শসা ও খিরার পার্থক্য জানুনপ্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো মৌমাছি চাষ পদ্ধতি এবং মধু নিষ্কাশন ও মধু নিষ্কাশন যন্ত্র, মৌমাছির কয়েকটি প্রজাতির বর্ণনা, মধু কি, মৌমাছি কিভাবে মধু তৈরি করে, মৌমাছির বাসা বা চাক, বিশুদ্ধ মধু কিভাবে পাওয়া যায়, মৌচাক থেকে মোম উৎপাদন, বিশুদ্ধ মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, মৌমাছির বাহ্যিক গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তাহলে আশাকরি আজকের এই কন্টেন্টটি আপনার অনেক উপকার করবে।
অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মৌমাছি এবং মধুর সঙ্গে পরিচিত। মৌমাছিরা সরাসরিই আমাদের উপকার করে থাকে। মৌমাছি সামাজিক পতঙ্গ। এরা দলবদ্ধভাবে কলোনিতে বাস করে। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় ও পরাগ সংগ্রহ করে। পরাগ সংগ্রহ করে চাকে নিয়ে যায় সেখানে মধু ও মোম তৈরি করে থাকে। এক ফোঁটা মধু তৈরি করতে মৌমাছিকে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ ফুল পরিভ্রমণ করতে হয়।
ভূমিকা
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মৌমাছি পালন বেশ লাভজনক। প্রাচীনকালে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মৌমাছি পালনের যে পদ্ধতি ছিল তা অত্যন্ত নিষ্ঠুর। ভারতে ১৮৮৩ সালে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সঞ্চালন-শীল কাঠের ফ্রেমে মৌমাছি পালনের প্রচেষ্টা করা হয়। তবে এ ব্যাপারে পরিচালনা-গত ত্রুটি থাকায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
১৯১১ সালে দক্ষিণ ভারতে নিউটন মৌমাছি পালনের জন্য কাঠের মৌ বাক্স তৈরি করে। সেই মৌ বাক্স ভারতে বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে শস্য ক্ষেত্রে, বাগানে, বনে অজস্র মধু ভরা ফুলের সমারোহ। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মৌমাছি পালন করে মধু সংগ্রহ করে লাভবান হওয়া যায়। অত্যন্ত অল্প পুঁজিতে মৌমাছি পালন শুরু করা যায়।
আরও পড়ুন সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
মৌমাছি চাষে বা পালনে পরিশ্রম ও সময় খুবই কম লাগে। যে প্রক্রিয়ায় কৃত্রিমভাবে মৌমাছি পালন করা হয় ও মৌচাক থেকে মোম ও মধু সংগ্রহ করার ও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হওয়া যায় সেই পদ্ধতিকে মৌ-চাষ বা Apiculture বলা হয়। অতীতে মানুষ অবৈজ্ঞানিকভাবে চাক হতে মধু সংগ্রহ করত।
মধু ও মোম সংগ্রহ করতে সামগ্রিকভাবে লার্ভা ও পিউপা দশাকে মেরে ফেলা হতো, এতে মৌমাছির সংখ্যা দিনে দিনে কমতে লাগল। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী লরেঞ্জা ল্যারেইন ল্যাংস্ট্রথ ১৯৫১ সালে মৌমাছি পালনের জন্য একটি সুন্দর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এরপর বিভিন্ন প্রকার মধু নিষ্কাশনের যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়। বিজ্ঞান ভিত্তিক চাষের ফলে মৌমাছির প্রসার ঘটে ও চাহিদা বেড়ে যায়।
বর্তমানে মৌমাছির চাষ একটি লাভজনক কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশে বিশেষ করে চীন, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে মৌচাকের মাধ্যমে কৃত্রিম উপায়ে মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়।
বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও অনেক এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশিকাতে মৌমাছির চাষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের সালনায় বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইপসাতে মৌমাছি চাষের বিরাট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
মৌমাছির বাহ্যিক গঠন
মৌমাছির দেহ তিন অঞ্চলে বিভক্ত। যেমন – মাথা, বক্ষ ও উদর। এদের মাথায় এক জোড়া পুঞ্জাক্ষি, এক জোড়া অ্যান্টেনা ও মুখোপাঙ্গ অবস্থিত। বক্ষে তিন জোড়া পা ও দুই জোড়া ডানা বিদ্যমান।
উদর লম্বাটে ও ছয়টি খণ্ড দ্বারা গঠিত। রাণী ও শ্রমিক মৌমাছির উদরের শেষ খণ্ডে একটি শক্ত হুল থাকে। এটি সত্যিকার রূপান্তরিত অভিপজেটর বা ডিম পাড়ার অঙ্গ তবে আত্মরক্ষার অঙ্গ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
মৌমাছির কয়েকটি প্রজাতির বর্ণনা
Apis indica : এ মৌমাছিকে ছোট মৌমাছি বা ভারতীয় মৌমাছি বলে। এরা লম্বায় দুই সেন্টিমিটার এর ছোট হয়। এরা কিছু গুহায় বা গর্তে বাস করে। আবার কিছু মৌমাছি ঘরের দেয়ালের ফাটলে, ঘরের কোণে বা গাছের চাকে বাসা বাঁধে। এ প্রজাতি থেকে বছরে প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম মধু পাওয়া যায়। পার্বত্য অঞ্চলে একটি কলোনি থেকে প্রতিবছরে গড়ে আট থেকে দশ পাউন্ড মধু পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন ফ্রি ইনকাম আপস ২০২৪ ও অনলাইন ইনকাম করুন
Apis dorsata : এ প্রজাতির মৌমাছিকে পাহাড়ি মৌমাছি বা বাঘ মৌমাছি বলা হয়। এ জাতের মৌমাছি আকারে সর্বাপেক্ষা বড়, লম্বায় দুই সেন্টিমিটার এর বেশি হয়ে থাকে। এরা প্রবল শীতের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ও মধু আহরণে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে।
মৌসুমি ঋতু গ্রীষ্মকালে পাহাড়ে ও শীতকালের সমতল ভূমিতে আসে। এরা পাহাড়ের গায়ে, গুহায়, গর্তে, উঁচু গাছের ডালে বাড়ির কার্নিশে চাক বাঁধে। সাধারণত চাক থেকে প্রতিবছরে ১৫ থেকে ২৭ কেজি মধু পাওয়া যায়। তবে এ মৌমাছি খুব হিংস্র প্রকৃতির হওয়ায় সহজে এদের পোষ মানানো যায় না।
Apis florea : এরা ক্ষুদে মৌমাছি নামে পরিচিত। এরা লম্বায় দুই থেকে পাঁচ মিলিমিটার হয়। এ মৌমাছি সমতল এলাকায় থাকে। গাছের ডালে, দেয়ালের ফাটলে ও গর্তে থাকে। এরা গাছের উঁচু ডালে ঘরের বারান্দায় চাক বাঁধে। এদের চাক থেকে প্রতি বছরের ৪৫ থেকে ৫০ কেজি মধু উৎপাদিত হয়। এরা দংশন করে না। সহজেই এদের পোষ মানানো যায় তবে চাষ করা লাভজনক নয়।
Trigona fuscobaltiata : এরাও ক্ষুদে মৌমাছি। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩.৪ মিলিমিটার হয়। পাহাড়ি এলাকায় গাছের ফাঁকে, দেয়ালের ফাটলে বাস করে। এরা Apis florea -র মতো মধু উৎপাদন করে।
Apis mellifera : এদের ইউরোপীয় মৌমাছি বলা হয়। এরা ছোট, সহজেই পোষ মানানো যায়। বছরে একটি চাক হতে ৪৫ থেকে ১৮০ কেজি মধু উৎপাদিত হয়।
Apis adamson : এদের আফ্রিকান মৌমাছি বলা হয়। এরা মাঝারি আকৃতির হয়। বছরে একটি চাক হতে ৪.৫ কেজি মধু উৎপাদিত হয়।
মৌমাছি চাষ পদ্ধতি
আদিম যুগ থেকে মানুষ মধুর গুণাগুণ সম্পর্কে অবগত আছে। মৌমাছি পালন বা চাষে মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করছে।
