সকল নফল রোজার ফজিলত – মহররম মাসের রোজার ফজিলত

সকল নফল রোজার ফজিলতসম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত, মহররম মাসের রোজার ফজিলত, সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত অথবা আরও অন্যান্য সকল নফল রোজার ফজিলত, জিলহজ্জ মাসের প্রথম নয় দিনের রোজা সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
সকল নফল রোজার ফজিলত
এখানে আমরা আরও বলব প্রতি মাসে ১৩ ১৪ ১৫ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত, বছরের কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম ও জিলহজ্জ মাসের প্রথম ৯ দিনের রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে।

ভূমিকা

রোজা রাখার নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া সারা বছর রোজা রাখা যায়। যেসব রোজাকে আমরা নফল রোজা বলি। ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজারও অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। নফল রোজার নিয়ত করলে তা পুরা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। নফল রোজা ভেঙ্গে ফেললে তা কাযা করতে হয়।

মহররম মাসের রোজার ফজিলত

মহররম মাসের রোজার ফজিলত : হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের রোজার পর মর্যাদাপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা। (বুখারী)
মহররম বা আশুরার রোজা দুইটি রাখতে হয়। মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ অথবা ১০ ও ১১ তারিখ। মাহে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার (মহররম মাসের ১০ তারিখ) রোজা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার দিন নিজের রোজা রাখতেন এবং ঐ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। (বুখারী মুসলিম)

ইহুদিরাও এ দিনে রোজা পালন করে তা দেখে সাহাবী বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ আপনি না বলেছেন তাদের বিরোধিতা করতে! হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আগামী বছর যদি বেঁচে থাকি মহররমের নবম তারিখে রোজা পালন করব। (মুসলিম) কিন্তু আল্লাহর রাসূল পরবর্তী বছর পর্যন্ত আর জীবিত ছিলেন না।
তবে উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, মহরম মাসের ১০ তারিখের সাথে ৯ তারিখেও রোজা রাখা আমাদের সকলের জন্য কর্তব্য। কোন কারণ-বশত ৯ তারিখে রোজা রাখতে সক্ষম না হলে ১০ এর সাথে মহররমের ১১ তারিখে রোজা পালন করলেও হবে।

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত

শাওয়াল মাসের এই ছয়টি নফল রোজা অনেক ফজিলত-পূর্ণ। হযরত আবু আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ এক বছর রোজা রাখল। (মুসলিম)

সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার ফজিলত

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর রাসূলের ইরশাদ বর্ণনা করেন যে, সোমবার ও বৃহস্পতিবার (মহান আল্লাহর সমীপে) বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়। কাজেই আমি চাই আমার আমল যেন এমন অবস্থায় উপস্থাপন করা হয় যখন আমি রোজাদার। (তিরমিযী)
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এর রোজার জন্য আগ্রহী থাকতেন। (তিরমিযী)

প্রতি মাসে ১৩ ১৪ ১৫ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত

হযরত অমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা পালন করা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত কাতাদা ইবনে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে আইয়ামে বীজের (প্রতি আরবি মাসের ১৩ ১৪ ও ১৫ তারিখ) নফল রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। (আবু দাউদ)

বছরের কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম

দুই ঈদের দিন এবং কুরবানির ঈদের পরবর্তী তিনদিন রোজা রাখা হারাম। এছাড়া শাবান মাসের শেষ দিন (সন্দেহ থাকার কারণে) রোজা রাখা মাকরুহ। এছাড়া শাবান মাসের শেষ দিনগুলোতে রোজা রাখায় অনভ‍্যস্থ ব্যাক্তিদের রোজা রাখা ভালো নয়। কারণ এতে রমজানের রোজায় অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম নয় দিনের রোজা

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এমন কোন দিন নেই যেদিন কৃত আমল জিলহজ্জের প্রথম নয় দিনের নেক আমলের মতো আল্লাহর নিকট অত্যধিক প্রিয়। (বুখারী)

আমাদের শেষ কথা : সকল নফল রোজার ফজিলত – মহররম মাসের রোজার ফজিলত

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ফরজ রোজার পাশাপাশি কিছু নফল রোজা রয়েছে যা পালন করার মাধ্যমে ঈমানী শক্তি ধরে রাখা যায়, জীবনের গুনাহ গুলো মাফ হয়ে যায়।
যেমন মহররম বা আশুরার রোজা, শাওয়াল মাসের ছয় রোজা, জিলহজ্জ মাসের প্রথম নয় (ঈদের দিনের পূর্ব পর্যন্ত) দিন রোজা রাখা, সাপ্তাহিক রোজা, আইয়ামে বীজের রোজা, শবে বরাতের রোজা ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা সকল নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারলাম।
See also  পোশাকে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ হবে কি - মৃত ব্যক্তির ছবি ঘরে রাখা যাবে কি

Leave a Comment