ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বিস্তারিত জানুন

কিডনি ভালো আছে কিনা জানুনসম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় এবং ডায়াবেটিস কত হলে ঔষধ খেতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
উপরোক্ত বিষয়গুলো সহ ডায়াবেটিস রোগী কত দিন বাঁচে এবং ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় সে সম্পর্কেও আপনাকে জানাব। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়ুন।

ভূমিকা

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা। শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা তৈরি হলে ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টি হয়। শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন না হলে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীকে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করতে হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীর চর্চা করা, ঔষধ বা ইনসুলিন ব্যবহার এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়মিত পরীক্ষা করা খুবই প্রয়োজন। তা না হলে বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, চোখের সমস্যা এবং স্নায়ুতন্ত্রের অনেক ক্ষতি হতে পারে। চলুন আমরা শুরুতে জেনে নেই ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল।

ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ভরা পেটে (খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর) রক্তের গ্লুকোজ স্তরের মানদণ্ড বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। কারণ এটির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, খাবার খাওয়ার পর গ্লুকোজ কতটা কার্যকর ভাবে প্রক্রিয়া করতে পারে। ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা অনেকেই জানতে চান।
ভরা পেটে অর্থাৎ খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর রক্তের গ্লুকোজের স্তর যদি ৭.৮ মিমোল/লিটার (১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) এর কম থাকে, তাহলে এটি নরমাল হিসেবে ধরা হয়। ডায়াবেটিস নির্ণয় এবং চিকিৎসা করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। আশা করি বুঝতে পেরেছেন ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল ধরা হয়।

দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তবে তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে দ্রুত রক্তের গ্লুকোজ স্তর কমানো সম্ভব হতে পারে। নিচে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলো দেওয়া হল:
১. খাদ‍্যাভ‍্যাস পরিবর্তন: শর্করা যুক্ত খাবার না খাওয়ার মাধ্যমে দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেসব খাবার প্রক্রিয়াজাত করা সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন কেক, পেস্ট্রি, কোমল পানীয় ইত্যাদি। প্রতিদিন অল্প করে ঘন ঘন খাবার খান। এটি রক্তের গ্লুকোজ স্তর নরমাল রাখতে সহায়তা করতে পারে।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, সাঁতার বা সাইক্লিং এর মতো ব্যায়াম অনেক উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীকে নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। বিশেষ করে ওজন তোলার ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান: পর্যাপ্ত পানি পান রক্তের গ্লুকোজ স্তর নরমাল রাখার জন্য সহায়ক। এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হরমোন উৎপন্ন হতে ব্যাঘাত ঘটে এবং রক্তের গ্লুকোজ স্তর বেড়ে যায়। এজন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
৫. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: আপনাকে সব সময় টেনশন মুক্ত থাকতে হবে অর্থাৎ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন, এতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং অন্যান্য রিলাক্সেশন পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

ডায়াবেটিস কত হলে ঔষধ খেতে হবে

আনেকেই জানেন না যে, ডায়াবেটিস কত হলে ঔষধ খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীকে ঔষধ খাওয়ানো সাধারণত রক্তের শর্করার মাত্রা, রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং অন্যান্য শারীরিক ঝুঁকির উপর নির্ভর করে। ডায়াবেটিস কত হলে ঔষধ খেতে হবে তা নিম্নে বর্ণনা দেওয়া হল:
  • খালি পেটে রক্তের শর্করার মাত্রা ১২৬ mg/dl বা তার বেশি হলে।
  • খাবার খাওয়ার পর রক্তের শর্করার মাত্রা ২০০ mg/dl বা এর বেশি হলে ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
  • হিমোগ্লোবিন A1c ৬.৫ বা এর বেশি হলে ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
See also  বায়োমিল ১, বায়োমিল ২, বায়োমিল ৩ বানানোর নিয়ম ও খাওয়ার নিয়ম
ডায়াবেটিস নির্ণয়ের পর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ খেতে হবে। তবে শুরুতে আপনাকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন সহ বিভিন্ন মাধ্যমে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি আপনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন তাহলে আপনাকে ঔষধ বা ইনসুলিন থেরাপি নিতে হবে। তবে মনে রাখবেন, চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগী কত দিন বাঁচে

ডায়াবেটিস রোগী কত দিন বাঁচে, এমন প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। মূলত এটি নির্ভর করে ডায়াবেটিসের ধরণ, রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণ এর মাত্রা এবং রোগীর অন্যান্য জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার উপর। যদি আপনার টাইপ ১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তাহলে ইনসুলিন থেরাপি নিতে হয়।
আর যদি আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয় তাহলে জীবনধারা পাল্টানোর মাধ্যমে এবং ঔষধ সেবনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনকাল বাড়ানো সম্ভব হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস নেই, প্রায় তাদের মতোই জীবনকাল পেয়ে থাকেন যারা ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। 
ডায়াবেটিসের সাথে হার্টের সমস্যা, হাই প্রেশার, কিডনির সমস্যা সহ জটিল কোন রোগ থাকলে রোগীর জীবনকাল কমে যেতে পারে। বর্তমানে টাইপ ১ রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনকাল বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা যায়। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া যায় যে, ডায়াবেটিস রোগী কত দিন বাঁচে।

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

মানুষের ডায়াবেটিস প্রায় ৪০ এমজি/ডিএল এর নিচে এবং ৪০০ এমজি/ডিএল এর উপরে উঠলে রোগী মুহূর্তেই মারা যেতে পারে। ডায়াবেটিস সাধারণত সরাসরি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় না। বরং এটি রোগীর বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার মধ্যে ঠেলে দেয়। বিভিন্ন অঙ্গ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং কার্যক্ষমতা হারায়। যার ফলে রোগী মৃত্যুর দিকে পতিত হয়।
বিশেষ করে ডায়াবেটিসে দীর্ঘদিন আক্রান্ত থাকলে কিডনি এবং হার্ট অচল হয়ে পড়ে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা হলে পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে তখন রোগী মারা যায়। এরকম অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। তবে ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় তা সঠিকভাবে বলা যায় না।

লেখকের মন্তব্য: ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডায়াবেটিস নিয়মিত পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ডায়াবেটিস রোগীকে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার যতগুলো পদক্ষেপ রয়েছে সকল পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ডায়াবেটিস রোগীর জন্য।
প্রিয় পাঠক, আমাদের সব সময় সচেতন হতে হবে ডায়াবেটিস রোগ যেন আমাদের আক্রমণ করতে না পারে। আর যাদের ডায়াবেটিস রোগ রয়েছে তারা অবশ্যই নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। আপনাকে আজকে জানিয়ে দিলাম ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সে সম্পর্কে। এই আর্টিকেলটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের উপকারের জন্য শেয়ার করবেন।

Leave a Comment