মিলো পাউডারের উপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাকে বায়োমিল ১ খাওয়ার নিয়ম, বায়োমিল ১ বানানোর নিয়ম, বায়োমিল ১ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বায়োমিল ১ এর দাম কত, বায়োমিল ২ খাওয়ার নিয়ম, বায়োমিল ২ বানানোর নিয়ম, বায়োমিল ২ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বায়োমিল ২ এর দাম কত সে সম্পর্কে জানাব।
এছাড়াও আমরা বায়োমিল ৩ খাওয়ার নিয়ম, বায়োমিল ৩ বানানোর নিয়ম, বায়োমিল ৩ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং বায়োমিল ৩ এর দাম কত তা আপনাকে বিস্তারিত জানাব। আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার শিশুর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, তাই শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। শিশুর মায়ের দুধ শিশুর প্রধান খাদ্য হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সময় শিশুর অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে যখন মায়ের বুকের দুধ শিশু পায় না তখন পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি দেখা দেয়।
বাচ্চাদের এই পুষ্টির চাহিদা মেটাতে বায়োমিল ১, ২ ও ৩ সহায়তা করতে পারে। এটি একধরনের গুঁড়া দুধ। মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে আপনি বায়োমিল খাওয়াতে পারেন। এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। চলুন বায়োমিল খাওয়ার নিয়ম এবং বায়োমিল বানানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
বায়োমিল ১ বানানোর নিয়ম
আপনার বাচ্চার জন্য বায়োমিল ১ বানানোর সঠিক নিয়ম জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়োমিল ১ সাধারণত শূন্য থেকে ছয় মাস বয়স এর শিশুকে খাওয়ানো হয়। বায়োমিল ১ বানানোর নিয়ম নিচে দেওয়া হল:
যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা হল:
- বায়োমিল ১ গুঁড়া দুধ
- ফোটানো বিশুদ্ধ পানি (পানি অবশ্যই ঠাণ্ডা করে নিবেন)
- প্যাকেটে থাকা মাপ চামচ
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ফিডার (ফিডারের নিপল অবশ্যই জীবাণু মুক্ত হতে হবে।
প্রস্তুত প্রণালী:
বায়োমিল ১ বানানোর আগে অবশ্যই আপনি আপনার হাত পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। শিশুর ফিডিং বোতল গরম পানিতে ৫ মিনিট রেখে দিয়ে জীবাণু মুক্ত করে নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি গরম করার পর ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিবেন।
তাপমাত্রা কমলে হালকা গরম পানি ফিডারে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ভরে নিন। তারপর প্রয়োজনমতো বায়োমিল এক গুঁড়া দুধ মেশান। প্রস্তুত হয়ে গেল শিশুর পুষ্টিকর খাবার।
বায়োমিল ১ খাওয়ার নিয়ম
বায়োমিল ১ খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে শিশুকে এটি খাওয়ানো উচিত। বায়োমিল ১ শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদেরকে খাওয়াতে হবে। সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে এবং সঠিক নিয়মে খাওয়াতে হবে। বায়োমিল ১ খাওয়ানোর নিয়ম হল:
বাচ্চার বয়স এক থেকে দুই সপ্তাহ হলে ৯০ মিলি পরিষ্কার পানিতে তিন চামচ বায়োমিল ১ ভালোভাবে মিশিয়ে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াবেন। এক থেকে দুই সপ্তাহের শিশুদের দৈনিক ৬ বার বায়োমিল ১ খাওয়াতে হবে। শিশুর বয়স যখন তিন থেকে চার সপ্তাহ হবে তখন ১২০ মিলি পানিতে চার চামচ বায়োমিল ১ মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে।
