ডালিম খাওয়ার উপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক আপনি হয়তো তুলসী পাতার উপকারিতা, মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা, রুপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা, তুলসী পাতার অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক, তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম অথবা তুলসী পাতার সকল গুণাগুণ সম্পর্কে অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পাচ্ছেন না। তুলসী পাতার সকল গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
উপরোক্ত বিষয়সহ এখানে আমরা তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা, চুলে তুলসী পাতার উপকারিতা এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করব যা সকলের জন্য জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকা
তুলসী পাতার উপকারিতা আছে। পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণের ঔষধি গাছপালা রয়েছে তার মধ্যে তুলসী অন্যতম। তুলসী শব্দের অর্থ যার কোন তুলনা হয় না। তুলসী গাছ খুব বেশি বড় হয় না, এটি লম্বায় দুই থেকে তিন ফুট লম্বা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের সর্বত্রই তুলসী গাছ পাওয়া যায়।
বহু আগের যুগ থেকেই তুলসী পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তুলসী গাছ বেলে ও আর্দ্র দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। এই গাছ বাড়ির আঙ্গিনায় বা ছাদে অথবা যে কোন স্থানে লাগাতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতার উপকারিতা।
তুলসী পাতার উপকারিতা
ঘুম থেকে উঠে সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তুলসী পাতাতে রয়েছে ইমিউনোমডুলেটরি যা প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যার কারণে শরীর স্বাস্থ্য আগের চেয়ে উন্নত হবে। যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে, এসিডিটি ও জ্বালাপোড়া কমাবে। কেননা এটি পি-এইচ এর মান স্বাভাবিক রাখে।
এটি আমাদের পাকস্থলীর অনেক উপকার করে। আমাদের মুখের মধ্যে অনেক ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে আর তুলসী পাতা এই ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। সকালে খালি পেটে নিয়মিত দুই থেকে তিন মাস তুলসীপাতার রস খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হবে, অকাল বার্ধক্য রোধ করে এবং ত্বক অনেক উজ্জ্বল দেখাবে ও বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে। এই সুগন্ধি যুক্ত পাতা মুখের দুর্গন্ধ ভেতর থেকে দূর করে।
তুলসী পাতায় অ্যাডাপ্টোজেন রয়েছে, তাই যারা মানসিক চাপে বা রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে অর্থাৎ এটি মানসিক চাপ ও রোগ দূর করে, দুশ্চিন্তা কমায় ও মন শান্ত থাকে। এই পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার এর মতো ভয়ানক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। তুলসী পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং জিংক। যা ঠাণ্ডা জাতীয় রোগ দূর করে।
জ্বর ও গলা ব্যথা কমাতেও এটির জুড়ি মেলা ভার। তুলসীগাছ আমাদের ২৪ ঘণ্টাই অক্সিজেন সরবরাহ করে, তুলসী পাতা খেলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে এছাড়াও তুলসী পাতার আরও অনেক উপকারিতা বা গুণাগুণ রয়েছে। এ ছিলো তুলসী পাতার উপকারিতা।
তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পাতার চা অনেক উপকারী। কেননা তুলসী পাতা রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তুলসীতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি রয়েছে, যার কারণে জয়েন্ট এর ব্যথা দমন করতে সাহায্য করে। তুলসীকে ঔষধি গাছের রানী বলা হয়। ভেষজ চায়ের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী চা হলো তুলসী পাতার চা।
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকেরই জ্বর, সর্দি, কাশির মতো আরও নানা ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। এসব থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেতে পারেন। এতে দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে, স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। যাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট প্রতিকারে নিয়মিত তুলসী পাতার চা খেলে এটি দূর হতে থাকে।
এছাড়াও এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত রাখে এবং হার্ট সুস্থ রাখে। যারা ওজন কমাতে চান বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা ব্যায়ামের পাশাপাশি তুলসী পাতার চা নিয়মিত পান করুন এটি মেদ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করবে। পাতার চা খেলে ভালো ঘুমও হয়।
মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা
ইতোমধ্যে আমরা তুলসী পাতার গুণাগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এই উপকারী পাতার সঙ্গে যদি মধু মেশানো হয় তাহলে সেটি আরও বেশি শরীরের জন্য কার্যকর হবে। তুলসী পাতার চেয়ে মধুর উপকারিতা বেশি। নিয়মিত মধু ও তুলসী পাতা খেলে রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। অ্যালার্জি কমাতে সাহায্য করে। কিডনি থেকে খারাপ পদার্থ দূর করে এবং কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে রক্ষা করে। তুলসী পাতার সাথে মধু যোগ করলে খুসখুসে কাশি সর্দি গলা ব্যথা কয়েকদিনেই ভালো হয়ে যায়। এছাড়াও মধু ও তুলসী পাতার বহু উপকারিতা রয়েছে।
রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা
রূপচর্চায় তুলসী পাতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলবসন্ত হলে আমাদের শরীরে অনেক কালো কালো দাগ হয়ে যায়, তুলসী পাতা বেটে সেসব দাগে নিয়মিত লাগিয়ে রাখলে জলাবসন্তের দাগ চলে যায়। আমাদের ত্বকের লোমকূপে ময়লা জমার কারণে ব্ল্যাকহেডস দেখা যায় এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে।
