হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার - হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

হার্টের ব্যথা দূর করার উপায়প্রিয় পাঠক, আপনি যদি হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার, হার্টের রোগীর খাবার তালিকা, হার্টের জন্য উপকারী ফল, হার্টের রোগী কি দুধ খেতে পারবে, হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে থাকেন তাহলে আজকের এই কন্টেন্ট আপনার জন্য।
কি কি খাবার খেলে হার্টের সমস্যা হয়
এছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করব যা আশা করি সকলের উপকারে আসবে। আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেতে মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

বাজারে ভেজালযুক্ত খাবার দিন দিন বাড়ছে। এবং এটি লোভনীয় হওয়ায় সবাই খেতে পছন্দ করে। এবং পরবর্তীতে নানা রকমের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। অনেক কম বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও হার্টের সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 
এজন্য আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার, হার্টের জন্য উপকারী ফল বা খাবার অথবা হার্টের রোগে আক্রান্ত হলে হার্টের রোগীর কি কি খাবার খেতে হবে অর্থাৎ হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার

স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এজন্য আমাদের নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। জন্য জানতে হবে কোনগুলো ক্ষতিকর এবং কোনগুলো উপকারী। হার্টের জন্য উপকারী খাবার গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
  • লাল মাংসঃ এটি হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লাল মাংসে স‍্যাচুরেটেড ফ‍্যাট থাকায় এটি খেলে কোলেস্টেরল অত্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং হার্টের জন্য এটি ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়।
  • মদ্যপান ও ধূমপানঃ এগুলো শুধু হার্টের জন্য ক্ষতিকর তা নয়। মদ্যপান ও ধূমপান করলে ক্যান্সার-সহ সারা শরীরেই নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে।
  • কমল পানীয় বা সোডাঃ কমল পানীয়তে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। আর আমরা জানি চিনি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর। নিয়মিত কোমল পানীয় বা সোডা খেলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি থাকে।
  • ফাস্টফুডঃ বাহিরের এসব লোভনীয় খাবারের প্রচুর পরিমাণ মসলা এবং লবণ মিশ্রিত থাকে যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • চিংড়িঃ চিংড়ি হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার। কেননা এতে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল আছে।
  • কুসুমঃ অনেকে বলে থাকেন, যে কোন ডিমের কুসুমে বা মাছের ডিমেও ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাবেন
  • ভাজাপোড়াঃ ভাজাপোড়াতে মসলা ও তেল থাকায় এটি রক্তে চর্বি জমিয়ে হার্ট ব্লক করে দিতে পারে।
  • পাউরুটিঃ পাউরুটি প্রচুর পরিমাণ লবণ দিয়ে তৈরি করা হয় যা ব্লাড প্রেশার বেড়িয়ে দেয় এবং হার্টের রোগ সৃষ্টি করে।
  • গ্রানোলা-বারঃ এটি হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার।
  • আইসক্রিমঃ এতে প্রচুর পরিমাণ চিনি ব্যবহার করা হয়, যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং আইসক্রিমও হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার।
  • এছাড়াও যেসব খাবার খেলে হার্টের সমস্যা হয় এর মধ্যে রয়েছে যে কোনো প্রক্রিয়াজাত-কৃত খাদ্য, পনির, মাখন, পান্তা ভাত, লুচি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, বিস্কুট ইত্যাদি যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট। এগুলো আমাদের ওজন বাড়িয়ে দেয়। হার্টের রোগীর খাবার তালিকা এর মধ্যে এসব খাবার রাখা যাবে না।
  • ঠাণ্ডা পানিঃ ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি হার্টের রোগীদের জন‍্য একদমই ভালো নয়।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

