রোজা রাখার বৈজ্ঞানিক উপকার জানুনসম্মানিত পাঠক আপনি কি খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় ও উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
আমরা এখানে উপরোক্ত পয়েন্টসহ খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, কিভাবে খেজুর খেলে ওজন বাড়বে বা খেজুর খাওয়া সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করব।
ভূমিকা
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। বাজারে প্রচুর পরিমাণ চাহিদা রয়েছে এই ফলের। খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি, ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও নানা রকম পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন।
খেজুরে সকল ধরনের পুষ্টিকর উপাদান থাকায় আমাদের শরীরে পুষ্টির যেকোনো অভাব দূর করে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেজুর খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে যা আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা : খেজুরের পুষ্টিগুণ বাড়াতে ও স্বাদ নিতে রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পানিতে ভিজানো খেজুর নিয়মিত খেলে নিজেই সেটার উপকারিতা গুলো বুজবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে খেজুর খেলে সারাদিনের কাজ করার শক্তি জোগান দিবে, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি।
খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, আয়রন, প্রোটিন, ফাইবার, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, যা ক্লান্ত শরীরকে যথেষ্ট দ্রুত সতেজ করতে পারে।
সারাদিন রোজা পালন করার পরে কয়েকটি খেজুর খেলে খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি খুব তাড়াতাড়ি শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনতে ও শরীর সতেজ করতে সাহায্য করে এবং সারাদিনের সকল পুষ্টির অভাব দূর করে।
বিভিন্ন ধরণের রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান জোগান দিতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সকালে খালি পেটে খেজুর খেতে পারেন। খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু খালি পেটে অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার অপকারিতা বা প্রভাবও দেখা দিতে পারে। তাই দিনে ৪ থেকে ৫টি খেজুরই যথেষ্ট।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক। গর্ভকালীন মহিলাদের অনেক পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়। পুষ্টির চাহিদা মেটাতে খেজুরের জুরি মেলা ভার। খেজুরে ল্যাক্সেটিভ আছে যেটি জরায়ু সংকোচনে সাহায্য করে এবং প্রসব সহজ করে।
খেজুরে ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সন্তান জন্মদানের সময় মায়েদের প্রচুর পরিমাণ রক্ত বেড়িয়ে যায় তখন তারা অনেক ক্লান্ত বা অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে তাই প্রসবকালীন সময় ও পরে নিয়ম করে খেজুর খেলে তাড়াতাড়ি রক্ত উৎপাদন করতে সাহায্য করে।
খেজুর ভ্রূণ বিকাশে এবং গর্ভের শিশুর চোখ হাড় ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকাশে সাহায্য করে। এজন্য গর্ভধারণ-কালে মহিলাদের অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি খেজুর খাওয়া উচিত।
কিভাবে খেজুর খেলে ওজন বাড়বে
খেজুর একটি অসাধারণ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। এতে অনেক ক্যালরি, আঁশ, ফলিক এসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে যা আমাদের হাড় গঠন করতে ও শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১০০ গ্রাম খেজুরে ২৮২ কিলো-ক্যালরি পাওয়া যায় যা শরীরের ওজন বাড়াতে ও শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। তাই আমাদের ওজন বাড়ানোর জন্য পরিমাণ মতো খেজুর খেতে পারেন। এছাড়াও হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে খেজুরের সাথে শসা খেলে স্বাস্থ্য খুব ভালো থাকে ও ওজন বাড়ে।
আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়
পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ও উপকারী খেজুর হলো আজওয়া খেজুর। এটি একটি জান্নাতি ফল। কিন্তু আসল আজওয়া খেজুর চিনবেন কিভাবে। বাজারে অনেকেই আসল আজওয়া খেজুর না চেনার কারণে ব্যবসায়ীরা আজওয়া খেজুরের পরিবর্তে অন্য কমদামি খেজুর দিয়ে থাকে। তাই আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় জানতে হবে।
আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় হলো- এই খেজুর দেখতে গাড় কালো রঙের ও মাথার দিক সোনালি রঙের দাগ রয়েছে। এটা বেশি লম্বা হয় না ও দেখতে গোল, একটি আজওয়া খেজুরের ওজন প্রায় ১০ গ্রাম। আশাকরি জানতে পেরেছেন আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায় কি।
আজওয়া অনেক নরম এবং সুস্বাদু খেতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত সকালে সাতটি করে আজওয়া খেজুর খাবে তাহলে তাকে আর কোনো বিষ ও জাদু ক্ষতি করতে পারবে না। ( সহীহ বুখারী, হাদিস নং : ৫৪৪৫ )
আজওয়া খেজুরে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। এটি রক্তে হোমোসিস্টাইন এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শর্করা যা শরীরের শক্তিকে কয়েকগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই ব্যায়াম করার আগে ও পরে আজওয়া খেজুর খেতে পারেন।
এই খেজুর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, হাড় ও দাঁত গঠন, হজমশক্তি বৃদ্ধি, ক্যান্সার প্রতিরোধে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, ত্বক ও চুল উজ্জ্বল রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আজওয়া খেজুরের জুরি মেলা ভার। এমনকি এটি খেলে শরীরে বিষক্রিয়াও দমন হয়।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
খেজুরে সকল ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় এটি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। খেজুর একটি জান্নাতি ফল। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৫ থেকে ৭ টি খেজুর খেলে মিলবে অনেক উপকার, শরীর রোগ মুক্ত থাকবে এবং সকল ধরণের চাহিদাও মিটবে।
রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে খেজুর খেলে পুরুষত্ব বৃদ্ধি পায়, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, বন্ধ্যত্ব ঠেকাতে সাহায্য করে ও কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
ঘুমানোর আগে খেজুর খেলে মেলাটোনিন নিঃসরণ হয় এতে ঘুম পরিপূর্ণ হয়। দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে খেজুর খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে, এতে রক্তশূন্যতা দূর হয়। চলুন এখন জেনে নেই খেজুর খাওয়ার অপকারিতা।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
খেজুরে অফুরন্ত উপকার থাকলেও কারো কারো ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা জানি অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেজুর খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। ওজন বাড়লে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
খেজুরে পটাসিয়াম রয়েছে, এর মাত্রা শরীরে বেড়ে গেলে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। যারা অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেজুর খেলে অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। খেজুর ফাইবার থাকায় এটি অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে ডাইরিয়াও হতে পারে।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা খেয়াল রেখে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা – আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়
পৃথিবীতে প্রায় ৩০০০ জাতের খেজুর রয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের খেজুরগুলো প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বাজারে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ১০০ রকম প্রজাতির খেজুর পাওয়া যায়। সুস্থ থাকতে ও শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত।
আমরা আসল আজওয়া খেজুর চেনার উপায়, খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময়, কিভাবে খেজুর খেলে ওজন বাড়বে, গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানালাম। এই পোস্টটি শেয়ার করুন।