তিন থেকে চার সপ্তাহের বাচ্চাদের দৈনিক পাঁচবার এভাবে বায়োমিল ১ খাওয়াতে হবে। আপনার শিশুর বয়স যখন দুই মাস হবে তখন ১৫০ গ্রাম ফুটানো পানিতে পাঁচ চামচ বায়োমিল ১ গুড়া দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। দুই মাস বয়সী শিশুকে দৈনিক পাঁচবার এটি খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
আপনার শিশুর বয়স তিন মাস হলে ১৮০ মিলি পানিতে ছয় চামচ বায়োমিল ১ গুঁড়া দুধ ভালো ভাবে মিশিয়ে খাওয়ান। এভাবে তিন মাস বয়সের শিশুকে দৈনিক পাঁচবার খাওয়াতে হবে। চার থেকে পাঁচ মাস বয়সের শিশুকে ২১০ মিলি বিশুদ্ধ পানিতে ৭ চামচ বায়োমিল ১ গুঁড়া দুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। চার থেকে পাঁচ মাস বয়সের শিশুদের এভাবে দৈনিক পাঁচবার খাওয়াবেন।
৬ মাস বয়সের শিশুকেও ২১০ মিলি পানিতে সাত চামচ গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়াবেন দৈনিক পাঁচবার করে। খেয়াল রাখবেন আপনাকে টিনের ভেতরে দেওয়া চামচই ব্যবহার করতে হবে। কারণ এতে সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায়।
বায়োমিল ১ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বায়োমিল ১ শিশুর জন্য উপকারী হলেও কিছু শিশুর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু শিশুর জন্য এটি এলার্জির কারণ হতে পারে। অনেক সময় বায়োমিল এক খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাতলা পায়খানা হতে পারে।
আরও পড়ুন কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুর শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি খাবার মাধ্যমে পেটে ব্যথা হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বায়োমিল এক আপনার শিশুকে খাওয়াবেন।
বায়োমিল ১ এর দাম কত
বায়োমিল ১ বিভিন্ন ওজনের এবং বিভিন্ন দামের রয়েছে। ১৮০ গ্রাম বায়োমিল এক মিল্ক পাউডার এর দাম ২২৫ টাকা। ৩৫০ গ্রাম বায়োমিল বক্স এর দাম ৪৭০ টাকা। ১ কেজি বায়োমিল ১ গুঁড়া দুধের দাম ১৬৪০ টাকা। দাম সময় এবং স্থান ভেদে পরিবর্তন হতে পারে।
আবার বিভিন্ন দোকান ও অনলাইন প্লাটফর্মে বায়োমিল ১ এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এজন্য আপনি আপনার নিকটস্থ ফার্মেসিতে গিয়ে বায়োমিল ১ এর দাম জেনে নিয়ে কিনতে পারেন।
বায়োমিল ২ খাওয়ার নিয়ম
বায়োমিল ২ খাওয়ার কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। তাই সঠিক নিয়ম মেনে বায়োমিল ২ খাওয়া উচিত। শুরুতে বায়োমিল ২ বানানোর নিয়ম জানতে হবে। বায়োমিল ২ বানানোর নিয়ম বায়োমিল ১ বানানোর নিয়মেই মতোই। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে বায়োমিল ১ এর উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে। চলুন এখন বায়োমিল ২ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
আরও পড়ুন হার্ট ভালো আছে কিনা বুঝার উপায়
বায়োমিল ২ খাওয়ার নিয়ম হল: এটি সাধারণত ৬ থেকে ১২ মাস বয়সের শিশুদের খাওয়ানো হয়। প্রথমে বায়োমিল ২ খাওয়ার পাত্রটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর ২১০ মিলি পানিতে ৭ চামচ (প্যাকেটের ভেতরের চামচ অনুযায়ী) বায়োমিল ২ মিল্ক পাউডার ভালোভাবে মেশাতে হবে। এভাবে প্রতিদিন ৫ বার শিশুকে খাওয়াতে হবে।
