পোলিও রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ – পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়

কলেরা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা জানুনসম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়, পোলিও রোগের লক্ষণ, পোলিও রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোলিও রোগের লক্ষণ
এছাড়াও এখানে আমরা তুলে ধরব পোলিও রোগের ইতিহাস, পোলিও রোগ কেন হয় এবং বিশ্ব ও বাংলাদেশে পোলিও এর অবস্থা।

ভূমিকা

পোলিও অতি পুরাতন একটি রোগ। সাধারণত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে এই রোগ বাহিত হয়ে থাকে। ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্মের প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে বিভিন্ন মিশরীয় শিলালিপি ও চিত্রলিপিতে পোলিও আক্রান্ত মানুষের অবশ বাহু এবং পা এর চিত্র পাওয়া যায়। ডাক্তার অস্কার মিডিয়ান নামক সুইডেনের একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ১৮১০ সালে প্রথম বিজ্ঞান সম্মত-ভাবে পোলিও রোগের ধারণা দেন। 
তাঁর মতে এ রোগের শুরু হয় জ্বরের মাধ্যমে এবং সমাপ্তি ঘটে পক্ষাঘাতের মাধ্যমে। ১৮৪০ সালে জ্যাকব ভন হেইন নামক জার্মান পক্ষাঘাত চিকিৎসক পোলিও রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেন এবং আক্রান্ত রোগীর মেরু-রজ্জুর নির্দিষ্ট এলাকায় তা সনাক্ত করতে সক্ষম হন। কার্ল-ল‍্যান্ডস্টেইনার এবং পপার নামক বিজ্ঞানীদ্বয় ১৯০৮ সালে যৌথভাবে পোলিও রোগ বানরের দেহে স্থানান্তর করতে সমর্থ হন। 
বিজ্ঞানী ইনডার্স, উইলার এবং রবিন্স ১৯৪৯ সালে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, পোলিও ভাইরাসকে পরীক্ষাগারে জন্মানো সম্ভব। পরীক্ষাগারে জন্মানো সম্ভব বলেই টিকা আবিষ্কারের পথ অনেকটাই সুগম হয়েছিল। ১৯৫২ সালে D. Bordian পোলিও ভাইরাসের তিনটি সেরোলজিক্যাল টাইপ সনাক্ত করেন।

পোলিও রোগ কেন হয়

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, পোলিও রোগের জীবাণু একটি ভাইরাস। এ ভাইরাসের নাম পোলিও ভাইরাস (Polio Virus)। পোলিও ভাইরাসকে Picorna virus বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ হল অতি ক্ষুদ্র আর এন এ (RNA) যুক্ত ভাইরাস। এই ভাইরাসের আক্রমণেই পোলিও রোগ হয়ে থাকে। এই ভাইরাস গোলাকৃতির।

পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়

পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায় : দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু মুখ পথে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সেখান থেকে অন্ত্রে এ ভাইরাস প্রবেশ ও অবস্থান করে। পাঁচটি F- যেমন Finger, Faeces, Flies, Fomites ও Fluid প্রভৃতির সাহায্যে পোলিও ভাইরাস বিস্তার লাভ করে বলে ধরে নেয়া হয়ে থাকে। অন্ত্রে, টনসিলের মিউকোসা এবং লিম্ফ টিস্যুতে ভাইরাস সংখ্যা বৃদ্ধি করে। 
পরবর্তীতে লিম্ফনোডে পৌঁছায় এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভাইরাস লিম্ফ প্রবাহ তন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। এ অবস্থায় প্রায় সাত দিন সুপ্তাবস্থা চলার পর রোগীর দেহে জ্বর আসে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর দেহে জ্বরের পরিবর্তে একটু ভালো লাগা অনুভব হয়। এ সময়ের মধ্যে ভাইরাস চুপিসারে রোগীর স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে। 
রোগী ধীরে ধীরে (প্রায় ৫ দিন) মৃদু অসুস্থতা অনুভব করতে থাকে। এর পরবর্তী প্রায় তিন দিনে কোন প্রকার রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ডাক্তার এবং রোগী উভয়কেই প্রায় ফাঁকি দিয়ে হঠাৎ করে তীব্র অসুস্থ হয়ে পরে এবং রোগীর মেরুরজ্জু সংক্রামিত হয়ে সকলের অগোচরে রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত (Paralysed) হয়ে পরে।

