ধূমপান ছাড়ার উপায়প্রিয় পাঠক, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান, নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না, কি কি কারণে কাপড় নাপাক হয়, নাপাক কাপড় পড়লে কি শরীর নাপাক হয়, নাপাক অবস্থায় দরুদ পড়া যায়, নাপাক অবস্থায় সূরা পড়া যায় কি, নাপাক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে কি, নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে কি, এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন শেষ পর্যন্ত।
উপরোক্ত টপিক ছাড়াও এখানে নাপাক অবস্থায় আল্লাহর নাম নেয়া যাবে কি ইত্যাদি আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরব।
ভূমিকা
অভ্যন্তরীণ পবিত্রতার ন্যায় বাহ্যিক পবিত্রতাও ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত। পবিত্রতার বিপরীত নাজাসাত তথা অপবিত্রতা। ইবাদত বন্দেগীর প্রয়োজনে অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন ইসলামের অন্যতম বিধান। পবিত্রতা অর্জন করা ঈমান ও ইবাদতের অংশ।
আরও পড়ুন কোন শ্যাম্পু সবচেয়ে ভালো
কাজেই এ পবিত্রতা অর্জনের জন্য শরীয়ত নির্ধারিত নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা সকল মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। এজন্য আমাদের হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান, নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না এবং উপরে বর্ণিত সকল টপিক বা বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
হায়েজ কেবল নারীর জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রাপ্ত বয়স্ক সকল নারীকেই হায়েজ ও ইস্তেহাজা এগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। তাই এই অবস্থায় এসবের বিধান সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানার্জন করা এবং মেনে চলা প্রত্যেক মুমিন নারীর জন্য অপরিহার্য। এ সময় কুরআন পড়া বৈধ নয়। হায়েজ অবস্থায় গিলাফ বা আবরণ ছাড়া কুরআন মাজিদ ধরাও নিষেধ বা হারাম।
তবে কিছু কিছু আলেম এর মতে হায়েজ বা নাপাক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ না করে মুখস্থ করা বৈধ। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো এই অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে না। কেননা এর পক্ষে কুরআন এবং হাদিসে অনেক দলিল পাওয়া যায়। হায়েজ বা নাপাক অবস্থায় কোরআন পড়লে গুনাহগার হতে হবে।
সুতরাং এ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান হলো হারাম। তবে কুরআনের হিফজ করার ক্ষেত্রে অনেকে মনে মনে পড়ার তাগিদ দিয়ে থাকেন। এরকম পরিস্থিতিতে কোন বিজ্ঞ আলেমার শরণাপন্ন হবেন। আশা করি নাপাক বা হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না
নামাজ আদায়কারীর শরীর, কাপড় এবং নামাজের স্থান অপবিত্র থেকে পবিত্র করা ফরজ। নাপাক অবস্থায় সকল ধরনের ইবাদত করা যাবে না বা কবুল হয় না। বরং গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না চলুন জেনে আসি।
- নামাজ পড়া।
- আল্লাহর কিতাব পড়া ও ধরা।
- বাইতুল্লাহ তওয়াফ।
- মসজিদে প্রবেশ।
কি কি কারণে কাপড় নাপাক হয়
অপবিত্র বিভিন্ন ধরনের বস্তুর কারণে কাপড় নাপাক হয়। অপবিত্রতা বা নাপাকি প্রথমত দু’প্রকার। যথা-
- হাকীকিয়্যা
- হুকমিয়্যা
হাকীকিয়্যা হলো যে নাপাকি দৃষ্টিগোচর হয় এবং এক দিরহামে পৌঁছলে নামাজ আদায় হয় না। যেমন, রক্ত, পেশাব, পায়খানা, পুঁজ, মদ ইত্যাদি। এসব গাড় নাপাকির কারণে কাপড় নাপাক হয়, শরীরে বা কাপড়ে যদি নাপাকির পরিমাণ এক দিরহাম হয় বা তার বেশি হয়, তাহলে নামাজ আদায় হবে না। তবে এক দিরহাম এর কম হলে অসুবিধা নেই। কিন্তু একজন মুমিনের কর্তব্য হলো সম্পূর্ণভাবে পবিত্রতা অর্জন করা।
নাজাসাতে হুকমিয়্যা এমন নাপাকি, যে নাপাকি সামান্য পরিমাণও কাপড়ে বা শরীরে লাগে তাহলে নামাজ নিষিদ্ধ। যেমন হায়েজ, পায়ু হতে কিছু নির্গমন ইত্যাদি। এসবের কারণে কাপড় নাপাক হয়। হাকীকিয়্যা আবার দু প্রকার। যথা-
- খফিফা ও
- গলীযা
গলীযা হলো এমন নাপাকি যেসব কাপড়ে লাগলে কাপড় পাক করা আবশ্যক, কেননা সকল ধরনের গাড় এর অন্তর্ভুক্ত। আর খফিফা হালাল প্রাণীর পেশাব পায়খানা নাজাসাতে খফিফার অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের নাপাকি শরীর বা কাপড়ের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ পর্যন্ত মার্জনীয়, এর ওপরে নয়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন কি কি কারণে কাপড় নাপাক হয়।
নাপাক কাপড় পড়লে কি শরীর নাপাক হয়
বিভিন্ন কারণে আমাদের কাপড় নাপাক হতে পারে। কি কি কারণে কাপড় নাপাক হয় তা আমরা পূর্বে জেনেছি। এই নাপাক কাপড় যদি পরিধান করা হয় তাহলে শরীর নাপাক হয়ে যেতে পারে, যদি কাপড়ের নাপাকি শুকিয়ে না যায় অর্থাৎ তরল থাকে তাহলে।
