ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় – ইঁদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য

ভাইরাসের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনসম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়, ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো তাড়ানোর উপায়, ইঁদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য কি সে সম্পর্কে জানতে চান।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়
আজকে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো তাড়ানোর উপায়, ইঁদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করব।

ভূমিকা

ইঁদুর একটি বিরক্তিকর প্রাণী। এটি আমাদের অনেক ক্ষতি করে থাকে। ইঁদুর অনেক সময় বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়ায়। যার ফলে মানুষ সহ পোষা প্রাণীগুলো পর্যন্ত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ইঁদুর দাঁত দিয়ে বই, খাতা, কাপড়-চোপড়, প্লাস্টিক ইত্যাদি কেটে থাকে। যার মাধ্যমে আমাদের ক্ষতি হয়। এছাড়াও বাড়ির ছোট বাচ্চারা ইঁদুর দেখে ভয় পায় এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
উল্লেখিত কারণে আমাদের বাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানো খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ইঁদুরের মতো ঠিক তেমনি ক্ষতি করে ছুঁচো। ছুঁচোকে অনেকেই চিকা নামে চিনে। এগুলো প্রাণীর ক্ষতির দিক বিবেচনা করে আজকে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। তো চলুন শুরু করি।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় গুলো ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হল –
বাহিরের এন্ট্রি পয়েন্ট গুলো সীল করুন : ইঁদুর সাধারণত বাহির থেকে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে বিভিন্ন ছোট গর্তের মাধ্যমে। যেসব জায়গা দিয়ে ইঁদুর ঢুকার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব জায়গা চিহ্নিত করে ধাতু বা সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করুন। এগুলো ইঁদুর চিবাতে পারেনা। ইঁদুরের প্রবেশ রোধ করতে বাড়ির আশেপাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ সরিয়ে ফেলুন।
মূলত বাইরের আবর্জনা থেকেই বাড়িতে ইঁদুর প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়। শুরুতে বাহিরের আবর্জনা তে ইঁদুর অবস্থান নেয় এবং পরবর্তীতে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। বাসা বাড়ির আশেপাশে ইঁদুরের গর্ত ভরাট করুন, ফাটা পাইপ মেরামত করুন।
খাদ্যের উৎস সরান : ইঁদুরের প্রিয় খাবার হল ফেলে দেওয়া ফল, শাকসবজি, বাদাম, শামুক ইত্যাদি। এসব খাদ্য যেখানে থাকে ইঁদুরের প্রাদুর ভাব সেখানে বেশি দেখা যায়। পোষা প্রাণীর এবং পাখির খাবার পাত্রে সংরক্ষণ করুন। যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না। ডাইনিং থেকে যেসব খাবার ছিটকে পড়ে যায় সেগুলো সাথে সাথেই পরিষ্কার করুন। অপ্রয়োজনীয় খাবার অথবা পচা খাবার আপনার বাড়ি থেকে কমপক্ষে ১০০ ফুট দূরে রাখুন।
শুকনো বরফ ব্যবহার করুন : বিষ ছাড়া বাহিরের ইঁদুর থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি কার্যকর উপায় হল শুকনো বরফ বা ড্রাই আইস ব্যবহার করা। শুকনো বরফ কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে, যা ইঁদুর তাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য ইঁদুরের গর্তে শুকনো বরফ রাখুন।
ফাঁদ তৈরি করুন : ইঁদুর তাড়ানোর জন্য ইঁদুর মারার ফাঁদ গুলি কার্যকর উপায় গুলির মধ্যে একটি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ইঁদুর মারার ফাঁদ পাওয়া যায়। ফাঁদে চিনাবাদাম মাখন দিয়ে টোপ দিন, এগুলো ইঁদুরের কাছে আকর্ষণীয় খাবার। আপনি যে জায়গা গুলোতে ইঁদুরের কার্যকলাপ দেখেছেন তার কাছাকাছি স্থান গুলোতে ইঁদুরের ফাঁদ তৈরি করে রাখতে পারেন।
ইঁদুর মারার বিষ ব্যবহার করুন : ইঁদুর মারার ফাঁদ অকার্যকর প্রমাণিত হলে, ইঁদুর মারার বিষ ব্যবহার করতে পারেন। ইঁদুর মারার বিষ হল অ‍্যান্টিকোয়াগুল‍্যান্ট, যা খেলে রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা হারিয়ে যায় এবং চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ইঁদুর গুলি মারা যায়। বাজারে ইঁদুরের বিষ কিনতে পাওয়া যায়। বিষ সুগন্ধযুক্ত বা স্বাদযুক্ত খাবার গুলোর সাথে মিশে ইঁদুর চলাচলের রাস্তায় বা কোন এক কোনায় টোপ হিসেবে রাখুন।
Fumigants ব্যবহার করুন : এটি হল বিষাক্ত গ্যাস যা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি চরম সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। কেননা এটি আপনার উপরও খুবই মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনার স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে একটি অফিসিয়াল অভিযোগ দায়ের করুন : আপনি আপনার বাগানের চারপাশে ইঁদুর দেখতে পেলে আপনার দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইঁদুরের উপদ্রব রিপোর্ট করতে আপনার দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে একটি প্রতিবেদন ফাইল তৈরি করুন। আপনি অফিশিয়াল ভাবে অভিযোগ দায়ের করলে, আপনার স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শক সমস্যার তীব্রতা মূল্যায়ন করবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গুলি নির্ধারণ করবেন।

