হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায়সম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো হার্টের সমস্যার লক্ষণ, মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায়, হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় এসব সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
উপরোক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন, যাতে আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেতে পারেন।
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা প্রচুর সংখ্যক মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ছোট-বড় সবারই হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে বা হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এজন্য আমাদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বা ছেলে মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় ও হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় কি তা জানতে হবে। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ
যারা ডায়াবেটিসের রোগী, বিশেষ করে মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ বা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো একটু ভিন্নভাবে হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে বুকে কোনো রকম ব্যথা না হয়েই এসব লক্ষণগুলো দেখা দেয়। যেমন-
- হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হওয়া।
- বুকে অস্বস্তি অনুভব করা।
- পাকস্থলীর উপরে ব্যথা হতে পারে। এজন্য গ্যাসের ব্যথা ভেবে এটি এড়িয়ে যাবেন না।
- মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ গুলোর মধ্যে এগুলো অন্যতম এছাড়াও শ্বাসকষ্ট অন্যান্য অঙ্গ গুলোতে ব্যথা হয়ে থাকে।
- এছাড়াও মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ হলো বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হওয়া।
হার্টের সমস্যার লক্ষণ
পুরুষ ও মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ গুলোর মধ্যে উপরোক্ত পয়েন্ট গুলো ছাড়া হার্টের সমস্যার লক্ষণ প্রায় একই। সেগুলো হলো-
- শরীরে জোর না পাওয়া অর্থাৎ প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়া।
- মেয়েদের ক্ষেত্রে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব নাও দেখা দিতে পারে তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
- বুক ধড়ফড় করতে থাকে এবং অস্বস্তি লাগে।
- পালস রেট অস্বাভাবিক থাকে।
- একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে যায় এবং বুকে ব্যথা লাগতে পারে।
- বুকের বাম সাইডে কষ্ট হতে পারে।
- কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে।
- ছেলেদের থেকে মেয়েদের বমি হওয়ার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। এসবই মূলত ছেলে ও মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ।
হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায়
দীর্ঘদিন বাঁচতে হলে হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় গুলো অবশ্যই জেনে রাখতে হবে। যেসব কারণে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় সেগুলো কাজ প্রথমে ত্যাগ করতে হবে। তা না হলে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা অনেকটাই সম্ভব হয়ে ওঠে না। যেসব জিনিস ত্যাগ করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো ধূমপান। এটি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ধূমপানের সাথে সাথে অন্যান্য মাদকদ্রব্য ত্যাগ করা আবশ্যক। হার্ট ব্লক দূর করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং হাই প্রেশার রয়েছে তাদের জন্য হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করা অনেকটা চ্যালেঞ্জের। এসব নিয়ন্ত্রণ না থাকলে হার্ট অ্যাটাক এর সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো বা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় হলো মানসিক চাপ না নেওয়া।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মূল কারণ হলো মানসিক চাপ। এছাড়াও শরীরের বাড়তি ওজন থাকলে তা কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে, কেননা ওজন বেড়ে গেলে হার্টে চর্বি জমে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে। কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। লাল গোশত ও তেল যুক্ত অথবা কোলেস্টেরল বেরিয়ে দেয় এমন খাবার মোটেও যাবে না।
তবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পরিমাণ কম থাকলে বা শরীর সুস্থ রয়েছে মনে হলে মাঝেমধ্যে এসব খাবার খেতে পারেন। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। হার্টের কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় এর মধ্যে অন্যতম করণীয় হলো রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা ও অলসতা দূর করে শারীরিক পরিশ্রম করা।
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ
হার্ট অ্যাটাকের পূর্বে এর লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়। নিম্নে হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ সমূহ দেওয়া হলো-
- হার্ট-বিট বেড়ে যায় ফলে প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব অনুভব হয়।
- বুকের মাঝ বরাবর অনেক ব্যথা অনুভব হয়।
- আস্তে আস্তে বাম হাতের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে যেতে পারে।
- শ্বাস নিতে না পারে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- শরীর থেকে অনেক ঘাম নির্গত হয়।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে বুক থেকে পেট পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পরে এবং বমি হতে পারে।
- অনেক ক্ষেত্রে মাথা ব্যথাও হতে পারে।
- কথা বলতে বা শুনতে সমস্যা হয়ে থাকে।
- মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে এবং
- রোগীর কাশিও হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়
এপর্যন্ত আমরা হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা জানব হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়। হার্ট অ্যাটাক হলে তাড়াতাড়ি কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে, দেরি করলে এর ভয়াবহতা বা ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। প্রথমেই রোগীর ব্যথা কমাতে অ্যাসপিরিন সেবন করাতে হবে, যাতে করে রোগী একটু আরাম পায় ব্যথা থেকে।
এক্ষেত্রে অন্যান্য সমস্যা যদি থাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ব্যথা নাশক ঔষধ সেবনের আগে। হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলে সিপিআর দিতে হয়। রোগী নিশ্বাস নিতে অক্ষম হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস শরীরে লাগাতে হবে। আমাদের কাছে সব সময় অ্যাম্বুলেন্সের নাম্বার রাখা উচিত। কেননা হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে দেরি না করে।
লেখকের মন্তব্য: হার্টের সমস্যার লক্ষণ – মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ
সুস্থ স্বাভাবিক জীবনধারা বজায় রাখতে ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত ব্যায়াম ও হাঁটাচলার গুরুত্ব অপরিসীম হার্টকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে। কোন কারণে হৃদপিণ্ডের গতি সংকোচন-প্রসারণ বন্ধ হলে জীবনের স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যাহত হয় এমনকি মৃত্যু ঘটে। বিভিন্ন ধরনের তেল ও চর্বি জাতীয় খাদ্য হৃৎপিণ্ড বা হার্টের কার্যক্রম কে ব্যাহত করে।
তাই নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা, কাঁচা ফল ও শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আজকে আমরা জানলাম মেয়েদের হার্টের সমস্যার লক্ষণ, হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার উপায়, হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় এবং হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ-সমূহ। আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে এটি অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন যাতে সবাই উপকৃত হয়।