সাধারণ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে মৌচাক তৈরি হলে আগুন দিয়ে মৌমাছির নিধন করে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক। এর ফলে অনেক মৌমাছি মারা যায়। ফলে নতুন চাক তৈরি করতে পারে না।
আধুনিক পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মৌমাছি চাষ ও মধু সংগ্রহ করা হয়। বিজ্ঞানী ল্যাংস্ট্রথ ১৯৫১ সালে এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এ পদ্ধতিতে মৌমাছি পালনের জন্য কৃত্রিমভাবে কাঠের তৈরি একটি বাক্স থাকে। এতে বিভিন্ন স্তরের মৌচাকে মধু তৈরি হয় ও সংগ্রহ করা হয়। ল্যাংস্ট্রেথ মৌচাকের জন্য যে বাক্স আবিষ্কার করেন সেই বাক্সকে ল্যাংস্ট্রথ বাক্স বলা হয়। এ বাক্সে নিম্নলিখিত অংশ থাকে। যেমন-
- স্ট্যান্ড
- তলার বোর্ড
- অপত্য প্রকোষ্ঠ
- মধু প্রকোষ্ঠ
- অন্তঃ ঢাকনা
- ঊর্ধ্ব ঢাকনা
স্ট্যান্ড : চার পায়া যুক্ত ফ্রমকে স্ট্যান্ড বলা হয়। ফ্রেমটি কাঠের তৈরি, এতে দূর থেকে আশা কর্মী মৌমাছিরা বিশ্রাম নিতে পারে।
তলার বোর্ড : এটি এক টুকরা কাঠ দ্বারা তৈরি পাটাতন যা স্ট্যান্ড এর উপর ভালোভাবে আটকে থাকে।
অপত্য প্রকোষ্ঠ : এটি একটি আয়তকার কাঠের বাক্স। এতে ডিম, লার্ভা, পিউপা পর্যায়ে শ্রমিক, পুরুষ ও রাণী মৌমাছির থাকার প্রকোষ্ঠের চাক থাকে। রাণী কোষে রাণী মৌমাছি থাকে ও ডিম পাড়ে।
মধু কক্ষ : এ প্রকোষ্ঠের চাক গুলোতে মৌমাছিরা শুধু মধু ও পরাগ জমিয়ে রাখে। এই কক্ষে কাঠের ফ্রেমের চাক তুলে ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের মাধ্যমে মধু নিষ্কাশন করা হয়।
অন্তঃ ঢাকনা : মধু কক্ষের উপরের ঢাকনা হচ্ছে অন্ত বা Inner cover. এটি মধু কক্ষের উপরে স্থাপন করা হয়। এখানে আলো বাতাস প্রবেশের জন্য ছিদ্র থাকে।
ঊর্ধ্ব ঢাকনা : Inner cover টির উপর একটি ঊর্ধ্ব ঢাকনা থাকে। এটি হচ্ছে মৌমাছিদের কলোনি বাড়ির ছাদ। এটি টিনের তৈরি, রোদ বৃষ্টি থেকে মৌ-বাক্সকে রক্ষা করে।
মধু নিষ্কাশন ও মধু নিষ্কাশন যন্ত্র
মধু নিষ্কাশন যন্ত্র : একটি ড্রামের মধ্যে জালের খাঁচা বসিয়ে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়। খাঁচার কেন্দ্রে একটি লোহার খাড়া দণ্ড থাকে। দণ্ডটির মাথায় একটি চাকা থাকে। চাকাতে একটি হাতল থাকে। ড্রামের তলদেশে কেন্দ্রস্থলে একটি কল থাকে যা দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হয়। নিম্নে মধু নিষ্কাশন যন্ত্র এর চিত্র দেওয়া হলো-
মধু নিষ্কাশন : মৌচাকে মধু পূর্ণ হলে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মধু নিষ্কাশন করা হয়। এতে মধুর সাথে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মিশ্রিত হতে পারে না। মধু কক্ষের মধু কুঠুরির পাতলা মোমের ঢাকনি ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে নিতে হয়। ফ্রেমগুলি মধু কক্ষ থেকে সরিয়ে ব্রাশ দিয়ে মৌমাছি যুক্ত করতে হয়। এরপর চাকসহ ফ্রেম গুলোকে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের খাঁচার জালের উপর রাখা হয়। এরপর হাতল ঘুরিয়ে মধু নিষ্কাশন করা হয়।
বিশুদ্ধ মধু কিভাবে পাওয়া যায়
