সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আজকে আমরা পিচ ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, পিচ ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।
পিচ ফলের উপকারিতা ও পিচ ফলের অপকারিতা সহ পিচ ফল খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় পিচ ফল খাওয়ার উপকারিতা, ত্বকের যত্নে পিচ ফলের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব।
ভূমিকা
পিচ ফল একটি বিদেশি ফল। এটি চীন দেশের ফল। বিদেশি এই ফলে প্রচুর ভিটামিন, সেই সাথে প্রয়োজনীয় খনিজ পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় পিচ ফলের উপকারিতা রয়েছে। এই ফল আমাদের ত্বকেরও অনেক উপকার করে। তাই রূপচর্চায় পিচ ফল ব্যবহার করতে পারেন।
এসব উপকারিতা গুলো জানার পাশাপাশি পিচ ফলের অপকারিতাও জানতে হবে। কেননা বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশের পিচ ফল দেখা যাচ্ছে। অনেক এলাকায় এটি চাষও করা হচ্ছে। তাই অনেক মানুষই এই লোভনীয় ফলটি দেখলেই খেয়ে ফেলেন, এর অপকারী দিক না জানার কারণে। চলুন পিচ ফল সম্পর্কিত সকল বিষয়ে পর্যায়ক্রমে জেনে নেওয়া যাক।
পিচ ফলের পুষ্টিগুণ
একটি ছোট পিচ ফল (২.৫ ইঞ্চি ব্যাস, ১৩০ গ্রাম) ৫১ ক্যালোরি, ১.২ গ্রাম প্রোটিন, ১২.৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ০.৩ গ্রাম ফ্যাট সরবরাহ করে। পিচ ফল ভিটামিন সি, ফাইবার এবং ভিটামিন এ এর একটি চমৎকার উৎস। পিচ ফলের পুষ্টিগুণ নিচে দেওয়া হল –
- ক্যালোরি – ৫১ গ্রাম
- চর্বি – ০.৩ গ্রাম
- সোডিয়াম – ০ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট – ১২.৪ গ্রাম
- ফাইবার – ১.৯ গ্রাম
- চিনি – ১০.৯ গ্রাম
- প্রোটিন – ১.২ গ্রাম
- ভিটামিন এ – ২০.৮ mcg
- ভিটামিন সি – ৮.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই – ০.৯ মিলিগ্রাম
পিচ ফলের উপকারিতা
পিচ ফলের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। এতে কোন স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে না। তবুও এটি অসংখ্য স্বাস্থ্যকর যৌগ, খনিজ এবং ভিটামিন দিয়ে পরিপূর্ণ। পিচ ফলের উপকারিতা বিস্তারিত আলোচনা করা হল –
ওজন কমাতে সাহায্য করে : পিচ ফলে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে যদি নিয়মিত খাওয়া হয়। এটিতে কম চর্বি এবং ক্যালোরি থাকে। পিচ ফলে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, যা রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
অনেকেই মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন এবং অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার কারণে মোটা হয়ে যান। আপনার মিষ্টির লোভ মেটানোর জন্য পিচ ফল খেতে পারেন। ওজন কমাতে প্রতিদিন আপনার সালাদের মধ্যে পিচ ফল যোগ করুন।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : পিচ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। পিচের বীজে থাকা রাসায়নিকগুলি ম্যালিগন্যান্টের বিকাশ থেকে রক্ষা করে। পিচ ফলে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল (অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট) থাকে, যা ক্যান্সারের গঠন ও বিস্তার রোধ করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে : পিচ ফলে ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন বেশি থাকে। এগুলো চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চোখকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং অস্বাভাবিকতা দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিটা ক্যারোটিন চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়। পিচে থাকা লাইকোপেন এবং লুটেইন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় : পিচ ফলে পটাশিয়াম থাকে। এটি ইলেক্ট্রোলাইট হিসাবে কাজ করে, হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাশিয়াম হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের সাথে লড়াই করে।
সুতরাং আপনার ডায়েটে পিচ ফল অন্তর্ভুক্ত করুন, কারণ এটি যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম সরবরাহ করে। পিচের ফাইবার হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। পিচ ফলের রস কার্ডিয়াক পেশিকে শক্তিশালী করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : পিচ ফলের ভিটামিন সি রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে। পিচ ফলের রস খেলে শরীরের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা উন্নত হয় এবং এটি ঠাণ্ডা জনিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হজম শক্তি উন্নত করে : পিচ ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এই ফল কিডনির জন্যও ভালো। পিচ ফলের নির্যাস ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
প্রাকৃতিক চিনি সরবরাহ করে : এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা কে বিপদজনক মাত্রায় না বাড়িয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের চিনির লোভ কমাতে সহায়তা করে।
