টাইফয়েড রোগ কিভাবে ছড়ায়প্রিয় পাঠক আপনি কি রক্ত আমাশয় কেন হয়, রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ, রক্ত আমাশয় হলে করণীয়, রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায়, রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধের নাম বাংলাদেশ, রক্ত আমাশয় হলে কি খেতে হবে এবং রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত না এসব সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন। আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরগুলো পেতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
উপরোক্ত টপিক গুলো ছাড়াও রক্ত আমাশয় রোগ কিভাবে ছড়ায় এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
সূচিপত্র: রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায়
.
ভূমিকা
সিগেলোসিস বা রক্ত আমাশয় একটি অতি প্রাচীন রোগ। মানব সভ্যতা বিকাশের প্রথম দিকে এমন কি চিকিৎসা জগতে চিকিৎসকদের শপথ গ্রহণের সময় থেকে এ রোগের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে। Kiyoshi Shiga নামক একজন জাপানি চিকিৎসক ১৮৯৮ সালে সিগেলোসিস রোগ আবিষ্কার করেন।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে এই রোগের দমন করা সম্ভব হলেও বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে অবস্থান ভেদে এখনো ইপিডেমিক হিসেবে এই রোগ প্রকাশ পাচ্ছে। সিগেলোসিস রোগটিকে ব্যাসিলারী আমাশয় বলা হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর মলের সাথে রক্ত আসে বলে একে রক্ত আমাশয় ও বলা হয়। রক্ত আমাশয় সৃষ্টির দুটি ধাপ পরিলক্ষিত হয়। ধাপ দুটি হচ্ছে – ক্ষুদ্রান্ত্রের ধাপ ও কলোনিক ধাপ।
ক্ষুদ্রান্ত্রের ধাপ – এ রোগের জীবাণু খাদ্যের সাথে পেটে প্রবেশ করার পর পাকস্থলীর এসিড মাধ্যম থেকে নিষ্কৃতি লাভের পর ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। সেখানে কলোনের ইপিথেলিয়াম কোষের আন্তঃকোষীয় ফাঁকে কলোনি সৃষ্টি করে অবস্থান করে এবং সেখানে টক্সিন ও এন্টারো টক্সিন নি:সৃত করে কলেরা রোগের ন্যায় ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
কলোনিক ধাপ – ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে জীবাণু বৃহদান্ত্রে প্রবেশ করার পরপরই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে এবং ইপিথেলিয়াল কোষের ভিতর ঢুকে পরে। সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং টক্সিন নিঃসৃত করে। এ টক্সিন এর প্রভাবে সেখানে কোষ অভ্যন্তরে রাইবোজোমীয় প্রোটিন সংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে যায় এবং কোষের মৃত্যু ঘটে। এপিথেলিয়াল কোষের অভ্যন্তরে জীবাণুর প্রবেশ ও সংক্রমণ প্রক্রিয়ায় ১৪০ মেগা-ডাল্টনের প্লাজমিড সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
রক্ত আমাশয় কেন হয়
Shigella dysenteriae নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে রক্ত আমাশয় বা ব্যাসিলারী আমাশয় রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ Shigella ব্যাকটেরিয়ার আরও তিনটি প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতিগুলো হলো –
- Shigella flexneri : বিজ্ঞানী সাইমন ফ্লক্সনার নামক একজন আমেরিকান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ১৯০০ সালে আবিষ্কার করেন।
- Sh. Sonnei : ১৯১৫ সালে কার্ল ওলাফ নামক একজন ডেনিস ব্যাকটেরিওলজিস্ট এ ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন।
- Sh. Boydii : জে. এস. কে. বোইড নামক একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী ১৯৩১ সালে এই ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন।
যে ব্যাকটেরিয়ার কারণে রক্ত আমাশয় রোগ সৃষ্টি হয়, সে ব্যাকটেরিয়া দণ্ডাকৃতির কিন্তু খাটো দণ্ডাকৃতি অবস্থায় সচরাচর দৃশ্যমান। এরা আকারে লম্বায় ২ থেকে ৩ মিলি মাইক্রন এবং প্রস্থে ০.৫ – ০.৭ মিলি মাইক্রোন পর্যন্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন হার্ট দুর্বল হলে করণীয় কি
বেশ কিছুদিন এরা পানি এবং মাটিতে টিকে থাকতে পারে। এদের বৃদ্ধির সুষম তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর ৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এদের মৃত্যু ঘটে।
রক্ত আমাশয় রোগ কিভাবে ছড়ায়
আমাশয় রোগের জীবাণু Shigella dysenteriae ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত চারটি মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। তাহলো –
- খাদ্যের মাধ্যমে।
- আঙ্গুলের মাধ্যমে।
- মলের মাধ্যমে।
- মাছির মাধ্যমে।
বাংলাদেশের কলেরা হাসপাতালের গবেষণায় জানা গেছে এ রোগ ১ হতে ৪ বছরের বাচ্চাদের বেশি দেখা যায়। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রায় ৫,০০,০০০ লোক মারা যায়। এজন্য আমাদের রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে জানা উচিত।
রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ
রক্ত আমাশয় রোগের জীবাণু মানব দেহের অন্ত্রে সিগা টক্সিন উৎপন্ন করে যা অন্ত্রে তারল্যের সৃষ্টি করে। এ রোগের ফলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয় –
- ডায়রিয়া সৃষ্টি হয়।
