হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় জানুনপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আপনি হয়তো হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ, হিট স্ট্রোক কেন হয়, হিট স্ট্রোক হলে করণীয় এবং হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চান।
এসব বিষয়সহ আজকে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো হিট স্ট্রোক কাকে বলে, শিশুদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ এবং হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে।
ভূমিকা
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বা বিভিন্ন দেশে প্রচণ্ড গরমে মানুষের এবং বিভিন্ন পশুপাখির হিট স্ট্রোক হচ্ছে। এমনকি মৃত্যুবরণ করছে হিট স্ট্রোক এর মাধ্যমে। তাই আমাদের অবশ্যই হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ জেনে রাখতে হবে যাতে লক্ষণগুলো সনাক্ত করে সঠিক সময় চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়।
হিট স্ট্রোক কাকে বলে
হিট স্ট্রোক হল একটি ভয়াবহ তাপ-জনিত অসুস্থতা। শরীরের তাপমাত্রা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন হিট স্ট্রোক এর মতো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রচণ্ড গরমের কারণে পরিবেশ তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়, ঘাম নির্গত হতে ব্যর্থ হয় তাই শরীর ঠাণ্ডা হতে পারে না।
প্রচণ্ড গরমের কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি অথবা এর বেশি হলে হিট স্ট্রোক ঘটে থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা আমাদের মস্তিষ্ক সহ্য করতে না পেরে তার কার্যকলাপ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে হিট স্ট্রোক হয়।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণগুলো দ্রুত বা ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। আবার যারা প্রচণ্ড রোদে বা অনেক গরমে কাজ করে তাদেরও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো হল:
- খুব বেশি জ্বর হওয়া।
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, যা ঘামে না।
- পেশি ব্যথা করা।
- হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
- নিম্ন রক্তচাপ হওয়া।
- শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া।
- শরীরের ভারসাম্য হারানো।
- মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথা করা।
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
- ডিহাইড্রেশন।
- পেশাব কম হওয়া এবং হলুদ হওয়া।
- মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়া।
- কথা বলার ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলা।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ঠাণ্ডা পরিবেশে গমন করতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে।
শিশুদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ
প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশুদের খুব দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং হিট স্ট্রোকের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিশুদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ গুলো হল:
- ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর
- ত্বক লাল হয়ে যাওয়া
- হার্ট বিট দ্রুত হওয়া
- নিঃশ্বাস ছোট হয়ে যাওয়া এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস চলা
- শরীর একদম ক্লান্ত হওয়া
এসব হল বাচ্চাদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ। শিশুদের লক্ষণ দেখা দিলে বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে এবং ঠাণ্ডা পরিবেশে অবস্থান করতে হবে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসা নিতে হবে।
হিট স্ট্রোক কেন হয়
ইদানীং হিট স্ট্রোকের ঘটনা প্রায়শই শোনা যাচ্ছে। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে হিট স্ট্রোক কেন হয়। আমরা আপনাকে জানাবো হিট স্ট্রোক কেন হয় ও ঝুঁকির কারণ। হিট স্ট্রোক সাধারণত খুব গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে থাকার কারণে ঘটে।
অ্যালকোহল পান করা, পর্যাপ্ত পানি পান না করা এবং গরম পরিবেশে মোটা পোশাক পরিধান করা আপনার হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থা যেমন টাইপ 1 ডায়াবেটিস এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস, আপনার হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন মাছের তেলের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক
৬৫ বছর বয়সের মানুষদের এবং শিশুদের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম হওয়ার কারণে। তাই এরকম বয়সের মানুষের হিট স্ট্রোক বেশি হয়ে থাকে। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি ঠেকাতে সব সময় ঠাণ্ডা পরিবেশে অবস্থান করুন, ফ্যান অথবা সম্ভব হলে এয়ার-কন্ডিশন ব্যবহার করুন।
হিট স্ট্রোক হলে করণীয়
