ধূমপান ছাড়ার উপায় – সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়

ডালিম ও বেদানার পার্থক্য এবং খাওয়ার উপকারিতাসম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা ধূমপান ছাড়ার উপায়, ধূমপান প্রতিরোধের উপায়, সিগারেট খাওয়া কি হারাম, সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয় এবং ধূমপান সম্পর্কিত আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য জানবো যা আশা করি সকলের উপকারে আসবে।
সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও এখানে আমরা তুলে ধরব- ধূমপান করলে কি হয়, ধূমপান প্রতিরোধের উপায়, ধূমপান ছাড়ার ঔষধ ও ধূমপানের ইতিহাস সম্পর্কে। সমাজে দিন দিন মাদকদ্রব্য বেড়েই চলেছে এবং যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ধূমপান বা সিগারেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

ধূম শব্দের অর্থ ধোঁয়া, আর পান অর্থ সেবন করা। সুতরাং শব্দদ্বয়ের সমন্বিত অর্থ হলো- ধোঁয়া পান করা বা ধোঁয়া সেবন করা। ব্যবহারিক অর্থে মানুষ অভ্যাসগতভাবে মুখ দিয়ে ধোঁয়া সেবন করাকে ধূমপান বলে। চাই তা বিড়ি, সিগারেট কিংবা হুক্কা বা অন্য কোন মাধ্যমে হোক। যে সব ক্ষতিকর বস্তু মানুষের দেহ, অর্থ ও সামাজিক ক্ষতি সাধন করে থাকে ধূমপান তন্মধ্যে অন্যতম। 
এটি নানা ধরনের অন্যায় ও অপকর্মের উৎস। এর বিস্তার প্রভাব থেকে সমাজকে মুক্ত করতে না পারলে প্রকৃত সভ্যতা ও সংস্কৃতি আরও সীমাহীন ক্ষতির কবলে পড়বে। মাদকদ্রব্য বা নেশা জাতীয় দ্রব্য একটি সমাজ বিধ্বংসী ক্ষতিকর বস্তু। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে গিয়ে জনৈক প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী বলেছেন, বিষ পান করুন, কিন্তু ধূমপান ছেড়ে দিন। আজকে আমরা জানব সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়।

ধূমপানের ইতিহাস

রেড ইন্ডিয়ানরা সর্বপ্রথম বিশ্বে ধূমপানের প্রবর্তন করে। কিউবার রাজধানী হাভানায় ১৮৮৪ সালে সর্বপ্রথম সিগারেট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারণা করা হয়, পর্তুগিজ বণিকদের আগমনের পর থেকেই আমাদের দেশে ধূমপানের অভ্যাস শুরু হয়। ধূমপানের উপকরণ দুইটি। তাহলে তামাক ও গাঁজা পাতা। তামাক পাতা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে সিগারেট তৈরি করা হয়।

ধূমপানের অপকারিতা

ব্যক্তি-জীবনে ধূমপানের অপকারিতাঃ ধূমপান ব্যক্তি-জীবনে নানাভাবে ক্ষতিসাধন করে। কেননা ধূমপানের কোন উপকারী দিকই নেই। এর শতকরা ১০০ ভাগই অপকারী। নিম্নে এর অপকারিতা বর্ণনা করা হলো-
  • অর্থের অপচয় হয়।
  • সুন্দর ও সাবলীল স্বাস্থ্য নষ্ট হয়।
  • ধূমপানকারী নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা করতে থাকে।
  • সিগারেটের খণ্ডাংশ যেখানে সেখানে না নিভিয়ে ফেলে দেওয়ার কারণে অনেক সময় ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়।
সমাজ ও পরিবেশের জন্য ধূমপানের অপকারিতাঃ ধূমপানকে এক ধরনের সামাজিক অপরাধ বলা চলে। ধূমপানের ফলে পরিবেশও দূষিত হয়। ধূমপানের ফলে ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে সৃষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব উপলব্ধি করে আজ বিভিন্ন রকম অ‍্যান্টি স্মোকিং মুভমেন্ট গড়ে উঠেছে। তাদের মূলমন্ত্র হলো- ধূমপান ছেড়ে দিন, ফুলের সুবাস নিন।

ধূমপানের ফলে সৃষ্ট রাসায়নিক উপাদান সমূহঃ ধূমপানের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া থেকে চার হাজারের মতো রাসায়নিক যৌগ এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। গ্যাসীয় উপাদান সমূহের মধ্যে যেগুলো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে সেগুলো হলো- কার্বন মনোক্সাইড, অ্যালড্রোজেন সায়ানাইড, কার্বন-ডাই অক্সাইড, উদ্বায়ী হাইড্রোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, অ্যালকোহল, অ্যামোনিয়া, অ্যালডিহাইড, উদ্বায়ী নাইট্রোসায়ামিন, কিটোন ইত্যাদি।

ধূমপান করলে কি হয়

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে মন্তব্য করেছেন- সিগারেটের ধোঁয়ার একটা টানে ১৫ মিলিয়ন পদার্থের কণা থাকে। তামাকের মধ্যে নিকোটিন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ আছে, সেটিই ধূমপায়ীদের স্বাস্থ্যে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার কারণ। ধূমপানের ফলে ধোঁয়ার সঙ্গে এ বিষ মানুষের শ্বাসনালী দিয়ে প্রথমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। পরে তা রক্তের সাথে মিশে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু অংশ পুনরায় বের করে দেওয়া ধোঁয়ার সাথে বের হয়ে আসে।
এর ফলে নিয়মিত ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ভেতর খুব ধীরে ধীরে মৌচাকের মত নিকোটিন জমতে থাকে। এই বিষ ফুসফুসকে আস্তে আস্তে পঙ্গু করে দেয়। ফুসফুসে রয়েছে কোটি কোটি বায়ুথলী। ধূমপানের ধোঁয়া এই বায়ুথলীতে গিয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট করতে থাকে। বায়ুথলী অসংখ্য হওয়ায় আমরা তা বুঝতে পারিনা এবং পরবর্তীতে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়। ধূমপান পুরো শরীরেরই ক্ষতি করে থাকে। তার মধ্যে অন্যতম-
  • প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়
  • বাচ্চা হলে বাচ্চার শরীরে ত্রুটি থাকা।
  • হাঁড় নরম হয়।
  • চামড়া তাড়াতাড়ি কুঁচকিয়ে যায়।
  • ধূমপানকারী গড়ে ৮ থেকে ১০ বছর কম বাঁচেন।
  • চোখে ছানি পড়ে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
See also  পোলিও রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধ - পোলিও রোগ কিভাবে ছড়ায়

সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়

ধূমপান বা সিগারেট খেলে বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হয়ে থাকে। ধূমপান বা সিগারেট খাওয়ার ফলে যেসব রোগ ব্যাধি বিস্তার লাভ করে নিচে তা উপস্থাপন করা হলো। সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয় –
  • ক্যান্সারঃ তামাকের ধোঁয়ায় কোকার-সিনোজেন নামক কিছু উপাদান থাকে, সেগুলো সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, কিন্তু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্রিয়া করে ক্যান্সার সৃষ্টিকে বেগবান করে।
  • ক্রোনিক ব্রঙ্কাইটিসঃ ধূমপানের ধোঁয়া মানুষের শ্বাসনালীর ঝিল্লি গুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ধূমপানের মাত্রা অত্যাধিক হলে একপর্যায়ে ফুসফুস বিকল হয়ে যায়।
  • অন্যান্য রোগঃ ধূমপানের ফলে দন্তক্ষয়, দাঁতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, মাড়ির রোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, হৃদরোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ হয়। সিগারেট খেলে বা ধূমপান করলে দৃষ্টিশক্তিরও ক্ষতি সাধন হয়। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূমপান। এটা হার্টে রক্ত-সঞ্চালনেও বাধা সৃষ্টি করে। ধূমপান উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মহিলার পাশে প্রতিনিয়ত ধূমপান করলে গর্ভস্থ সন্তান বিকলাঙ্গ হতে পারে।

