাধ্যম হলো কিছু ঔষধ সেবন করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যাসপিরিন ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা এটি রক্ত পাতলা করে এবং রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে। তবে অনেকের রক্ত পাতলা হলে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি হতে পারে তাই ডাক্তারের কথা মত এটি ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়া কিছু ঔষধ পাওয়া যায় যা কোরেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। নাইট্রোগ্লিসারিন ঔষধ সেবন করতে পারেন, এটি করোনারি ধমনী সম্প্রসারিত করে এবং বুকের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায় এর ক্ষেত্রে রসুন খুবই কার্যকরী।
কেননা রসুন কোলেস্টেরল এর মাত্রা দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রসুন রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করে, কারণ এটি খেলে রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধা প্রদান করে। যার কারণে হার্ট ব্লক দূর হয়। রসুনের সাথে লেবু ও আদার রস এবং মধু এসে প্রতিদিন সকালে খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে সব মিলিয়ে এক চামচ করে খাবেন এতে হার্টের ব্লক অনেকটাই খুলে যাবে।
হার্ট ব্লক দূর করার ব্যায়াম
অন্যান্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি হার্ট ব্লক দূর করার ব্যায়াম-ও করতে হবে। হার্ট ব্লক দূর করার ব্যায়াম করলে হার্ট ব্লক দূর হওয়ার আশঙ্কা অনেকটুকুই বেড়ে যাবে। প্রথমত যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। এটি মন এবং স্বাস্থ্য দুটোই ভালো রাখে। চেস্ট প্রেস ব্যায়াম করতে হবে অর্থাৎ শরীরে কিছু বহন করা, পুশ-আপ দেওয়া ইত্যাদি। তবে খেয়াল রাখতে হবে শরীরে খুব বেশি প্রেশার নেওয়া যাবে না।
প্রতিদিন সকালে জোরে জোরে হাঁটতে আথবা আসতে আসতে দৌড়াতে হবে। এতে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো হয়। নিয়মিত খেলাধুলা ও সাঁতার কাটবেন এবং সম্ভব হলে সাইকেল চালাতে পারেন। এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।
হার্ট ব্লক হলে কি খাওয়া উচিত
হার্টে ব্লক হলে কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আর হার্ট ব্লক হলে কি খাওয়া উচিত সেটাও আমাদের জানতে হবে। বেশি বেশি লাউ বা কদু খেতে হবে, এটি শরীরের ওজন বাড়তি হতে দেয় না। প্রতিদিন দুই থেকে তিন কোয়া রসুন খেতে পারেন। পেতে হার্ট ব্লক হওয়ার সমস্যা সমাধানে অনেকটাই হেল্প করে। হার্ট ব্লক হওয়ার ঝুঁকি কমাতে লেবু খান।
ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন শাকসবজি ফলমূল ইত্যাদি। এগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাদ্য তালিকায় রাখুন। খুব বেশি লবণ খাবেন না এতে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হার্টের রোগ সৃষ্টি হতে পারে। মিনারেল যুক্ত খাবার খান এতে হার্টে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায় - হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ - লেখকের মন্তব্য
হার্টের যেকোনো সমস্যার সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান। অলস জীবন যাপন, সব সময় টেনশন এবং বাহিরের চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, এইসব ইত্যাদি বিষয়ই মূলত হার্টের অসুখের মূল কারণ। হার্টের কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
আজকে আমরা জানলাম হার্ট ব্লক হওয়ার কারণ, হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ, হার্ট ব্লক হলে কি হয়, হার্ট ব্লক হলে করণীয় কি, সার্জারি ছাড়া হার্ট ব্লক খোলার উপায়, হার্ট ব্লক দূর করার ব্যায়াম এবং হার্ট ব্লক হলে কি খাওয়া উচিত সম্পর্কে। আমাদের এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি আপনার নিকটস্থদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে সবাই উপকৃত হয়। ধন্যবাদ
দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url