মধু প্রক্রিয়াজাত করলে এদের বাণিজ্যিক চাহিদা বাড়ে। দেশীয় বা সাধারণত ভাবে মধু নিষ্কাশন করলে সেই মধু বিশুদ্ধ হয় না, তবে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে মধু উৎপাদন ও নিষ্কাশন করলে বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়।
মধু নিষ্কাশন যন্ত্র পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে মধু সংগ্রহ করলে বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়। এরপর বিশুদ্ধ মধু বোতলে ভরে নিয়ে ছিপি দিয়ে মুখ বন্ধ করলে মধু ভাল থাকে। এরপর লেবেল আটকিয়ে মধুকে বাজারজাত করতে হয়। মধু খাওয়া ছাড়াও আরও অনেক ভাবে ব্যবহার করা হয়।
মধু কি
মৌমাছি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকার ফুলের রস মৌমাছির লালা নিঃসৃত বিভিন্ন উৎসেচক, জীবাণুনাশক বিভিন্ন ধরনের পদার্থের মিশ্রণে উৎপন্ন পদার্থই হচ্ছে মধু। এ মধু মৌমাছি মধু প্রকোষ্ঠের কুঠুরিতে উদগীরণ করে। এ উদগীরিত ঘন তরল পদার্থই মধু।
মৌমাছির বাসা বা চাক
সাধারণত ডালের নিচে, ঘরের চালের নিচে, পাকা জায়গায় চাক তৈরি করে থাকে। মৌমাছির প্রতিটি বাসা অনেকগুলো চাকের সমষ্টি এ চাকগুলো একটির সাথে আরেকটি সমান্তরাল ভাবে অবস্থান করে। এ চাকগুলোকে মৌচাক বলে। কর্মী মৌমাছিদের দ্বারা তৈরি কুঠুরি বা প্রকোষ্ঠকেই মৌচাক বলা হয়।
আরও পড়ুন মেয়েদের ওজন কমানোর উপায়
কর্মী মৌমাছিদের উদর নিঃসৃত মোম গ্রন্থি হতে নিঃসৃত মোম দ্বারা চাক তৈরি করে। চাকের প্রকোষ্ঠ ষড়ভুজাকার হয়। তবে কখনও কখনও গোলাকার হয়। কর্মীরা তাদের প্রয়োজনে মৌচাক বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারে। একটি মৌচাকে এরকম বিভিন্ন ধরনের কুঠুরি বা প্রকোষ্ঠ রয়েছে। মৌচাকের কুঠুরির কার্যভেদে বিভিন্ন প্রকার কুঠুরি দেখা যায়।
মৌচাক থেকে মোম উৎপাদন
মৌচাক থেকে মোম উৎপাদন করা হয়। কর্মী মৌমাছিদের উদরের শেষ চার খণ্ডের মোম গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস মৌমাছির মুখ নিঃসৃত বস্তুর সাথে মিশে নরম সূক্ষ্ম পদার্থ সৃষ্টি হয় তা-ই মোম নামে পরিচিত। এ মোম দিয়ে কর্মী মৌমাছিরা মৌচাক তৈরি করে। মোমের রং বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে যেমন – সাদা, হলুদ, গোলাপি, ধূসর।
মৌমাছি কিভাবে মধু তৈরি করে
মৌচাকের কর্মী মৌমাছিরা ফুলের রস সংগ্রহ করে সেই রস লালা রসের সাথে মিশিয়ে মধু থলিতে করে মৌচাকে নিয়ে আসে। এরপর বিশেষ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মধুতে পরিণত করে। অন্যান্য কর্মী মৌমাছিরা মধুর জলীয় অংশ বাষ্পীভবন করে ঘন করে। সংগৃহীত ফুলের রসে ৪০% থেকে ৮০% জলীয় অংশ থাকে।
পরে তা ১৮ থেকে ২০% এ হয়, মৌচাকের কর্মী মৌমাছিরা এ বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এরা তাদের ডানাগুলোকে প্রতি মিনিটে প্রায় ২৬,৫০০ বার কম্পন সৃষ্টি করে। এভাবে মৌচাকে অতিরিক্ত বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি করে শুকিয়ে ফেলে। এভাবে খাঁটি মধু তৈরি হবার পর এগুলোকে চাকে জমা রাখে এবং মোম দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেয়।
এক হিসাবে দেখা গেছে এক পাউন্ড মধু তৈরি করতে একটি শ্রমিক মৌমাছির ৪৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার বার আসা যাওয়া করতে হয় এবং এতে বেশি সংখ্যক ফুল ঘুরতে বিচরণ করতে হয়। এক পাউন্ড মধু তৈরি করতে একটি শ্রমিক মৌমাছিকে পৃথিবীর চতুর্দিকে দু’বার প্রদক্ষিণ করার দূরত্বের সমান অতিক্রম করতে হয়।
মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন
আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিষ্কাশন মধু বিশুদ্ধ হয়। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি মধু বিশুদ্ধ হয় না। এতে ময়লা, মোমের অংশ লার্ভার দেহ লেগে থাকতে পারে। এর গুণগত মান কম থাকে। এছাড়া মৌমাছি যখন পর্যাপ্ত ফুল পায় না তখন যে কোন ফুল থেকে মৌ রস সংগ্রহ করে থাকে ফলে যে মধু তৈরি হয় তার গুণগত মান ও পুষ্টি কমে যায়। তাই মধু প্রক্রিয়াজাতকরণে চারণভূমি ও যথার্থ ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
মধু প্রক্রিয়াজাতকরণে মধু সংগ্রহের সময় মধু নিষ্কাশন যন্ত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিষ্কার করে শুকিয়ে মধু নিষ্কাশন করতে হবে। মধু নিষ্কাশনের সময় অবশ্যই মধু কাচের পাত্রে সংগ্রহ করতে হবে তাহলে বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়, এতে মধুও ভালো থাকে।
মধু নিষ্কাশনের পর অনেক সময় মধুতে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক জন্ম নিতে পারে তখন একটি পাত্রে পানি রেখে পঞ্চাশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করে ওই পাত্রের উপর মধু-পাত্র রেখে উত্তপ্ত করতে হবে। এরপর ঠাণ্ডা হলে কাচের বোতলে ভরে নিয়ে সিলগালা করতে হবে। এরপরে মুখ ভালো করে আটকে এতে লেবেল আটকাতে হবে এবং বাজারজাতকরণ করতে হবে।
বিশুদ্ধ মধু ক্রয়ের জন্য জনসাধারণকে অবগত করতে হবে। এর দাম কমাতে হবে যাতে বাজার সৃষ্টি করতে পারে। খুচরা, পাইকারী ও হোলসেল এর মাধ্যমে এর বাজারজাতকরণ করতে পারেন। বোতলের লেবেল তথ্য বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করতে হবে তাহলে ক্রেতারা উদ্বুদ্ধ হবে।
এছাড়া মধু উৎপাদনে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সহযোগিতা করলে এ খাতে উন্নত হবে এবং এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে, বেকার সমস্যাও দূর হবে।
মৌমাছি চাষ পদ্ধতি এবং মধু নিষ্কাশন ও মধু নিষ্কাশন যন্ত্র – লেখকের মন্তব্য
মৌমাছি চাষের জন্য বাংলাদেশের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। তাই বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধানে মৌমাছি চাষের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের মতো মৌমাছি পালনে প্রচুর অর্থ উপার্জন হয়। বাংলাদেশে মৌ পালন ইন্সটিটিউট মৌ চাষিদের মৌমাছি চাষের বা পালনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের খুলনায় ও সুন্দরবনে মৌ-চাষ কয়েকশ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করছে। মৌমাছির চাষ করতে গেলে মৌমাছির জীবন ইতিহাস সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে। তবে মৌমাছি পালনে নানাবিধ সমস্যা সম্বন্ধে পালনকারীকে সচেষ্ট হতে হবে।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা জেনেছি মধু কি, মৌমাছি চাষ পদ্ধতি, মধু নিষ্কাশন ও মধু নিষ্কাশন যন্ত্র, বিশুদ্ধ মধু কিভাবে পাওয়া যায়, মৌমাছি কিভাবে মধু তৈরি করে, মৌমাছির বাসা বা চাক সম্পর্কে, মৌচাক থেকে মোম উৎপাদন কিভাবে হয় এবং বিশুদ্ধ মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন সম্পর্কে।