হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা – হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ

হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় জানুনআজকে আমরা হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা, হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ, হাঁসের মাংস খেলে কি প্রেসার বাড়ে, গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস খাওয়া যাবে কি, চিনা হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও রাজ হাঁসের মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে জানাব।
হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা
হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ না জানার কারণে এবং হাঁসের মাংসের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিকগুলো থাকার কারণে অনেকেই খেতে চায় না। আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে আপনার জন্য হাঁসের মাংস উপযুক্ত কিনা।

সূচিপত্র: হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা – হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ

.

ভূমিকা

হাঁস প্রাণীটিকে আমরা সকলেই চিনি এবং এটি গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্রই দেখা মিলে। শহর অঞ্চলে হাঁস পালন না হলেও হাঁসের মাংস সর্বত্রই পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই অজানা হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
যেহেতু আমরা হাঁসের মাংস অনেকেই খেয়ে থাকি তাই আমাদের হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও হাঁসের মাংসের অপকারিতা সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। তো চলুন হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এবং হাঁসের মাংস সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জেনে আসি।

হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ

হাঁসের মাংস পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ তুলে ধরা হল :
  • ক‍্যালরি – ৩৩৭ কিলোক্যালরি
  • চর্বি – ২৮ গ্রাম
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাট – ১০ গ্রাম
  • কোলেস্টেরল – ৮৪ মিলিগ্রাম
  • সোডিয়াম – ৫৯ মিলিগ্রাম
  • পটাশিয়াম – ২০৪ মিলিগ্রাম
  • আয়রন – ১৫%
  • ভিটামিন বি৬ – ১০%
  • ম্যাগনেসিয়াম – ৪%
  • ক‍্যালসিয়াম – ১%
  • কোবালামিন – ৫%
হাঁসের মাংস উপকারী পুষ্টি সরবরাহ করে। হাঁসের মাংসে কোন কার্বোহাইড্রেট থাকে না, এর মানে হল এতে কোন ফাইবার বা চিনি নেই। হাঁসের চামড়া এবং মাংসে প্রচুর চর্বি থাকে। হাঁসের মাংস অ‍্যামাইনো এসিড সহ উচ্চ মানের প্রোটিন সরবরাহ করে।
হাঁসের মাংসে আয়রন, সেলেনিয়াম, এবং অল্প পরিমাণ ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন ধরনের মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের বি-ভিটামিন রয়েছে, কিন্তু বিশেষ করে নিয়াসিন এবং ভিটামিন বি ১২ এর পরিমাণ বেশি।
ভিটামিন বি ১২ স্নায়ুর কার্যকারিতা, লোহিত রক্তকণিকা গঠন এবং ডিএনএ সংশ্লেষণের জন্য অপরিহার্য। হাঁসের মাংস ওমেগা-৩ ফ‍্যাটি অ‍্যাসিড এবং ওমেগা-৬ ফ‍্যাটের একটি ভালো উৎস।

হাঁসের মাংসের উপকারিতা

হাঁসের মাংসের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি প্রোটিন, আয়রনের একটি চমৎকার উৎস। যা আমাদের শক্তি দেয় এবং রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। মুরগির মাংসের চেয়ে হাঁসের মাংস বেশি স্বাস্থ্যকর। কেননা মুরগির মাংসের তুলনায় বেশি ভিটামিন রয়েছে, কপার রয়েছে, সেই সাথে কম পরিমাণে কোলেস্টেরল এবং সোডিয়াম রয়েছে। হাঁসের মাংসের উপকারিতা নিম্নরূপ :
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : হাঁস সেলেনিয়ামের একটি ভালো উৎস, এতে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। উভয় উপাদানই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হাড়ের ও দাঁতের জন‍্য উপকারী : কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, হাঁসের মাংস থেকে পাওয়া প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের ঘনত্ব এবং হাড় ও দাঁতে শক্তি প্রদান করতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : তৈলাক্ত মাছকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের শীর্ষ উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু হাঁসের মধ্যেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই স্বাস্থ্যকর অ্যাসিড রয়েছে। যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখে : আপনি কি জানেন যে হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ আমাদের রক্তের কোষের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে মূল্যবান। হাঁস স্বাস্থ্যকর রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে যা আমাদের শরীর জুড়ে ভালোভাবে প্রবাহিত হয়। হাঁসের মাংসে আয়রন রয়েছে যা হিমোগ্লোবিনের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। এজন্য হাঁসের মাংস রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে : হাঁসের মাংসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি র‍্যাডিক‍্যালের ধ্বংস করে ও কমাতে সাহায্য করতে পারে। ফ্রি র‍্যাডিক‍্যাল হল শরীরের বাইরে থেকে আসা পদার্থ যা ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : হাঁসের মাংসে ভালো পরিমাণ ভিটামিন বি রয়েছে। ভিটামিন বি আপনার মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় বিকাশ, আপনার স্নায়ুতন্ত্র, আপনার পেশী এমনকি হরমোন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এটি আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ায় : হাঁসের মাংস উচ্চ-চর্বিযুক্ত উপাদানে রয়েছে, তাই এটি দ্রুত স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক ভাবে ওজন বাড়াতে খুব কার্যকর। যারা নিয়মিত ব‍্যায়াম করেন এবং মাংসপেশি বাড়িতে চান, তাহলে হাঁসের মাংস আপনার উপকার করবে।
গলা ব‍্যথা দূর করে : হাঁসের মাংসের উচ্চ খনিজ উপাদান গলা ব্যথা উপশম করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে এই মাংসের বিভিন্ন ধরনের ফল থেকেও বেশি প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়।
পেট ফাঁপা দূর করে : হাঁসের ভিটামিন নিয়াসিন পেটে জমে থাকা গ‍্যাসগুলি নিষ্পত্তি করতে সক্ষম।
ত্বক সুন্দর করে : হাঁসের মাংসে থাকা চর্বি ত্বককে মশ্চারাইজ করতে পারে, তাই ত্বক আরও সতেজ ও সুন্দর হয়।
চুলের জন‍্য উপকারী : হাঁসের মাংসের ভিটামিন রিবোফ্ল‍্যাসিওন রয়েছে যা চুলের উর্বরতা এবং স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি চুলকে পুষ্টি সরবরাহ করে।

