গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা – গান বাজনা করার শাস্তি

সিগারেট খেলে কি কি রোগ হয়সম্মানিত পাঠক, আপনি হয়তো গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা, গান বাজনা করার শাস্তি, অশ্লীল কবিতা, উপন্যাস এবং গল্পের বিধান এবং বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কিত বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই কন্টেন্ট-টি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা
এছাড়াও এখানে আমরা আলোচনা করব কোন গান শুনা জায়েজ, বাদ্যযন্ত্র-যুক্ত গান শোনার বিধান এবং গান বাজনার কুফল, যা আশা করি ঈমানদার ভাই বোনদের অনেক উপকারে আসবে।

ভূমিকা

অশ্লীল গান বাজনা মানুষের মন ও মানসিকতাকে অপবিত্র ও কদর্য করে তুলে। ফলে সে খারাপ চিন্তা ভাবনায় মগ্ন থাকে এবং অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। যা থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্য অপরিহার্য।
ইসলাম একটি স্বভাব-সম্মত ও রুচি সম্পন্ন জীবন-ব্যবস্থা। এখানে অশ্লীলতা বলতে কোন কিছুরই স্থান নেই। হোক সেটা কোন বই কিংবা কোন উপন্যাস বা নাটক অথবা গান। নিম্নে এসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা

গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র ইসলামে স্পষ্ট হারাম করা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এমন আছে, যারা মানুষকে অজ্ঞাত-বশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহ প্রদর্শিত পথকে বিদ্রূপের বস্তু বানায়। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।

মোটকথা গান-বাজনা শ্রবণ করা গুনাহ, এর জন্য বসা বা অবস্থান করা ফাসিক হওয়ার মাধ্যম এবং গান শুনে আনন্দ মজা উপলব্ধি করা কুফরি। মানুষ যখন গান শুনে শয়তান তখন খুশি হয়। একজন সাধারণ ঈমানদার ব্যক্তি যিনি আল্লাহর ইবাদতে সবসময় মশগুল থাকে তিনি যদি কিছু সময়ের জন্য গান শুনে তাহলে তার কলব মুহূর্তের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে যায়। 
শয়তানের ওয়াস-ওয়াসাতে তার অন্তরে গানের একটা প্রভাব পড়তে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালার জিকির থেকে দূরে সরে যায়। যারা সব সময় গান শুনে থাকে তাদের এমনকি নামাজের মধ্যেও গান মন চলে যায়। শুধু নামাজই নয় অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটে।

গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা : হাদিস শরীফে গান-বাজনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আমার উম্মতের মাঝে নিশ্চিত এমন কিছু দল-এর আবির্ভাব হবে, যারা বাদ্যযন্ত্রকে বৈধ মনে করবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নাম্বার ৫৫৯০)

গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা : মহা-গ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- এক দল মানুষ আছে, যারা মানুষদেরকে আল্লাহর রাস্তা থেকে গোমরাহ করার জন্য অনর্থক কথাবার্তা সংগ্রহ করে।
(সূরা লোকমান আয়াত নাম্বার- ৬) তাফসীরে ইবনু কাসিরে সূরা লোকমানের এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আল্লাহর শপথ! অনর্থক কথাবার্তা বলতে গান উদ্দেশ্য।

গান বাজনা করার শাস্তি

গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় আল্লাহর রাসূল বাজনা শুনতে নিষেধ করেছেন আর যখন তিনি যখন বাজনার আওয়াজ শুনতে পেতেন তখনই আঙ্গুল দিয়ে কান ঢেকে দিতেন। (বুখারী ও মুসলিম)।
ঢোল তবলা হারাম। ফেরেশতাগণ সেই দলের সাথে থাকেন না, যে দলের সাথে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ থাকে। মিউজিক হলো শয়তানের বাঁশি। (তাবারাণী, মুসনাদে আহমদ, বায়হাকী) গান বাজনা করার শাস্তি ভয়াবহ।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মাঝে ঘনিয়ে আসবে ভূমিধ্বস, পাথর বর্ষণ এবং চেহারা বিকৃতি। সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ এমন ঘটনা (আজাব) কখন ঘটবে, আল্লাহর রাসূল বলেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকারা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে।

