মাশরুম চাষ পদ্ধতিপ্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই মাশরুম এর উপকারিতা ও অপকারিতা, মাশরুম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান।
আজকে আমরা মাশরুম এর অপকারিতা ও গুণাগুণের পাশাপাশি গ্যানোডার্মা মাশরুম এর উপকারিতা, মাশরুম কত টাকা কেজি, মাশরুম পাউডার কোথায় পাওয়া যায় এবং মাশরুম পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে তুলে ধরব।
ভূমিকা
আমরা সবাই মাশরুম চিনি। এটি সবজি হিসেবে অনেক জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর। মাশরুম এর উপকারিতা রয়েছে। গবেষকরা মাশরুম যেন দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে সে বিষয়ে গবেষণা করছেন।
মাশরুম এর উপকারিতা
মাশরুম খাওয়া হালাল। এটি সবজি হিসেবে অত্যন্ত সুস্বাদু। চাইনা এবং জাপানসহ ইউরোপের দেশগুলোতে মাশরুম অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। মাশরুম এর উপকারিতা গুলো হলো –
- এটি শিশু এবং গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ। এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়িয়ে তোলে।
- ডায়াবেটিস কমাতে মাশরুম খুব ভালো কাজ করে। প্রতিদিন মাশরুম খাওয়ার ফলে ব্লাড সুগার কমে।
- গবেষকদের মতে মাশরুম এইডস প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে।
- অন্যান্য সবজির তুলনায় মাশরুমে অনেক বেশি ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে।
- মাশরুমে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ সময় ধরে পেট ভরা রাখে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- যেসব মাশরুম চাষ করতে রোদের তাপ প্রয়োজন হয়, সেসব মাশরুমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
- মাশরুমের রস থেকে খুশকি দূর করার এবং প্রতিরোধ করার ঔষধ বানানো হয়।
- মাশরুমে অনেক ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। যা শিশুদের হাড় এবং দাঁত গঠন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ্যানোডার্মা মাশরুম এর উপকারিতা
গ্যানোডার্মা মাশরুমকে ঋষি মাশরুম বা লাল মাশরুমও বলা হয়। পূর্বে আলোচনা করেছি এ মাশরুমে কে ঔষধের রাজা বলা হয়। কেননা এই মাশরুম সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গ্যানোডার্মা মাশরুম এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এই মাশরুমের কিছু বড় বড় উপকারিতা গুলো নিচে তুলে ধরা হলো –
- বয়স ধরে রাখে।
- প্রেসার স্বাভাবিক রাখে।
- এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং হার্টের সমস্যা দূর করে।
- টিউমার জনিত সমস্যা দূর করে।
- ডেঙ্গু জ্বর দ্রুত ভালো হতে সহায়তা করে।
- কিডনির সমস্যা দূর করে এবং ভালো রাখে।
- এই মাশরুম আমাশয় রোগ সারাতে সাহায্য করে।
- এই মাশরুম জন্ডিস রোগ প্রতিরোধ করে।
- লাল মাশরুম শরীরের সকল ধরনের চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। গ্যানোডার্মা মাশরুমের এরকম মোট ৪০০ টি গুণাগুণ রয়েছে। এই মাশরুমটি পাউডার আকারে পাওয়া যায়।
- গ্যানোডার্মা বা লাল মাশরুম শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে, এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ পেশাব এবং ঘামের মাধ্যমে বের করে দেয়। যার ফলে শরীরে কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে না। আর শরীর যে কোন প্রকার রোগ থেকে মুক্তি পায়।
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম
বিভিন্ন উপায়ে মাশরুম খাওয়া যায়। বর্তমানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে মাশরুমের স্যুপ পাওয়া যায়। এটি বিভিন্ন সালাদ এবং সবজিতে ব্যবহার করা হয়। মাশরুম নুডুলস এবং তরকারিতে ব্যবহার করলে খেতে অনেক মজাদার হয়।
বর্তমানে বিভিন্ন দোকানপাটে মাশরুমের চপ পাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত মজাদার এবং এটি বাড়িতে সহজেই তৈরি করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন সব মাশরুম কিন্তু খাওয়া যায় না। যেসব মাশরুম খামারে বা বাড়িতে উৎপাদন করা হয় এসব মাশরুমে খাওয়ার উপযুক্ত।
মাশরুম পাউডার খাওয়ার নিয়ম
মাশরুম উৎপাদনের পর এটি রোদে শুকিয়ে তারপর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মাশরুম পাউডার বানানো হয়। সঠিক নিয়মে মাশরুম পাউডার খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
৫০০ মিলি পানিতে আমাদের বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত চামচের আকারে এক চামচ মাশরুম পাউডার দুই থেকে তিন মিনিট পর্যন্ত ভালোভাবে গুলিয়ে নিতে হবে। এরপর এটি পান করতে পারেন। এছাড়া যে কোনো তরকারিতে, চা অথবা কফির সাথে মাশরুমের গুড়া বা পাউডার খেতে পারেন।
মাশরুম পাউডার কোথায় পাওয়া যায়
বিভিন্ন জাতের মাশরুম এর পাউডার বাজারে পাওয়া যায়। অথবা বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে খোঁজাখুঁজি করলে সহজেই মাশরুম পাউডার পাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের কাছে সবচেয়ে উপকারী মাশরুম গ্যানোডার্মা মাশরুমের পাউডার সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার করতে পারবেন।
মাশরুম কত টাকা কেজি
বর্তমান বাজারে মাশরুম একটি দামি এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। বাজারে সর্বনিম্ন দামের ওয়েস্টার মাশরুম পাওয়া যায় আড়াইশো থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। এবং সর্বোচ্চ দামের ঋষি বা গ্যানোডার্মা মাশরুম ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় এর পাউডার পাওয়া যায়।
মাশরুম এর অপকারিতা
মাশরুমের শুধু উপকারিতা জানলেই চলবে না। মাশরুম এর অপকারিতাও রয়েছে। চলুন জেনে নেই মাশরুমের অপকারিতা – পৃথিবীতে যত মাশরুম রয়েছে তার বেশির ভাগই খাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক উপায়ে যেসব মাশরুম জন্মায় সেগুলোকে আমরা ছত্রাক বা ব্যাঙের ছাতা বলে থাকি। এসব মাশরুম অত্যন্ত বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর।
এসব মাশরুম খেলে সহজেই মৃত্যু হতে পারে যে কোন প্রাণীর। এসব মাশরুমে স্পর্শ করলে হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। এছাড়া এসব মাশরুম কাঠ, খড়, বাঁশ ইত্যাদির অনেক ক্ষতি করে থাকে। এসব মাশরুম পঁচা কাঠে জন্মায়।
বিষাক্ত মাশরুম চেনার আরও উপায় হলো এরা কিছুটা রঙিন বর্ণের হয় এবং প্রচণ্ড রোদে এরা জন্মাতে পারেনা। এসব মাশরুম থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। যেসব স্থানে এসব মাশরুম জন্মায় সেসব স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং এই মাশরুমগুলো ধ্বংস করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য : মাশরুম এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
১৯৬৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিটি ক্যান্সার গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে নিয়মিত মাত্র ১৮ গ্রাম মাশরুম খেলে ৪৫% ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও মাশরুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমরা পূর্বে জেনেছি।
কিছু ক্ষেত্রে মাশরুম এর অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক থাকার কারণে এটি গ্রহণের আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সম্মানিত পাঠক, আমরা জানলাম মাশরুম এর উপকারিতা ও অপকারিতা, মাশরুম খাওয়ার নিয়ম এবং গ্যানোডার্মা মাশরুম এর উপকারিতা সম্পর্কে।