চিনা হাঁসের মাংসের উপকারিতা

চিনা হাঁসের মাংসের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, ক‍্যালরি এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। যেমন ভিটামিন ই, নিয়াসিন এবং সেলেনিয়াম। যা প্রতিরোধ করে।

রাজ হাঁসের মাংসের উপকারিতা

রাজ হাঁস আকারে বড় এবং অন্যান্য হাঁসের মতোই এই হাঁসের মাংসের উপকারিতা রয়েছে। ওতে স‍্যাচুরেটেড ফ‍্যাট এবং মনোস‍্যাচুরেটেড ফ‍্যাট বেশি থাকে। রাজ হাঁসের মাংস প্রোটিনের একটি পাওয়ার হাউস। এছাড়া বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী।

হাঁসের মাংসের অপকারিতা

হাঁসের মাংস সবার জন্য উপযুক্ত খাবার নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে হাঁসের মাংসের অপকারিতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। হাঁসের মাংসের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। হাঁসের মাংসের অপকারিতা গুলো হল –
  • হাঁসের মাংস খেলে অনেকের অ‍্যালার্জি-জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের অ্যালার্জি-জনিত সমস্যা রয়েছে তারা হাঁসের মাংস খেলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
  • যেহেতু হাঁস বিভিন্ন জলাশয়ে ঘোরাফেরা করে এবং মাছ খায়, তাই অনেক সময় জলের দূষণ দ্বারা শরীর দূষিত হতে পারে। সেসব হাঁসের মাংস খেলে রোগাক্রান্ত খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ যারা বন্য হাঁস খায় তাদের স্বাস্থ্যের বিপদ হতে পারে।
  • হাঁসের মাংস ভাজা হলে ভিটামিন, চর্বি এবং ক্যালরি ধরে রাখতে পারেনা।
  • কিছু হাঁসের মাংসে প্রচুর অস্বাস্থ্যকর চর্বি রয়েছে যা অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে। যা আপনাকে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
  • একটি সমীক্ষা অনুসারে জানা যায় যে, দূষিত এলাকায় যেসব দূষিত জল থাকে, সেখানে বসবাসকারী হাঁসের প্রজাতির মাংসে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চমাত্রার পারদ পাওয়া যায়। যা লিভার এবং মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য হাঁসের মাংস ক্ষতিকর হতে পারে। কেননা অতিরিক্ত হাঁসের মাংস খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • হাঁসের মাংসের চামড়াতেও প্রচুর পরিমাণ চর্বি থাকে তাই এটি হার্টের রোগীর এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
See also  মরিয়ম ফুল কিভাবে খেলে বাচ্চা হয় - গর্ভাবস্থায় মরিয়ম ফুলের ব্যবহার

হাঁসের মাংস খেলে কি প্রেসার বাড়ে

অতিরিক্ত হাঁসের মাংস খেলে প্রেসার বাড়তে পারে। কেননা হাঁসের মাংসের প্রচুর পরিমাণ চর্বি রয়েছে। এমনকি গরুর মাংসের চেয়েও হাঁসের মাংসের চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি। তাই হাঁসের মাংস খেলে প্রেসার বাড়ে।
আর প্রেসার বাড়ার কারণে হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অতিরিক্ত হাঁসের মাংস এবং হাঁসের মাংসের চর্বি এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অল্প পরিমাণ খেতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাঁসের মাংস এড়িয়ে চলাই ভালো।
গর্ভবতী মায়ের যদি অ‍্যালার্জি-জনিত সমস্যা থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ এর মতো জটিল সমস্যায় ভোগেন তাহলে হাঁসের মাংস খাওয়া যাবেনা। হাঁসের মাংস খেলে এসব সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে এবং গর্ভবতী মায়ের ও সন্তানের উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস খেলে কোলেস্টেরল যেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য : হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা – হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ

হাঁসের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই অনেকেই অতিরিক্ত বেশি খেয়ে ফেলেন হাঁসের মাংসের অপকারিতা না জানার কারণে। হার্টের রোগ, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা, পরিশ্রমহীন ব্যক্তি এবং যাদের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রয়েছে তারা হাঁসের মাংস এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
ডায়াবেটিস এর রোগী চামড়া ছাড়া হাঁসের মাংস খেতে পারেন। হাঁসের মাংস খেয়ে সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। যাদের শারীরিক কোন সমস্যা নেই তারা নিশ্চিন্তে হাঁসের মাংস পরিমাণ মতো বা প্রয়োজন মত খেতে পারেন। কেননা হাঁসের মাংসের উপকারিতা অন্যান্য প্রাণীর মানুষের চেয়ে অধিক।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জানলাম হাঁসের মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, হাঁসের মাংসের পুষ্টিগুণ, হাঁসের মাংস খেলে কি প্রেসার বাড়ে, চিনা হাঁসের উপকারিতা ও রাজ হাঁসের উপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় হাঁসের মাংস খাওয়া যাবে কি না। অন্যের উপকারের জন্য এই পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ

Leave a Comment