লংগান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা জানুনপ্রিয় পাঠক, আজকে আমরা করোসল ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা, করোসল ফল খাওয়ার নিয়ম, করোসল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বলবো।
এছাড়াও আরও বলবো বাংলাদেশের কোথায় করোসল ফল পাওয়া যায়, করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং করোসল ফলের দাম সম্পর্কে।
সূচিপত্র: করোসল ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা – করোসল পাতার উপকারিতা
.
ভূমিকা
করোসল সবুজ খোসা এবং বাহিরের দিক কাঁটাযুক্ত একটি ফল। এর ভেতরে নরম সাদা অংশ থাকে। এটির স্বাদ মিষ্টি এবং কিছুটা অম্লীয়। করোসল ফল কাঁচা খাওয়া যেতে পারে অথবা ডেজার্ট হিসেবে জুসে ব্যবহার করা যেতে পারে। করোসল ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। এটি দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ফল।
আরও পড়ুন রাম্বুটান ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ভারত এবং বাংলাদেশে করোসল ফল পাওয়া যায় এবং বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। করোসল পাতার উপকারিতাও রয়েছে। এটি প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার এর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান
করোসল ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম করোসলে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে –
- এনার্জি – ৬২ ক্যালরি
- প্রোটিন – ০.৮ গ্রাম
- চর্বি – ০.২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট – ১৫.৮ গ্রাম
- ফাইবার – ১.৯ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৪০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম – ২৩ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস – ১৯ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম – ২৫০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি – ১৯.১ মিলিগ্রাম
- ফলিক এসিড – ১৪ এমসিজি
এছাড়াও আরও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের জন্য অনেক উপকারী।
করোসল ফলের উপকারিতা
করোসল ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এ ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার কারণে করোসল ফল অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা দিতে পারে। করোসল ফলের উপকারিতা নিম্নে বর্ণনা করা হল –
- প্রদাহ জনিত রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায় : করোসল ফলে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ জনিত রোগ থেকে মুক্তি দেয়। যেমন আর্থ্রাইটিস, আর্থ্রোসিস ইত্যাদি। করোসলে থাকা ভিটামিন এ, ই, সি এবং সেলেনিয়াম সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি সমস্ত শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে : করোসল ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা অগ্নাশয়ের কোষগুলোকে রক্ষা করে ইনসুলিন উৎপাদনের জন্য দায়ী। তাই এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। করোসল ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস। যা দ্রুত চিনি শোষণ কমিয়ে দেয়। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যারা ইতোমধ্যে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই করোসল ফল।
- চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে : করোসল ফলে লুটেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে। যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই ফল চোখে ছানি পড়া রোধ করে এবং ম্যাকুলার অবক্ষয়ের মতো অসুস্থতা কমাতে সহায়তা করে। যার কারণে দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে।
- পেটের জন্য উপকারী : করোসল ফলের নির্যাস পাকস্থলীকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি করে এবং কিছু রোগ যেমন আলসার, গ্যাস্ট্রাইসিস নির্মূল করতে সাহায্য করে।
- হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য ভালো : করোসল পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কার্ডিয়াক ফাংশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই ফলের ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার হার্ট, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য টিস্যুকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে : যেহেতু এই ফল ভিটামিন সি এবং কোয়ারসেটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি সমৃদ্ধ, তাই এটি ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এবং কোষগুলিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই ফল অ্যালার্জি, সর্দি এবং ফ্লু প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে : করোসল ফল কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ফাইবার রয়েছে। যার ফলে সহজে মলত্যাগ করা যায়।
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে : করোসল ফলের জুস শরীর ঠাণ্ডা রাখে। এটি প্রায়শই গরম পরিবেশে বা ব্যায়ামের সময় খাওয়া হয়। যা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : কিছু গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, করোসল ফল ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধে বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে এই ফল খেতে পারেন।
