যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও প্রতিরোধ – যক্ষ্মা রোগের ঔষধ

হার্টের সমস্যার লক্ষণ জানুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো টিবি বা যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায়, যক্ষ্মা রোগের ঔষধ, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ অথবা টিবি বা যক্ষ্মা রোগের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অনেক খুঁজাখুঁজি করেছেন। টিবি বা যক্ষ্মা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
যক্ষ্মা রোগের ঔষধ
আমরা এখানে উপরোক্ত বিষয়সহ যক্ষ্মা রোগের ঔষধ ও যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধ, যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করব যা সকলের জন‍্য জানা দরকার।

ভূমিকা

জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কক (Robert Koch) ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কার করেন। যক্ষ্মা এক প্রকার সংক্রামক রোগ। সংক্ষেপে যক্ষ্মা রোগকে TB (Tuberculosis) বলা হয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে যে, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কারের সময় ইউরোপে প্রায় ১৫% রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। 
বর্তমানে এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমে গেলেও সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ মারা যায় যক্ষ্মা রোগের কারণে। ভারতীয় উপমহাদেশে যক্ষ্মা রোগের সংখ্যা পৃথিবীর উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক বেশি। এ রোগটিকে ক্ষয় রোগও বলা হতো। বর্তমানে এই উক্তিটির আর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কারণ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ হতে সম্পূর্ণরূপে আরোগ‍্য লাভ করা সম্ভব হচ্ছে।

যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায়

যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায় তা না জানার কারণে এটি আমাদের মাঝে বিস্তার লাভ করে সহজেই। তাই যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। যক্ষ্মা রোগ সাধারণত দেখা যায় ভাসমান ঠিকানা-বিহীন, পুষ্টি-হীন, নিম্ন আয়ের মদ‍্যপায়ী ও ধূমপায়ী লোকদের মধ্যে। 
টিবি বা যক্ষ্মা রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ায় পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত হলে তার থেকে রোগের জীবাণু বিভিন্নভাবে স্থানান্তরিত হয়ে পরিবারের অন‍্যান‍্য সদস্যদের দেহে সংক্রামিত হয়। যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর ব‍্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেই এ রোগ মূলত বিস্তার লাভ করে।
রোগীর কফ, থুথু, মল-মূত্র প্রভৃতি ধুলা বালির সাথে মিশে বাতাসের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এ রোগের ব্যাকটেরিয়া সুস্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি করে। তাছাড়া দূষিত খাদ্য ও অপরিশোধিত দুধ ও পানীয়ের মাধ্যমেও সচরাচর যক্ষ্মা রোগ ছড়ায়।
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর ব‍্যবহৃত বাসনপত্র সুস্থ লোক ব‍্যবহার করলেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অজ্ঞাত কারণে আক্রান্ত রোগীর রক্ত গ্রহণে এ রোগ হতে পারে।

যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ

যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়।
  • যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক অবস্থায় শ্বাসনালী সংক্রমিত হয় বা পরবর্তীতে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়।
  • যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ হলো এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বুকে প্রথম দিকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়।
  • রোগের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় ও ক্রমেই কথা বলতে দম আটকে যাওয়ার উপক্রম হয়।
  • খাবারে অনিচ্ছা এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, নাড়ীর স্পন্দন দ্রুত হারে চলতে থাকে।
  • রোগীর কাশি হয় এবং অনেক সময় কাশির সাথে রক্ত বের হয়ে আসে।
  • ঘুম কম হয়, শরীরে প্রচণ্ড জ্বর হয় ও রাতে রোগীর শরীরে ঘাম নির্গত হয়।
  • ধীরে ধীরে রোগীর দেহের ওজন হ্রাস পায় এবং শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে।
  • অনেক সময় থুথুর সাথে রক্ত মিশ্রিত লাল মরিচা রঙ্গের গুটিযুক্ত বস্তু বের হয়ে আসে।
  • কখনো কখনো এ গুটিযুক্ত বস্তু Tuberle ভেঙে মাইকোব‍্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসে এবং যকৃত, কিডনি ও হাড়সহ দেহের অন‍্যান‍্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
  • এ অবস্থায় রোগীর বুক এক্সরে করলে এক্সরে ফিল্মে tubercules এর দানার ছবি দেখা যায়।
এসব হলো যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ সমূহ। এখন জেনে নিব যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা ও যক্ষ্মা রোগের ঔষধ সম্পর্কে।

যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা

যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা : আক্রান্ত রোগীর উপরোক্ত লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হলে রোগীর মেরুদণ্ডের ভেতরের তরল পদার্থ সংগ্রহ করে ল‍্যবরেটরীতে উপযুক্ত কালচার মাধ্যমে রোগের জীবাণু সনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাছাড়া গবেষণাগারে এসিড ফাস্ট রঞ্জন পদ্ধতিতে, এক্সরে করে, বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত DNA পরীক্ষা পদ্ধতি, HPLC পরীক্ষা বা টিউবারকুলিন পরীক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত করা যায়।

যক্ষ্মা রোগের ঔষধ

কোনো ব্যক্তির শরীরে যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে নিম্নলিখিত ঔষধ ব্যবহারে রোগের নিরাময় সম্ভব।
  • Isonizid এর সাথে রিফামপিসিন (Rifampicin) ইথামবুটল এবং পাইরিজিনামাইড (Pyrizinamide) একসাথে ১২ থেকে ২৪ মাস খেলে রোগ নিরাময় হয়। এছাড়া
  • স্ট্রেপটোমাইসিন (Streptomycin)
  • প‍্যার-অ‍্যামাইনো সালিসাইলিক এসিড
  • সাইক্লোসেরিন (Cycloserin)
  • কানামাইসিন (Kanamycin) প্রভৃতি ব‍্যবহার করা যায়।
See also  আফগানিস্তানের পামির কোলা এখন বাংলাদেশে
উপরোক্ত যক্ষ্মা রোগের ঔষধ এর সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগ প্রতিকার করা যায়। তবে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধ

যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধ করতে নিম্নোক্ত ৯টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধ করার উপায় গুলো হলো –
  • অবশ্যই শিশু বয়সে BCG (Bacille Calmette Guerin) টিকা নেয়া উচিত।
  • রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সাবধানতা অবলম্বন করা।
  • এক্সরে এবং টিউবারকুলিন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের পূর্বাভাস ও উৎস খুঁজে বের করা।
  • সর্বদাই পাস্তুরিত দুধ পান করা।
  • দূষণ-মুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ এবং রাস্তাঘাটের দোকান বা হোটেল রেস্তোরার উন্মুক্ত খাবার বর্জন করা।
  • গবাদিপশুর টিউবারকিউলোসিস দূর করা।
  • রোগাক্রান্ত ব্যক্তির বিছানাপত্র, ব্যবহৃত বাসন আলাদা রাখা। এমনকি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রোগীকে পরিবারের অন্য সকলের নিকট থেকে পৃথক রাখা।
  • পত্র-পত্রিকা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম এবং বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
  • যক্ষ্মা কোন মরণ-ব্যাধি বা ক্ষয় রোগ নয় এ সম্পর্কে জনমত সৃষ্টি করা।

যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায়, লক্ষণ ও প্রতিরোধ – যক্ষ্মা রোগের ঔষধ – লেখকের মন্তব্য

যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে, তবে এর হার দিন দিন কমছে। এই যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে বাঁচতে হলে শিশু বয়সেই টিকা নিতে হবে ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে হবে এবং রোগে আক্রান্ত হলে সঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সম্মানিত পাঠক আশাকরি আপনি উপরের সমস্ত আলোচনা গুলো পড়ে যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেয়েছেন। আমরা জানলাম যক্ষ্মা রোগ কিভাবে ছড়ায়, যক্ষ্মা রোগের ঔষধ, যক্ষ্মা রোগের প্রতিরোধ, যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা, যক্ষ্মা রোগের লক্ষণ সম্পর্কে।

Leave a Comment