আবু দাউদ, ইবনে মাজা ও ইবনে হাব্বান বর্ণিত আবু মালেক আশআরীর রেওয়ায়াতে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পালটিয়ে তা পান করবে। তাদের সামনে গায়িকারা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহকারে গান করবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন এবং কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকুরে পরিণত করে দিবেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আল্লাহ তাআলা মদ জুয়া তবলা ও সারেঙ্গী হারাম করেছেন। তিনি আরও বলেন- নেশাগ্রস্ত করে এমন প্রত্যেক বস্তু হারাম।। (মুসনাদে আহমদ ও আবু দাউদ)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা) বলেন, যখন জেহাদ-লব্ধ সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা হবে, যখন গচ্ছিত বস্তুকে লুটের মাল গণ্য করা হবে, যাকাতকে জরিমানার মতো কঠিন মনে করা হবে, যখন পার্থিব সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করা হবে, যখন মানুষ স্ত্রীর আনুগত্য ও মাতার অবাধ্যতা শুরু করবে, যখন বন্ধুকে নিকটে টেনে নেবে ও পিতাকে দূরে সরিয়ে রাখবে, যখন মসজিদসমূহে হট্টগোল হবে, 
যখন পাপাচারী কুকর্মী ব্যক্তি গোত্রের নেতা হবে, যখন নীচতম ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের প্রধান হবে, যখন দুষ্ট লোকদের সম্মান করা হবে তাদের অনিষ্টের ভয়ে, যখন গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপক প্রচলন হবে, যখন মদ্যপান শুরু হবে, যখন মুসলিম সম্প্রদায়ের পরবর্তী লোকগণ পূর্ববর্তীগণকে অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা প্রতীক্ষা করো একটি লাল বর্ণ-যুক্ত বায়ুর, ভূমিকম্পের, ভূমিধ্বসের, আকার আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ার এবং কেয়ামতের এমন নিদর্শনসমূহের যেগুলো একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে, যেমন কোন মালার সুতা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো একের পর এক খসে পড়তে থাকে।

গান বাজনার কুফল – গান বাজনা করার শাস্তি

গান বাজনার কুফল হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি: গান-বাজনা করা ও শুনা মূলত সময়ের অপচয়, সম্পদ বিনষ্ট করা এবং আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কিছুতে অন্তরকে মশগুল রাখা। এটা আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং শয়তানকে তুষ্ট করার কাজ। এর জন্য আল্লাহ তাআলা গান শ্রবণকারীদের পরকালে অপমানজনক শাস্তি দিবেন।

গান বাজনার কুফল হলো এটি চরম গুনাহের কাজ: অশ্লীল গান বাজনা ও সাহিত্য পাঠ করা চরম গুনাহের কাজ। যেমন আদদুররুল মুখতার গ্রন্থে উল্লেখ আছে। রাসুল (সা) বলেন- গান শোনা পাপের কাজ, গান শুনার জন্যে বসা ফাসিক হওয়ার মাধ্যম। আর গান শুনে যদি মনে আনন্দ পায়, মজা অনুভব করে তাহলে তা কুফরি।
গান বাজনার কুফল হলো এটি অন্তরে নিফাক (কপটতা) সৃষ্টি করে: নিফাক মানে হলো অন্তরে কুফরি গোপন করে মুখে ঈমানের স্বীকারোক্তি দেওয়া যাদের অন্তরে নিফাক রয়েছে তাদেরকে মোনাফেক বলে। গান বাজনা অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে ও ব্যক্তিকে কলুষিত করে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- গান অন্তরে এমন ভাবে নিফাক সৃষ্টি করে যেমনি-ভাবে পানি ফসল উৎপাদন করে।