অ্যালার্জির সমস্যা হ্রাস করে : গবেষণা অনুসারে, পিচ ফল অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে। পিচ অ্যালার্জি কমাতে শরীরে অ্যান্টি-হিস্টামাইন তৈরি করে, যার ফলে অ্যালার্জি কমে।
ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করে : নিকোটিন গ্রহণ টিস্যুর ক্ষতি করে এবং হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং ক্যান্সার হতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে, পিচ ফলের সাদা মাংসের নির্যাস এই অঙ্গ গুলির ক্ষতি কমাতে পারে।
ত্বকের যত্নে পিচ ফলের ব্যবহার
পিচ ফল ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ত্বকের যত্নে পিচ ফলের উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন পিচ ফল খেলে এবং পিচ ফুলের নির্যাস ত্বকে ব্যবহার করলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ত্বকের অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে পারে।
আরও পড়ুন লংগান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
লোশন, ক্রিম এবং অন্যান্য প্রসাধনী তৈরিতে পিচ ফল ব্যবহার করা হয়। পিচের ভিটামিন এ ত্বকের কোষগুলিকে নতুন এবং স্বাস্থ্যকর কোষ গঠন করে। ত্বকের যত্নে পিচ ফলের উপকারিতা পেতে প্রতিদিন ফলটি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এতে ত্বক সুন্দর হবে এবং বিভিন্ন ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে।
এছাড়াও তাজা অবস্থায় ফলটি পাতলা করে কেটে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হয়।
গর্ভাবস্থায় পিচ ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভকালীন সময় পিচ ফল খাওয়া যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় পিচ ফল খাওয়ার উপকারিতা হল, এখানে উচ্চ ভিটামিন সি এবং ফোলেট রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
ভিটামিন সি শিশুর সাধারণ বৃদ্ধি এবং আয়রন শোষণে সহায়তা করে। ফোলেট, যা ফলিক অ্যাসিডের উৎস, যা মা এবং শিশু উভয়েরই উপকার করে। পিচ ফলের ফাইবার এবং পটাশিয়াম গর্ভ অবস্থায় বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
পিচ ফলের অপকারিতা
পিচ ফলের অপকারিতা বা কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত পিচ ফল খাওয়ার কারণে পুরুষদের কোলোরেক্টার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এটি অন্ত্রের ক্যান্সার যার লক্ষণ গুলো হল পেটে ফোলা-ভাব, পেট ব্যথা এবং ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
পিচ ফল সাধারণত পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই নিরাপদ। অনেক বেশি খাওয়া বদহজমের কারণও হতে পারে। এই ফলে পলিওল নামক প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, এর কারণে বমি বমি ভাব হতে পারে। পিচ ফলে স্যালিসিলেট ও অ্যামিগডালিন রয়েছে, যা কিছু মানুষের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আপনার যদি আপেল, এপ্রিকট, বরই এবং চেরির মতো ফলে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে আপনার পিচ ফলেও অ্যালার্জি হতে পারে। যেমন – চুলকানি, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে পারে। ফল খাওয়ার পর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লেখা দিলে দ্রুত আপনি আপনার ডাক্তারের নিকট গিয়ে পরামর্শ নিবেন।
পিচ ফল খাওয়ার নিয়ম
পিচ ফল বাজার থেকে অথবা আপনার যদি পিচ ফলের গাছ থাকে তাহলে পূর্ণাঙ্গ বড় হওয়া ফলটি গাছ থেকে পেড়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে সরাসরি খেতে পারেন। ফলটি খেতে খুবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু।
এটি দেখতে কিছুটা আপেলের মতো, তাই এটি আপেলের মতো টুকরো করে ক্ষেতে পারেন। সালাদে এই ফল যোগ করতে পারেন। এই ফল খোসাসহ খান, এতেও ভিটামিন রয়েছে। তবে ফলের ভেতরের শক্ত অংশ বা বীজ খাওয়া বিপদজনক।
কেননা পিচ ফলের বীজ হজম হয়ে গেলে হাইড্রোজেন সায়ানাইড উৎপন্ন হয়। হাইড্রোজেন সায়ানাইড একটি বিষাক্ত পদার্থ। এটির কারণে পেট ব্যথা, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। তাই বীজ বাদ দিয়ে পিচ ফল খেতে হবে। পিচ ফল দিনের মধ্যে যে কোন সময় খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকলে, পিচ ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
উপসংহার – পিচ ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
পিচ ফল থেকে স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে দৈনিক ১/২টি পিচ ফল খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরের জন্য প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি গুলো অনেকাংশেই দূর হবে। বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি এবং পটাশিয়াম এর দুর্দান্ত উৎস হিসেবে বিবেচিত এই পিচ ফল।
তবে পিচ ফলের কিছু অপকারিতা থাকার কারণে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা পিচ ফলের পুষ্টিগুণ, পিচ ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় পিচ ফল খাওয়ার উপকারিতা, পিচ ফল দিয়ে রূপচর্চা এবং পিচ ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এরকম বিভিন্ন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