হার্টকে সুস্থ এবং সবল রাখতে হলে হার্টের রোগীর কি কি খাবার খেতে হবে বা হার্টের রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে। উপরে আলোচনা করেছি হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে, এখন আলোচনা করব হার্টের রোগীর খাবার তালিকা বা কি কি খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। 
পূর্বে আমরা জেনেছি প্রক্রিয়াজাত-কৃত খাবারে প্রচুর পরিমাণ কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকে। কিন্তু এমন কিছু খাবার রয়েছে যেখানে ভালো করে কোলেস্টেরল থাকে এবং এই ভালো কোলেস্টেরল গুলো খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় ও হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেগুলো হলো- বেগুন, টমেটো, পালং শাক, জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল, মাছের তেল, তিসি, মটরশুঁটি, পেঁয়াজ ইত্যাদি। হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতাও রয়েছে।

ভাত, ময়দা, আলু, দুগ্ধ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। প্রচুর পরিমাণ আঁশ জাতীয় বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন- ফুলকপি, পটোল, বরবটি, সজনে, পেয়ারা, আমড়া নারকেল, বেগুন, ওলকপি, যে কোন প্রকারের ডাল, তিল, ভুট্টা ইত্যাদি। হার্টের রোগীর যেসব খাবার খেতে হবে-তার মধ্যে উদ্ভিজ্জ তেল রাখতে হবে, এগুলো উপকারী ফ্যাট। হার্টের জন্য উপকারী ফল খেতে হবে।

হার্টের জন্য উপকারী ফল

বিভিন্ন ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। অনেক ধরনের আছে যা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। তেমনি হার্টের জন্য উপকারী ফলও রয়েছে। হার্টের জন্য উপকারী ফল গুলো হলো-
  • আপেলঃ এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। হার্টের উপকারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আপেল। তাই প্রতিদিন একটা করে আপেল খেতে পারেন।
  • বেরি জাতীয় ফলঃ এগুলোতে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা হার্টে রোগ প্রতিরোধ করে।
  • কলাঃ এতে প্রাকৃতিক চিনি পাওয়া যায়, তার সাথে ম‍্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ও ফাইবার তো আছেই।
  • কমলা-লেবুঃ এটি কোলেস্টেরল কমায়, প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য হার্টের উপকারে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • জামঃ এটি হার্টের রোগ এবং স্ট্রোক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
  • এছাড়া বেদানা বা ডালিম, ড্রাগন-ফল, পেঁপে ইত্যাদি হার্টের জন্য উপকারী ফল। তবে অন্য কোন সমস্যা থাকলে এসব ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা

হার্টের জন্য রসুন অনেক উপকারী। রসুন রক্ত পাতলা করে এবং রক্ত চলাচল করতে সুবিধা হয়। রসুনে অ‍্যাসিলিন রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হার্ট ভালো রাখতে আদাও খেতে পারেন, এটি হার্টকে চাপ-মুক্ত রাখে। 
রসুন অনেকে প্রতিদিন কাঁচা কয়েক কোয়া করে খেয়ে থাকেন। এটি হার্ট ও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও কারো কারো জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রসুন খাওয়া উচিত। কেননা রসুন উচ্চ রক্তচাপ এবং এসিডিটি বাড়িয়ে দেয়।

হার্টের রোগী কি দুধ খেতে পারবে

দুধ একটি আদর্শ খাবার। তবে অনেকেই জানেন না যে, হার্টের রোগী দুধ খেতে পারবে কি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, পাতলা দুধ বা লো-ফ‍্যাট মিল্ক রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

তবে পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ বা দুধের তৈরি খাবার হার্টের জন্য একদমই ভালো নয়। যেমন মাখন, ঘি, পনির ইত্যাদি এগুলোতে অনেক কোলেস্টেরল এবং ট্রান্স ফ্যাট থাকে।

লেখকের মন্তব্য : হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার - হার্টের রোগীর খাবার তালিকা

হার্টের সুস্থতার জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করতে হবে এবং তা নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি হার্টের সুস্থতার জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা আবশ্যক।

আজকে আমরা জানলাম হার্টের জন্য ক্ষতিকর খাবার, হার্টের রোগীর খাবার তালিকা, হার্টের জন্য উপকারী ফল কি কি, এছাড়াও হার্টের জন্য রসুনের উপকারিতা এবং হার্টের রোগী কি দুধ খেতে পারবে কিনা। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে শেয়ার করবেন, যাতে অন্যেরও উপকার হয়। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দি প্লেনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url