ঘরে পুতুল রাখা কি জায়েজপ্রিয় পাঠক, আপনি হয়তো ইস্তেঞ্জার সময় কয়টি কাজ করা নিষেধ, কয় জিনিস দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ, কয় জায়গায় ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ, যেসব জিনিস সাথে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া নিষেধ, টয়লেটের আদব সমূহ অথবা টয়লেটের আদব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
এছাড়া এখানে আমরা আরও তুলে ধরব কয় দিক ফিরে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ, যেসব জিনিস নিয়ে টয়লেটে যাওয়া নিষেধ, টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া এবং পবিত্রতা-সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক তুলে ধরব যা সকলের জন্য জানা খুবই প্রয়োজন।
ভূমিকা
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদের পছন্দ করেন। (সূরা বাকারাঃ ২২২) হযরত আবু মালেক আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা) বলেছেন- পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম)
পবিত্রতা দুই প্রকার। প্রথমত মানসিক পবিত্রতা, দ্বিতীয়ত বাহ্যিক পবিত্রতা। মানসিক পবিত্রতা হলও নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সময় নানাবিধ কুচিন্তা, দুশ্চিন্তা, সাংসারিক বা জাগতিক চিন্তা থেকে মনকে পরিষ্কার করে আল্লাহর প্রতি ধ্যানমগ্ন হওয়া। পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও মনোযোগের সাথে নামাজ আদায় করা। আর বাহ্যিক পবিত্রতা হলও নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়া।
আর বাহ্যিক নাপাকী সাধারণত দুই ধরনের। প্রথমত গাড় নাপাকী- যেমন মানুষের পেশাব, পায়খানা, রক্ত, বমি, পুঁজ, মদ, হারাম বা জংলী পশুর মল-মূত্র, গৃহপালিত বিভিন্ন পশুর মল ইত্যাদি। আর দ্বিতীয়ত হালকা নাপাকী যেমন- হালাল প্রাণীর পেশাব, ওযু বা গোসলের ব্যবহৃত পানি ইত্যাদি। এসব অপবিত্রতা থেকে নিজেকে পাক করা ঈমানী দায়িত্ব।
টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া
টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া পড়া সুন্নাত। টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে এই দোয়া পড়তে হয়- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খবায়িস। অর্থ হলও- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (তিরমিযী)
এই দোয়া পাঠ করলে টয়লেটে থাকা জিন শয়তানদের থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাজত করেন। জিন শয়তান ও আমাদের মাঝে আল্লাহ তাআলা পর্দা টাঙ্গিয়ে দেন। আর দোয়া না পাঠ করলে জিন শয়তানরা আমাদের সবকিছুই দেখে ফেলে এবং তামাশা করে।
টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরে এই দোয়া পড়তে হয়- গুফরো-নাকা আলহামদু লিল্লা-হিল্লাজী আযহাবা আ’ন্নিল আযা ওয়া আ’ফা-নি। অর্থ হলও হে আল্লাহ! আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আমার কষ্ট দূর করেছেন এবং আমাকে প্রশান্তি দান করেছেন। (ইবনে মাজাহ)
টয়লেটের আদব সমূহ
টয়লেটের আদব সমূহ নিম্নরূপ-
- জুতা স্যান্ডেল পরে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা।
- মাথা ঢেকে রাখা।
- ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা।
- পানি দিয়ে পরিষ্কার হওয়া।
- ডান পা দিয়ে বের হওয়া।
- টয়লেটে প্রবেশ করার আগে ও বের হওয়ার পর দোয়া পড়া।
ইস্তেঞ্জার সময় কয়টি কাজ করা নিষেধ
ইস্তেঞ্জার সময় কয়টি কাজ করা নিষেধ তা উল্লেখ করা হলো।
- কথা বলা বা মুখ খুলে রাখা নিষেধ।
- জিকির করা নিষেধ।
- কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা।
- সালাম দেয়া বা উত্তর দেয়া।
- পানাহার করা।