- মলের সাথে মিউকাস নির্দিষ্ট সময় পর পর পায়খানার সাথে বের হয়ে আসে।
- মারাত্মক আকার ধারণ করে কোলনে ঘাঁ দেখা দিলে মলের সাথে রক্ত আসতে থাকে।
- মিউকাস ও রক্তের সাথে পুঁজ বের হয়ে আসে।
- রোগীর শরীরে জ্বর ভাব হয়। সেই সাথে মাথা ব্যথা এবং পেটের নিম্নাংশে ব্যথা করতে থাকে।
- শ্লেষ্মা ও রক্তসহ তরল পায়খানা দিনে ৪ থেকে ১২ বার বা ততোধিক পর্যন্ত হতে পারে।
- রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। শিশু ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- চরম পরিণতি হিসেবে বয়স্ক রোগীর স্নায়ুবিক গোলমাল এবং কিডনির কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
রক্ত আমাশয় রোগেরঔষধের নাম
- রক্ত আমাশয় হলে রোগীকে মুখে খাবার স্যালাইন প্রয়োগ করতে হবে।
- কট্রিমোক্সাজল, সালফোনেমাইড, স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরামফেনিকল, নালিডিক্সিক এসিড এবং সিপ্রোফ্লাক্সিন কার্যকরী এন্টিবায়োটিক হিসেবে প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়।
- এ রোগের জীবাণুও দ্রুত বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের যেমন – টোসাই-ক্লিন, নালিডিক্সিক এসিড প্রভৃতির প্রতি রেজিস্ট্যান্স হয় বিধায় এন্টিবায়োগ্রাম করে যথাযথ এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করাই শ্রেয়। কারণ বাংলাদেশে এ রোগের জীবাণুর রেজিস্ট্যান্স হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি এবং এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রক্ত আমাশয় হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায়
- রক্ত আমাশয় থেকে বাঁচতে হলে নিরাময়ের উপায় গুলো জানতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে হবে এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার যথাযথ উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
- ঘন বসতিপূর্ণ বাস ব্যবস্থা তথা বস্তি প্রথার অবসান ঘটিয়ে খোলামেলা আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে।
- বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় জল, খাদ্য, দুগ্ধজাত দ্রব্যাদির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সে সাথে যথাযথভাবে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
- রোগীকে সুস্থ মানুষ থেকে আলাদা রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে।
- রোগীর মল-মূত্র স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বিনষ্ট করতে হবে।
- অগ্রিম বা দ্রুত ক্লিনিক্যাল ও এপেডেমিওলজিক্যাল ল্যাবরেটরি টেস্ট করতে হবে।
- রোগের উৎস চিহ্নিত করে বিনষ্ট করতে হবে এবং বাহকের চিকিৎসা দিতে হবে।
- খাবার তৈরির এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থানে বৈজ্ঞানিক-সম্মত দিকগুলোর প্রয়োগ করতে হবে।
- রোগীকে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক টিকা এবং কেমোথেরাপিক ব্যবস্থা করতে হবে।
রক্ত আমাশয় হলে কি খেতে হবে
রক্ত আমাশয় থেকে নিরাময়ের উপায় গুলো অবলম্বনের পাশাপাশি খাবারের দিকও লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিষ্কার পানি খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ ডাবের পানি, গুড়ের শরবত খেতে হবে। রক্ত আমাশয় হলে ডায়রিয়া হয় তাই বারবার পায়খানা হওয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে, এজন্য প্রতিবার মলত্যাগ করার পর স্যালাইন খেতে হবে। রক্ত আমাশয় হলে কলা খাওয়া যাবে।
এতে উপকার হবে তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। মুরগির গোশত, আলু, ডালিম বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এবং শাকসবজি এবং লেবুর রস ও চা খেতে পারেন। অ্যালার্জি-জনিত বা অন্যান্য কোন সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। ডিম খেলে ও আমাশয় রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে সেদ্ধ করা ডিম খেতে হবে।
রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত না
রক্ত আমাশয় হলে অতিরিক্ত কোনো খাবার খাবেন না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে হজম এর সমস্যা হতে পারে। এ সময় অতিরিক্ত ঝাল এবং মসলাদার খাবার খাওয়া যাবে না। দোকানের চকলেট, চিপস, খোলা পড়ে থাকা খাবার এবং ভাজাপোড়া খাওয়া উচিত না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রক্ত আমাশয় এর জন্য কোনো ঔষধ সেবন না করাই ভালো।
লেখকের মন্তব্য
রক্ত আমাশয় হলে রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায় গুলো অবলম্বন করবেন, কেননা এগুলো বেশ কার্যকর। পূর্বে উল্লেখিত রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেলে এটাকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
সম্মানিত পাঠক, আমরা আজকে রক্ত আমাশয় কেন হয়, রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ, রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায়, রক্ত আমাশয় হলে কি খেতে হবে এবং রক্ত আমাশয় হলে কি খাওয়া উচিত না। রক্ত আমাশয় রোগ কিভাবে ছড়ায় এবং রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধের নাম বাংলাদেশ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছি। ভালো লাগলে আপনার নিকটস্থদের সাথে শেয়ার করবেন।