ধূমপান ছাড়ার উপায়

সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয় তা আমরা জানলাম। এখন আমরা জানবো ধূমপান ছাড়ার উপায় সম্পর্কে। ধূমপান ছাড়ার আগে অনেকেই মনোবল হারিয়ে ফেলে, এজন্য সবার আগে আমরা আলোচনা করেছি- ধূমপান করলে শরীরে কি কি ঘটে এবং কি কি ক্ষতি হয়। যাতে আপনার ইচ্ছাশক্তি মজবুত হয়। অনেকে বলেন ধূমপান করার জন্য শরীরে যা ক্ষতি হওয়ার হয়েই গেছে, এখন আর ধূমপান ছেড়ে কোন লাভ হবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটা কথা। 
আপনি যতদিন ধরেই ধূমপান করেন না কেন, যে মুহূর্তে থেকে আপনি ধূমপান ছাড়বেন তখন থেকেই আপনার শরীর মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে। ধূমপান ছাড়ার কয়েক মাস পর থেকেই ফুসফুসের কার্যক্ষমতা অনেক গুনেই বেড়ে যায়। এক বছর পরে হৃদ রোগের ঝুঁকিও অর্ধেক কমে যায়। দশ বছর পরে ক্যান্সার খাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায় এবং ১৫ বছর পর আপনার হার্টের অবস্থা যে কখনো ধূমপান করেনি তার মতো হয়ে যায়। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক ধূমপান কিভাবে ছাড়তে হবে-

  • ধূমপান বা সিগারেট একবারও ছুয়েও দেখা যাবে না। অনেকে মনে করেন এটি অল্প অল্প করে ত্যাগ করব। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ধূমপানকারী ঠিক আগের অবস্থাতেই ফিরে যায়।
  • যেসব বস্তু দেখলে আপনার সিগারেট খেতে মন চাইবে যেমন লাইটার, ছাই রাখার পাত্র ইত্যাদি বস্তু হাতের নাগাল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • যেসব স্থানে আপনি স্মোক করতেন সেসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।
  • নিজেকে সব সময় ব্যস্ত রাখতে হবে।
  • অনেকের খাবার পরে ধূমপান করার প্রবণতা দেখা দেয়। তাই খাবার পরে বিশ্রাম না নিয়ে আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন।
  • কিছু কিছু খাবার রয়েছে ধূমপানের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। যেমন গোস্ত, চা, কফি, ড্রিংক্স ইত্যাদি।
  • ধূমপান না করার কারণে অনেক অস্থির লাগবে। এই অস্থিরতা কাটানোর পরিকল্পনা শুরু থেকেই করতে হবে। খুবই অস্বস্তি, মেজাজ খিটমিটে, কোনো কাজে মন না বসা ইত্যাদি আরও সমস্যা হতে পারে। এগুলো সমস্যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কমতে থাকবে। কয়েকদিনেই নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার শরীরের পরিবর্তন।
  • সিগারেট খেতে যখন ইচ্ছা হয় তখন দুই মিনিটের মাথায় এই ইচ্ছাটি সবচেয়ে প্রবল হয়। তাই তখন নিজেকে উৎসাহ দিতে হবে এবং কিছু কাজ করতে পারেন যেমন- ভারী কোন কাজ করা, ব‍্যায়াম করা, বা বাহিরে হাঁটতে যেতে পারেন। তবে বাহিরে সিগারেট কিনে খাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যাওয়া যাবে না।
  • মুখ সবসমই ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে চুইংগাম আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
  • যেসব বন্ধু সিগারেট খায় তাদের সাথে মেলামেশা যাবে না। আপনি এমন বন্ধুর সাথে চলাফেরা করুন যে বন্ধু ধূমপান ছেড়েছে এবং তার থেকে পরামর্শ নিতে পারেন সে কিভাবে এটা ত্যাগ করেছে।
  • প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করবেন এতে ধূমপানের ইচ্ছাশক্তি কমতে থাকে।
  • ধূমপানের প্রবল ইচ্ছা থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষধ সেবন করতে পারেন এতে অনেকটাই উপকার হবে।
  • ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হলে হাল ছাড়া যাবে না। কারণ দেখা যায় যে, যারা ধূমপান ত্যাগ করেছেন তারা অনেকেই প্রথমবারেই ব্যর্থ হন। সেজন্য নিরাশ হওয়া যাবে না। যেসব কারণে ব্যর্থ হয়েছেন সেসব কাজের লিস্ট বানিয়ে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যাতে একই ভুল বারবার না করতে পারেন।
  • আপনি আপনার বাচ্চা নেওয়ার আগে বাচ্চার কথা চিন্তা করে ধূমপান ত‍্যাগ করার চেষ্টা করুন। কেননা ধূমপানের ফলে বাচ্চা মারাত্মক রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। এ ছিলো ধূমপান ছাড়ার উপায়। আশাকরি এইসব ধূমপান ছাড়ার উপায় গুলো মেনে চললে সহজেই ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন।
See also  রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের উপায়