এর প্রতিরোধে তুলসী ও নিমপাতা দিয়ে পেস্ট বানিয়ে এবং তার সাথে পরিমাণ মতো মধু মিশ্রণ করে ত্বকে লাগালে সকল প্রকার ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া দূর হয়ে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও সুরক্ষিত থাকে। এটি ব্রণের সমস্যাও সমাধান করে। তুলসী পাতায় বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আমাদের ত্বকের কোষ কে সুরক্ষিত রাখে এবং ত্বক টানটান করে ও অকালে বয়সের ছাপ দূর হয়।
চুলে তুলসী পাতার উপকারিতা
তুলসী পাতা চুলের জন্যেও অনেক উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে তুলসী পাতার নির্যাস মাথার ত্বকে সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও চুলের ফলিকল উদ্দীপিত করে চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অনেকের চুল পাতলা হয়ে যায় অথবা চুল পড়তে থাকে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তুলসী পাতা দিয়ে তেল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন চুলে অথবা হেয়ার ওয়েল এর সাথে মিশ্রণ করে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমাদের মাথা থেকে চুল ঝরতে থাকে তাই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে তুলসী ব্যবহারে চুলের সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। অনেক সুপার শপ গুলোতে তুলসীর তেল পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
তুলসীর তেল মাথায় কয়েক মিনিট মাসাজ করুন, এতে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। এটি চুল পড়া ঠেকাতে ও চুল গজাতে সাহায্য করবে, খুশকি দূর হবে এবং মাথার ত্বককে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।
তুলসী পাতার অপকারিতা
তুলসী পাতার গুণাগুণ অতুলনীয়। এটির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তবে উপকারিতার পাশাপাশি তুলসী পাতার অপকারিতা বা ক্ষতিকর কিছু দিকও রয়েছে। যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তারা তুলসী পাতার সঙ্গে সুগারের ওষুধ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমতে থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। দেখা গেছে অতিরিক্ত পরিমাণ তুলসী পাতা খেয়ে ফেললে শরীরে রক্ত অনেক পাতলা হয়ে যায়, যা মোটেও ভালো নয়।
একই সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণ তুলসীর রস খেলে পেটে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হতে পারে। তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে পারদ রয়েছে। এটি আমাদের দাঁতের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সরাসরি এই পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতে কালো কালো দাগ পরে ও এনামেল ক্ষয় করে। অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে মহিলাদের বন্ধ্যত্ব দেখা দিতে পারে। এজন্য গর্ভবতী মহিলাদের ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে তুলসী পাতা খাওয়া একদমই উচিত নয়।
এছাড়াও এই পাতা খেলে বা পাতার রস খেলে রক্ত চলাচলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। এটিতে পটাশিয়াম থাকায় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তচাপ কমতে থাকে। এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে সঠিক নিয়ম কানুন মেনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত তুলসী পাতা খেতে পারেন।
তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
তুলসী পাতার অনেক উপকার রয়েছে এর পাশাপাশি কিছু ক্ষতিও রয়েছে। সঠিক নিয়মে তুলসী পাতা খেলে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি নিয়ম না মেনে খেলে অপকারও রয়েছে। একসাথে অতিরিক্ত পরিমাণে তুলসী পাতা খাওয়া একদমই উচিত নয়। এর উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক পূর্বে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চার থেকে পাঁচটি তুলসী পাতা খেতে পারেন।
কাঁচা তুলসী পাতা চিবিয়ে না খাওয়াই ভালো। তুলসীর রসের সাথে মধু যোগ করে খেলে তো কোনো কথাই নেই। এটি সোনায় সোহাগা। এ ছাড়াও তুলসী পাতা চা করে খাওয়া সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। যে ভালো উপায় হলো পরিমাণ অনুযায়ী তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন, তারপর সে পানিতে চা তৈরি করুন।
চিনির বদলে মধু মিশিয়ে এটি পান করুন এবং এর সাথে আদা, লবঙ্গ ও লেবুর রসও যোগ করতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে প্রতিদিন এভাবে চা বানিয়ে খেলে তাতে শরীরের অনেক উপকার হবে। খালি তুলসী পাতার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর হালকা গরম পানি খাওয়া ভালো। তুলসী অনেক ধরনের হয়ে থাকে তার মধ্যে কৃষ্ণ তুলসী সবচেয়ে ভালো।
লেখকের মন্তব্য : তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা – তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ঔষধ হিসেবে তুলসী পাতার ব্যবহার হচ্ছে। খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা-ও অনেক। বর্তমানেও তুলসী পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে প্রায় সবাই জানে। কিন্তু এটির ব্যবহার অনেক কম।
এজন্য আমাদের উচিত আমাদের বাসা বাড়িতে এই গাছ লাগানো এবং ব্যবহার করা। দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন ধারণ করতে হলে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম একটি নিয়ম হলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত তুলসী পাতার রস খাওয়া এবং ব্যবহার করা।
আজকে আমরা তুলসী পাতার উপকারিতা, তুলসী পাতার চা এর উপকারিতা, তুলসী পাতার অপকারিতা, তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম, মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতা, রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা, রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা, চুলে তুলসী পাতার উপকারিতা সহ আরও অনেক তথ্য জানলাম।