হাঁসের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতাপ্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাকে গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা, গরুর কলিজা খাওয়ার অপকারিতা, গরুর কলিজার পুষ্টিগুণ, গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
সূচিপত্র: গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-কলিজা খাওয়ার অপকারিতা
.
ভূমিকা
গরুর কলিজাকে একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাতে অনেক প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। গরুর কলিজা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও রয়েছে।
আরও পড়ুন পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। তাই আমাদের গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কাদের জন্য গরুর কলিজার খাওয়া ঠিক হবে বা কাদের গরুর কলিজা খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে হবে।
গরুর কলিজার পুষ্টিগুণ
গরুর কলিজা বা লিভার একটি পুষ্টিকর খাদ্য যা প্রাকৃতিক-ভাবে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ প্রদান করে থাকে। গরুর কলিজার পুষ্টিগুণ ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে, টিস্যু মেরামত এবং শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এটি অনেক স্বাস্থ্যকর। ৮৫ গ্রাম গরুর কলিজার পুষ্টিগুণ তুলে ধরা হল –
- ক্যালরি: ১৬২
- কার্বোহাইড্রেট: ৪.৪ গ্রাম
- চর্বি: ৪.৫ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ২.৫ গ্রাম
- মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১ গ্রাম
- প্রোটিন: ২৪.৭ গ্রাম
- সোডিয়াম: ৬৭.২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি১২: ৬০ এমসিজি
- কপার: ১২.২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ: ৮০২০ এমসিজি
- রিবোফ্লাভিন: ২.৯ মিলিগ্রাম
- প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড: ৬ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন: ১৪.৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৬: ০.৯ মিলিগ্রাম
- জিঙ্ক: ৪.৫ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস: ৪২২ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ৫.৬ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন: ০.২ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ: ০.৩ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম: ২৯৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ডি: ১ এমসিজি
গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা
গরুর কলিজা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। গরুর কলিজায় যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা গুলো নিম্নরূপ :
শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ায় : গরুর লিভারের ভিটামিন বি এবং আয়রন উপাদান শক্তি উৎপাদনের সহায়তা করে এবং ক্লান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে। আয়রন অক্সিজেন পরিবহন এবং শক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যাবশ্যক। গরুর লিভার বা কলিজায় প্রচুর পরিমাণ কপার রয়েছে, এটি একটি এনার্জি বুস্টার। কপার আয়রন শোষণে সাহায্য করে এবং শক্তি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে : ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং জিঙ্ক সবই একটি স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সকল উপাদান গরুর কলিজায় অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে জিঙ্ক ইমিউন ফাংশনের দারোয়ান বলা হয়ে থাকে। এটি সমস্ত ইমিউন কোষের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও দেখানো হয়েছে।
দৃষ্টিশক্তির জন্য ভালো : গরুর যকৃত বা কলিজা আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এমনকি আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমাতে সাহায্য করে। গরুর লিভারে রয়েছে অসাধারণ পরিমাণে ভিটামিন এ, যা সুস্থ দৃষ্টিশক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মস্তিষ্ক বিকাশ এবং মেজাজ উন্নত করে : আপনি যদি আপনার জ্ঞানীয় শক্তি বাড়াতে এবং টেকসই করতে চান তাহলে গরুর কলিজা আপনার খাদ্যে যোগ করতে পারেন। গরুর কলিজার খাবার ফলে আপনার মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, শক্তি এবং সুস্থ স্নায়ু প্রদান করেন। এতে আরও রয়েছে সেলেনিয়াম।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেলেনিয়ামের মাত্রা কমে যায়, আর এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে। তাই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে গরুর কলিজা খেতে পারেন।
অলসতা দূর করতে সাহায্য করে : প্রতিদিন অলস বোধ করা আপনার প্রয়োজনীয় মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট এর অভাবের লক্ষণ হতে পারে। গরুর কলিজা এমন পুষ্টি গুণে ভরপুর যা অলসতা কাটাতে সাহায্য করে। এসব উপাদান গুলো হল :
- ভিটামিন বি১২
- রিবোফ্লাভিন
- নিয়াসিন
- ভিটামিন সি
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
এই মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্ট গুলি খাদ্যকে শক্তিতে পরিণত করতে সহায়তা করে। বি ভিটামিন, আয়রন আপনার পেশী এবং অঙ্গগুলিকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে সহায়তা করে, ফলে অলসতা দূর হয়, শরীরে শক্তি পাওয়া যায় এবং মানসিক চাপ দূর হয়।
ত্বক উজ্জ্বল করে : নিম্নলিখিত ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলি ত্বকের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে, ত্বক উজ্জ্বল করে এবং তারুণ্যতা বজায় রাখে।
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
- জিঙ্ক