পোলিও রোগের লক্ষণ

পোলিও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত পোলিও রোগের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়-
  • প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর জ্বর হয় সেই সাথে বমি বমি ভাব ও বমি হয়।
  • রোগীর মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্ষুধামান্দ‍্য দেখা দেয়।
  • প্রথমবার জ্বর আসার পর জ্বর সেরে যায় এবং রোগী ভালো অনুভব করে। তিন থেকে পাঁচ দিন পর আবার হঠাৎ করে প্রচণ্ড জ্বর আসে এবং রোগী অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পরে।
  • স্নায়ুরজ্জু এবং স্নায়ু কোষ সংক্রমণের ফলে রোগীর পক্ষাঘাত ঘটে এবং হাত-পা অবশ হয়ে যায়।
  • তীব্র আক্রমণে রোগী বিকলাঙ্গ হয়ে পরে।
  • ভালোভাবে পোলিও দেখা দিলে আলা-জিহ্বা গলনালি ও শ্বাসনালীর অবসন্নতা দেখা দেয়।
See also  কিশোরীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম (উপকারিতা ও অপকারিতা)

বিশ্ব ও বাংলাদেশে পোলিও এর অবস্থা

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে পোলিও প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে এর ভয়াবহতা এখনো রয়েছে। প্রতি ১,০০০ শিশুর মধ্যে ৪ জন শিশুর পোলিও রোগ হয়। সাধারণত ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে পোলিও এর আক্রমণ ঘটে থাকে। দারিদ্র, অশিক্ষা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ পলিও-এর জন্য দায়ী।

পোলিও রোগের প্রতিরোধ

ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে পোলিও রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশ্ব পোলিও নির্মূলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার পোলিও রোগের প্রতিরোধে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের দুই বছর অন্তর অন্তর পোলিও টিকা অবশ্যই খাওয়ানো উচিত।
মুখে খাওয়ানোর এ পোলিও টিকা উল্লিখিত তিন প্রকার পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধেই কার্যকর। পোলিও ভ্যাকসিন দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-

মৃত জীবাণুর ভ‍্যাকসিন : এ প্রকার ভ্যাকসিনের জীবাণু বানরের কিডনির টিস্যুতে কালচার করে ফরমালডিহাইড ট্রিটমেন্টের সাহায্যে সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। পরে অনেকগুলো পরীক্ষার পর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জীবন্ত ও পরিবর্তিত জীবাণু ভ্যাকসিন : এ প্রকার ভ‍্যাকসিন জীবন্ত এটেনিউটেড ভাইরাস থেকে তৈরি। চিনির দ্রবণে তিন ফোঁটা করে এ ভ্যাকসিন মুখে খাওয়াতে হয়।

উপসংহার : পোলিও রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ – পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়

বর্তমানে শিশুদের প্রয়োজনীয় পোলিও টিকার ডোজ খাওয়ানোর পরও পোলিও রোগ পরিলক্ষিত হওয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতি বছর পোলিও টিকা পুনরায় খাওয়ানো হচ্ছে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যদি পোলিও এর আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়, তবে রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রামসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি দিতে হয়।
সম্মানিত পাঠক, আমরা জানলাম পোলিও রোগ কেন হয়, পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়, পোলিও রোগের লক্ষণ, বিশ্ব ও বাংলাদেশে পোলিও এর অবস্থা, পোলিও রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে।

Leave a Comment