ধূমপান প্রতিরোধের উপায়

বিশ্বের উন্নত দেশ-সমূহে ধূমপানের করাল ছোবল থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলেই ধূমপান প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। ধূমপান প্রতিরোধের উপায় হলো –
  • রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক ব্যাপক ভিত্তিতে তুলে ধরতে হবে।
  • তামাক উৎপাদন ও আমদানির ওপর কঠোরতা আরোপ করতে হবে।
  • সামাজিকভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যান্টি স্মোকিং মুভমেন্ট গড়ে তুলতে হবে।
  • ধর্মীয় প্রভাব সৃষ্টি করে ধূমপান বন্ধ করতে হবে।
  • পত্রপত্রিকাসহ সকল প্রচার মাধ্যমে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করতে হবে।
  • নতুন মুখে যাতে সিগারেট না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • নেশাজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।
  • বেকারত্বের অবসান ঘটাতে হবে।
  • সর্বোপরি মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে এবং সামাজিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সিগারেট খাওয়া কি হারাম

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন সিগারেট খাওয়া কি নিষেধ (হারাম) নাকি মাকরূহ। আগের যুগের অনেক আলেমরা সিগারেট বা ধূমপান অথবা জর্দা খাওয়া মাকরূহ বলতেন সঠিক গবেষণা না থাকার কারণে, কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে কোরআন ও হাদিস বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই এসবের যাচাই করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যেসব বস্তু বা পানীয় খেলে নেশা হয়, এমন সব কিছুই খাওয়া নিষিদ্ধ বা হারাম। (বুখারী)
ধূমপান এমন একটি নেশা জাতীয় দ্রব্য যে, সমাজে, সম্পদে, ধর্মে এবং স্বাস্থ্যে তার অনিষ্টতা অস্বীকার করার উপায় নেই। শারীরিক ক্ষতি এই যে, তা দেহ ও হৃদপিণ্ডকে দুর্বল করে দেয় এবং শরীরের আরও অনেক ক্ষতি সাধন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। সম্পদে ক্ষতি এই যে, তা প্রতিদিন অহেতুক অনেক অর্থ বিনষ্ট করে। সর্বাবস্থায়ই এটা অপচয়। 
অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা নষ্ট (ধন-সম্পদ) করো না। নিশ্চয়ই আমি যে অপচয় করে তাকে ভালোবাসি না। (আনআম -১৪১) মহান আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে অপচয়-কারীরা শয়তানের ভাই। (ইসরা-২৭) অতএব আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে বুঝতে পারি যে, ধূমপান বা সিগারেট খাওয়া স্পষ্ট হারাম।

লেখকের মন্তব্য : ধূমপান ছাড়ার উপায় – সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর জেনেও মানুষ সহজে এর অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না। তার অন্যতম কারণ সমাজের এর অবাধ সরবরাহ। তামাক চাষ অথবা সিগারেট ফ্যাক্টরির সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ কৃষক শ্রমিকের জীবিকা অর্জনের সঠিক পথ আবিষ্কৃত না হলে শুধু উপদেশ দিয়ে ধূমপানের মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়। ধূমপান একপ্রকার সমাজ বিধ্বংসী ক্ষতিকর বস্তু। 
এটা পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে এবং সুন্দর জীবনকে করে ধ্বংস। তাই তরুণ সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে ধূমপান থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। পাঠক আজকে আমরা ধূমপান প্রতিরোধের উপায়, সিগারেট খাওয়া কি হারাম, ধূমপান করলে কি হয়, সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়, ধূমপান ছাড়ার উপায়, ধূমপানের অপকারিতা এবং ধূমপানের ইতিহাস সম্পর্কে।

Leave a Comment