হিট স্ট্রোক হলে করণীয় কি তা আমাদের জানতে হবে। হিট স্ট্রোক হলে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। রোদে হিট স্ট্রোক হলে দ্রুত ছায়াযুক্ত জায়গায় অবস্থান করতে হবে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহ হলে হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া শুরু করতে হবে।
রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এছাড়া যদি কোন অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি দ্রুত না পাওয়া যায় তাহলে জরুরী চিকিৎসা সহায়তার জন্য ৩৩৩ নাম্বারে কল করে সহায়তা গ্রহণ করুন। হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা নিচে আলোচনা করা হল।
হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা
হিট স্ট্রোক হলে রোগীকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া খুবই জরুরী। এটি হলে চেষ্টা করতে হবে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য। হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা:
- গরম আবহাওয়া বা তাপ থেকে রোগীকে সরিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
- শরীরে ভারী পোশাক থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে।
- রোগীর শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিন।
- রোগীর ঘাড়ের পেছনে কপালে এবং বগলে ঠাণ্ডা পানি ঢালুন।
- রোগীর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।
এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার পর যদি রোগী ভালো বোধ করে তারপরেও চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে রোগী যেন সাথে সাথে আবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার স্থানে না যায়।
হার্ট, মস্তিষ্ক বা কিডনির ক্ষতির মতো হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য শরীর ঠাণ্ডা করা অপরিহার্য। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী। চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় বা হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়
এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় গুলো হল:
- প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে থাকুন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে দিনে অন্তত ৪-৫ লিটার পানি পান করতে হবে এবং শিশুদেরও বয়স অনুযায়ী নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করাতে হবে।
- খুবই গরম আবহাওয়া হলে বাহিরে যাওয়া পরিহার করুন। বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়লে ছাতা ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
- বাহিরে গেলে মোটা পোশাক না পড়াই ভালো। গরম কমাতে ঘরে এবং বাহিরে উভয় স্থানে পাতলা জামা কাপড় পড়ুন।
- শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ঘরের ভেতরে এয়ার-কন্ডিশনার বসান বা ফ্যান ব্যবহার করুন।
- বাহিরে বা ঘরে প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া থাকলে ব্যায়াম অথবা কঠোর শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার শিশুদের, প্রাপ্তবয়স্কদের এবং পোষা প্রাণীদের গরম আবহাওয়ায় জানালা-বিহীন ঘর বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ নয় এমন জায়গায় রেখে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল যুক্ত তরল এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও কোল্ড ড্রিঙ্কস অবশ্যই এড়িয়ে চলবেন, কেননা এসব উপাদান আপনার শরীর থেকে দ্রুত তরল বের করে দিতে সহায়তা করে।
লেখকের মন্তব্য: হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ ও চিকিৎসা – হিট স্ট্রোক কেন হয়
প্রচণ্ড গরমের প্রভাবে আমাদের মস্তিষ্ক যখন ভালোভাবে কাজ করতে পারে না তখন হিট স্ট্রোক ঘটে। তাই আমাদের শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং সেই সাথে শরীরে পানি এবং লবণের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি স্যালাইন খেতে পারেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম। গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন গরম অঞ্চলে মানুষ হিট স্ট্রোক করে মারা যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ জনের মধ্যে প্রায় ২০ জনের হিট স্ট্রোক হচ্ছে গরম আবহাওয়ার কারণে। হিট স্ট্রোকের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ২৪০ থেকে ৮৩৩ জন মারা যায়।
প্রকৃতির আবহাওয়াকে ঠাণ্ডা করতে হলে গাছ কাটা বন্ধ করে দিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। গরম আবহাওয়াতে কঠোর পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন এবং হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা আপনাকে জানালাম হিট স্ট্রোক কাকে বলে, হিট স্ট্রোক কেন হয়, হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ এবং শিশুদের হিট স্ট্রোকের লক্ষণ, হিট স্ট্রোক হলে করণীয়, হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা এবং হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে।
বর্তমানে যেহেতু আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম এবং হিট স্ট্রোকের মতো দুর্ঘটনা প্রায়শই শোনা যাচ্ছে, তাই সকলকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।