গান বাজনার কুফল হলো এটি গুনাহের কাজে উদ্বুদ্ধ করেঃ গান বাজনা একটি অশ্লীল বিষয়। এটি মানুষকে গুনাহের দিকে নিয়ে যায় এবং গুনাহের ব্যাপারে উদাসীন করে দেয়।

গান বাজনার কুফল হলো এটি আল্লাহ-ভীতি কমিয়ে দেয়ঃ অশ্লীল গান ও বাজনা মানুষকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার দিকে ধাবিত করে এবং অন্তর হতে আল্লাহ-ভীতি কমিয়ে দেয়।

গান বাজনার কুফল হলো এটি জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়: ইসলামী শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ গান-বাজনা পুণ্যের পথ থেকে সরিয়ে গুনাহের দিকে নিয়ে যায়। আর গুনাহ একপর্যায় জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। গান বাজনা করার শাস্তি হলো জাহান্নাম।

অশ্লীল কবিতা, উপন্যাস এবং গল্পের বিধান

বর্তমান যুগে অধিকাংশ যুবক যুবতী অশ্লীল উপন্যাস, পেশাদার অপরাধীদের কাহিনী অথবা অশ্লীল কবিতা পাঠে অভ্যস্ত। এসব বিষয় হারামের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে পথভ্রষ্ট বাতিল-পন্থীদের চিন্তাধারা অধ্যয়ন করাও সর্বসাধারণের জন্য পথভ্রষ্টতার কারণ বিধায় তা নাজায়েজ। 
তবে গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণ জবাব দানের উদ্দেশ্যে এগুলো পাঠ করলে তাতে আপত্তির কারণ নেই। আর যেসব বিষয়ে কুফর নেই এবং কোন প্রকার গুনাহ নেই সেগুলো মাকরূহ। কারণ এতে অনর্থক কাজে শক্তি ও সময় বিনষ্ট করা হয়।

কোন গান শুনা জায়েজ

বাদ্যযন্ত্র বা বাজনা ছাড়া যেসব গানের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর রাসূলের মর্যাদা ও শরীয়তের সৌন্দর্যের বর্ণনা এবং যে গান কল্যাণমূলক কাজ, ইবাদত ও উত্তম চরিত্রের দিকে উদ্বুদ্ধ করে, সেগুলো নিষিদ্ধ গানের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং সেসব গান শুনা জায়েজ।
কেননা বর্ণিত আছে যে, হযরত হাসসান বিন সাবিত (রা) আল্লাহর রাসূলের উপস্থিতিতে তাঁর প্রশংসাসূচক কবিতা আবৃতি করেছেন এবং তখন আল্লাহর রাসূল তাকে বলেন- হাসসান! তুমি কবিতা দিয়ে মুশরিকদের নিন্দা জানাও। হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তোমাকে সাহায্য করবে।
বাজনা বা বাদ্যযন্ত্র যুক্ত সকল গানই হারাম। আশা করি গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা অনুযায়ী বুঝেছেন কোন গান শুনা জায়েজ আর কোন গান শুনা না-জায়েজ।

গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা – গান বাজনা করার শাস্তি – লেখকের মন্তব্য

ইসলাম মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যায়। আমাদের সমাজে কিছু বাউল বা সংগীত শিল্পী রয়েছে যারা ভুলভাল কথা বলে গান-বাজনা কে হালাল বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কিছু মাল পানি কামানোর ধান্দায়।
তারা কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে, তারা গান-বাজনার মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের কল্যাণের পথ হতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অতএব, অশ্লীল গান ও বাদ্যযন্ত্র হতে বিরত থাকা আমাদের সকলের জন্য অপরিহার্য।
সম্মানিত পাঠক, আশাকরি আজকে আমরা গান বাজনা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে ব্যাখ্যা ও গান বাজনা করার শাস্তি, কোন গান শুনা জায়েজ, অশ্লীল কবিতা, উপন্যাস এবং গল্পের বিধান, গান বাজনার কুফল সম্পর্কে জেনে উপকৃত হয়েছি।
See also  নাপাক অবস্থায় কি কি করা যাবে না - হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান

Leave a Comment