গাড়ি থেকে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়

যদি আপনার বাড়ির বাহিরে ইঁদুর থাকে, তবে তারা আপনার গাড়িতে বাসা বাঁধবে। একবার ইঁদুর আপনার গাড়ি বা এর ইঞ্জিনের ভিতরে গেলে গাড়ির তারগুলি চিবিয়ে নষ্ট করবে। ফলে আপনাকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
আপনার গাড়িতে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম উপায় হল গাড়িটিকে গ্যারেজে রাখা এবং গাড়ির কভার ব্যবহার করা। অতিরিক্ত ইঁদুরের উপদ্রব হলে গাড়ির নিচে একটি ছোট লাইট জ্বালিয়ে রাখুন। প্রতি রাতে গাড়ির চারেপাশে ফাঁদ তৈরি করে রাখুন। তাহলে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে আপনার গাড়িকে সুরক্ষা দিতে পারবেন।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো তাড়ানোর উপায়

ইঁদুরের মতো ছুঁচো বা চিকা আমাদের সমস্যা কারণ হয়ে দাড়ায়। ছুঁচো ময়লা বা আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক সময় ছুঁচো আমাদের বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়ে খাদ্যের সন্ধানে অথবা বাসস্থানের সন্ধানে। এবং বিভিন্ন রোগবালাই ছড়িয়ে থাকে। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো গুলোকে তাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো তাড়ানোর উপায় গুলো হল :
  • ফাঁদ : এমন জায়গায় ফাঁদ তৈরি করে রাখুন যেখানে ছুঁচো লুকিয়ে থাকে। অনেক দিনের বাসি পঁচা খাবারের বিষ মিশিয়ে ছুঁচো বা চিকা লুকানোর স্থানে রেখে দিন।
  • অপ্রয়োজনীয় খাবারের উৎস গুলি সরান : খাবার ধরে রাখুন এবং সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়ে তুলুন। তাহলে ছুঁচো বা চিকার আনাগোনা কমে যাবে।
  • বাসা তৈরির উপকরণগুলি সরান : বাসা তৈরির উপকরণ যেমন ইট, খোয়া আরও অন্যান্য উপকরণের মধ্যে ছুঁচো লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। তাই এগুলো দ্রুত সরিয়ে পড়ুন।
  • জলের উৎস অপসারণ করুন : চিকা বা ছুঁচো পাইপের ফুটো বা পরে থাকা জল খেয়ে বেচে থাকে। তাই এগুলো অপসারণ করুন।
  • বাড়ির ফাঁকফোকর দূর করুন : বাড়ির দরজা, জানালা, বা দেয়ালে ফুটো থাকলে সেগুলো মেরামত করুন। তাহলে বাড়িতে ছুঁচো ঢুকতে পারবেনা।
  • বাসা বাড়িতে পোকামাকড়ের উৎপাত দমন করুন : ছুঁচো মূলত পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই এগুলো দমন করতে হবে।
See also  আমন্ত্রণ পত্র লেখার নিয়ম এবং আমন্ত্রণ পত্র আমন্ত্রণ পত্রের নমুনা

