জাবুটিকাবা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনআজকে আমরা আপনাদের লংগান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, লংগান ফল খাওয়ার নিয়ম, লংগানের পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করব।
এছাড়া লংগান ফল সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরব, যা আপনার কাজে লাগতে পারে।
ভূমিকা
লংগান আঁশফল বা কাঠলিচু নামেও পরিচিত। লংগান হল একটি মিষ্টি জাতীয় ফল যা শুধু খাদ্য হিসেবেই নয়, পুরো এশিয়া জুড়ে ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। লংগান লিচুর মতো একই পরিবারের একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল।
আরও পড়ুন মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই ফল গোলাকার, দেখতে লিচুর মতো, এর মাংস ফ্যাকাসে সাদা, ত্বক মসৃণ এবং মাঝখানে একটি বীজ থাকে। লংগান ফলের উপকারিতা অনেক, কেননা এটি সুপারফুডের তালিকায় জায়গা করে রেখেছে। তবে অনেক সময় অসাবধানতার কারণে এর অপকারিতাও লক্ষ্য করা যায়।
লংগানের পুষ্টি গুণাগুণ
লংগান ফল পুষ্টির একটি কারখানা যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। লংগানে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। তাহলো-
- কার্বোহাইড্রেট : লংগান কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। এগুলো শরীরে শক্তি যোগাতে সহায়তা করে।
- প্রোটিন : লংগান ফলে সামান্য পরিমাণ প্রোটিন থাকে। যদিও বেশি নয়, তবুও এই ফল খেলে প্রোটিনের কিছু অংশ চাহিদা পূরণ করতে পারে।
- চর্বি : লংগান ফলের মধ্যে চর্বির পরিমাণ খুবই কম। তাই যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি সাহায্য করতে পারে।
- মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস : লংগান ফলের মধ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্সও থাকে। অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন এবং খনিজ আমাদের সুস্থ রাখতে এবং ভালো বোধ করতে ভূমিকা পালন করে।
- ভিটামিন : লংগান ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস। ভিটামিন সি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে।
- খনিজ : খনিজ উপাদানের কথা বলতে গেলে, লংগান ফল ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করে। এগুলো উপাদান হাড় শক্তিশালী, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং মাংস পেশী উন্নত করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : লংগানে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি কোষের ক্ষতি এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম লংগানে পুষ্টির পরিমাণ
- কার্বোহাইড্রেট – ১৫.১৪ গ্রাম
- প্রোটিন – ১.৩১ গ্রাম
- ক্যালরি – ৬০ কিলোক্যালরি
- ফাইবার – ১.১০ গ্রাম
- চর্বি – ০.১০ গ্রাম
ভিটামিন এবং মিনারেল
ভিটামিন সি – ৮৪ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম – ২৬৬ মিলিগ্রাম
ফসফরাস – ২১ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ – ০.০৫ মিলিগ্রাম
আয়রন – ০.১৩ মিলিগ্রাম
লংগান ফলের উপকারিতা
লংগান হল একটি সুপারফুড। সুপারফুড এমন একটি খাবার যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। লংগান ফল উচ্চ মাত্রার পুষ্টি সরবরাহ করে, তাই লংগান ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। এটি আপনার ডায়েটে কোনও অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ করে না। তাই লংগান একটি সুপারফুড হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করে। লংগান ফলের উপকারিতা গুলো হল –
স্মৃতিশক্তি উন্নত করে – লংগান ফল মস্তিষ্কের ফাংশন ঠিক রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা যায় লংগান ফল খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হতে পারে। লংগান আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ করে – লংগান ফলে শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যার কারণে এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও, এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ করে। লংগান দিয়ে তৈরি চা এবং ভেষজ উপাদান শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি করে, গলা ব্যথাসহ সাধারণ সর্দি এবং জ্বর প্রতিরোধ করে। লংগান দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ঘুম ভালো হয় – আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রায়, বেশিরভাগ মানুষ অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। এটি করটিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমায়। এর ফলে ঘুম ভালো হয় এবং ঘুমের সময় কাল দীর্ঘ করে। লংগানের নির্যাস মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে পারে।