তবে কাপড়ে লেগে থাকা নাপাকি যদি শুকনা হয় অর্থাৎ নাপাকি যদি শরীরে লেগে না যায় তাহলে সেই নাপাক কাপড় পরলে শরীর নাপাক হবে না। অনেক আলেমগণের মতেই নাপাকি শুকনা হয়ে গেলে কাপড় পাক হয়ে যায়। তবে ধৌত করার ব্যবস্থা থাকলে তা ধৌত করাই মুমিনের কর্তব্য।
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে নাপাক কাপড় পড়লে কি শরীর নাপাক হয়। আশা করি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেয়েছেন। আর আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কাপড় পাক থাকা নামাজের পূর্ব শর্ত।
নাপাক অবস্থায় দরুদ পড়া যায়
আমাদের শরীরের বিভিন্ন কারণে নাপাক হয়ে যায়, নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না তা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে নাপাক অবস্থায় দরুদ পড়া যায়, এতে কোন সমস্যা নেই। দরুদ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। এর মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়, আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভ হয়, অভাব দূর হয় রিজিক বৃদ্ধি পায়, এছাড়াও অনেক ফজিলত রয়েছে।
তাই আমাদের সকল অবস্থাতেই দরুদ শরীফ পাঠ করা উচিত। তবে টয়লেটে দরুদ শরীফ পাঠ করা নিষেধ। নাপাক অবস্থায় দরুদ পাঠ করা যায়। শুধু তাই নয় নাপাক অবস্থায় অন্যান্য জিকির আজগারও করা যায়।
নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে কি
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না, নাপাক অবস্থায় দরুদ পড়া যায় কিনা তা আমরা জানি। নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে কি? উত্তর হল হ্যাঁ। নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে। আমরা জানি কুরআন মাজীদ নাপাক অবস্থায় ধরা এবং পড়া উভয়ই নিষিদ্ধ।
তবে কুরআনের মধ্যে যে সব দোয়া রয়েছে সেসব দোয়া নাপাক অবস্থায় করা যাবে দোয়ার নিয়তে। অতএব আমরা জানলাম নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে কি না। আল্লাহ পবিত্রতাকে ভালোবাসেন তাই পবিত্র হয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা’আলা তা কবুল করেন।
নাপাক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে কি
অধিকাংশ সাহাবী এবং মুস্তাহিদগণ নাপাক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়েজ মনে করেন নি। এ বিষয়ে অনেক হাদিসও পাওয়া যায়। প্রায় সকলেই একমত যে নাপাক অবস্থায় সূরা পড়া যায় না। এখন প্রশ্ন হলো নাপাক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে কি না। শরীর অবাক হয়ে গেল কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে এতে কোন দ্বিমত নেই। সুতরাং নাপাক অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে।
নাপাক অবস্থায় আল্লাহর নাম নেয়া যাবে?
অনেকেই জানেন না যে নাপাক অবস্থায় আল্লাহর নাম নেয়া যাবে কিনা। নাপাক অবস্থায় নামাজ, কোরআন পড়া-স্পর্শ করা, তাওয়াফ করা নিষেধ, মহিলাদের হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান হলো নিষিদ্ধ। কিন্তু নাপাক অবস্থায় আল্লাহর নাম নেয়া যাবে এবং অন্যান্য জিকির, কালেমা পড়া যবে। নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে।
নাপাক অবস্থায় সূরা পড়া যায়?
উপরোক্ত আলোচনা গুলো পড়ে হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন নাপাক অবস্থায় সূরা পড়া যায় কিনা। নাপাক অবস্থায় কুরআন ধরা এমনকি টাচ করাও নিষিদ্ধ মনে করেন আলেমগণ। সুতরাং নাপাক অবস্থায় সূরা পড়া যায় না বা নিষেধ। নাপাক অবস্থায় সূরা পড়লে এক্ষেত্রে গুনাহগার হতে হবে।
নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না – হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান – শেষ কথা
অপবিত্রতা থেকে শরীয়ত অনুমোদিত পদ্ধতিতে পবিত্রতা অর্জন করে বিধি মোতাবেক ইবাদত বন্দেগী করলে তবেই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা সম্ভব, নতুবা নয়। যে কোন কাপড় বা শরীর নাপাক হলে দ্রুত পাক হতে বা করতে হবে।
আজকে আমরা জেনেছি কি কি কারণে কাপড় নাপাক হয়, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান, নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না, নাপাক কাপড় পড়লে কি শরীর নাপাক হয়, নাপাক অবস্থায় দোয়া করা যাবে কি, নাপাক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শোনা যাবে কি, নাপাক অবস্থায় সূরা পড়া যায় কিনা এবং নাপাক অবস্থায় দরুদ পড়া যায় কিনা।
সম্মানিত পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন। অন্যের উপকার করতে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। আসসালামু আলাইকুম।