- মিসওয়াক করা বা ব্রাশ করা।
- লিখা বা পড়া যাবেনা।
- দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা হারাম, এতে কিডনির সমস্যা হয়।
যেসব জিনিস সাথে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া নিষেধ
যেসব জিনিস টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হারাম বা নিষেধ তা নিম্নে উল্লেখ করা হলও এবং এসব নিয়ে গেলে গুনাহগার হতে হবে।
- আল্লাহ তাআলার নাম।
- নবী ও রাসূল-গণের নাম।
- ফেরেশতা-গণের নাম।
- কোরআনের আয়াত।
- হাদিস।
- দোয়া। (লিখিত বা অঙ্কিত কোন বস্তু)
বর্তমানে তাবিজের (সমাজে প্রচলিত তাবিজ অর্থাৎ তামিমা ব্যবহার করা শিরক) উপরে আল্লাহ লেখা থাকে বা অনেকে আয়াত খোদাই করা আংটি ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে টয়লেটে যাওয়ার সময় এসব খুলে ফেলতে হবে। অথবা কাপড় বা রং ইত্যাদি দিয়ে খোদাইকৃত স্থানটুকু ঢেকে রাখতে হবে।
কয় দিক ফিরে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ
পাঁচ দিক ফিরে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ। তাহলো –
- কিবলামুখী হয়ে।
- কিবলার দিকে পিঠ করে।
- চাঁদ বা সূর্যের দিকে মুখ করে।
- প্রবল বাতাসের মুখোমুখি হয়ে।
- একেবারে অনাবৃত হয়ে।
কয় জায়গায় ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ
যেসব জায়গায় ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ তা নিম্নে উল্লেখ করা হলও-
- মানুষের কষ্ট হবে এমন কোন স্থানে।
- চলাচলের রাস্তায়।
- ছায়া বা ফল দেয় এমন গাছের নিচে।
- ওযু ও গোসলের জায়গায়।
- কবরস্থানে।
- দাঁড়িয়ে বা হেঁটে হেঁটে।
- বিনা কারণে পানিতে।
- গর্তের ভেতরে।
- বিনা কারণে ঘরে বা বিছানায়।
- জনসম্মুখে।
- মসজিদের আঙ্গিনা বা ঈদগাহে।
কয় জিনিস দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ
যেসব জিনিস দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ তাহলো –
- মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর হাড্ডি।
- কাগজ। বর্তমানে প্রচলিত টয়লেট টিস্যু যদিও কাগজ দ্বারা বানানো হয় কিন্তু একে লেখার কাজে ব্যবহার করা হয় না। বরং শুধুমাত্র টিস্যু হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। তাই টিস্যু দ্বারা ঢিলা কুলুখ করা যাবে। কাগজ দ্বারা ঢিলা কুলুখ করা এজন্য নিষিদ্ধ যে, এটা লেখার কাজে ব্যবহৃত হয়।
- কাঁচ।
- খাদ্যদ্রব্য।
- শুকনো গোবর।
- কোন গাছের কাঁচা পাতা।
- লোহা বা অন্য কোন ধাতু।
- জমজমের পানি।
- কয়লা।
- ডান হাত দ্বারা।
- ব্যবহৃত টিস্যু বা ঢিলা পুনরায় ব্যবহার করা।
ইস্তেঞ্জার সময় কয়টি কাজ করা নিষেধ – টয়লেটের আদব সমূহ – লেখকের মন্তব্য
নামাজের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হলও পবিত্রতা অর্জন করা। এজন্য আমাদের টয়লেটের আদব মেনে চলতে হবে। টয়লেটে মল-মূত্রের বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে থাকে যা আমাদের চুলে আটকে যায় এমনকি মুখ খোলা থাকলে মুখেও প্রবেশ করতে পারে, এজন্য টয়লেটে গেলে অবশ্যই মাথা ঢেকে রাখতে হবে এবং মুখ খুলে রাখা যাবেনা, আর অন্যান্য সুন্নাতও পালন করতে হবে।
ইস্তিঞ্জা না করলে বা পেশাব করে পবিত্র না হলে কবরের জীবনে শাস্তি ভোগ করতে হবে যা হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত – ইস্তেঞ্জার সময় কয়টি কাজ করা নিষেধ, কয় জিনিস দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ, কয় দিক ফিরে ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ, কয় জায়গায় ইস্তিঞ্জা করা নিষেধ, যেসব জিনিস সাথে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া নিষেধ, টয়লেটের আদব সমূহ, টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার দোয়া।