বায়োমিল ২ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বায়োমিল খেলে বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সঠিক নিয়মে বায়োমিল না খেলে কোন উপকার পাওয়া যায় না। বরং বিভিন্ন অপকারিতা লক্ষ্য করা যেতে পারে। যেমন পেট ব্যথা, বমি হওয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এজন্য বায়োমিল ২ খাওয়ার নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে যা আমরা উপরে আলোচনা করেছি।
বায়োমিল ২ এর দাম কত
সময় এবং স্থান ভেদে বায়োমিল ২ মিল্ক পাউডারের দাম কম বেশি হতে পারে। বর্তমানে ৩৫০ গ্রাম বায়োমিল ২ এর দাম ৬০০ টাকা। আর ৪০০ গ্রাম বায়োমিল ২ এর দাম হল ৭৯৫ টাকা। আপনি আপনার নিকটস্থ দোকানেও যোগাযোগ করতে পারেন সঠিক দাম জানার জন্য।
বায়োমিল ৩ বানানোর নিয়ম
আপনার শিশু সন্তানকে বায়োমিল ৩ সঠিক নিয়মে বানিয়ে খাওয়াতে হবে। তা না হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আপনি যদি শুরুতে বায়োমিল ১ বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে বায়োমিল ৩ বানানো আপনার কাছে একদম সহজ হয়ে যাবে।
কেননা বায়োমিল ১ বানানোর নিয়ম গুলোতে যা বলা হয়েছে সেগুলো ফলো করে আপনি বায়োমিল ৩ বানিয়ে নিতে পারবেন। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক বায়োমিল ৩ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
বায়োমিল ৩ খাওয়ার নিয়ম
বায়োমিল ৩ সাধারণত ১-২ বছরের শিশুদের জন্য। চিকিৎসকরা সর্বনিম্ন এক বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ বাচ্চাকে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা মায়ের দুধ বাচ্চার জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। এরপর আপনি চাইলে বায়োমিল ৩ শিশুকে দিতে পারেন। বায়োমিল ৩ খাওয়ার নিয়ম হল:
২৫০ মিলি পানিতে বায়োমিল ৩ গুঁড়া দুধ ভালো ভাবে মেশাতে হবে। গুঁড়া দুধ যেন গোটা গোটা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এটি শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বায়োমিল ৩ নিয়মিত ৪-৫ বার আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
বায়োমিল ৩ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত বায়োমিল ৩ খাওয়ার ফলে আপনার শিশুর ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হতে পারে। তাই বায়োমিল ৩ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, আর সে অনুযায়ী নিয়ম মেনে খেতে হবে।
বায়োমিল ৩ এর দাম কত
- ৩৫০ গ্রাম বায়োমিল ৩ এর দাম ৩০০ টাকা।
- ৪০০ গ্রাম বায়োমিল ৩ এর দাম ৫২০ টাকা।
- ১ কেজি বায়োমিল ৩ এর দাম ১৩৫০ টাকা।
সময় এবং জায়গা ভেদে যে কোন সময় বায়োমিল ৩ এর দাম কমতে পারে অথবা বাড়তে পারে।
লেখকের মন্তব্য: বায়োমিল ১, বায়োমিল ২, বায়োমিল ৩ বানানোর নিয়ম ও খাওয়ার নিয়ম
বায়োমিল ১, বায়োমিল ২ ও বায়োমিল ৩ বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। বায়োমিল পাউডার মিল্ক কুসুম গরম পানিতে বানিয়ে আপনার শিশুকে খাওয়াবেন। খেয়াল রাখবেন পানি যেন অতিরিক্ত গরম না থাকে। বায়োমিল তরল দুধ তৈরি করার এক ঘণ্টার মধ্যেই আপনার বাচ্চাকে সব খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা আপনাকে জানালাম বায়োমিল ১, বায়োমিল ২, বায়োমিল ৩ বানানোর নিয়ম এবং খাওয়ার নিয়ম ও দাম সম্পর্কে। আপনার কাছে আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে এই আর্টিকেলের লিঙ্ক অবশ্যই ফেসবুকে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ।