সারোগেসি কিভাবে করা হয় – সারোগেসি হালাল নাকি হারাম

পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়সম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো সারোগেসি কিভাবে করা হয়, সারোগেসি হালাল নাকি হারাম অথবা সারোগেসি পদ্ধতি কি এসব বিষয়ে অনেক খুঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পাচ্ছেন না। সারোগেসি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সারোগেসি কিভাবে করা হয়
সারোগেসি সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করব যেমন সারোগেসি করতে কত টাকা লাগে।

ভূমিকা

বর্তমানে পৃথিবীতে সারোগেসি পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশেও গোপনে এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক দম্পতি বাবা-মা হচ্ছেন। বিশেষ করে অন্য কোন দেশে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সন্তান নিয়ে নিজ দেশে ফিরছেন। অনেক মানুষ জানেনও না এটি ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম নাকি হালাল। এই পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণ করেন সাধারণত ধনী মানুষেরাই। 
অনেক মানুষ আছে যাদের বাচ্চা হয় না তারাও এ পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান নিয়ে থাকে। এছাড়াও যেসব নারীরা খুব বেশি ডায়াবেটিস, ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত এবং অন্যান্য জটিল রোগে যারা আক্রান্ত তাদের গর্ভধারণ করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে তারা সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান নিয়ে থাকেন। অন্যান্য দেশের এটি আইনগত ভাবে প্রচলিত হলেও আমাদের দেশে এটি আইনগতভাবে স্বীকৃতি লাভ করেনি।

সারোগেসি পদ্ধতি কি

সারোগেসি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একজন মহিলা অন্য দম্পতির সন্তান নিজের গর্ভে ধারণ করে থাকে। আর গর্ভপাতের পর বাচ্চার বাবা-মা হন ঐ দম্পতি এবং ওই মহিলাকে বলা হয় সারোগেট মাদার। 
সারোগেট মাদারের সাথে বাচ্চার জিনগত কোনো সম্পর্ক থাকে না। অনেক বলিউড তারকারা এ মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে দেখা গেছে। এটি একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। সর্বপ্রথম ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে আইভিএফ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারোগেসি পদ্ধতি সফল হয়। চলুন এখন জানা যাক সারোগেসি কিভাবে করা হয়।

সারোগেসি কিভাবে করা হয়

সারোগেসি কিভাবে করা হয় তা অনেকেই জানেন না। সারোগেসি করতে খুব একটা বেশি পদ্ধতির অবলম্বন করতে হয় না। যে দম্পতি সারোগেসি মাধ্যমে সন্তান নিতে চান, সে নারীর ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয় এবং পুরুষের থেকে শুক্রাণু চেয়ে নেওয়া পর সে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুকে ল্যাবে নিয়ে নিষিদ্ধ করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। যে ভ্রূণগুলো ল্যাবে তৈরি করা হয়, সেগুলোকে তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যবেক্ষণ করা হয়, দেখা হয় ভ্রূণগুলো ঠিকঠাক বড় হচ্ছে কিনা এবং তার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখা দিচ্ছে কিনা।
কারণ সব কয়টা ভ্রূণ সুস্থ হয় না। মাত্র কিছু ভ্রূণ থাকে যেগুলো দেখতে সুস্থ মনে হয় এবং বাড়তে থাকে। তারপর এগুলোকে সংগ্রহ করা হয় প্রেগনেন্সির জন্য। তারপর এই ভ্রূণগুলো সারোগেট মাদারের গর্ভে রাখা হয়। রাখার কিছুদিন পর ধরা পড়ে তার প্রেগনেন্সি এসেছে কি আসেনি। এক্ষেত্রে মহিলার বয়স যত কম হবে ও ডিমের মান যত ভাল হবে, তার প্রেগনেন্সি চলে আসার সম্ভাবনা ততোটা বেশি। এভাবে সারোগেসি করা হয়।

সারোগেসি করতে কত টাকা লাগে

পূর্বে আমরা জেনেছি সারোগেসি কিভাবে করা হয়। কিন্তু সারোগেসি করতে কত টাকা লাগে এটার কোন এক লাইনের উত্তর হতে পারে না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মহিলার বা সারোগেট মাদারের যে ওজন বা যে বয়স অথবা ডিমের কোয়ালিটি সে অনুযায়ী ইঞ্জেকশন দিয়ে ডিম পাকানো, তারপরে সে ডিমগুলো সংগ্রহ করে ভ্রূণ তৈরি করা।
পরবর্তীতে সেই ভ্রূণটা গর্ভে রাখা, আর প্রেগনেন্সি টিকিয়ে রাখার জন্য ঔষধ নেওয়া, এইসব কয়টা মিলিয়ে ভারতে দেঁড় থেকে ২ লক্ষ টাকা এবং সারোগেট মায়ের খরচ ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও হতে পারে। যদিও অনেক দেশেই গর্ভ ভাড়া দেওয়া ও নেওয়া বেআইনি কাজ।

সারোগেসি হালাল নাকি হারাম

সারোগেসি শব্দটি বর্তমানে অনেক প্রচলিত। সারোগেসি কিভাবে করা হয় তা জেনে কোরআন হাদিসের আলোকে সারোগেসি হালাল নাকি হারাম তা ব্যাখ্যা করা যায়। সারোগেসি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম একটি পদ্ধতি। আল্লাহ তাআলা সন্তান গ্রহণের নির্দিষ্ট পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। 
অতঃপর যখন সে তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হলো, তখনই সে হালকা গর্ভধারণ করল এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকলো। অতঃপর যখন ভারী হলো তখন উভয়ে তাদের রব আল্লাহকে ডাকল, যদি আপনি আমাদেরকে সু সন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো। উক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা বংশ বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে স্ত্রীদের বুঝিয়েছেন।

অনেকে বলে থাকে যে সারোগেসি পদ্ধতিতে তো হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে হয় না তাহলে সারোগেসি পদ্ধতি কিভাবে হারাম হয়। মহা-গ্রন্থ আল-কোরআনে আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে শস্য ক্ষেতের সাথে তুলনা করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন- স্ত্রী তোমাদের জন্য ফসল-ক্ষেত্র। 
অন্যদিকে হাদিস শরীফে রয়েছে আল্লাহর রাসূল বলেছেন- যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালা ও হাশরের দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য হালাল নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচ দেওয়া। এজন্য পুরুষের শুক্রাণু বেগানা মহিলার গর্ভে ধারণ করা হালাল নয় সেটা যেকোনো মাধ্যমেই হোক না কেন। 
ইসলামের বিধান অনুযায়ী যিনি সন্তান জন্ম দেন তিনিই সেই সন্তানের মা হন। ফলে সারোগেট মাদার সন্তান জন্ম দিলে তিনি তার মা হিসেবে গণ্য হবেন। সুতরাং বুঝা যায় সারোগেসি হালাল নাকি হারাম।
জন্ম দেওয়ার পর সারোগেট মা তার ভাড়ার টাকা নিয়ে সন্তানকে ভাড়াদাতার কাছে তুলে দেন। এই ক্ষেত্রে সারোগেট মায়ের সন্তানও থাকতে পারে যাকে বিয়ে করা ভাড়ার মাধ্যমে গর্ভে ধারণ করা সন্তানের জন্য হারাম। কারণ তারা তখন ভাই বোনের পরিচিতি লাভ করবে। এই প্রক্রিয়াটি সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই হারাম বিবাহে না জেনেই জড়িয়ে পড়তে পারে।

সারোগেসি কিভাবে করা হয় – সারোগেসি হালাল নাকি হারাম – লেখকের মন্তব্য

অনেক নারী তাদের সমস্যার কারণে সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করে সন্তান নিয়ে থাকেন। ইসলামী শরীয়তে সারোগেসি পদ্ধতি যেহেতু হারাম সেহেতু আগে নিজের সমস্যা সমাধান করে তারপর নিজের গর্ভেই সন্তান ধারণ করতে হবে। তা না হলে সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
আজকে আমারা জানালাম সারোগেসি পদ্ধতি কি, সারোগেসি কিভাবে করা হয়, সারোগেসি হালাল নাকি হারাম, সারোগেসি করতে কত টাকা লাগে।
See also  জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সুবিধা ও অসুবিধা জেনে নিন

Leave a Comment