- হাড়ের জন্য ভালো: করোসল ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন কে এবং সি রয়েছে যা শক্তিশালী পেশি এবং হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
করোসল ফলের অপকারিতা
করোসল ফলের উপকারিতা এর পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে করোসল ফলের অপকারিতা বা ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। করোসল ফলের আপকারিতা গুলো হল –
- এই ফল অতিরিক্ত খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
- করোসল ফলের বীজ খাওয়ার ফলে এতে উপস্থিত টক্সিন এর কারণে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন তারা এ ফল খেলে রক্তচাপ আরও কমে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
- যারা নিয়মিত ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ সেবন করেন, তারা এই ফল খেলে ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে রক্তে শর্করার মাত্রা গুরুতর ভাবে কমিয়ে দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় মহিলাদের এই ফল খাওয়া স্বাস্থ্যকর কিনা তা এখনও প্রমাণিত হয়নি সুতরাং এই অবস্থায় করোসল ফল এড়িয়ে চলাই ভালো। কেননা এটি গর্ভাবস্থায় খেলে ক্ষতিকর প্রভাবও দেখা দিতে পারে।
করোসল ফল খাওয়ার নিয়ম
পাকা করোসল ফল কিছুটা কলা এবং আপেলের মতোই খেতে। এর বীজে বিষাক্ত যৌগ থাকে তাই এটি অপসারণ করা উচিত। করোসল ফল বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন :
- সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি এটি পাকা অবস্থায় সরাসরি খান।
- একটি পাকা করোসল ফল নিয়ে ভালো ভাবে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তার সবুজ খোসা ছাড়িয়ে এবং এর বীজগুলো অপসারণ করে সরাসরি খেতে পারেন।
- এছাড়া এটি জুস বানিয়ে খেতে পারেন। একটি ফল নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে এবং বীজগুলো বাদ দিয়ে টুকরো টুকরো করুন। এরপর কাটা ফলগুলো ব্লেন্ডারে নিয়ে সেখানে এক চামচ ব্রাউন সুগার এবং পানি অথবা মিল্ক দিয়ে ব্লেন্ড করুন ভালোভাবে না মেশা পর্যন্ত। এরপর এটি পান করুন।
- এছাড়া সালাদে বা আইসক্রিম তৈরিতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
করোসল পাতার উপকারিতা
করোসল পাতার নির্যাস ভেষজ ঔষধ হিসেবে বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যেমন ডায়াবেটিস, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, নিদ্রাহীনতা এবং লিভারের সমস্যা এবং বিশেষ করে ক্যান্সার নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। করোসল পাতার উপকারিতা গুলো হল –
- করোসল পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
- চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- পেট ক্লিয়ার হয়।
- মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়।
- রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়।
- হজমের সমস্যা, পেটে ব্যথা, জ্বর, কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়।
- ঘুম সম্পন্ন হয়।
করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম
করোসল পাতার উপকারিতা পেতে হলে সঠিক নিয়মে সেবন করতে হবে। করোসল পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। করোসল পাতার চা বানানোর পদ্ধতি নিচে দেওয়া হল –
উপকরণ
- ১০ গ্রাম করোসল পাতা
- ১ লিটার বিশুদ্ধ পানি
পদ্ধতি
১ লিটার পানি গরম করুন। ফুটন্ত পানিতে করোসল পাতাগুলো রাখুন। তারপর একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। ৫ থেকে ৭ মিনিট ফুটানো পর পান করুন। এটি ঠাণ্ডা করেও পান করতে পারেন। প্রতিদিন খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর ১ কাপ করে পান করুন। শিশুদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের থেকে এটি দূরে রাখুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
বাংলাদেশের কোথায় করোসল ফল পাওয়া যায়
বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় করোসল ফল চাষ করা হয় এবং সেখান থেকে এই ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। সিলেট চট্টগ্রাম সহ ঢাকা এবং বরিশালের বিভিন্ন জেলাতে এই ফল পেতে পারেন। এছাড়া অনেক মানুষ অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকাতেও করোসল ফল পাওয়া যায়।
করোসল ফলের দাম
করোসল ফলের অনেক উপকারিতা থাকার কারণে এর দামও অনেক বেশি। এই ফল চাষের জন্য নির্দিষ্ট আবহাওয়া প্রয়োজন হয়। তাই এই ফল চাষ করা খুব মুশকিল। চাষাবাদ কম হওয়ার কারণেও এর দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি করোসল ফলের দাম ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
উপসংহার
দীর্ঘকাল ধরে করোসল ফল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য এটি বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। করোসল পাতার রস ক্যান্সরের কোষ মেরে ফেলতে পারে বলে অনেকেই দাবি করেন। তবে করোসল ফল এবং পাতার নির্যাস খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আরও পড়ুন ডুগডুগি ফলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
সম্মানিত পাঠক, আমরা আজকে করোসল ফলের উপকারিতা, করোসল ফলের পুষ্টি উপাদান, করোসল ফলের অপকারিতা, করোসল ফল খাওয়ার নিয়ম, করোসল পাতার উপকারিতা এবং করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম, বাংলাদেশের কোথায় করোসল ফল পাওয়া যায় এবং করোসল ফলের দাম সম্পর্কে জানতে পারলাম। এই ফল সম্পর্কে সকলকে জানাতে এই কন্টেন্টটি শেয়ার করুন।