ছুঁচো ও ইঁদুর তাড়ানোর পদ্ধতিতে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন

ইঁদুর এবং ছুঁচো তাড়ানোর পদ্ধতিতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। আমরা অনেক সময় ছুঁচো এবং ইঁদুর দমন করতে বিষ ব্যবহার করে থাকি। বিষ ব্যবহার করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এটি বাচ্চাদের এবং পোষা-প্রাণীদের যেন নাগালের বাহিরে থাকে।
কেননা বিষ মিশ্রিত কোন খাবার শিশুরা এবং পোষা প্রাণী খেয়ে ফেললে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে। তাই এমন জায়গায় টোপ রাখুন যাতে তারা পৌঁছতে না পারে।
বাড়িতে মৃত ইঁদুর যদি খুঁজে পান তাহলে দ্রুত সরানোর করার চেষ্টা করুন। খালি হাতে ইঁদুর বা চিকা স্পর্শ করবেন না। এটি সরাতে অবশ্যই প্লাস্টিকের গ্লাভস অথবা বেলচা, দুটি লাঠি ইত্যাদি ব‍্যবহার করুন। মৃত ইঁদুরকে প্লাস্টিকের ব্যাগে তুলে মাটিতে পুঁতে দিন অথবা জন মানব শূন্য স্থানে রেখে আসুন। তাহলে এটি অন্যান্য পশু পাখিদের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইঁদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য

  • ইদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য করার সবচেয়ে সুস্পষ্ট উপায় হল ছুঁচো ইঁদুরের চেয়ে অনেক বড় হয়।
  • ইঁদুর সাধারণত ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয় এবং ছুঁচো ৮ ইঞ্চি লম্বা হতে পারে।
  • ইঁদুরের বড় গোলাকার গান, ছোট পুঁতিযুক্ত চোখ, সূক্ষ্ম নাক এবং লম্বা লেজ থাকে। অপরদিকে ছুঁচোর কালো পশম থাকে এবং তাদের চোখ ও কান অনেক ছোট হয়ে থাকে।
  • ছুঁচো মাটির নিচে বাস করে এবং শিকারি হয়। কেঁচো, বিটল এবং অন্যান্য প্রাণীদের খায়। অপরদিকে ইঁদুর সর্বভূক।
  • ইঁদুর সহজেই দ্রুত দৌড়ে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। অপরদিকে ছুঁচো এর শরীর বড় হওয়ার কারণে তারা দ্রুত দৌড়াতে পারে না।

উপসংহার : ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায় – ইঁদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য

ইঁদুর এবং ছুঁচো উভয়ই ক্ষতিকর প্রাণী। এগুলো বাসা বাড়িতে বিভিন্ন জীবাণু ছড়ায় এবং মানুষের সহ পোষা প্রাণীদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে হয়। তাই আমাদের উচিত এসব ক্ষতিকর প্রাণী বাড়ি থেকে দ্রুত দমন করা। আমাদের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে সহজেই ইঁদুর এবং ছুঁচোর বিস্তার কমানো সম্ভব।
বিড়াল ইঁদুর এবং ছুঁচো শিকার করতে পছন্দ করে। যে বাড়িতে বিড়াল থাকে সেই বাড়িতে ইঁদুর এবং ছুঁচো ঢোকে না। তাই ইঁদুর ও ছুঁচো এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমন করতে বাড়িতে বিড়াল পালন পারেন।
সম্মানিত পাঠক আজকে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে ইঁদুর তাড়ানোর উপায়, ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছুঁচো তাড়ানোর উপায়, ইঁদুর ও ছুঁচোর পার্থক্য সম্পর্কে জানলাম। ভালো লাগলে সাপোর্ট করবেন, ধন্যবাদ।

Leave a Comment