রক্তশূন্যতা দূর করে – লংগান ফল আয়রন সরবরাহ করে। এটি আয়রনের ঘাটতি দূর করে এবং রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়। এটি লোহিত কণিকা উৎপাদনকে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করে – লংগান ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা রয়েছে। তাই এটি শক্তি বৃদ্ধিকারী হিসেবে দুর্দান্ত ভাবে কাজ করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ – লংগানে ভালো পরিমাণ পটাসিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী – লংগান ফলে থাকা পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান গুলো হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্নে লংগানের উপকারিতা
লংগান ফল বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে পারে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে। এটি পিগমেন্টেশন, দাগ, সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা দূর করে। এই ফল কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। যার ফলে এটি ত্বকের নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে।
ফলে ত্বক সুস্থ থাকে। একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে লংগানে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের অক্সিডেটিভ ক্ষতি কমায়। তাই লংগান ফল ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি ত্বকের ফাটল এবং পিলিং কমিয়ে দেয়। এটি ত্বকের শুষ্কতাও কমায় এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
লংগান ফলের অপকারিতা
শুধু লংগান ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখলেই হবে না। কেননা লংগান ফলের অপকারিতা বা কিছু ক্ষতিকর দিকও প্রকাশ পায়। ১০০ গ্রাম লংগানে ৬৫ গ্রাম চিনি থাকে। অতএব, আপনার ডায়াবেটিস থাকলে লংগান ফল খাওয়া উচিত নয়। তাজা লংগান ফলের তুলনায় শুকনো বা প্রক্রিয়াজাত ফল গুলিতে বেশি চিনি থাকে। এগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ নয়।
লংগান চাষের সময় কীটপতঙ্গের আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ফলে ফসল রক্ষায় কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার করতে শুরু করে। এ কারণে ফলের খোসা দাঁত দিয়ে ছাড়ালে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই ভালোভাবে ফলটি ধুয়ে খাবেন।
গর্ভাবস্থায় লংগান খাওয়া নিরাপদ নয়। এটি মুখ শুষ্ক, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে, যা গর্ভাবস্থার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় লংগান এড়িয়ে চলাই ভালো।
লংগান ফল খাওয়ার নিয়ম
পুষ্টি গুণাগুণ সঠিকভাবে পেতে তাজা ফল বেছে নিন। ফলের খোসা ছাড়িয়ে এটি সরাসরি খেতে পারেন। আবার বিভিন্ন উপায়ে লংগান ফল খাওয়া যায়। আপনি সালাদে লংগান ফল যোগ করতে পারেন। আবার উচ্চমাত্রায় পুষ্টি পেতে এভাবে শরবত তৈরি করে খেতে পারেন –
উপকরণ
- লংগান ফল (বীজ এবং খোসাবিহীন) ৫০ গ্রাম
- নারকেল দুধ ১০ মিলি
- কলা ৩০ গ্রাম
পদ্ধতি
- কলা ছোট ছোট করে টুকরো করে নিন।
- একটি ব্লেন্ডারে লংগান, নারকেল দুধ এবং কাটা কলা একত্রিত করুন।
- এটি ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন এবং ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন।
উপসংহার : লংগান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
লংগান ফল একটি সুপারফুড। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। এই ফল আপনাকে ভালো ঘুমাতে, আপনার স্নায়ুকে শান্ত করতে এবং শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এই সুস্বাদু ফলটি রোগের সংক্রমণ, ত্বকের সমস্যা, স্ট্রেস এবং উদ্বেগের চিকিৎসায়ও সাহায্য করতে পারে।
লংগান মায়ানমার এবং দক্ষিণ চীনের মধ্যবর্তী পর্বতমালা থেকে শুরু করে পুরো এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা লংগানের পুষ্টি গুণাগুণ, লংগান ফলের উপকারিতা, ত্বকের যত্নে লংগানের উপকারিতা, লংগান ফলের অপকারিতা এবং লংগান ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। এই আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।