মৌমাছি চাষ পদ্ধতিসম্মানিত পাঠক, রাম্বুটান ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাই আজকে রাম্বুটান ফল চাষ পদ্ধতি অথবা কিভাবে রামরুটান ফল চাষ করবেন সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আপনি যদি রাম্বুটান ফল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আশা রাম্বুটান ফলটি কমবেশি অনেকের কাছেই পরিচিত। এই ফলটি বর্তমানে প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, তাই অনেকেই রাম্বুটান ফল চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলটি লিচুর মত দেখতে, খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি।
এটি ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, ফিলিপাইনে প্রচুর চাষ করা হয়। রাম্বুটানের বৈজ্ঞানিক নাম নেফেলিয়াম ল্যাপেসিয়াম। এই ফলটি ভারতের কেরালা, তামিলনাড়ু, ব্যাঙ্গালোর সহ বিভিন্ন রাজ্যে জনপ্রিয়-ভাবে চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়াতেও এই ফল চাষ করে অনেকেই সফল হয়েছেন।
রাম্বুটানের বৈশিষ্ট্য
রাম্বুটান গাছ : এই গাছটি ১৫ থেকে ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
রাম্বুটানের পাতা : এই গাছের পাতার দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ৩০ সেমি এবং প্রস্থ ৫ থেকে ১৫ সেমি হয়ে থাকে।
রাম্বুটানের ফুল : রাম্বুটানের ফুলের আকার অনেক ছোট।
রাম্বুটানের ফল : ফল আকারে গোলাকার। ফলের ভেতর একটি ডিম্বাকৃতি বীজ থাকে। ফলের চামড়া লাল আবার অনেক সময় হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। ফলের দৈর্ঘ্য ৩ থেকে ৬ সেমি এবং চওড়ায় ৩ থেকে ৪ সেমি হয়।
রাম্বুটানের বীজ : রাম্বুটানের বীজ দেখতে চকচকে এবং বাদামি রঙের হয়।
রাম্বুটানের জাত
- চুই আং
- পেং থিং বি
- ইয়া টাও
- আজিমাত
- আয়ের মাস
- বিনজা
- সিমাকান
- সিনিওনিয়া
রাম্বুটান চাষের জন্য যেরকম মাটি এবং জলবায়ু প্রয়োজন
রাম্বুটান চাষের জন্য এঁটেল দোআঁশ অথবা বেলে দোআঁশ মাটি এবং এতে প্রচুর জৈব পদার্থ প্রয়োজন। জল ভালোভাবে নিষ্কাশন করতে সক্ষম হয় এমন মাটি নির্বাচন করতে হবে। মাটির গভীরতা ২ থেকে ৩ মিটার হতে হবে।
আরও পড়ুন মাশরুম চাষ পদ্ধতি জেনে নিন
রাম্বুটান চাষের জন্য ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার আবহাওয়া প্রয়োজন। তাহলে ফলন ভালো হবে। উষ্ণ অঞ্চলে রাম্বুটান গাছ সবচেয়ে ভালো জন্মে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে এটির ভালো ফলন হয়।
রাম্বুটান চাষের জন্য জমি তৈরি
জমি চাষযোগ্য করতে সমস্ত অবাঞ্ছিত আগাছা, নুড়ি, পাথর এবং পূর্বের অবাঞ্ছিত উপকরণ গুলি সরিয়ে ফেলতে হবে। তারপর তারপর জমিতে লাঙ্গল করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে জমি যেন সমতল হয়। জমিতে বীজ রোপণের জন্য গর্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন রাম্বুটান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ত গুলি প্রায় ৬০ সেমি * ৬০ সেমি * ৬০ সেমি হওয়া উচিত। রোপণের দুই সপ্তাহ আগে মাটিতে কম্পোস্ট প্রয়োগ করতে হবে। নারকেলের ভুসি যোগ করা যেতে পারে।
রাম্বুটান বীজ রোপণ পদ্ধতি
রাম্বুটানের বংশ বিস্তারের জন্য অর্থাৎ, চাষ করার জন্য এর বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের প্রথমে ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং বীজ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। কোথাও ফলটি না পেলে অর্থাৎ, বীজ সহজে না পেলে অন্য কোথাও থেকে তাজা বীজ আনতে হবে এবং বীজ এক সপ্তাহের কম বয়সী হতে হবে।
তারপরে বীজটি চ্যাপ্টা করে আড়াআড়িভাবে রোপণ করতে হবে। এটি করার ফলে চারা একটি সরল কোণে বৃদ্ধি পাবে এবং গাছের মূল স্বাভাবিক এবং শক্তিশালী হবে। বীজ রোপণ করার ৯ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে অঙ্কুরোদগম দেখা যাবে।
রাম্বুটান চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- রোপণের সময় জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে।
- গাছ লাগানোর পর গাছে জৈব পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ইউরিয়া এবং মিউরিয়েট অফ পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।
- ধীরে ধীরে সারের পরিমাণ বছরে বছরে বাড়াতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে সারের হার বাড়াতে হবে।
রাম্বুটান গাছের যত্ন
ভালো ফলন পেতে হলে গাছের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। রাম্বুটান গাছের বয়স ছয় মাস হলে ৫৫ গ্রাম পটাশ, ১১৫ গ্রাম ফসফেট এবং ৬০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। আবার এক বছর বয়স হলে ব্যবহার করবেন। গাছটির বয়স দুই বছর হলে ১৬৫ গ্রাম পটাশ, ৩৪৫ গ্রাম ফসফেট, এবং ১৮০ গ্রাম ইউরিয়া সার গাছে দিন।
তৃতীয় বছর থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর ২৭৫ গ্রাম পটাশ, ৫৭৫ গ্রাম ফসফেট এবং ৩০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করুন। গাছকে দিনে ১০ ঘণ্টা আংশিক রোদে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে আপনি সুস্বাদু রাম্বুটান ফল পেতে শুরু করবেন। তবে কলম করা চারা থেকে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।
রাম্বুটান ফল সংগ্রহ
আমাদের দেশে শীতকালের তিন মাস বাদে বাকি নয় মাসই রাম্বুটান ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়। ফল পরিপক্ব হওয়ার পর এবং সম্পূর্ণরূপে ফলের রং পরিবর্তিত হলে ফল সংগ্রহ করা উচিত। স্বাভাবিক অবস্থায় এই ফলগুলো তিন থেকে চার দিন রাখা যায়।
উপসংহার : রাম্বুটান ফল চাষ পদ্ধতি জেনে নিন
আজকে আমরা জানলাম রাম্বুটান ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। বাজারে রাম্বুটান ফল তেমন দেখা না গেলেও চাহিদা প্রচুর রয়েছে। রাম্বুটান গাছের চারা বর্তমানে অনেক নার্সারিতে পাওয়া যায়। এই গাছে তেমন কোন রোগ বালাই লক্ষ্য করা যায় না। তবে পাতা ঝলসে যাওয়ার মতো সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। তবে শুরু থেকে ভালোভাবে পরিচর্যা করলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আরও পড়ুন রেশম চাষ পদ্ধতি
রাম্বুটান গাছ থেকে বছরে প্রচুর পরিমাণ ফল পাওয়া যায়। গাছের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলনও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আপনার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পরেও বাজার জাত করতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, রাম্বুটান ফল অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। বাজারে রাম্বুটান ফলের দাম প্রতি কেজি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এই ফল চাষ করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।