এগুলো উপকারী উপাদান বলিরেখা গভীরভাবে কমিয়ে ত্বকের বার্ধক্য কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের ভাস্কুলারিটি, পুরুত্ব এবং দৃঢ়তা বাড়ায়। ভিটামিন সি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের ক্ষতিকর UV বিকিরণ থেকে রক্ষা করে।
শক্তিশালী হাড় প্রদান করে : গরুর কলিজায় থাকা ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে : গরুর কলিজায় নিম্নলিখিত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- পটাশিয়াম
- নিয়াসিন
- ম্যাগনেসিয়াম
গবেষণায় দেখা যায় যে পটাশিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ কমানো যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জন্য গরুর কলিজা একটি উপকারী খাবার হতে পারে। গরুর কলিজায় পাওয়া পুষ্টি যেমন ফোলেট, ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এটি জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধের জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গরুর কলিজা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
কলিজা খাওয়ার অপকারিতা
কলিজা খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। তাই কলিজা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে বুঝে খাওয়া উচিত। কলিজা খাওয়ার অপকারিতা গুলো হল –
হেপাটাইটিস ই : রান্না না করে কাঁচা অবস্থায় অথবা কম রান্না করা কলিজা খেলে হেপাটাইটিস ই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। উক্ত রোগে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় –
- ক্লান্তি
- ক্ষুধা না লাগা
- পেটে ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- জন্ডিস (হলুদ ত্বক এবং চোখ)
হেপাটাইটিস-ই কোন সাধারণ রোগ নয়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় গরুর কলিজা রান্না করে হেপাটাইটিস-ই এড়াতে পারেন।
খাদ্যে বিষক্রিয়া : যেকোনো খাবারের মধ্যেই ফুড পয়জনিং এর কমবেশি ঝুঁকি থাকে। তাই বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে হলে সুস্থ প্রাণীর কলিজা নির্বাচন করতে হবে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রায় রান্নার করতে হবে।
ভিটামিন-এ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া : কলিজায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে। অতিরিক্ত ভিটামিন এ গ্রহণের ফলে বমি ভাব, চোখে ঝাপসা, ভার্টিগো এর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা যদি ভিটামিন এ অতিরিক্ত গ্রহণ করে তাহলে সন্তানের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ : শিশুদের ক্ষেত্রে মুরগির কলিজার খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। মুরগির কলিজা যেহেতু খনিজ পদার্থের একটি ঘনীভূত উৎস, তাই এটি শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
কলিজা কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে : কলিজা কোলেস্টেরলের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। মুরগির কলিজা, গরুর কলিজা বা অন্যান্য কলিজা খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল, এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
কপারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া : গরুর কলিজায় অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি কপার থাকে। অতিরিক্ত কপার গ্রহণের ফলে বমি এবং পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে আপনার লিভারের ক্ষতি হতে পারে এবং মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
গরুর কলিজা খাওয়ার অপকারিতা
গরুর কলিজায় অনেক পুষ্টিগুণ ও সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে নেতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যায়। যেমন :
- ভিটামিন ও বেশি থাকে : গরুর কলিজায় থাকা অত্যধিক ভিটামিন এ গ্রহণ শরীরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে।
- উচ্চ-কোলেস্টেরল : গরুর কলিজায় কোলেস্টেরল অত্যধিক থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
- রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি : গরুর কলিজা ভালোভাবে রান্না না করলে অর্থাৎ কাঁচা থাকলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া : গরুর কলিজা বিভিন্ন ঔষধের সাথে ক্রিয়া করে ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তাই গরুর কলিজা খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
সতর্কতা : যেহেতু গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা এর পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে, তাই অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের, হার্টের রোগীদের এবং অন্যান্য রোগীদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের জন্য সপ্তাহে একবার কলিজা খাওয়াই যথেষ্ট। বাচ্চাদের জন্য মুরগির কলিজা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
আমাদের শেষ কথা : গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – কলিজা খাওয়ার অপকারিতা
গরুর কলিজা এমন একটি সুপার ফুড, যা অন্যান্য সুপার ফুডের তুলনায় বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক খাবারের মধ্যে যেসব গরু ঘাস খায়, এসব গরুর কলিজা হাওয়া নিরাপদ এবং উচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।
আপনি যদি গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন, উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগ থাকে, গরুর মাংসে অ্যালার্জি থাকে তাহলে গরুর কলিজা খাওয়া থেকে সতর্ক থাকুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
সম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা জানলাম গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কলিজা খাওয়ার অপকারিতা, গর্ভাবস্থায় গরুর কলিজা খাওয়ার উপকারিতা এবং গরুর কলিজার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।